খুলনা বিভাগ বাংলাদেশের আটটি বিভাগের মধ্যে একটি এবং এটি দেশের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুয়ায়ী, বিভাগটির আয়তন ২২,২৮৫ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১৫,৫৬৩,০০০ জন। খুলনা বিভাগের সদর দপ্তর খুলনা শহর। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পরে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। খুলনা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে রূপসা নদী এবং ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রাচীনতম নদী বন্দরগুলোর মধ্যে খুলনা অন্যতম। খুলনা বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় খুলনা শহরকে শিল্প নগরী হিসেবে ডাকা হয়। খুলনা শহর থেকে ৪৮ কি.মি. দূরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা সমুদ্র বন্দর অবস্থিত। পৃথিবী বিখ্যাত উপকূলীয় বন সুন্দরবন খুলনা বিভাগের দক্ষিণাংশে অবস্থিত। খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় সুন্দরবনের বিস্তৃতি ঘটেছে। খুলনাকে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার বলা হয়।[রাজধানী ঢাকা থেকে খুলনা শহরের দূরত্ব সড়কপথে ৩৩৩কি.মি.। রাজধানী সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সংগে স্থলপথ, আকাশপথ, জলপথ ব্যবহার করা যায়। ১৯১২ সালে থেকে অত্র অঞ্চলে নদীপথে স্টিমার (স্টিমবোট) চলাচল করে।
ভৌগলিক অবস্থান~ খুলনা বিভাগ এর পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমানা, উত্তরে রাজশাহী বিভাগ, পূর্বে ঢাকা বিভাগ ও বরিশাল বিভাগ এবং দক্ষিণে বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন নামে পরিচিত সুন্দরবন সহ বঙ্গোপসাগরের উপর তটরেখা রয়েছে। এটি গঙ্গা নদীর দ্বীপ বা গ্রেটার বেঙ্গল ডেল্টার একটি অংশবিশেষ। অন্যান্য নদীর মধ্যে রয়েছে মধুমতি নদী, ভৈরব নদী ও কপোতাক্ষ নদী। এছাড়াও অঞ্চলের বঙ্গোপসাগরের কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে। পৃথিবীর মানচিত্রে খুলনা বিভাগের অবস্থান ২১০৪০' উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৪০১২ উত্তর অংশে এবং ৮৮০৩৪' পূর্ব দ্রাঘিমা হতে ৮৯০৫৭' পূর্ব দ্রাঘিমায়।
১৯৯৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলার শহরের শিববাড়ী মোড় সংলগ্ন পাবলিক হলের পাশে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর (Khulna Divisional Museum) প্রতিষ্ঠা করা হয়। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থান ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন স্থাপনার আলোকচিত্র এই জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ। যশোরের ভরত ভায়ানা, ঝিনাইদহের বারবাজার ও বাগেরহাটের খান জাহান আলী সমাধী সৌধের মতো বিভিন্ন জায়গা খননের ফলে প্রাপ্ত দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে খুলনা বিভাগীয় জাদুঘরে। এছাড়া খুলনা বিভাগীয় জাদুঘরে গুপ্ত, পাল, সেন, মোঘল ও ব্রিটিশ আমলের নানা ধরনের পুরাকীর্তির নিদর্শন, পোড়ামাটি,কস্টি পাথর ও কালো পাথরের মূর্তি, মোঘল আমলের স্বর্ণ ও রূপার মুদ্রা, তামা, লোহা, পিতল, মাটি ও কাচের তৈজসপত্র, বিভিন্ন ধাতুর তৈরি খেলনা, অস্ত্র ও ব্যবহার সামগ্রী, ক্যালিগ্রাফি ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাচীন সংস্কৃতির নানা নিদর্শন প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে। বর্তমানে খুলনা বিভাগীয় জাদুঘরটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
শহীদ হাদিস পার্ক ~ শহীদ হাদিস পার্ক (Shahid Hadis Park) বিভাগীয় শহর খুলনার বাবুখান রোডে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক পার্ক, যা ১৮৮৪ সালে ‘খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্ক’ প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থানে শহীদ শেখ হাদিসুর রহমান বাবুর নামে নামকরণ করা হয়। শহীদ হাদিস পার্কে ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুকরণে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। হাদিস পার্কে রয়েছে বিশাল লেক। লেকের উপর শহীদ মিনার ও পানির ফোয়ারা তৈরী করা হয়েছে। এছাড়াও শহীদ হাদিস পার্কে নির্মিত পর্যবেক্ষন টাওয়ার থেকে এক নজরে খুলনা শহরটাকে দেখা যায়।
