মনের মানুষ

মনের মানুষ ❝ আল্লাহই আমার একমাত্র ভরসা, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমার জন্য সবকিছু সহজ করে দেন ❞

07/07/2024

অনুবদ্ধ_আয়াস 💚
ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০২

" বিয়ে প্রথম সকালেই বুঝিয়ে দিলে, তুমি ঠিক কি? শাড়ি না পড়ে আমার ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছ? কালকে তো বড় বড় জ্ঞান দিয়েছিলে, আগে নিজেকে বুঝতে!"

চরণ জোড়া থেমে গেল। মনে হলো মাটির ফাঁক দিয়ে অদৃশ্য শিকড় এসে পা দুটো আঁটকে দিলো। সাথে সাথে পেছনে ফিরলাম। রৌধিক তখন দেয়ালে হেলান দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দুহাত দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করে অন্যদিকে ফিরলাম। তুতলিয়ে তুতলিয়ে বললাম,
" আসলে শাড়িগুলো কোথায় রাখা আছে, জানি না।"

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই বললেন, " জানো না, না-কি না জানার ভান ধরছো?"
বলেই এগিয়ে এলেন তিনি।‌ হাতে তার টুথব্রাশ। ওয়াশরুশে ঢুকে ব্রাশ ধুয়ে রাখলেন। ট্যাপ ছেড়ে মুখে দিয়ে কুলি করে বেরিয়ে এলো। আমার সামনে দাঁড়িয়ে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলো কিয়ৎক্ষণ। অতঃপর আলমারি খুলে দিলো। হাত টেনে আলমারির সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন,

" এখানে এতো এতো জামা কাপড় আর তুমি শাড়ি খুঁজে পাচ্ছো না। হাউ ফানি!"

" এগুলো তো শেফার জন্য কেনা জামা কাপড়..

" তো! কি হইছে? শেফার বরকে নিজের বর করতে পেরেছ, তার বিয়ের বেনারসী গায়ে জড়াতে পেরেছ। তাহলে এগুলো পড়তে কি সমস্যা?"
আমি মাথা নিচু করে রইলাম। একদিন নিজের এই অবস্থা, অন্যদিকে এই লোকটার কটু কথা! দুটোতেই হাঁপিয়ে উঠেছি।

রৌধিক আলমারির ভেতর থেকে একটা শাড়ি বের করে ছুড়ে ফেললো আমার উপর। কেঁপে উঠলাম আমি। কর্কট কন্ঠে বললেন,

" এবার তো শাড়ি পেয়েছো? দাঁড়িয়ে না থেকে বিদেয় হও। নাকি নিজেকে দেখানোর বাকি আছে? তাহলে আমাকে না দেখিয়ে রাস্তায় গিয়ে দেখাও, অন্তত কিছু টাকা পাওয়া যাবে!"

সাথে সাথে শরীরের লোম গুলো দাড়িয়ে গেল। শেষে একটা রাস্তার মেয়ের সাথে তুলনা করলো। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে এতোটাই নিচ হয়ে গেছে, আমি তার কি হই। সেটাই ভুলে গেছে। তবে আমি চুপ রইলাম না। দ্বিগুন তেজ নিয়ে বললাম,

" হ্যাঁ! প্রয়োজনে রাস্তায় গিয়েই দেখাবো। তাদের দেখালে টাকা পাওয়া যায়। আপনি তো আর টাকা দিতে পারবেন না। দিলেও বাবার টাকাই দিবেন। নিজে তো আর উপার্জন করেন না। টাকার মর্ম কি বুঝবেন?"

