14/09/2025
আমাদের ব্যাচে এক বন্ধু ছিলো, নাম রিদওয়ান। ছেলেটা খুবই ট্যালেন্টেড, পড়াশোনা, ক্রিকেট-ফুটবল, বন্ধুদের আড্ডা—সব জায়গায় সে ছিলো সবার প্রিয়। কিন্তু একটা জিনিস তাকে আলাদা করেছিলো, সে কখনো নামাজ পড়তো না। আমরা মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করলে বলতো, “ভাই, আল্লাহ তো আমাদের অন্তর দেখে, নামাজ না পড়লেও সমস্যা নাই। আমি তো খারাপ কিছু করি না।”
একদিন তার বাসায় গেলাম। খাওয়ার সময় দেখি তার মা চুপচাপ কাঁদছেন। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “বাবা, আমি সারাদিন রিদওয়ানের জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তাকে নামাজে ফিরিয়ে আনুক। আমি ভয় পাই, যদি আমার ছেলেটা এইভাবেই থেকে যায়।” কথাগুলো শুনে আমার মনটা কেমন যেনো হয়ে গেল, কিন্তু রিদওয়ান তখনো উদাসীন।
কয়েক মাস পর মাস্টার্স পরীক্ষার সময় হঠাৎ রিদওয়ান গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো। ডাক্তার বললো লিভারে সমস্যা। কয়েকদিন হাসপাতালে থেকে সে একেবারে দুর্বল হয়ে গেলো। এক রাতে সে আমাকে ফোন দিলো, কণ্ঠ কাঁপছিলো—“ভাই, হাসপাতালে রাতে আমি একা হয়ে যাই। বুকের ভেতর ভয় লাগে, মনে হয় যদি এখন মারা যাই? আল্লাহর সামনে দাঁড়ালে আমি কী দেখাবো? আমি তো একবারও নামাজের কদর করি নাই।”
সে আবার বললো, “গত রাতে আম্মু আমার মাথায় হাত রেখে দোয়া করছিলেন। বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আমার ছেলেকে মাফ করে দিন, হিদায়াত দিন।’ ভাই, আমি শপথ করে বলছি—আমার জীবনে এর চেয়ে শক্তিশালী কিছু আমি অনুভব করি নাই। মনে হলো আল্লাহ আমাকে আবার সুযোগ দিচ্ছেন।”
হাসপাতাল থেকে ফেরার পর রিদওয়ান বদলে গেলো। যে ছেলেটা নামাজকে গুরুত্ব দিতো না, সে এখন আজানের আগেই মসজিদে হাজির হতো। মায়ের সামনে কুরআন নিয়ে বসতো। বন্ধুদের বলতো, “দোস্ত, সাফল্য শুধু ট্যালেন্ট বা পরিশ্রমে না, বরকত আসে মায়ের দোয়া আর আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকে।”
আমাদের অনেকে তখনো মজা করতো, “এতো ধার্মিক হইছিস কবে থেকে?” রিদওয়ান শুধু হাসতো আর বলতো, “ভাই, জানাজায় তো সবাইকে যাবে। তখন কেউ দাঁড়িয়ে বলবে না—ও ভালো ক্রিকেট খেলতো। বরং যদি আল্লাহ মায়ের দোয়ার বরকতে আমাকে মাফ করে দেন, তখনই হবে আসল সাফল্য।”
রাসূল ﷺ বলেছেন: “তিন জনের দোয়া কখনো ফেরত দেওয়া হয় না: মুসাফিরের দোয়া, মজলুমের দোয়া এবং পিতামাতার দোয়া সন্তানের জন্য।” (তিরমিযি, হাদিস ১৯০৫) আরেক হাদিসে এসেছে, “তোমার জান্নাত হলো তোমার মায়ের পায়ের নিচে।” (নাসায়ী, হাদিস ৩১০৪)
আমরা অনেক সময় ভাবি দুনিয়ার সাফল্য শুধু মেধা আর কষ্টের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আল্লাহর বরকত ছাড়া কিছুই হয় না। মায়ের দোয়া হলো সন্তানের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আর নামাজ হলো সেই ঢাল, যা দুনিয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করে আর আখেরাতে মুক্তির পথ দেখায়।