শহীদ হাদিস পার্কের ইতিহাস
১৮৮৪ সালে খুলনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠা পর নাগরিকদের বিনোদনের কথা ভেবে পৌরকর্তৃপক্ষ ‘খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্ক’ গড়ে তোলে। পরবর্তীতে ১৯২৫ সালের ১৬ জুন অহিংস আন্দোলনের কান্ডারী মহাত্মা গান্ধী এই পার্কে ভাষণ প্রদান করেন এবং তাঁর সম্মানে পার্কটির নাম পরিবর্তন করে ‘গান্ধী পার্ক’ রাখা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দেশ বিভাজনের পর মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবারো পার্কের নাম বদলে ‘জিন্নাহ পার্ক’ রাখা হয়। ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই পার্কের কাছেই পাকিস্তানি স্বৈরশাসক বিরোধী মিছিলে পুলিশের গুলিতে শেখ হাদিসুর রহমান বাবু শহীদ হন। ২২ ফেব্রুয়ারি শহীদ হাদিসের নামাজে জানাজা শেষে উপস্থিত জনতা “শহীদ হাদিস পার্ক” নামে পার্কটির নামকরণ করেন।
সুন্দরবন~ সুন্দরবন (Sundarban) একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়ের নাম, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার, যা যৌথভাবে বাংলাদেশ ও ভারতে মধ্যে রয়েছে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ সুন্দরবনকে জীব ও উদ্ভিদ জাদুঘর বললেও কম বলা হবে। সুন্দরবনের ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা ও বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। রয়েল বেঙ্গল টাইগার সহ বিচিত্র নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে সুন্দরবন পরিচিত। এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাণী। সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এই বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয়। সুন্দরবনের ভেতরে যেতে হলে নৌপথই একমাত্র উপায়। শীতকাল সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
সুন্দরবনে যা যা দেখার আছে~ জামতলা সৈকত: জামতলায় একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে, এই টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য্যের কিছুটা অংশে একসাথে চোখ বুলানো যায়। আর ভাগ্য ভাল থাকলে এখান থেকে হরিণ কিংবা বাঘের দেখা পেয়ে যেতে পারেন।
মান্দারবাড়িয়া সৈকত: মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের কিছুটা অংশ এখনো অনাবিষ্কৃত বলে মনে করা হয়। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়।
হীরন পয়েন্ট: হীরন পয়েন্টের কাঠের তৈরি সুন্দর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হরিণ, বানর, গুইসাপ ও কুমির দেখা পাওয়া যায়। এখানেও মাঝে মাঝে বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলে।
দুবলার চর: সুন্দরবন এলাকার মধ্যে ছোট্ট একটি চর হচ্ছে দুবলার চর। দুবলার চরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী গিয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে।
কটকা বিচ: কটকা সী বিচ অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর। এখানে বেলাভূমি জুড়ে আঁকা থাকে লাল কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম।