বলতে দেরী হলো চড় পড়তে দেরী হলো না। আরো একটা চ'ড় মা'রতে গিয়েও থেমে গেলেন। অন্যদিকে ফিরে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলেন। তার চোখের মণি গুলো জ্বলজ্বল করছে। শাড়িটা নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি শাড়িটা কোনোরকম তুলে ওয়াশরুমের ভেতরে ছুটলাম।
________________

সোফার উপরে সং সেজে বসে আছি আমি। মাথায় একহাত কাপড় টেনে নত হয়ে আছি। যে যার মতো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আমার পাশে বসে আছে রৌধিক ভাইয়ার ছোট বোন আদ্রিতা, ফুফুতো ভাই জাবিন, জান্নুবী। জান্নুবীর বয়স সাড়ে তিন বছর। আদ্রিক আঙ্কেল নিচে নামলেন। গিয়ে টেবিলে বসলেন। আমাকেও নিয়ে বসানো হলো। আমার সোজাসুজি চেয়ারে বসে আছে রৌধিকের দাদী এবং তার পাশে দাদা। আঙ্কেল বেশ গম্ভীর মানুষ, খাবার টেবিলে একদম কথা বলা পছন্দ করেন না। এমনকি প্লেট, চামচের টুং টাং ধ্বনিও না। বেশ কিছুক্ষণের নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিক আঙ্কেল বললেন,
" এই বাড়িতে তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?"

" না আঙ্কেল।"
আমার মৃদু স্পষ্ট জবার।

" তোমার কিছু প্রয়োজন হলে রৌদুকে বলবে। কি বলছি আমি, সেই নিজেই তো একটা অপদার্থ।
আমার বলবে। আমাকে বলতে সংকোচ হলে তোমার মাকে বলবে। তাছাড়া আদ্রু তো আছেই।"

আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই খাবারে মনোনিবেশ করলেন। পুনরায় নিরিবিলি হয়ে গেল। পায়ের শব্দ শোনা গেল। আদ্রিক আঙ্কেল সিঁড়ির দিকে তাকালেন। রৌধিক শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নেমে আসছে। ডাইনিং অতিক্রম করে যাওয়ার সময় ডেকে উঠলেন আঙ্কেল,

"রৌদু! দাঁড়াও!"

আঙ্কেলের গলা গম্ভীর। রৌধিক থেমে গেল। মাথা নত করে দাঁড়ালো। রৌধিক বেপরোয়া হলেও আঙ্কেলের কাছে একদম বাচ্চা। আদ্রিক আঙ্কেল উঠে গেলেন। রৌধিকের সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বললেন,

" রৌদু কোথায় যাচ্ছো তুমি?"

" ক্লাবে!" রৌধিকের একরোখা জবাব।

" কাল তোমার বিয়ে হয়েছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। প্রেস, মিডিয়া গিজগিজ করছে। আর তুমি ক্লাবে যাচ্ছো? তুমি জানো, এই খবরটা লিক হলে আমার মান সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
রৌধু, তুমি বিয়ে করেছো! সংসার হয়েছে। কিছুদিন পরে বাচ্চার বাবা হবে।"

" বাবা আমি তোমার মান সম্মানের কথা ভেবে এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। আমাকে দিয়ে সংসার কিংবা বাচ্চার চিন্তা করো না।
কালকে রাতে আমি সাফ-সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আমার মনে কিংবা ঘরে কোথাও এই মেয়েটার জায়গা হবে না।"

রাগে পিত্তি জ্বলে উঠলো আমার। এই মেয়ে, এই মেয়ে ছাড়া কথাই বলতে পারে না সে। খাবার ছেড়ে দু'পা এগিয়ে গিয়ে বললাম,
-" এই শুনেন, আমি আপনার ঘরে কিংবা আপনার মনে থাকার জন্য মরে যাচ্ছি না। এই বাড়িতে তো আরো জায়গা আছে, আমি সেই ঘরেই থামবো।"

আমার কথা শেষ আগেই আঙ্কেল বললেন,-" না! তোমরা এক ঘরেই থাকবে। আমি চাই না, প্রেস মিডিয়া সামান্য এক বিষয় নিয়ে জল ঘোলা না করুক।
রৌধু ঘরে যাও।"

