20/01/2025
শায়খ গাউসুল আযম মুহিউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানী কঃ এর পবিত্র যবান হতে নিঃসৃত বাণীতে তারই বন্ধুর (হযরত গাউসুল আযম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী ক. এর) বর্ণনা -
'বাহজাতুল আসরার' গ্রন্থে পূর্ণ সনদ সহকারে বর্ণিত আছে, ৫৬১ হিজরীতে মুহাররাম মাসের শেষভাগে গাউসে আযম দস্তগীর মাহবুবে সোবহানী শায়খ আবু মুহাম্মাদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদের জিলানী আশ-শাফেয়ী আল-হাম্বলী আল-গিলানী رضي الله تعالى عنه কুরসি/চেয়ারে উপবেশন করে নিম্নোক্ত বক্তব্য প্রদান করেন। শায়খ আবুল কাসেম বিন আবুবকর আহমদ ইবনে আবি সা'আদাত আহমদ ইবনে কারাম ইবনে গালিব আল বুন্দালিজী (মূলত বাগদাদী) বর্ণনা করেন, শায়খ আবু মুহাম্মাদ মুহিউদ্দীন রাঃ বলেন,
—“আমার ক্বলব আল্লাহর ﷻ কুদরতি জ্ঞানের নিকট এমনভাবে গোপনীয় অবস্থায় রাখা আছে যেন তা সৃষ্টির এক কোণা । আর সেখানে আল্লাহ ﷻ এঁর দরজায় (আমার ক্বলব) একজন ফেরেশতা (স্বরূপে) আছে , আমার যুগের প্রত্যেক আগমনকারীর জন্য তাকে(ঐ ফেরেশতারূপী আমার ক্বলবকে) কিবলা হিসাবে প্রকাশ করা হয়েছে । আর আমি (আল্লাহর রহস্যের) বন্ধ দরজাগুলোর (দরজার অপর পাশে বা) ওই পাশে ভালবাসা ও নৈকট্যের বিছানায় গিয়ে বসে যাই এবং এমনভাবে (বসে আছি যেন) বাদশাহর মত । ঐ বাদশার (স্বরূপতা এমন যে তার) একজন (মু'আনিস গুণসম্পন্ন) বন্ধু রয়েছেন, যিনি মানুষের গুপ্ত রহস্য সম্পর্কে জ্ঞাত রয়েছেন এবং মানুষের অন্তরের দিকে দৃষ্টিপাতকারী। আল্লাহ ﷻ তাকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে দেখার (অর্থাৎ রব হিসেবে পরিগণিত করার) অপবিত্রতা হতে পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন (ফলে সেই বন্ধুটি বেলায়তের সর্বোচ্চ দরজায় উন্নীত হয়েছেন)। অবশেষে তিনি (বন্ধুটি) নিজেই এমন একটি ফলকে পরিণত হয়েছেন, যার উপর লাওহে মাহফূযের লেখনী সমূহ মুদ্রিত হয় (অর্থাৎ আল্লাহ তাকে বিশেষ ইলহাম করেন)। তার যুগের লোকজনের বিভিন্ন বিষযয়াদির উপর নিয়ন্ত্রণের কর্মভার তাকে সোপর্দ করা হয়েছে। তাকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে — "যাকে ইচ্ছা প্রদান করুন এবং যাকে ইচ্ছা না বলুন"— এর। গায়বের ভাষায় তাকে বলেছেন, “তোমাকে আমি আমার নিকট মর্যাদার আসনে আসীন করিয়েছি, বিশ্বস্ত।” তাকে আহলে ইয়াকীনের রূহসমূহের সাথে ইহকাল ও পরকালের সাথে রাখা হয়েছে যেন সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝখানে (তিনি সেতুবন্ধনকারী স্বরূপ), প্রকাশিত ও অপ্রকাশিতের মাঝখানে (সমন্বয়কারী স্বরূপ) এবং জ্ঞাত ও অজ্ঞাতের মাঝখানে (পার্থক্য স্বরূপ)।(আল্লাহ) তার জন্য চারটি চেহারা বানিয়েছেন যার একটি দিয়ে তিনি দুনিয়া দেখেন, একটি দিয়ে আখিরাত দেখেন, একটি দিয়ে সৃষ্টিজগৎকে দেখেন এবং অপরটি দিয়ে সৃষ্টিকর্তা দেখেন। তাকে আল্লাহর যমীনসমূহে এবং তার জীবদ্দশাতেই প্রতিনিধি বানানো হয়েছে । যখন তাকে দিয়ে কোনো কাজ করানোর ইচ্ছাপোষণ করানো হয়, তখন তাকে এক সুরত থেকে অন্য সুরতে, এক রূপ হতে অন্যরূপে বদলে দেয়া হয়। অতঃপর তাকে রহস্যের ভাণ্ডারগুলো সম্পর্কে জানানো হয়। কেননা তিনি বিশ্ব-রাজ্যে অনন্য (মর্যাদায় উন্নীত) এবং তার নবীর প্রতিনিধিও। তাকে আল্লাহর রাজ্যেসমূজের উপর নিজ যুগের আমানতদার বানানো হয়েছে। সর্বোপরি, প্রতি রাতে আল্লাহর ৩৬০খানা রহমতের দৃষ্টি তাঁর প্রতি নিবদ্ধ হয়ে থাকে।”