ঢাকা থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা~ ঢাকা থেকে সরাসরি খুলনা যাওয়ার বাস, ট্রেন এবং লঞ্চ ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা থেকে সোহাগ, হানিফ ও ঈগল পরিবহনের বাস নিয়মিতভাবে ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুলনা যেতে প্রায় ৮ ঘন্টা লাগে। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে খুলনা যাবার বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ রয়েছে।খুলনা থেকে সুন্দরবন দেখতে হলে ৫০ কিলোমিটার দূরে মংলায় যেতে হবে। খুলনা থেকে মংলা যাওয়া প্রাইভেট গাড়ি ও বাস রয়েছে। মংলা ঘাট থেকে ট্রলার কিংবা লঞ্চ ভাড়া নিয়ে দুই ঘন্টায় সুন্দরবনের করমজল যেতে পারবেন। চাইলে সকাল বেলা খুলনা থেকে মংলা হয়ে সুন্দরবন দেখে সন্ধ্যায় খুলনা ফিরে আসতে পারবেন।তবে সুন্দরবন দেখতে যাওয়ার সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হচ্ছে কোন ভাল ট্যুর কোম্পানির প্যাকেজ নিয়ে ঘুরতে যাওয়া। চলুন এমন কয়েকটি ট্যুর কোম্পানির নাম ও ফোন নাম্বার জেনে নেই।
ডিঙি ও ভেলা ভেসেলের বেঙ্গল ট্যুরস লি. হলিডেস ট্যুর ফোন- ০১৫৫২৫৫৫৫৫০
দি গাইড ট্যুরস লি. ফোন-০১৭১১৫৪০৪৩১
খুলনার বাদাবন ও ওটি আলী ভেসেল পরিচালক:
রূপান্তর ইকো ট্যুরিজম লি. ফোন-০১৭১১৮২৯৪১৪
সাতক্ষীরার তিনটি ভেসেল পরিচালনাকারী:
বর্ষা ট্যুরিজম, ফোন ০১৭১৫২৫১৯৬৩
সুন্দরবন ওয়ার্ন্ডার্স এন্ড এডভেঞ্চার্স লিমিটেড, ফোন ০১৭১১৪৩৯৫৫৭
রয়েল গন্ডোলা ভেসেলের রয়াল ট্যুর, ফোন ০১৭১১২৯৫৭৩৮
সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজের সাধারণ খরচ: খাবারের মান ও জাহাজের উপর নির্ভর করে একটি মাঝারি ধরনের ট্যুরে সাধারণত জনপ্রতি ৫০০০ থেকে ৮০০০ টাকা খরচ হয়। এক মাস আগে থেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে বুকিং নিশ্চিত না করলে ভ্যাসেল পাওয়া কষ্টকর।
সুন্দরবন ভ্রমণ খরচ খরচ
অভয়ারণ্য এলাকায় দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতিদিনের জনপ্রতি ভ্রমণ ফি – ১৫০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য – ৩০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি – ১৫০০ টাকা। অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটকদের ভ্রমণ ফি – ৭০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রী- ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ভ্রমণ ফি – ১০০০ টাকা ও গবেষকদের জন্য ভ্রমণ ফি – ৪০ টাকা। করমজলে দেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ৩০০ টাকা।
হেলিকপ্টার/সী প্লেনের জন্য এককালীন ফি লাগে ৩০ হাজার টাকা, নবায়ন করতে ফি দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। ১০০ ফুটের ঊর্ধ্বে লঞ্চের জন্য দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা, নবায়ন ফি দিতে হয় চার হাজার টাকা। ৫০ ফুট থেকে ১০০ ফুট লঞ্চের জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা দিতে হয় আর নবায়ন ফি লাগে তিন হাজার টাকা। ৫০ ফুটের নিচে নৌযানের জন্য সাড়ে সাত হাজার টাকা ও এদের জন্য নবায়ন ফি লাগে আড়াই হাজার টাকা। সাধারণ ট্রলার তিন হাজার টাকা ফি-তে সুন্দরবন অবস্থান করতে পারে, এদের নবায়ন ফি – ১৫০০ টাকা। স্পিডবোটের জন্য ফি দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা, নবায়ন করতে লাগে দুই হাজার টাকা। জালিবোট যেগুলো ট্যুরিস্ট বোট হিসাবে খ্যাত সেগুলোর জন্য এককালীন ফি দিতে হয় দুই হাজার টাকা ও নবায়ন ফি এক হাজার টাকা লাগে।
বন বিভাগের ভ্রমণ ফি ছাড়াও অন্যান্য খরচের মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন গাইডের জন্য ফি ৫০০ টাকা, নিরাপত্তা গার্ডদের জন্য ফি ৩০০ টাকা, লঞ্চের ক্রুর জন্য ফি ৭০ টাকা, টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা। ভিডিও ক্যামেরা বাবদ দেশি পর্যটকদের ফি দিতে হয় ২০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের ফি দিতে হয় ৩০০ টাকা।সুন্দরবনে রাস পূর্ণিমার সময় তীর্থযাত্রীদের ৩ দিনের জন্য জনপ্রতি ফি দিতে হয় ৫০ টাকা, নিবন্ধনকৃত ট্রলার ফি ২০০ টাকা, অনিবন্ধনকৃত ট্রলারের ফি ৮০০ টাকা এবং প্রতিদিন অবস্থানের জন্য ট্রলারের ফি ২০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
সুন্দরবনের টাইগার পয়েন্টের কচিখালী, হিরণপয়েন্টের নীলকমল এবং কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। নীলকমলে থাকতে চাইলে দেশি পর্যটকদের প্রতি কক্ষের জন্য তিন হাজার টাকা লাগবে আর বিদেশিদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষের জন্য লাগিবে তিন হাজার টাকা আর বিদেশিদের জন্য লাগবে পাঁচ হাজার টাকা। কটকাতে প্রতি কক্ষ নিতে দুই হাজার টাকা লাগবে এবং বিদেশিদের জন্য রুম প্রতি পাঁচ হাজার টাকা লাগবে।
বাগেরহাটে থাকার জন্য তেমন আবাসিক হোটেল ব্যবস্থা নেই। রেল রোডে মমতাজ হোটেলে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান তুলনামূলক ভাল, তবে খরচ একটু বেশি। এছাড়া মমতাজ হোটেলের আশেপাশে অন্য হোটেলগুলোতেঅ থাকার জন্য খোঁজ নিতে পারেন।মংলায় থাকার জন্যে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল আছে। পশুর বন্দরে পর্যটকদের থাকার জন্য কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে।সাতক্ষীরা শহরে থাকতে চাইলে এখানে কিছু সাধারণ মানের হোটেল পাবেন। শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।খুলনা নগরীতে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন্, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সুন্দরবন ভ্রমণকালে অবশ্যই যা লাগবে
নিরাপদ খাবার পানি সাথে রাখুন, কারণ সুন্দরবনে খাবার পানির তেমন কোন উৎস নেই।
প্রয়োজনীয় ঔষধ ও প্রাথমিক চিকিৎসার জিনিসপত্র সাথে রাখুন।
অভিজ্ঞ একজন টুর অপারেটরের ব্যবস্থা করুন।
সুন্দরবন ভ্রমণে নিরাপত্তার জন্য সুদক্ষ ও সশস্ত্র বন প্রহরী সাথে রাখুন।
খুলনা বিভাগের মংলা উপজেলার দুবলার চর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে হিরণ পয়েন্ট ও দুবলার চরের মাঝখানে বঙ্গোপসাগরে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড(Bongobondhu Island) বা বঙ্গবন্ধু দ্বীপ (Bongobondhu Dwip) অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চরটির আয়তন প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার। আশেপাশের স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড খুঁজে পেলেও চর আবিষ্কারের সুনিদৃষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ১৯৯২ সালে মালেক ফরাজী নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক ভক্ত দুজন সাথী নিয়ে এই দ্বীপে নামেন এবং পরবর্তীতে তিনি সেখানে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড নামের একটি সাইন বোর্ড লাগিয়ে আসেন।
বঙ্গবন্ধু চরে মহাবিপন্ন প্রজাতির পাখি চামুচঠুঁটো বাটান ও ইউরেশীয় ঝিনুকখোরের দেখা মিলে। ভাগ্য ভাল হলে চরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে দেখা মিলবে ইরাবতী ডলফিনের। পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনাময় বঙ্গবন্ধু চর বা বঙ্গবন্ধু দ্বীপে পর্যটন কেন্দ্র, ওয়াচ টাওয়ার ইত্যাদি নির্মাণের বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে।
কটকা সমুদ্র সৈকত~ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনের বৈচিত্রময় স্থান গুলোর মধ্যে কটকা অন্যতম। মংলা বন্দর থেকে কটকার দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য কটকাতে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার। কটকা ওয়াচ টাওয়ার থেকে সোজা উত্তরে কটকা সমুদ্র সৈকত। স্থানীয়দের কাছে কটকা সমুদ্র সৈকতটি জামতলা সমুদ্র সৈকত হিসাবে পরিচিত। বেশ নির্জন ও পরিচ্ছন্ন সৈকতের বেলাভূমিজুড়ে চোখে পড়ে কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। কটকা সৈকতটি সোজা পূর্বদিকে কচিখালিতে গিয়ে মিশেছে। এই সৈকতে ঢেউয়ের আকার অত্যন্ত পরিবর্তনশীল এবং অজ্ঞাত চোরাবালি জন্য পানিতে নামা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
লঞ্চ হচ্ছে কটকাতে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম। পর্যটকদের নিয়ে লঞ্চ কটকা খালে নোঙ্গর করা হয়। খালের পশ্চিম পাড়ে রয়েছে কটকা বন বিভাগের কার্যালয়, সেখান থেকে কিছুটা পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেলে ইট বাঁধানো পথের দেখা মিলে। এই পথে সামনে গেলে অপূর্ব বুনো কটকা সমুদ্র সৈকত। সূর্যাস্ত দেখার জন্য কটকা সমুদ্র সৈকত একটি আদর্শ স্থান।