বলেই হনহনিয়ে চলে গেলেন তিনি। রৌধিক হিংস্র বাঘের ন্যায় আমার দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু তার হিংস্রতায় আমি ভয় করি না। অন্যদিকে চেয়ে রইলাম, বেশ হয়েছে। আমাকে কথা শোনানো হচ্ছিলো না। এবার বোঝ!
রৌধিকও প্রস্থান করলেন। রৌধিক যেতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। আঙ্কেলের উপর রাগ সব আমার উপরে ঝাড়বে।
হাতে খাবারের ট্রে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি মিনিট বিশেক হয়েছে। সামনে পা ফেলতেই গিয়েও বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। বুক ভরে শ্বাস নিতে রুমের দরজা খুলে অন্তর্ভাগে প্রবেশ করলাম। রৌধিক বেডের মাঝ বরাবর বসে ফোন টিপছে। আমি না তাকিয়ে বুঝতে পারছি, রৌধিক তার রৌদ্রমাখা চোখে তাকিয়ে আছে। টেবিলের উপর রেখে গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে বললাম,-" আন্টি খাবার পাঠিয়েছে!"
বলেই উল্টো হাঁটা ধরলাম বেলকেনির দিকে‌। বেলকেনির দরজা পেরিয়ে আরেক পা ফেলতেই হাত ধরে ফেললো কেউ। এক টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন আমায়। মাথার ঘোমটা টানা কাপড় খুলে পড়লো নিচে। আমার হাত পেছনে মুচড়ে ধরলেন পেছনে।‌ দৃষ্টি ঘুরিয়ে তার মুখের দিকে চাইলাম। ত্রুব্ধ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি চাইলেই ভয়ংকর ভাবে চোখ রাঙালো। দাঁতে দাঁত ফিসিয়ে বলল,
" কি মনে করো তুমি নিজেকে? আজ তোমার জন্য! একমাত্র তোমার জন্য বাবা আমাকে খাবারের খোঁটা দিয়েছি। তোমাকে তো ইচ্ছে করছে..

বলেই ধাক্কা দিয়ে বেলিকেনির রেলিং এর উপর ছুড়ে মারলেন। সরে আসতে নিলে আরো দৃঢ়ভাবে চেপে ধরলেন। ঝুঁলে রইলাম বেলিকেনি দিয়ে খানিকটা বাইরে। পিঠে মাঝে কিছু একটা ফোঁটার মতো ব্যাথা অনুভব করলাম। তবে দৃঢ় নয়। তার হাত সরিয়ে আসতে নিলে পুরো শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। মুখ কুঁচকে গেল। চিৎকার করে আর্তনাদ করে উঠলাম। সাথে সাথে দুই বাহু খামচে ধরলাম রৌধিকের। চোখের কার্নিশ গড়িয়ে অশ্রু পড়তে লাগলো। রৌধিক সন্দিহান চোখে চাইলো। গালে হাত রেখে বলল,

" এই মেয়ে কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন?"

নিভু নিভু চোখে চাইলাম। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছে দেহটা। ততক্ষণে সবাই এসে জড় হয়েছে রুমে। আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। নিশি আন্টি বলল,
" জোনাকি, কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন?"
" আমার পিঠে!" ব্যাথিত কন্ঠে বললাম।
রক্তে পিঠের দিকটার ব্লাইউজ ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। সবাই ধীরে ধীরে আমাকে দেয়াল থেকে সরিয়ে আনল। গ্ৰিল বিহীন রেলিং এর সূচালো কোণায় অসাবধানতায় পিঠ আঁটকে গেছিলো। যেটা ব্লাউজ ভেদ করে উন্মুক্ত পিঠে আঘাত করেছে।

অতি সাবধানে বেডের উপর বসিয়ে দিল আমায়। রৌধিক মাথা নিচু করে রয়েছে। আদ্রিক আঙ্কেল চ'ড় বসালেন রৌধিকের গালে।

" বাবা আমি আসলে..
তেজ নিয়ে বললেন,
" চুপ! একদম চুপ! এই মেয়েটাকে আমার সম্মান বাঁচাতে আমার বাড়ির বউ করে এনেছি, আঘাত করতে আনি নি। তুমি আমার উপরের রাগ এই মেয়ের উপর দেখিয়ে কি অবস্থা করেছো দেখেছো? তোমার শেফা হলে এটা করতে পারতে? যে মেয়েটা আমার এবং আমার পরিবারের সম্মান বাঁচিয়েছে, তাকে তুমি..

রৌধিক আমার দিকে বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইল। দেখে মনে হচ্ছে না, আদ্রিক আঙ্কেলের কোনো কথা তার কানে পৌঁছেছে। নিভু নিভু অধর নেড়ে কিছু একটা উচ্চারণ করলো, তা শ্রবণেন্দ্রিয় পর্যন্ত পৌঁছালো না আমার। আদ্রিক আঙ্কেল রৌধিক কে রুম থেকে বের করে দিলেন। রৌধিকের অসহায় মুখ দেখে কষ্ট হচ্ছিল আমার। আমি জানি মনে হচ্ছিল, সে ইচ্ছে করে কিছু করে নি। রাগের বশে হয়ে গেছে।

[চলবে.. ইনশাআল্লাহ]

05/07/2024

" মাত্র ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আমাকে কেন বিয়ে করেছো জোনাকি? শুধুমাত্র টাকার জন্য। তাহলে আমি তোমাকে ৩০ লক্ষ টাকা দিচ্ছি, ডিভোর্স পেপার সাইন করে চলে যাও।"

পায়ের উপর পা তুলে নির্বিকার স্বরে বললেন রৌধিক। মাথার ঘোমটা তুলে অবলোকন করলাম সেদিকে। ভারী শাড়ি তুলে নিচে নেমে স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম,

"টাকা টা আমার খুব দরকার ছিলো আর আপনার বাবার সম্মান বাঁচাতে আমাকে দরকার ছিলো।"

তিনি ঘরের একপাশে থেকে অন্যপাশে পায়চারী করলেন। চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন,
"এই মেয়ে শোনো, তোমাকে বিয়ে করেছি ঠিকই কিন্তু আমার মনে, আমার লাইফে তোমার কোনো জায়গা নেই। বুঝতে পেরেছো তুমি?"

সদ্য বিয়ে হওয়ার বরের মুখে এমন কথা শুনে পিত্তি জ্বলে উঠলো আমার। সকলের সামনে হাঁসি মুখে বিহেবিয়ার করে বাসর ঘরে এসে এমন কথা বলছে।
দুইহাত বুকে গুঁজে জবার দিলাম,

-" তো? কি করব আমি? নাচবো? আমাকে না বুঝিয়ে আপনি নিজেকে বুঝুন, আপনি এক্সজেকলি কি চান? আপনি চাইলে বিয়েটা আটকে পারতেন।"

আমার প্রত্যুত্তরে হয়তো সামনে থাকা মানুষটির পছন্দ হলো না। দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষুদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে আমার পানে। অস্বস্তিতে ছেড়ে গেল দেহ। কিন্তু আমাকে পাত্তা দিলেন না তিনি। টেবিলের উপর রাখা ল্যাম্পটা বিকট শব্দে ছুঁড়ে ফেললেন নিচে। কেঁপে উঠলাম আমি। দুহাতে কান চেপে দেয়ালের সাথে মিশে রইলাম। হুট হাট শব্দ গুলোতে আমার ফোবিয়া রয়েছে। কেউ জোরে কথা বললে আমার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু আমার দূর্বলতা বুঝলেন না তিনি। গুছিয়ে রাখা ঘরের সব জিনিস পত্র গুলো একে একে মাটিতে ফেলতে লাগলেন তিনি। আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলছেন,-" এইটুকু একটা পিচ্চি মেয়ে আমার উপর গলা তুলে কথা বলার সাহস পাও কী করে? আজ তোমাকে আমার মন থেকে বের করে দিয়েছি। খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার ঘর এবং জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিবো।"

