
05/07/2025
•••তাতবির •••
তাতবির হুসাইন (আ.)-এর পথ নয়। তাতবির (Tatbir) বা قَمهزَنی (Qame Zani) হলো এমন এক রীতি, যেখানে কিছু মানুষ ধারালো অস্ত্র (যেমন: তলোয়ার বা ছুরি) দিয়ে নিজের কপালে আঘাত করে রক্তপাত ঘটায়।
যদিও কিছু মানুষ মনে করে এটি কারবালার ট্র্যাজেডিকে সম্মান জানানোর উপায় কিন্তু বাস্তবতা হলো: এটি ইসলামের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, আশুরার চেতনা বিকৃত করে এবং এটি আমাদের মহান আলেমদের শিক্ষার পরিপন্থী।
আজকের এই পোস্টটি কাওকে আক্রমণ করার জন্য নয় বরং বলতে পারেন এটি একটি স্মরণিকা। একটি আহ্বান—পবিত্র কুরআন, আহলুল বাইত (আ.) এবং আলেমদের পথনির্দেশনার দিকে ফিরে আসার জন্য আবেদন। যারা এই দ্বীনের মর্যাদা রক্ষায় তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন-- তাদের থেকে আসা নির্দেশ ।
প্রথম পর্বে, আমরা তুলে ধরছি এই ক্ষতিকর প্রথার বিরুদ্ধে স্পষ্ট ও বিপুল পরিমাণে থাকা ফিকহি ফতোয়া। কারণ হুসাইন (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা কখনোই এমন কিছুর বিপরীত হতে পারে না, যার জন্য তিনি শাহাদাত বরণ করেছিলেন।
------
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী
প্রশ্ন ১৪৫০: গোপনে নিজের শরীরে তরবারির আঘাত করা হালাল কি? নাকি রক্তপাত হারাম- এ মর্মে আপনার ফতোয়া সার্বজনীন?
উত্তর: রক্তপাত জনগণের মধ্যে সাধারণভাবে শোক প্রকাশ বা দুঃখের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয় না এবং ইমামদের (আ.) জীবদ্দশা এবং তার পরবর্তী সময়েও এরূপ রক্তপাতের কোনো নজির নেই। আমাদের কাছে কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীস নেই যা এই কাজকে প্রকাশ্যে বা গোপনে সমর্থন করে। বর্তমান সময়ে এই কাজ আমাদের মাজহাব সম্পর্কে অন্যদের মনে খারাপ ধারণা তৈরি করে। অতএব, এটি বৈধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না
(Practical Laws of Islam, Religious Events)
-----
আয়াতুল্লাহ সিস্তানি
প্রশ্ন: আশুরার দিনে ছুরি দিয়ে পিঠে আঘাত করা (যেমন জঞ্জির) – এর ফিকহি নির্দেশনা কী?
উত্তর: আশুরার শোক পালন- ইসলামের প্রতীককে সম্মান জানানো এবং ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সাথীদের কষ্ট ও ইসলাম রক্ষায় তাদের বিপ্লবকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। এই রীতিনীতিগুলো এমনভাবে পালিত হওয়া উচিত, যাতে এই মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয় এবং অন্যদের মনোযোগ এসব মহৎ লক্ষ্যে আকৃষ্ট হয়। অতএব, এমন কাজ যেগুলো মানুষ বুঝতে পারে না এবং যা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা বা অবমাননার কারণ হয়, তা পরিত্যাগ করা উচিত।
(Board of Istfta Office of Grand Ayatollah Sistani)
------
আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি
তাতবির একটি অযৌক্তিক প্রথা, যা শত্রুর হাতে প্রচারনার একটি অস্ত্র হয়ে উঠেছে এবং এটি চিরতরে পরিত্যাগ করা উচিত। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শোক পালনের পাবলিক এবং প্রাইভেট অনুষ্ঠানে এই প্রথা নির্মূল হওয়া উচিত নিজ থেকেই- কোনরূপ পুলিশী হস্তক্ষেপ ছাড়াই। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রিয় শোকার্তগণ ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দিতে পারেন, যাতে যাদের রক্ত প্রয়োজন তাদের জীবন রক্ষা হয়।
(তাসুয়া ও আশুরা উপলক্ষে বার্তা, ৭/৯/২০১৯)
-------
আয়াতুল্লাহ আল-খুই
"যদি মুহাররমে প্রচলিত রক্ত মাতম এবং শিকল দিয়ে নিজেকে আঘাত করা গুরুতর ক্ষতির কারণ হয়, অথবা ধর্ম ও মাজহাবকে উপহাস ও অপমানিত করে, তাহলে তা অবশ্যই হারাম।"
(Al-Masa'il al-Shar'iyah, istifta'at Imam Khoei, al-Ibadat and al-Tariq al-Najah, v.2, p.445)
--------
শাইখ কাশফ আল-গিতা
"যদি আমরা ফিকহি ভিত্তি ও শরিয়তের নিয়ম অনুসারে বিচার করতে চাই, তাহলে মুখে আঘাত করা এবং রক্ত মাতমের মতো আধুনিক যুগে প্রচলিত এরকম প্রথাগুলোর মধ্যে এগুলোর কোনটিরই আমরা বৈধতা পাই না—বরং আমরা এসবের নিষিদ্ধতার ফতোয়া দিতে বাধ্য হই। কারণ, শরীরকে ক্ষতিসাধনের বিষয়ে সাধারণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এবং এসব প্রথার ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম নেই। অতএব, এসব কাজের বিধান শুধুমাত্র হারাম'ই হতে পারে। অধিকাংশ লোক যারা এসব কাজ করে, তারা তা করে আত্মপ্রদর্শনের জন্য কিংবা কট্টরপন্থা থেকে; খাঁটি নিয়ত থেকে নয়। এটি নিজেই একটি সমস্যা; বরং বয়স ও জায়গার কারণে এটিও হারাম।"
(Al-Firdus al-Ala',p.19-22)
-------
আয়াতুল্লাহ বাহজাত
তাতবির বৈধ বলে তাঁর সম্পর্কে প্রচারিত গুজবের জবাবে তিনি নিচের বক্তব্য দেন: بسمه تعالی "আমি যা উদ্ধৃত করেছি, তা হলো মরহুম আয়াতুল্লাহ সৈয়্যেদ আবুল হাসান ইসফাহানির (রহ.) এর ক্বমাহ (তাতবির)-এর প্রতি বিরোধিতা, এবং তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত এর বিরোধিতা করে গেছেন ও কিছুই অনুমোদন দেননি। "কিন্তু আমার কোনো রক্তমাখা কাপড় নেই এবং আমি এমন কোনো ইচ্ছা বা উইলও করি নাই।"
(সূত্র: پاسخ آیت الله بهجت به شبههای درباره قمهزنی/https:// hawzah.net/fa/News/View/49010)
------
আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মুতাহহারি
"বর্তমান রূপে রক্ত মাতমের কোনো যুক্তিসঙ্গত বা ধর্মীয় ভিত্তি নেই। এটি স্পষ্টভাবে একটি বিচ্যুতি। অন্তত বর্তমান সময়ে এটি শিয়া মতবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর লক্ষ্যের সাথে সম্পর্কহীন কাজগুলো হলো রেজার, ব্লেড এবং লক। মাথায় ব্লেড দিয়ে আঘাত করা, রক্ত বের করা—এর মানে কী? এটা শোক নয়।"
(Howzah va Ruhaniyat, v.3)
----