
05/08/2025
শান্তির জন্য কাজ করতাম বলে জনগণই আমাদের নাম দিয়েছিল শান্তিবাহিনী'
-কোম্পানি কমান্ডার লক্ষ্মী প্রসাদ চাকমা
১৯৭৩ সাল। স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু সরকার ক্ষমতায়। লক্ষ্মী প্রসাদ চাকমা রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের ডিগ্রির ছাত্র। পাহাড়ি ছাত্র সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে আন্দোলন করছেন অধিকার আদায়ের। আশা ছিল নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা তাদের অধিকার ফিরে পাবেন। পাকিস্তানিরা যা দেয়নি, স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু সরকার সেই অধিকার ফিরিয়ে দেবেন।
'লক্ষ্মী প্রসাদ চাকমা বলেন, 'বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রত্যাশা ছিল, বঙ্গবন্ধু এবার হয়ত আমাদের কথা ভাববেন। কিন্তু অল্প সময়েই বুঝতে পারলাম পাকিস্তান সরকার যেমন কখনো আমাদের কথা ভাবেনি, বঙ্গবন্ধুও ভাবলেন না। উল্টো তিনি আমাদের 'বাঙালি' হয়ে যেতে বললেন। আমি একজন পাহাড়ি, একজন চাকমা, আমার সংস্কৃতি-কৃষ্টি আর বাঙালির সংস্কৃতি কৃষ্টি তো এক নয়।
তাহলে আমি কীভাবে বাঙালি হয়ে যাব?
তখনই বুঝতে পারলাম, আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য কঠিন ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। মনে হলো লেখাপড়ার চেয়ে জাতির ভাগ্যের উন্নয়নের সংগ্রাম অনেক বেশি জরুরি
১৯৭৩ সালে লক্ষ্মী প্রসাদ চাকমা চলে গেলেন শান্তিবাহিনীতে। লেখাপড়া শেষ হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন জঙ্গল হয়ে গেল ঠিকানা। নিষিদ্ধ হয়ে গেল লোকালয়। কলম ছেড়ে হাতে তুলে নিলেন অস্ত্র।
তিনি আরো বলেন, 'অন্য অনেকের মতো আমারও স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করব। একটা ভালো চাকরি করব। স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখবো। কিন্তু আমাদের '৭১-এ যেমন মুক্তিযুদ্ধ করতে দেয়া হলো না, তেমনি দেশ গঠনেও ভূমিকা রাখতে দেয়া হলো না। এর অর্থ এই নয় যে, বঙ্গবন্ধুর 'বাঙালি হয়ে যাবার' আদেশ শান্তিবাহিনীতে যাবার একমাত্র কারণ। তবে সেটা ছিল আলটিমেটাম।
দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের মানুষের ওপর চলেছে নিপীড়ন-নির্যাতন। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। তাই বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার পর সশস্ত্র সংগ্রাম করা ছাড়া আমাদের আর উপায় ছিল না।'
জঙ্গলের জীবন। হাতে অস্ত্র। চোখে স্বপ্ন। শুনতে-ভাবতে রোমাঞ্চকর মনে হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পেটে ক্ষুধা, সময় মতো খাওয়া হয় না। দুচোখ জড়িয়ে আসে ঘুমে। ঘুমানো যায়না। একদিকে আর্মির ভয়,তার চেয়ে ভয় জঙ্গলে শত্রুর। সাপ,বাঘ,মশা আরো কত কিছু।
এই সবকিছু জেনেও তৎকালিন হাজার হাজার তরুণ বেছে নিয়েছিল জঙ্গলের জীবন। এদেরই মধ্যে একজন লক্ষ্মী প্রসাদ!