30/07/2025
১. হলুদ পাগলের শহর
ঢাকার উত্তপ্ত দুপুর। মানুষ ব্যস্ত, গাড়ি জ্যামে হাহাকার করছে। অথচ এক যুবক হাঁটছে খালি পায়ে, হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে, চোখে অনন্ত বিস্ময়। তাঁর নাম হিমালয়, ডাকনাম হিমু। বাসা নাই, মোবাইল নাই, ব্যাংক ব্যালেন্স নাই। আছে শুধু একরাশ অলসতা আর গভীর ভাবনা। হিমুর বিশ্বাস, "জীবনটাকে সহজ করতে গেলে কিছু হারাতে হয়—অন্তত সমাজের চোখে স্বাভাবিকতা।"
আজও সে বেরিয়েছে উদ্দেশ্যহীন হাঁটতে। কোথায় যাবে সে জানে না, জানার প্রয়োজনও বোধ করে না।
> – "তুই কি পাগল?" এক ভ্রু কুঁচকে তাকানো পথচারীর প্রশ্ন।
– "না, আমি হিমু," হালকা হাসিতে উত্তর হিমুর।
---
২. রুপা এবং চুপচাপ ভালবাসা
রুপা তার শৈশবের বন্ধু। সে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়ায়, পরিপাটি জীবন, কর্পোরেট ঢাকার বাইরে স্বপ্ন দেখে না। অথচ এই রুপাই মাঝে মাঝে হিমুর জন্য অপেক্ষা করে বারান্দায়। হিমু কখনো ভালোবাসা স্বীকার করে না, আবার দূরেও যায় না।
একদিন রুপা বলে—
> – “হিমু, তুমি কি কখনো স্থির হবে না?”
– “স্থিরতা মৃতদের জন্য, রুপা। আমি এখনো বেঁচে আছি।”
রুপা চুপ থাকে। তার চোখে জল। হিমু দেখে, কিছু বলে না।
---
৩. হিমুর দেখা স্বপ্ন
হিমুর বাবা ছিলেন এক অদ্ভুত বিজ্ঞানী। তিনি হিমুকে বানাতে চেয়েছিলেন একজন "সুপার হিউম্যান"—যার কোনো ভয় থাকবে না, কোনো ভালোবাসা থাকবে না।
তাঁর সেই এক্সপেরিমেন্টের ফল এখন হিমু। না সে ভয় পায়, না কাউকে ভালোবাসতে জানে। কিন্তু মাঝে মাঝে রাতে সে স্বপ্ন দেখে—সে একটা হলুদ আলোয় ঘেরা শহরে হেঁটে যাচ্ছে, আর কেউ একজন হাত ধরে বলছে, “থেমে যাও, হিমু।”
---
৪. পুলিশ, পাগল আর প্রমাণ
একদিন হিমুকে পুলিশ ধরে। কারণ: এক ধনী লোকের বাড়ির সামনে বসে ছিল গুনগুন করে গান গেয়ে। জিজ্ঞেস করে, “তুই কী করিস?”
> – “আমি ভাবি,” হিমু উত্তর দেয়।
– “মানে?”
– “মানে আমি ভাবি, মানুষ কেন মানুষ হতে পারলো না।”
পুলিশ জানে না কী মামলা দেবে। শেষে বলে, “তুই পাগল না বিপদজনক সেটা বুঝতে পারি না।”
---
৫. শেষ পাতা: রুপার চিঠি
একদিন রুপা চলে যায়—বিদেশে, পড়াতে। যাবার আগে হিমুর জন্য রেখে যায় এক চিঠি।
> “তুমি হয়তো কখনো কারো হতে পারবে না, হিমু। কিন্তু জানো, তুমিই একমাত্র মানুষ যাকে আমি নিঃশব্দে ভালোবেসেছি।”
হিমু চিঠিটা পড়ে, হাসে, তারপর ফেলে দেয় এক ভিখারির হাতে—“ভালোবাসা দিয়ে কী হবে? তুই নে, হয়তো তোকে কেউ ভালোবাসে।”
---
হিমুর জীবন এমনই। এক রহস্যময় যাত্রা—যেখানে কোনো গন্তব্য নেই, নেই স্থিরতা, নেই জয়ের গল্প।
তবুও, সে বেঁচে থাকে—হলুদ পাঞ্জাবির ভেতর এক আলোর মানুষ হয়ে।
゚