[বাহজাতুল আসরার ওয়ামা দীনূল আনওয়ার,আল্লামা শাত্বনুফী রহ.(৭০৩হি),৫৫পৃষ্ঠা,দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ]
এখানে একটা উক্তি লক্ষনীয়—
والملك الفرد له مؤانس
'আল-মালাক' দ্বারা 'বাদশাহ' বা ঐ ফেরেস্তাকে বুঝানো হয়েছে।
'ফরদ' শব্দের অর্থ একাকিত্ব বা একা, আল-ফরদ দ্বারা ঐ একা ব্যক্তিটিকে বিশেষায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ 'ঐ বিশিষ্ট ব্যক্তিটি'।
যেমন الْمَلَكِيَّةُ الْفَرْدِيَّةُ /'মালাকিয়াতুল ফরদিয়াহ' দ্বারা
একচ্ছত্র আধিপত্য বুঝায়।
আর 'মুওয়ানিস' শব্দের অর্থ করা হয়েছে লাত্বিফ/আলিফ (أَلِيف/لَطِيف)। 'বন্ধুসুলভ','বন্ধুভাবাপন্ন', 'অমায়িক আচরণ সম্পন্ন'। 'লাত্বিফ' এর এক অর্থ 'জামিল' বা 'সুন্দর' তথা 'সৌম্যতার প্রতীক'।
সুতরাং গাউসে আযম দস্তগীর রাঃ স্পষ্টভাবেই তার বিশেষ এক বন্ধুর কথা উল্লেখ করেছেন। সে বন্ধুর গুণাবলিও উল্লেখ করেছেন। এই বন্ধুর বৈশিষ্ট্যাবলি ছরকার সৈয়্যদি ওয়া সানাদী গাউছুল্লাহিল আযম মাইজভাণ্ডারী কঃ এর সাথে মিলে যায়। 'ফুসুস আল হিকম' গ্রন্থে শায়খুল আকবর মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী রাঃ এর ভবিষ্যদ্বাণির সাথে মিল সম্পন্ন 'খাতিমুল বিলায়াত' এর মর্যাদা হুজুর গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী কঃ এর পবিত্র সত্ত্বাতেই পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয়।
আবার গাউসে পাক শায়খ আব্দুল কাদির গিলানী কঃ কে কোনো আউলিয়া কখনো 'ভাই', 'বন্ধু' এসব ডাকে সম্বোধন করেননি।উনাকে সবাই শায়খুল মাশায়েখ, কুতুবে রব্বানী, গাউসে সামাদানী, কুতুবুল আউলিয়া ইত্যাদি নামেই ডেকেছেন। অথচ বন্ধুত্বের প্রগাঢ়তা দেখিয়ে হযরত গাউসে মাইজভাণ্ডারী কঃ বলেছেন—
''আমি মক্কা শরীফ গিয়া দেখিলাম রসুল ﷺ এর 'ছদর' মুবারাক (বক্ষস্থল) এক অনন্ত দরিয়া (আলাম নাশরাহ লাকা ছদরাকা)।আমি এবং আমার ভাই পীরানে পীর ছাহেব ঐ দরিয়াতে ডুব দিলাম"।
“রাসুলুল্লাহ ﷺ.এর কাছে দুটি টুপি ছিল। একটি আমার মাথায় অপরটি আমার ভাই পীরানে পীর সাহেবের মাথায় দিয়েছেন।”
(বেলায়তে মোতালাকা,আয়না-ই-বারী প্রভৃতি দ্রষ্টব্য)।
ইমাম শেরে বাংলা (রহ.) বলেন,
"ছরওয়ারে কাওনাইন ﷺ এর নিকট দুইটি তাজ/ মুকুট ছিলো
নিশ্চয়ই তার মধ্যে একটি গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী রাঃ এর শির/মস্তক মুবারকে পরানো হয়েছে।"
এরকম আরো বহু বহু উদাহরণ দ্বারা প্রমাণিত হয়, এবং যুগের বিদগ্ধ 'সাহিবুল কাশফ' এর অব্যর্থ কাশফের দ্বারা এটা স্পষ্ট হয় যে, নবীজী ﷺ এর ফয়েজ হতে গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী কঃ 'গাউসুল আযমিয়ত' এর সম্মানে উপনীত এবং তার সাথে গাউসুল আযম জিলানী কঃ এর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের দ্বারা স্থাপিত।
শান্তিকুঞ্জ
Shanti Kunjo
Shanti Kunjo
© AR Raffehaan
Emdad Bin হুক