বন বিভাগ কার্যালয়ের পেছনে কাঠের তৈরি টেইলের উত্তর দিকে কেওড়ার বনের একটু নিরিবিলি জায়গায় গেলে অনিন্দ্য সুন্দর চিত্রা হরিণের দেখা পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে বানর, বন্য শুকর, বনবিড়াল এবং নানা প্রজাতির পাখির সাথে শীতকালে কুমির দেখতে পাওয়া যায়। বনের দক্ষিণে তিনটি টাইগার টিলায় প্রায়শই বাঘের পায়ের ছাপ দেখাতে পাওয়া যায়। পূর্বে রয়েছে ঘন বন আর মিঠা জলের পুকুর। এই পুকুরই এখানকার কর্মরত কোস্টগার্ড, ফরেস্ট অফিসার এবং স্থানীয় জেলেদের পানি একমাত্র উৎস।
৪. রবীন্দ্রনাথের শ্বশুড়বাড়ি
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ-পত্নীর আদি-ভিটা এই খুলনাতে। খুলনার ফুলতলায় অবস্থিত রবীন্দ্রনাথের শ্বশুড়বাড়ি খুলনার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মধ্যে একটি। শহর থেকে মাহিন্দ্রতে (ইঞ্জিন চালিত গাড়ি) করে আসা যায় ফুলতলায়। ভাড়া নেবে ৪০ টাকা।
সেখান থেকে যেকোনো অটোকে বললেই নিয়ে যাবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুড়বাড়িতে। এখানে আসার রাস্তাটাও বেশ সুন্দর। গাছপালায় ঘেরা গ্রামের কাঁচা-পাকা রাস্তার স্বাদ পাওয়া যাবে আসার সময়। সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত এই বাড়িখানা বন্ধ থাকে ছুটির দিনগুলোতে। জমিদার বাড়ির আদলে গড়া এই বাড়িখানাতে আছে বেশ কয়েকটি সবুজ জানালা আর বড় বড় পিলার। মোট আয়তন কম হলেও ঘুরতে আসার একটি উত্তম জায়গা এটি।
২. খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
শহর থেকে কাছে কোনো নিরিবিলি জায়গায় বসে আড্ডা-গানে মেতে উঠতে কিংবা প্রিয়জন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে চলে আসা যায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। খুলনার গল্লামারী পর্যন্ত মাহিন্দ্রতে এসে তারপর হেঁটেই যাওয়া যায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা সরাসরি অটো নিয়ে চলে আসা যায় এর মূল ফটকে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অদম্য বাংলা, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় মাঠ, ছোটবড় প্রচুর টং দোকান আর বিভাগীয় ভবন, শিক্ষার্থীদের আবাসন হল। তবে সাধারণ যেকোনো দিনের চেয়ে হাজার গুণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দর দেখায় নববর্ষের দিন। খুব ঘটা করে পালন করা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নববর্ষ উদযাপন করতে প্রচুর মানুষের সমাগম হয় সেদিন। ক্যাম্পাসে বসে নানা রকম বাঙালি স্টল আর পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
৩. রূপসা
কেউ যদি খুলনা এসে বায়না ধরে নৌকায় চড়ে নদীতে ঘুরে বেড়াবে, তবে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে খুলনার ‘রুপসী’ রূপসা নদী। আবার কেউ যদি খুলনায় সোডিয়াম বাতির নিচে একটি সুন্দর সন্ধ্যা কাটানোর ইচ্ছে পোষণ করে, তবে রূপসা নদীর উপরেই আছে রূপসা ব্রীজ।
ভূমি থেকে ৩-৪ তলা উপরের এই ব্রীজ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের অংশ। একদম ব্রীজের উপরে উঠে গেলে সেখান থেকে দেখা যায় পুরো খুলনার অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ। রাতে আর দিনে সে দৃশ্যের ধরণ একদমই আলাদা, দিনে যেটা কর্মব্যস্ত চিত্র রাতে সেটা মিটমিট করে জ্বলতে থাকা হাজারো আলোর সমারোহ। জিরো পয়েন্টের খুব কাছেই অবস্থিত রূপসা ব্রীজ। ব্রীজ থেকে নেমে পাড় থেকে নৌকা ভাড়া করা যায় ঘণ্টা হিসেবে। রাতের বেলায় সে নৌকা ভ্রমণের অপার্থিবতা বেশি অনুভব করা যায়।
৪. ভৈরব নদী
খুলনা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরের এলাকা ফুলবাড়ি। ফুলবাড়ি গেট থেকে বাজারের দিকে গেলেই অনেক ভ্যান পাওয়া যায় ভৈরব যাওয়ার। খুলনায় একটি ছিমছাম বিকেল কাটানো যায় ভৈরব নদীর পাড়ে। কাঠের মিল আছে সেখানে, গেলেই দেখা যাবে প্রচুর গাছের গুড়ি ফেলে রাখা আছে নদীর পাড়ে।
