28/08/2024
জাগ্রত হও সকল নারী ....ওড়নায় টান পড়তে ঘুরে দাঁড়াল তটিনী| অস্ফুটে বলে উঠল, কি হল? মানে কি এর? বাইকে বসে থাকা ছেলেটা নির্লজ্জের মতো হাসল, রাত হয়ে গেছে খুকুমণি, ওড়নাটা সামলে! অমন সুন্দর ওড়না, ঢেকে তো রেখেছে বেশ!
ঈষৎ হাসল তটিনী, সেজন্যই কি ওটা টেনে দেখার ইচ্ছে জাগল মনে?
অনেক রাত হয়েছে খুকুমণি| রাস্তা নির্জন| আলোও নিভে গেছে| ভয় লাগছে না তোমার? অন্ধকারের বুক ফুঁড়ে হেডলাইটের আলো ঝলসে উঠল, আরো দুটো বাইক এসে দাঁড়াল আগের ছেলেটার দুপাশে| কি রে তোরা.... গন্ধে গন্ধে ঠিক এসে পড়েছিস? প্রথম ছেলেটা হায়নার মতো হাসল| কি খুকুমণি এবার ভয় করছে তো?
না, ভয় কেন করবে! তোমরাও তো আমার মতোই মানুষ| রাতের রাস্তায় তোমরা যদি বাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতে পার, তাহলে আমিও তো পথে হাঁটতে পারি| বাইক তোমাদের নিজস্ব হলেও রাস্তা কারুর একার নয়!
বাব্বা, খুকুমণি চেহারা হলেও মুখে বেশ বুলি ফুটেছে দেখছি| আমাদের দেখলে অন্য মেয়েরা পালিয়ে যায়| তুমি দেখছি বেশ সাহসী আছ|
পাশে দাঁড়ানো বাইক থেকে পা নামিয়ে অকারণে রাস্তা ঘষে হাতে ব্রেসলেট পরা ছেলেটা বলল, রোজকার নেতানো মুড়ি দেখে দেখে চোখ পচে গেছে মাইরি| এমন খাপ খোলা তলোয়ার সামনে থাকলেই তো খেলা জমে! তিনটে ছেলে বিচ্ছিরি ভাবে হেসে উঠল| এক অশুভ আভাস যেন ছড়িয়ে গেল রাতের আকাশে|
মেয়ে মানেই দুর্বল এই ভুল ভাবনাটা লালন না করাই ভাল| কাজের সূত্রে আমাদেরকেও রাতে ডিউটি দিতে হয়| প্রয়োজনে গভীর রাতে বাড়িও ফিরতে হয়| আসি| যাইহোক অনেকটা সময় নষ্ট হল, ধীরপায়ে হাঁটতে শুরু করে তটিনী|
খুকুমণি বোধহয় আমাদের ওপর রেগে গেল! এই তো বেশ জমিয়ে গল্প হচ্ছিল| এখন আবার যাওয়া যাওয়ির কথা কেন? এসো, আজ আমরা সারা রাত জমিয়ে গল্প করি|
না, এবার ফিরতে হবে| কাল সকালে ডিউটি আছে| অবিচলিত কন্ঠে বলল তটিনী|
মনে হয় খুকুমণি ভয় পেয়েছে রে, অবশ্য ভয় না পেলে আমাদেরই কেমন কেমন লাগে... বাইক ঘুরিয়ে প্রথম ছেলেটা আড়াআড়ি ভাবে রাস্তা আটকে দাঁড়াল| চলে যাব বললেই তো আর চলে যাওয়া যায় না মামণি| অন্ধকারে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হলে আমাদের ট্যাক্সো দিতে হয়|
সিসিটিভি ক্যামেরায় তোমাদের কুকীর্তি দেখা যাবে কিন্তু! ভেবেচিন্তে| বাইকটা সরিয়ে নাও| যাব আমি|
যাব বললেই তো হবে না| আর ওইসব সিসিটিভি টিটিসিভি এখানে নেই| অনেকদিন আগেই খারাপ হয়ে গেছে, আমাদেরই বদান্যতায়| বুঝলে খুকুমণি! চোখ নাচিয়ে বাইক থেকে নেমে তটিনীর খোলা চুলে মুখ ডোবানোর চেষ্টা করল ছেলেটা|
পরক্ষণেই কি ঘটে গেল টেরই পেল না ছেলেটা! এটুকু বুঝল তার বিশেষ অঙ্গের কর্মক্ষমতা শেষ, আর কাঁধ থেকে হাতটা কেবল ঝুলছে, নড়াচড়া করানোর ক্ষমতা নেই আর! দ্বিতীয় ছেলেটা স্পিডে বাইক নিয়ে এল, চোখে তার আগুন জ্বলছে যেন এখুনি তটিনীকে পিষে দেবে| অদ্ভুত কায়দায় ভল্ট দিয়ে এক লাথি কষালো সে, ঘুরপাক খেয়ে দামী স্পোর্টস বাইক সমেত আরোহী ছিটকে পড়ল রাস্তায়| বাইকটা কয়েক পাক ঘুরে কেতরে পড়ে রইল| ছেলেটার মাথায় হেলমেট ছিল ভাগ্যিস নইলে ছেঁচড়ে গিয়ে একেবারে যা তা অবস্থা হত| ব্যাপার স্যাপার দেখে তৃতীয় জন পালাতে যাচ্ছিল, এমন সময় গাড়ি থেকে লোকাল থানার ওসি নেমে এলেন| তিনটে ছেলেকে ধরে গাড়িতে তুলতে তুলতে বললেন থ্যাঙ্কস ম্যাডাম| আপনি বলেই এটা সম্ভব হল|
আপনারা যদি নিজেদের কাজটা যথাযথভাবে করেন তাহলে আমাদের আর ফিল্ডে নামতে হয় না| এতদিন ধরে এই এলাকা নিয়ে এত অভিযোগ আসছে, অন্ধকার থাকে, সিসিটিভি খারাপ অথচ এই থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার হিসেবে আপনার নড়েচড়ে বসার নাম নেই, বাধ্য হয়ে আমাকেই আসরে নামতে হল|
বোঝেনই তো ম্যাডাম, এক সাধারণ থানার অতি সাধারণ দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার আমি| উপরতলার প্রেসার থাকে| বেশি কিছু করার সাহস হয় না|
তিনজনকে কাল কোর্টে প্রডিউস করুন| বাকিটা আমি দেখে নেব| কোন প্রেশার এলে আমায় ফোন করবেন| ভাল কথা ছেলেটার হাত বোধহয় কাঁধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে| হসপিটালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে নেবেন| হাঁটতে হাঁটতে গলির মোড়ে মিলিয়ে গেল তটিনী, ওড়না সমেত|
লাথি খেয়ে ছিটকে পড়া ছেলেটা প্রবল যন্ত্রণা সামলেও ফিসফিসিয়ে বলল, কে উনি? কি মারাত্মক মহিলা| আমার বন্ধু প্রাণে বাঁচবে তো?
হাসপাতালে নিয়ে যাই আগে, দেখি ডাক্তার কি বলে! মুখ কালো করে বললেন ওসি, স্পেশাল ব্রাঞ্চে আছেন উনি, আইপিএস রেবতী চ্যাটার্জি|
আমাদের এবার আর মা লক্ষী সরস্বতী হলে চলবেনা।সকল
মেয়েদের মা কালি মা চামুন্ডার রূপ ধরতেই হবে ।বহূকাল মুখ বুঝে সঝ্য করা আর না। জাগ্রত হও সকল নারী জাতী ধংস কর এই অসুরদের।
©সংগৃহীত