14/09/2025
আমাদের সময় দরিদ্র পরিবারের আত্মীয়রা মোটামুটি দরিদ্রই হতো।
তারা বেড়াতে আসার সময় পাইনঅ্যাপেল বিস্কুটের প্যাকেট আনতো বেশিরভাগ সময়।
কাগজের চৌকো প্যাকেটে বিস্কুট। সেই বিস্কুট যেন ঝাঁকুনিতে ভেঙে না যায় সেজন্য প্যাকেটের ভেতর লম্বা লম্বা করে কাটা পাতলা কাগজের অজস্র ফালি থাকতো।
সেই ঝুড়ি কাগজেও বিস্কুটের ঘ্রাণ।
হুট করে সেই ঘ্রাণ আজ নাকে এলো।
আত্মীয়রা এলে বা স্বল্প সময়ে কোনো মেহমান এলে বিস্কুট দেওয়া হতো। সেই বিস্কুট আবার ঘরে থাকতো না।
কোনো এক বাচ্চাকে ডেকে ফিসফিস করে বলা হতো দোকানে যাওয়ার জন্য।
মেহমান ফিসফাস দেখেই বুঝে ফেলতো।
শুরু হতো- "কিছু আইনেন না কিন্তু।
মাত্র খাইয়া আসলাম", আরো কত কথা।
তবুও দৌড়ে দোকানে চলে যেতাম।
দোকানদার মুড়ি, চানাচুর বা বিস্কুট নেওয়া দেখেই বুঝে ফেলতো মেহমান আসছে।
মুড়ি চানাচুর ছিলো সবচেয়ে কমদামের সবচেয়ে ভদ্র আপ্যায়ন।
কখনও শুধু মুড়ি চানাচুর আউলায়ে দেওয়া হতো।
আবার কখনও মরিচ, পেঁয়াজ, তেল দিয়ে মেখে।
মেহমানকে একবেলা খাওয়াতে হবে।
তখন ব্রয়লার মুরগির এত প্রচলন নাই।
পোষা মুরগি থেকে একটা বাছাই করা হতো ধরার জন্য। সেই বাছাই করা মুরগি ধরার জন্য আবার আমরা নেমে পড়তাম।
মুরগিটাকে ক্লান্ত করার পর খুব সহজে ধরা যেতো। যে ধরতে পারতো তার আলাদা মনে আলাদা একটা তৃপ্তি কাজ করতো।
পোলাও আর ভাত দুটার রঙই সাদা।
তবুও ভাতকে বলা হতো সাদা ভাত।
কেউ কেউ সাদা ভাতেই চালাতো।
কেউ আবার পোলাও দিয়ে।
মুরগিতে আলু অবশ্যই দেওয়া হতো। আর ঝোল ছিলো বাধ্যতামূলক।
যাদের মুরগি জবাইয়ের সামর্থ্য নাই, বা মেহমানের গুরুত্ব অত্যধিক নয়, তারা ডিম ভুনা বা ডিম ঝোল দিয়ে চালাতো।
সাথে অন্যান্য ভাজিভুজি।
ডিম সেদ্ধ করে, ভেজে তারপর ভুনা। পাটায় মাংসের মশলার প্রায় সবকিছুই বাটা হতো।
মশলার ঘ্রাণেই বোঝা যেতো যে স্পেশালি রান্না হচ্ছে৷ এ রান্না দৈনন্দিন রান্না নয়।
রান্নার শব্দই যেন কেমন মেহমান মেহমান আবহে ভরা।
চিতই পিঠা ছিলো কমখরচে বেশি কষ্টে দারুণ এক আপ্যায়ন। সাথে সেই মুরগির ঝোল-মাংস।
মেহমান বিদায় নেওয়ার সময় বাড়ির বাচ্চাদের হাতে দশটাকা-বিশটাকা দিয়ে যেতো।
কী খুশি হতো বাচ্চারা৷ ঈদ ছাড়া সেই প্রথম তারা একবারে দশটাকা পেতো হাতের মুঠোয়।
সেই টাকা দিয়ে আট আনা, একটাকা, দুইটাকা দিয়ে দোকানের "হাবিজাবি" খেয়ে বাকি টাকা হাতের মুঠোয় নিয়ে সবাইকে দেখানো "এই দেখো আমার 'অমুক' আমারে টাকা দিছে"।
মেহমান যাওয়ার সময় রাস্তায় মোটামুটি ভীড় জমে যেতো। আশপাশের বাড়ির লোকও আসতো। রিকশায় তুলে দেওয়ার আগে বলা হতো, "কী দিয়ে কী খাওয়ালাম মনে কিছু নিয়েন না"।
মেহমান বলতো, "কষ্ট দিয়ে গেলাম।"
রিকশা চলা শুরু হওয়া পর্যন্ত দুপক্ষ থেকে বলা হতো- "আসবেন কিন্তু বেড়াইতে।
যখন মন চাইবে চলে আসবেন।"
বিদায় নেওয়ার পর মেহমানের খাওয়ার পর বেচে যাওয়া খাবার ঠিকঠাক করা হতো রাতে খাওয়া জন্য।
Travel & Fun
আহারে! সেইসব দিনগুলি।
তখন অভাব ছিলো। অসুখ ছিলো না। সুখ ছিলো বেশ।
সত্যি ঐ দিনগুলোই খুব ভালো ছিলো।