22/08/2025
"রমনা পার্ক"
প্রতিবেদন ও ছবি: Nebadon Roy
ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রমনা পার্ক একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উদ্যান, যা নগরবাসীর জন্য প্রশান্তির এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। প্রায় ৬৮.৫০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই পার্কটি ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির অপূর্ব সমন্বয়।
রমনা পার্কের ইতিহাস মুঘল আমলে শুরু হয়। ১৬১০ সালে মুঘল সুবাহদার ইসলাম খাঁর শাসনামলে এটি 'বাগ-ই-বাদশাহি' নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮২৫ সালে ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডস জঙ্গল পরিষ্কার করে রেসকোর্স ময়দান গড়ে তোলেন। ১৯০৮ সালে ব্রিটিশ কর্মকর্তা রবার্ট লুইস প্রাউডলকের তত্ত্বাবধানে পার্কটির আধুনিকায়ন শুরু হয় এবং ১৯২৮ সালে তা সম্পন্ন হয়। ১৯৪৯ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
রমনা পার্কে প্রায় ৭১ প্রজাতির গাছ রয়েছে, যার মধ্যে কৃষ্ণচূড়া, কদম, অঞ্জন, সোনালু, চালতা, আম, কাঁঠাল, গাব, জারুল, রুদ্রপলাশ, নাগকেশর, নাগলিঙ্গম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। পার্কের কেন্দ্রস্থলে একটি লেক রয়েছে, যার আয়তন ৮.৭৫ একর। লেকের পার ঘেঁষে হাঁটার পথ, বেঞ্চ এবং ছায়াময় গাছপালা পার্কটিকে আরও মনোরম করে তুলেছে।
রমনা পার্ক ঢাকার শাহবাগ এলাকায় অবস্থিত। শাহবাগ মোড় থেকে শিশুপার্কের পাশ দিয়ে কিছুটা সামনে এগোলেই রমনা পার্কের প্রধান প্রবেশ পথ চোখে পড়বে। ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে সিএনজি, ট্যাক্সি বা বাস ব্যবহার করে সহজেই পার্কে পৌঁছানো যায়।
রমনা পার্কের বটমূল প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে ছায়ানটের উদ্যোগে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু। এটি বাঙালি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়াও, পার্কটি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে রমনা পার্কে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের উপস্থিতি। সন্ধ্যার পর মাদকসেবী ও অসামাজিক কার্যকলাপকারীদের দখলে চলে যায় পার্কটি। এছাড়াও, সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়া বেঞ্চ, অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার এবং লেকের পানিতে দুর্গন্ধ দেখা যায়।
রমনা পার্ক ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর স্থান, যা নগরবাসীর জন্য একটি শান্তিপূর্ণ আশ্রয়স্থল। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে এটি আরও আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে।