04/04/2023
আমি তামিম। বছর কয়েক হল আমার আর অর্থির বিয়ে হয়েছে। প্রেমের বিয়ে। বিয়ের আগে দিন নেই রাত নেই সব সময় আমরা একজন আর একজনের সাথে ফোনে বেশিরভাগ সময় চুটিয়ে প্রেম করেছি। আমি মোটামুটি খুব ভালো একটা পোষ্টে চাকরি করতাম। বিয়ের পর বাসায় সারাদিন বসে থেকে ও বোরিং হত, তাই আমার অফিসের বস কে বলে অর্থিকে ও আমাদের ফার্মে একটা চাকরি দিয়ে দেয়। যদিও ও জানতো যে চাকরি টা ও ওর যোগ্যতার জোরে পেয়েছে, কিন্তু ও হয়তো এটা জানতো না যে এ যুগে খালি যোগ্যতা অনুযায়ী সব পাওয়া যায় না। রেফারেন্স আর মামা-খালুও লাগে। তাই বসকে বলে অর্থিকে চাকরি দিতে আমার বেশি বেগ পেতে হয়নি। প্রথম দিকটা সব মিলে আলহামদুলিল্লাহ আমাদের দুজনের খুব ভালোই চলছিল । কিন্তু এক বছর হল অর্থির সাথে সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছে না। সব সময় দেখি কেমন যেন ও আমার উপরে বিরক্ত । যদিও বিরক্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ ও একটা ভালো ফার্মে চাকরি করে আর আমি ছোট একটা ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। যদিও ওইখানে থেকে ভালো কোন রেজাল্ট পাইনি। তাই এক কথায় বলতে গেলে বেকার সংসারটা ওই চালায় । ও জানতো আমার জীবনের এমবিশন একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়া। তাই বিয়ের পর আমরা ঠিক করি আমাদের জমানো টাকা নিয়ে আমি ব্যবসা শুরু করে, তার দিকে সম্পূর্ণভাবে ফোকাস করবো। আর অর্থির বেতনের টাকা দিয়ে সংসার চালাবে। যত দিন না আমি আমার ব্যবসা ভালো করে প্রতিষ্ঠিত না করতে পারি। কিন্তু মার্কেটে প্রচুর টাকা বাকী পড়ে যাবার কারণে আমার ব্যবসায় বড় একটা ধ্বস নামে যা আমি সামলে উঠতে পারিনি ।অর্থি কথা দিয়ে ছিলো সে সার্বক্ষণিক আমার পাশে ছায়ার মত থাকবে কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতে ও হাঁফিয়ে উঠেছে। শান্ত ভাবে সব সময় খোঁচা দিতো বউয়ের কামাই খাচ্ছি ।খুব লজ্জা লাগতো কিন্তু আমি অসহায়। লাষ্ট কবে আমরা ফিজিক্যালি ইন্টিমেট হয়েছি তাও মনে নেই আমার। পাঁচ-ছয় মাসের ভিতরে জানতেও চাইনি যে আমার পকেটে কোন টাকা আছে কিনা । আমি বাইরে ছুটে কি করে বেড়াচ্ছি। বন্ধুদের সঙ্গে ও তেমন একটা আড্ডা দিতাম না কারণ ওরা ৩দিন খরচ করলে আমার তো একদিন করা লাগবে! যে ছেলে টাকার অভাবে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে সে কি করে বন্ধুদের চায়ের বিল দিবে।তাই ওদেরকে এড়িয়ে চলতাম। যদিও আমায় দুই জন বেস্ট ফ্রেন্ড [ রিয়াদ,শান্ত ] সব সময় আমাকে সব দিকের থেকে সাপোর্ট দিত ওদের সাধ্য মত। সত্যি বলতে ওদের কাছে থেকে আমি যতটুকু মেন্টালি সাপোর্ট পেয়েছি তত টা আমি অর্থির কাছে থেকে পায়নি। এর ভিতরে অর্থির আবার প্রমোশন হলো অনেক রাত করে বাসায় ফিরে প্রায় সময় বাইরে থেকে ডিনার করে আসে। আমি খেয়েছি কিনা তার খোজঁ নেবার প্রয়োজন ও মনে করে না। আর করবেই বা কেন আমি তো এখন ইউজ লেস পার্সন। অনেক বার সুইসাইড করতে গিয়েছি কিন্তু বার বার মনে হয়েছে এতো তাড়াতাড়ি হেরে যাবো?
মাস খানেক হলো আমি,রিয়াদ আর শান্ত চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। ওরাও ব্যাবসা শুরু করবে । আমিও অনেক কষ্ট করে মার্কেট থেকে মোটামুটি বেশ কিছু টাকা রিকভারি করতে পেরেছি। ওরা আমাকে ওদের সাথে পার্টনার করে নিল। আমরা তিন জন মিলে একটা আইটি ফার্ম শুরু করলাম । ফার্মের নাম রাখলাম [ ফ্রেন্ডস আইটি পার্ক ] । আস্তে আস্তে আমাদের ফার্মে মোটা মুটি ভালোই কাজ পেতে শুরু করলো । ফার্মে মালিক ও আমরা আর কর্মচারী আমরা তিনজন। তাই থাকা খাওয়া ঘুম সব অফিসে ভিতরেই আমাদের । আমার দিন মোটামুটি আবার ফিরতে শুরু করলো । এখন সংসারে টুকটাক খরচ এর টাকা আমি দেয়। অর্থির ব্যবহার ও পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। দুই বছরের মধ্যে আমাদের ফার্ম একটি নাম করা একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আজ আমাদের আন্ডারে প্রায় ৭০-৭৫ জন কর্মচারী কাজ করে। যে মানুষ দুইটা বছর আমার সাথে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলেনি সে এখন ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নেয়। কি খাবো, কখন বাড়ি ফিরবো। আজ আমার জীবনের সব আবার আগের মত হয়ে গেছে শুধু একটা জিনিস ছাড়া সেটা হল আগে অর্থির দিকে তাকালে মনে হত আমি আমার জান্নাত দেখছি, কিন্তু এখন মনে হয় আমি কোন গিরগিটি মানুষের দিকে তাকিয়ে আছি। টাকার একটা সাইলেন্ট পাওয়ার আছে, যে কিনা সবাইকে পরিবর্তন করে দিতে পারে ।
#কাগজের_ভালোবাসা
Nayan Hasan
লেখার বানানে কোন ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম।