13/02/2023
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শূন্য থেকে পথচলা শুরু করেনি। এর রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম স্কুলের পরিবর্তিত রূপই আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৭২ সালে বালিয়াটির জমিদার কিশোরী লাল রায় তাঁর পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে এ বিদ্যাপীঠের নামকরণ করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষিপ্ত রূপ জবি) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সদরঘাটে অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. সিরাজুল ইসলাম খান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৮৫৮ সালে এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশ করার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বনাম জগন্নাথ কলেজ। এই নামেই বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ সময় জুড়ে পরিচিত ছিল। ১৮৫৮ সালে দীননাথ সেন, প্রভাতীচরণ রায়, অনাথবন্ধু মল্লিক এবং ব্রজসুন্দর কৈত্র ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৭২ সালে এর নাম বদলে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন।
১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজে পরিণত হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা শুরু হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গ্রন্থাগারের বই পুস্তক, জার্নাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। পুরানো ঢাকার নারী শিক্ষায় বাধা দূর করতে ১৯৪২ সালে সহশিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৪৮ সালে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে ১৯৪৯ সালে আবার এ কলেজে স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান পুনরায় কো-এডুকেশন চালু করেন। ১৯৬৮ সালে এটিকে সরকারীকরণ করা হয়, কিন্তু পরের বছরেই আবার এটি বেসরকারী মর্যাদা লাভ করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জগন্নাথ কলেজে পাকিস্তানি সেনারা হামলা চালায়। ছাত্ররা অনেকে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রঙ্গনে গণহত্যা চালানো হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জগন্নাথের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী শহীদ হন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। জগন্নাথ কলেজে পাকিস্থানি সেনাদের ক্যাম্প করা হয়। যুদ্ধ শেষে এখানে গণকবরের সন্ধান মেলে; উদ্ধার করা হয় কয়েক ট্রাক ভর্তি মানব কঙ্কাল। ১৯৮২ সাল থেকে শুরু হয় এলাকার প্রভাবশালীদের জগন্নাথ কলেজের হল দখলের পাঁয়তারা। ছাত্রদের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ বাধে বারবার। প্রথমে বেদখল হয়ে যায় কুমারটুলি ছাত্রাবাস। এরপর একের পর এক বেদখল হয় ৮৪ জিএল পার্থ লেন, কুমারটুলিতে (ওয়াইজঘাট ষ্টার সিনেমা হলের পিছনে) অবস্থিত হলগুলো। ১৯৯২ সালে ১৪টি ছাত্রাবাসের মাত্র ৩টি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাকিগুলো পুলিশ ও এলাকাবাসীরা দখল করে নেয়। ৩টি ছাত্রাবাসের দুটি (মাহমুদা স্মৃতি ভবন ও এরশাদ হল) বর্তমানে ভেঙ্গে মসজিদ ও কলা অনুষদ করা হয়েছে।
২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশের মাধ্যমে এটি পুর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে মোট সাতটি অনুষদের অধীনে ৩৮ টি বিভাগের ও ২টি ইন্সিটিউটের মাধ্যমে এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয়তন ৩০ একর। ২০শে অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট সাতটি অনুষদে ৩৮টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য সংগঠন
সম্পাদনা
উদীচী
বিএনসিসি
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন
বাংলাদেশ ছাত্র মজলিশ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (২০ জুন,২০০৬)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ - জবিচস (২০০৯)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব (১ অক্টোবর,২০১৪)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি ( ২৩ নভেম্বর ২০১৭)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি (জেএনইউডিএস)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
বাঁধন
কনজ্যুমার ইউথ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রদের থাকার সুবিধার্থে ডিসেম্বর, ২০১১ইং তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট ১০টি হল বা ছাত্রাবাস রয়েছে; তন্মধ্যে ১টি ছাত্রীদের হল। উল্লেখ্য এই সবগুলো হলই বেদখল হয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই। হলগুলো হলো:
বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল
ড. হাবিবুর রহমান হল
বাণী ভবন হল
আব্দুর রহমান হল
শহীদ আনোয়ার শফিক হল
সাইদুর রহমান হল
রউফ মজুমদার হল
শহীদ আজমল হোসেন হল
বজলুর রহমান হল
নজরুল ইসলাম খাঁন হল
শহীদ শাহাবুদ্দিন হল।
স্পেনের সিমাগো ইনস্টিটিউশন র্যাংকিং-২০২২ - এর আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রসায়ন বিষয়ে গবেষণা সূচকে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
সিমাগো ইনস্টিটিউশন র্যাংকিংয়ে দেশসেরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় [মুক্ত ক্যাম্পাস ডট কম, ১০ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২২।]
নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন:
ক্রম নাম থেকে পর্যন্ত
১ এ. কে. এম. সিরাজুল ইসলাম খান ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ২৬ জুলাই ২০০৮
আবু হোসেন সিদ্দিক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ২৭ জুলাই ২০০৮ ২৫ অক্টোবর ২০০৮
২ আবু হোসেন সিদ্দিক ২৬ অক্টোবর ২০০৮ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯
৩ মেসবাহউদ্দিন আহমেদ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
৪ মীজানুর রহমান ২০ মার্চ ২০১৩ ১৯ মার্চ ২০২১
কামালউদ্দীন আহমদ (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ২০ মার্চ ২০২১ ১ জুন ২০২১
৫ মো. ইমদাদুল হক ২ জুন ২০২১ বর্তমান।
#ঢাবি, #ঢাকা_বিশ্ববিদ্যালয়, #বাংলাদেশ, #বাংলাদেশ, #বাংলাদেশের, #ইতিহাস, #ঐতিহ্য, #সংস্কৃতি, #বাংলাদেশী, #জবি, #জগন্নাথ, #সংস্কৃতি, #ঐতিহ্য, #শাহাবুদ্দিন_চুপ্পু, #মসজিদের_শহর, #বায়তুল_মোকাররম, #জাতীয়_মসজিদ, #ঢাবি, #ঢাকা_বিশ্ববিদ্যালয়, #বায়তুল, #জগন্নাথ_বিশ্ববিদ্যালয়