ভাঙ্গা চোড়া জিনিসপত্র গুলো মাঝে আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। মাটিতে ফেলে রাখা ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলো ডিঙিয়ে চলে গেলেন তিনি। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দু'পা এগিয়ে এলাম আমি। পরবর্তী পা ফেলার আগেই ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম। পিছিয়ে বসে পড়লাম বেডের উপর। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ধীরে ধীরে কাঁচ বের করার চেষ্টা করলাম। বেশ গভীরে না যাওয়াতে সহজে তুলে ফেলতে সক্ষম হলাম। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি। এই অহংকার ছেলেটার মান সম্মান রাখতে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে আমায়। চোখের পাতা বড্ড ভারী ঠেকছে। বালিশ টেনে বেডের এক কোণে জায়গা করে শুয়ে পড়লাম। নিজের পরিবার ছেড়ে, নিজের প্রিয় জিনিস গুলো ছেড়ে অন্য একটা ছেলের সাথে সারাজীবন এক সাথে থাকতে হবে, ভাবতেই কষ্টে কেঁপে উঠছে শরীরটা।
আমি জোনাকি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ একজন তরুণী। দুই বোন আর বাবাকে নিয়েই আমাদের পরিবার। বোনের জন্ম দিতে গিয়ে মা মারা গেছেন। আমাদের সুখের কথা চিন্তা করে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। ভালোই চলছিলো আমার দিনকাল। হঠাৎ একদিন বাবার শরীর খারাপ হতে শুরু করলো। তুলনামূলক শরীর ফুলে উঠছিলো। বমি বমি ভাব, উচ্চ রক্তচাপ। পরিক্ষা করে কিডনি রোগ ধরা পড়েছে। প্রতিদিন ঘরে বসে কন্টিনিউয়াস অ্যাম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস বা সিএপিডি করতো। জয়া তাকে সাহায্য করে। তখন থেকে বাবা বেকার। আমি সংসারের হাল ধরি। ছোট বোন জয়ার স্কুলের খরচ আর বাবার ওষুধ পত্রের টাকা জোগাড় করতে করতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল আমাকে। তার উপর খাবারের টাকা। এভাবে বছর দুই পেরিয়ে যায়। মাস খানেক আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জবের অফার পাই। তারপরে আমাদের অবস্থান আরেকটু উন্নতি হয়।
সেদিন রাতে বাড়ি ফেরার পর জ্ঞান হীন অবস্থায় পেলাম। শতবার ডাকার পরেও সারা দেয়নি। ভয় পেয়ে গেলাম দুইজনে। জয়ী কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। আমি জয়ীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলাম। ধরাধরি করে হসপিটালের নিয়ে এলাম। কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তার জানালো, বাবা নিয়মিত ওষুধ খেতেন না, ডায়ালাইসিস করতেন না। এতে ভেতরে তীব্র সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পনেরো লক্ষ টাকা লাগবে। অসহায় হয়ে পড়েছিলাম আমি।
তখন আমার পাশে এসে দাঁড়ান অফিসের বস আদ্রিক আহম্মেদ। তার ছেলের বিয়ে উপলক্ষে সবাইকে দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু বিয়ের দুই দিন আগে কনে পালিয়ে যায়। নিজের সম্মান বাঁচাতে আমাকে তার পুত্র বধূ করতে চায়।
শর্ত সাপেক্ষে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
সূর্যের নরম আভা চোখে পড়তেই নিদ্রা ভঙ্গ হলো আমার। মাথা চেপে ধীরে ধীরে উঠে বসলাম। চারদিকে পর্যবেক্ষণ করতেই বুঝতে পারলাম আমি কোথায় আছি। মাথা তুলে দেয়ালের দিকে তাকালাম। সাতটা পঁয়ত্রিশ বাজে। আমার গায়ে ব্লাঙ্কেট জড়ানো। ব্লাঙ্কেট ছাড়িয়ে ফ্লোরে পা রাখতেই আঁতকে উঠলাম। সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো।‌ সাথে সাথে পা তুলে ফেললাম। পায়ে মোটা ব্যান্ডেজ করা। কিন্তু আমার যতোদূর মনে আছে, কালকে রাতে আমি পায়ের ব্যান্ডেজ তো দূরে থাক। রক্ত পর্যন্ত মুছি নি। দৃষ্টি গেল ড্রেসিং টেবিলের বড় আয়নার দিকে। নিজের গায়ে শাড়ি আর না দেখে চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। দ্রুত ব্লাঙ্কেট দিয়ে শরীর পেঁচিয়ে নিলাম। এই রুমে আমি ছাড়া কেউ নেই। রৌধিক রাতে বেরিয়ে গিয়েছিল। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। দৃষ্টি ঘুড়াতেই নজর পড়লো সোফার উপরে। সেখানে আরামসে ঘুমিয়ে আছে রৌধিক। তার দেহের অনেকটা অংশ সোফার বাইরে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ঘন পাপড়ি যুক্ত গ্ৰথণ চোখ। বাম ভ্রু এর একটু উপরে লালচে তিল। যা চুলের আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকে সর্বক্ষণ। এখনো চুল দিয়ে সম্পূর্ণ ললাট ঢেকে আছে। তবে তার ফাঁক দিয়ে তিলটা বেরিয়ে রয়েছে। পড়নে লাল টি শার্ট। নিঃপাপ মুখ টা যখন তখন যে কারো নজর কেড়ে নিতে পারে। পাশ থেকে শাড়িটা তুলে কোনো রকম শরীরে পেঁচিয়ে নিলাম। এগিয়ে গেলাম তার দিকে। হুট করেই ইচ্ছে করলো তার ঘন কালো চুলে হাত দিয়ে আলো এলোমেলো করে দেই। নিজেকে সংযত করতে চাইলেও বারবারই ব্যর্থ হলাম। চুলের হাত ছোঁয়ানোর আগেই নড়েচড়ে উঠলো সে। নিভু নিভু চোখে ঝাঁপসা আমার দিকে চেয়ে অন্যদিকে ফিরে গেলেন।
ফট করে উঠে গেলাম আমি। খুড়িয়ে খুড়িয়ে দু'পা ফেলতেই টান লাগলো আঁচলে। ধরার আগেই কাঁধ ঘেঁষে নিচে গড়িয়ে পড়লো। পেছনে ফিরে চাইলাম একনজর। রৌধিক পূর্বের ন্যায় ঘুমিয়ে আছে। তার পিঠের নিচে বেশ কিছুটা অংশ রয়েছে। আরো কাছে গেলাম তার। হাতটা চোখ মুখের সামনে বেশ কয়েকবার ঘুড়িয়ে কাঁধ থেকে পিন বিহীন শাড়িটা খুলে ফেললাম। সন্তর্পণে পা ফেলে ওয়াশরুমের ভেতরে প্রবেশ করলাম।
শাওয়ার শেষ করে বুঝতে পারলাম, সাথে কিছু আনা হয়নি। দরজা খুলে মাথা বের করলাম। ততক্ষণে পুরো ঘর আলোকিত হয়ে গেছে প্রাকৃতিক আলোয়। ঘর গোছানো। ঘুমন্ত রৌধিক নেই। বেলকেনির দরজা খোলা। বাথরোব পড়ে ভেজা ভেজা পা ফেলে বেরিয়ে এলাম শাড়ি নিতে। শাড়ি আদোও আছে কি-না, না জেনেই বের হয়েছি। এটাই ছিলো আমার দ্বিতীয় ভুল। বাবার জন্য বাধ্য হয়ে রৌধিককে বিয়ে করা ছিলো, সর্বপ্রথম ভুল।