সেই গাছের গুড়ির উপর বসে ভৈরব নদীর মৃদুমন্দ বাতাস উপভোগ করা নিঃসন্দেহে সুন্দর একটা বিকেল কাটানোর জন্য যথেষ্ট। ভৈরবে নৌকা ভাড়া করে ঘুরে আসা যাবে দেড়-দুই ঘণ্টার জন্য। ভাড়া রাখবে ৫০-৬০ টাকা। খুবই কম খরচে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে করা যায় নৌকাভ্রমণ।
ভৈরবের অপর পাড়ে নৌকা নিয়ে যাওয়া যায়। অপর পাড়ে একটি মন্দির আছে যেখানে প্রতি সোমবারে কীর্তনের আয়োজন করা হয়। যদিও এটা হিন্দুদের একটি নৈমিত্তিক অনুষ্ঠান, তবে যে কেউ যোগ দিতে পারবে এখানে । অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা নিয়ে বাংলার এই ঐতিহ্য উপভোগ করা যাবে প্রতি সোমবার ভৈরবের অপর পাড়ে।
৫. বিশ্বরোড বাইপাস ও রংপুর গ্রাম
ফুলবাড়ি গেট থেকে অটো নিয়ে যেকোনো বিকেলে চলে আসা যায় বিশ্বরোড বাইপাসে। রাস্তার চারিদিকে গাছপালা দিয়ে ঘেরা বেশ সুন্দর জায়গা এটি। রাস্তার ধার ধরে বিকালের হাঁটাটাও হেঁটে নেয়া যাবে বাইপাসে।
সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে যে বিষয়টা, এখানে লোকালয় একটু কম বলে রাস্তাটা প্রচুর পরিষ্কার আর নতুন। বাইপাসে গিয়ে হাতের ডানদিকে সামনে এগোতে থাকলে ছোট মতন কালভার্ট পড়বে। সেই কালভার্ট পার হলেই আপনি প্রবেশ করবেন খুলনার রংপুর গ্রামে। খুব সাধারণ এই গ্রামে চাষ হয় তামাক আর পানপাতা। পাকা রাস্তা ধরে এগোতে থাকলে গ্রামের সবুজে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করবে যে কারো। পায়ে হেঁটেই দেখা যাবে পুরো গ্রাম। শহুরে জীবন থেকে মুক্তি পেতে চলে আসা যায় এই গ্রামে।
৬. জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট
বনবিলাস পার্ক
পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো প্রাকৃতিক পার্কে যেতে চাইলে খুলনার অদূরে আছে জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট। ক্যান্টনমেন্টগুলো এমনিতেই সুন্দর হয়, তার উপর এই ক্যান্টনমেন্টের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে জাহানাবাদ পার্ক। জাহানাবাদ পার্ক সাধারণ পার্কের চেয়ে একটু আলাদা।
বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা এই পার্কে আছে চিড়িয়াখানা, দু-তিনটে পুকুর আর গাছের সবুজতায় ঘেরা বসার প্রচুর জায়গা। এই পার্কের প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা। বেশ সমৃদ্ধ এখানকার চিড়িয়াখানাটি। বাংলার রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সারস পাখি, অজগর, বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর পাখি, বানর, হনুমান, কুমির- কী নেই এখানে! পুরো পার্কটা ঘুরে আসতে বেশ সময় লেগে যাবে। ভেতরে খাবার-দাবারের ব্যবস্থাও আছে। ছুটির দিনে জাহানাবাদ পার্ক পরিবারের সবাইকে নিয়ে পিকনিক করার মতো জায়গা বটে ।
৭. এগারো শিব মন্দির
খুলনার অদূরে রাজঘাটে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এগারোটি শিব মন্দির। রাজঘাটে যেতে হলে উঠতে হবে গড়াই বাসে, বলতে হবে নোয়াপাড়া যাবো। পথে নেমে যেতে হবে রাজঘাটে। ভাড়া নেবে ফুলবাড়ি গেট থেকে ১৫ টাকা। মাঝে ভৈরব নদী পার হতে হবে।
ওপার থেকে ভ্যান নিতে হবে। ভ্যান এগারো শিব মন্দিরে নিয়ে যাবে দুই পথে। একটা পথ একটু ঘুরে যায় আরেকটি ভেতর দিয়ে যায়। প্রথম পথে ভাড়া ১০ টাকা আর ভেতর দিয়ে নিয়ে গেলে ভাড়া ৫ টাকা। দুটো রাস্তাই বেশ সুন্দর, উপভোগ করার মতো।
এগারো শিব মন্দিরের সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো, এখানকার ১১টি শিব মন্দিরের ১০টিতেই কোনো শিব মূর্তি নেই আর বাকি একটি মন্দির বহু আগে থেকেই তালাবন্ধ করা আছে। ধারণা করা হয়, সেই একটি মন্দিরেই আছে শিব মূর্তি। মন্দিরটির কথা খুব বেশি মানুষ না জানলেও দেখার মতো স্থান এটি খুলনা জেলার মধ্যে।
৬। বাগেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদ
৭। খালিশপুর শিশু পার্ক ~
চন্দ্র মহল! বাগেরহাট
১৭ ডিসেম্বর খুলনা মুক্ত দিবস ~ ১৯৭১ সালের এ দিনে হানাদারমুক্ত হয় খুলনা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের খবরে সারাদেশের ঘরে ঘরে উড়ছে স্বাধীন বাংলার পতাকা। কিন্তু স্বস্তি নেই খুলনার মানুষের মাঝে। তখনও খুলনার শিরোমনিতে যুদ্ধ চলছে। সাতক্ষীরা ও যশোর থেকে পালিয়ে আসা পাকিস্তানি রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও স্থানীয় বিহারীরা এখানে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ১৬ ডিসেম্বর রাতেও মিত্রবাহিনীর তুমুল আক্রমণে খুলনা কেঁপেছে ট্যাংক, কামান, বোমা ও গোলাবারুদের আঘাতে।এসময় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ হয় খুলনার শিরোমণি, গল্লামারী রেডিও স্টেশন (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা), লায়ন্স স্কুল, বয়রার পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কলোনি এলাকা, ৭ নম্বর জেটি এলাকা, নূরনগর ওয়াপদা (পানি উন্নয়ন বোর্ড) ভবন, গোয়ালপাড়া, গোয়ালখালি, দৌলতপুর, টুটপাড়া, নিউ ফায়ার ব্রিগেড স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায়। ১৬ ডিসেম্বর শেষ রাতে খুলনায় প্রবেশ পথে গল্লামারীতে যে যুদ্ধ হয় তাতে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মকভাবে আহত হন।
১৭ ডিসেম্বর ভোরে শিপইয়ার্ডের কাছে রূপসা নদীতে বটিয়াঘাটা ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি লঞ্চ এসে পৌঁছে। কিন্তু শিপইয়ার্ডের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা পাক সৈন্যরা লঞ্চটির ওপর আক্রমণ চালায় এবং গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিবাহিনীও লঞ্চ থেকে নেমে শিপইয়ার্ডের ওপারের ধান ক্ষেতে অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের গুলিবিনিময়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত ও ১৬ জন আহত হন। এই যুদ্ধে পাক বাহিনীরও কয়েকজন নিহত ও আহত হয়।৯ম সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল, ক্যাপ্টেন হুদা, ডা. শাজাহান মোস্তফাসহ কয়েকজন খালিশপুরে মিত্রবাহিনীর সদর দপ্তরে যেয়ে জেনারেল দলবীর সিংহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর পাক বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার হায়াত আলী খান খবর দেন যে, তিনি তার বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণ করতে সম্মত হয়েছেন। ১৭ ডিসেম্বর সার্কিট হাউস ময়দানে পাক বাহিনী আত্মসমর্পণের পর উল্লাসে আর আনন্দে ফেটে পড়ে মুক্তিকামী জনতা।
প্রশাসনিক জেলা~ খুলনা বিভাগ ৫৯টি উপ-জেলা (উপজেলা) উপবিভাজন নিম্নলিখিত ১০টি জেলা (জিলা) নিয়ে গঠিত হয়েছে~
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা মেডিকেল কলেজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজ~ ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ
সরকারি বি. এল. কলেজ
সরকারী এম. এম. কলেজ
সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মাগুরা
সরকারি কে.সি কলেজ, ঝিনাইদহ
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ
দর্শনা সরকারি কলেজ
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ
স্কুল
খুলনা জিলা স্কুল
খুলনা কলেজিয়েট স্কুল
করোনেশন গভ. গার্ল স্কুল,
সরকারি দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়
যশোর ক্যান্টেন্টমেন্ট পাবলিক স্কুল,
যশোর জিলা স্কুল
কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
মাগুরা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
খুলনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
খুলনা মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
মাগুরা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ
বিসিএমসি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
খান জাহান আলী -
প্রফুল্ল চন্দ্র রায় -
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
আব্দুল হালিম
মেজর জেনারেল (অবঃ) এম মজিদুল-উল-হক এমপি
শ্রী বিরেন শিকদার এমপি, যুব ও ক্রিড়া প্রতিমন্ত্রী
শহীদ সাংবাদিক [[সিরাজুদ্দীন হোসেন]
