07/07/2025
👥নাগরিকদের প্রণোদনা দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।🇰🇷
অভ্যন্তরীণ ভোগ বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙা করতে বড় পরিসরের নগদ সহায়তা কর্মসূচি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সরকার এই উদ্যোগকে “ভোগ কুপন” নামে অভিহিত করেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পরিষদ ৩১.৮ ট্রিলিয়ন ওয়ন (প্রায় ২৩.৩ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের একটি সম্পূরক বাজেট অনুমোদন করেছে। এই বাজেটের আওতায় আগামী ২১ জুলাই থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নগদ সহায়তা কর্মসূচি চালু থাকবে।
কোরিয়া সরকার জানিয়েছে, ১৮ জুনের মধ্যে নিবন্ধিত প্রত্যেক দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক এককালীন ১,৫০,০০০ উয়ন (প্রায় ১১০ ডলার) পাবেন। এই অর্থ সরবরাহ করা হবে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, প্রিপেইড কার্ড কিংবা স্থানীয় সরকারের জারি করা উপহার ভাউচারের মাধ্যমে। দুর্বল গোষ্ঠীগুলোর জন্য অতিরিক্ত সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি থাকা পরিবার এবং একক-অভিভাবক পরিবার ৩০০,০০০ উয়ন (২২০ ডলার), মৌলিক জীবনযাত্রার ভাতা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা ৪০০,০০০ উয়ন (২৯০ ডলার), গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা অতিরিক্ত ৫০,০০০ উয়ন, যা ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রচারে সহায়তা করবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
প্রণোদনার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে ২২ সেপ্টেম্বর এবং চলবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এই ধাপে সর্বনিম্ন আয়ের ৯০ শতাংশ পরিবার পাবে ১,০০,০০০ ওয়ন (৭৩ ডলার)। যাদের জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা প্রিমিয়াম কম, তাদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
দক্ষিণ কোরিয়া ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে প্রযুক্তি খাত ভালো পারফর্ম করলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকোচনের মুখে পড়ে এবং তৃতীয় প্রান্তিকে পুনরুদ্ধারের গতি ধীর হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ডিসেম্বরে সামরিক আইন জারি হয় এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইয়োল অভিশংসিত হন।
নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং ৪ জুন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে গুরুত্ব দিয়ে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছেন—নগদ সহায়তা, ডিজিটাল ভাউচার, ও এআই খাতে বিনিয়োগের মতো কর্মসূচি চালু করেছেন।
অর্থনীতিবিদদের একাংশ এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলছেন, এটি দেশের আর্থিক ভারসাম্যকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার পাশাপাশি জাতীয় ঋণ জিডিপির ৪৯.১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে এবং রাজস্ব ঘাটতি ৪.২ শতাংশে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে সরকারি টাস্কফোর্সের প্রধান এবং উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিম মিন-জে আশাবাদী। তিনি বলেন, “এই তহবিল সঠিকভাবে বিতরণ করা হবে এবং তা অভ্যন্তরীণ ভোগ বাড়াতে ও অর্থনীতিকে গতি দিতে সহায়ক হবে।”
এশিয়ার চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হয় এবং তা অন্য দেশের জন্য রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।