এদিক ওদিক শাড়ি খুঁজে ব্যর্থ হয়ে যখন হার মেনে বসে পড়েছিলাম তখন শোনা গেল শক্তপোক্ত অস্পষ্ট পুরুষালী কন্ঠস্বর,

চলবে..ইনশাআল্লাহ
রেসপন্সের ভিত্তিতে দ্বিতীয় পর্ব দেওয়া হবে। রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।

অনুবদ্ধ_আয়াস 💚
ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০১

09/06/2024

নিজের প্রতি এতো টাই ঘৃণা জমেছে এখন আর আয়নায় নিজেকে দেখতে ইচ্ছে করে না

17/04/2024

ভালো আছি সবাই এটাই জানুক কষ্টটা নাহয় আমারি থাকুক 🙂

17/04/2024

এখন আর প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে তেমন কথা বলতে ইচ্ছা করে না😅

16/04/2024

সব থেকেও কি যেনো নেই🙂💔

15/04/2024

মানুষ মানুষকে কপি করে কিভাবে 🤔🤔🙄

10/04/2024

আজব দুনিয়া...!
সব মানুষ আপন হয় না যাও দু /একটা মানুষ আপন হয়..সেগুলোও সময় এর ব্যবধানে পর হয়ে যায় 🙂

তাইনা...!!



09/04/2024

কিছু কান্না শব্দহীন....!

Address

Khulna

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মনের মানুষ posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to মনের মানুষ:

Share