সাহিত্যিক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান
কবি ফররুখ আহমদ
কবি সৈয়দ আলী আহসান
কবি কাজী কাদের নেওয়াজ
ছড়াকার আবু সালেহ
মৃণালিনী দেবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর স্ত্রী
কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী
বনানী চৌধুরী প্রথম মুসলিম চিত্রনায়িকা
ববিতা - চিত্রনায়িকা
মৌসুমী - চিত্রনায়িকা
সুচন্দা - চিত্রনায়িকা
চম্পা (অভিনেত্রী) - চিত্রনায়িকা
সালাউদ্দিন লাভলু - চিত্রপরিচালক
তানভীর মোকাম্মেল - চিত্রপরিচালক
আসিফ ইমরোজ - চিত্রনায়ক
সাকিব আল হাসান - ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
মাশরাফি বিন মুর্তজা - অধিনায়ক - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
আব্দুর রাজ্জাক (ক্রিকেটার) - ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
সৌম্য সরকার - ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
মোস্তাফিজুর রহমান (ক্রিকেটার) - ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
এনামুল হক - ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
ইমরুল কায়েস - ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
তুষার ইমরান - সাবেক ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
সৈয়দ রাসেল - সাবেক ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
জিয়াউর রহমান (ক্রিকেটার) - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
মেহেদী হাসান - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
সালমা খাতুন - অধিনায়ক - বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল
শুকতারা রহমান - প্রমিলা ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল
শারমিন রত্না - প্রমিলা ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল
রুমানা আহমেদ - প্রমিলা ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল
জাহানারা আলম - প্রমিলা ক্রিকেটার - বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল
মোহাম্মদ হামিদুর রহমান
নূর মোহাম্মদ শেখ, বীরশ্রেষ্ঠ
মিয়া আকবর হোসেন, আকবর বাহিনী প্রধান।
শিল্প
একসময় খুলনা শিল্পশহর হিসাবে বিখ্যাত হলেও বর্তমানে এখানকার বেশিরভাগ শিল্পই রুগ্ন। পূর্বে খুলনাতে দেশের একমাত্র নিউজপ্রিন্ট ও হার্ডবোর্ড মিল ছিল যা এখন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। খুলনার বেশির ভাগ পাটকলগুলোও একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে খুলনার উল্লেখযোগ্য শিল্প হল বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে ওঠা রপ্তানীযোগ্য মাছ শিল্প। খুলনাকে এক সময় বলা হত রুপালি শহর। এর কারন এই এলাকাতে প্রচুর পরিমাণ চিংড়ী উৎপাদন করা হত। এখনও হয়, যদিও কিছুটা কমে গেছে। আপনি খুলনার দৌলতপুরের মহসিন মোড় থেকে যতই পথ অতিক্রম করতে থাকবেন ততই দেখতে থাকবেন রাস্তার দূ ধার দিয়ে শুধু বিল আর মাছের ঘের। এখানকার উল্লেখযোগ্য মাছ চাষকারী প্রতিষ্ঠান হলো জনতা সমবায় সমিতি লিঃ। এসব ঘেরে সাদা মাছের সাথে চাষ হয় প্রচুর চিংড়ী। এবং খুলনার পাইকগাছা , দাকোপ , কয়রা উপজেলাতে লোনা পানি ঘের দেখা যায় সেখানে প্রচুর পরিমানে বাগদা চিংড়ি হয়।
খাবার দাবার
খুলনার জনপ্রিয় খাবার নারিকেলের।। এখাকার জলবায়ু নারিকেল গাছ হওয়ার জন্য অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। খুলনা গলদা চিংড়ির জন্য অনেক প্রসিদ্ধ। আরও রয়েছে খুলনার রয়েল হোটেলের ফালুদা, জিরো পয়েন্টের দেশী রান্না না খেলে, স্বাদ বুঝতেই পারবেন না।
রাস্তাঘাট
খুলনার রাস্তাঘাট মোটামুটি ভাল এবং অনেক প্রশস্ত। এই শহরটি যানজট এর হাতে এখনও পড়েনি। তবে খুলনা থেকে যশোর যেতে আপনাকে একটু সমস্যা পোহাতে হতে পারে। এদিকের রাস্তাঘাট অনেক বেশিই খারাপ। শিল্প কল কারখানা গুলো ফুলতলায় গড়ে ওঠায় এই রাস্তাটি বেশ ভাঙাচোরা।খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকা যেতে মাত্র ৫ ঘন্টা সময় লাগে।