24/03/2024
মা যখন দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন,তখন তিন্নির বয়স চার বছর।তিন্নির নতুন দাদী তাকে মা'র বাসর ঘর থেকে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারেননি। তিন্নি কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মা'র কাছে চলে গিয়েছিল।
মা'কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো,
– “ আমি তোমার কাছে থাকব, মা। তুমি ছাড়া আমার ঘুম আসে না। ”
মা তিন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে হেসেছিলেন।বলেছিলেন,
– “ আচ্ছা, তুমি আমার কাছেই থাকো। ”
তিন্নির নতুন বাবা আরাফাত হাসান ঘরে প্রবেশ করেই মা'কে বলেছিলেন,
– “ তিন্নি এখানে কেন? ওঁকে মা'র কাছে পাঠিয়ে দাও। ”
মা বলেছিলেন,
– “ কান্নাকাটি করছে। থাক না আমার কাছে! ”
তিন্নি বলেছিল,
– “ এই লোক, আপনি এখানে কেন?মা'র ঘরে আপনি কেন?বেরিয়ে যান।এ ঘরে আমি আর মা থাকব। ”
সেদিন আরাফাত হাসান মা'র কথা শুনেননি। তিন্নিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন।তিন্নি কত কেঁদেছিল।লোকটার গালে গলায় নখের আঁচড় বসিয়েছিল।তা-ও শেষ রক্ষা হয়নি।লোকটা তিন্নিকে একটা অন্ধকার ঘরে বন্দি করে দিয়েছিলো।
নতুন বাবা তিন্নিকে কখনোই দেখতে পারতেন না। সামনে পড়লেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতেন। তিন্নিও তার সামনে যেত না। তবে সুযোগ পেলেই লুকিয়ে লুকিয়ে মা'র কাছে চলে যেত। মা'কে জড়িয়ে রাখত অনেক্ষণ। মা-ও তিন্নিকে মন ভরে আদর করে দিতেন। অল্প সময়ের আদরে তিন্নির সব দুঃখ শেষ হয়ে যেত।
বছরখানেক বাদেই তিন্নির ছোটো ভাইয়ের জন্ম হয়।তার নাম রাখা হয় আবু হাসান।তার পর থেকে শুরু হয় তিন্নির জীবনের দুর্দশা। মা সব সময় আবু হাসানকে নিয়ে পড়ে থাকতেন।তাকে আদর করতেন।রাতের বেলা তাকে পাশে নিয়ে ঘুমাতেন।অপরদিকে তিন্নিকে দেখা মাত্রই গালাগাল করতেন।দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতেন।তিন্নির খুব রাগ হত।হিংসে হত।
একদিন মা তাকে বিনা কারণে মারধর করেছিলেন।তিন্নি রেগে গিয়ে কোলের শিশু আবু হাসানের হাত কামড়ে দিয়েছিল।যার শাস্তি হিসেবে মা তিন্নির হাত মুখ বেঁধে চামড়ার বেল্ট দিয়ে পি'টিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, এ ঘটনার পর টানা চারদিন তাকে খাবার দেওয়া হয়নি।
আঠারো বছর বয়স হতেই তিন্নিকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো।বাবা-মা চাইলেই তিন্নিকে ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারতেন।কিন্তু তারা তা করেননি।তারা চাননি তিন্নির দুঃখ, দুর্দশা কমুক। আর তাই তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন রিকশা চালকের কাছে।সেই রিকশা চালক কাউসার মিয়া। চব্বিশ বছর বয়সের রোগা-সোগা একটা ছেলে।ঘরে অসুস্থ মা।ছোটো ছোটো চারটি বোন। কাউসার রিকশা চালিয়ে যা পায়