Vaisnava Dasa Nu Das, Kishorganj, Kishoreganj (2025)

08/11/2025

🚩 সনাতন ধর্মের আদি পিতা ও আদি মাতার বংশ তালিকা :
সনাতন ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে, আদি পিতা হলো স্বায়ম্ভুব মনু এবং আদি মাতা হলো শ্রীমতী শতরূপা।

সনাতন ধর্ম অনুসারে, আদি পিতা স্বায়ম্ভুব মনু এবং আদি মাতা শতরূপার মোট পাঁচজন সন্তান ছিল।

তাঁদের সন্তানদের নাম হলো:

পুত্র (ছেলে):
১. প্রিয়ব্রত
২. উত্তানপদ

কন্যা (মেয়ে):
১. আকূতি
২. দেবাহুতি
৩. প্রসূতি

স্বায়ম্ভুব মনু এবং শতরূপার পাঁচ সন্তানের পরবর্তী প্রজন্মের বা নাতি-নাতনিদের নাম অনেক এবং বিভিন্ন পুরাণে তাঁদের বংশতালিকা বিশাল। প্রধান এবং উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম নিচে দেওয়া হলো:

১. প্রিয়ব্রতর ১০ জন পুত্র এবং ১টি কন্যা ছিল।

২. উত্তানপদের পুত্র হলো ধ্রুব (যিনি কঠোর তপস্যা করে 'ধ্রুবতারা' হিসেবে অমরত্ব লাভ করেন)।

৩. আকৃতি এবং ঋষি রুচির দুটি সন্তান ছিল, যারা আসলে ভগবান বিষ্ণু এবং দেবী লক্ষ্মীর অংশাবতার ছিলেন।
পুত্র: যজ্ঞ (ভগবান বিষ্ণুর অবতার)।
কন্যা: দক্ষিণা (দেবী লক্ষ্মীর অংশ)।
যজ্ঞ এবং দক্ষিণার আবার বারোটি পুত্র ছিল।

৪. দেবহুতি এবং কর্দম মুনির একজন পুত্র এবং নয়জন কন্যা ছিলেন। পুত্র: মহর্ষি কপিল

৫. প্রসূতি এবং দক্ষ প্রজাপতির ২৪ জন কন্যা ছিলেন।

হরে কৃষ্ণ 🙏

08/11/2025

শরদচন্দ পবন মন্দ
বিপিনে ভরল কুসুমগন্ধ
ফুল্ল মল্লিকা মালতী যূথী মত্তমধুকর-ভোরণি।
হেরত রাতি ঐছন ভাতি
শ্যাম মোহনমদনে মাতি
মুরলী গান পঞ্চম তান কুলবতী-চিত চোরণি।।
শুনত গোপী প্রেম রোপি
মনহি মনহি আপন সোঁপি
তাঁহি চলত যাঁহি বোলত মুরলীক কললোলনি।
বিসরি গেহ নিজহুঁ দেহ
এক নয়নে কাজররেহ
বাহে রঞ্জিত কঙ্কণ একু এক কুণ্ডল-দোলনি।।
শিথিলছন্দ নীবিক বন্ধ
বেগে ধাওত যুবতিবৃন্দ
খসত বসন রশন চোলি গলিত-বেণী-লোলনি।
ততহি বেলি সখিনী মেলি
কেহু কাহুক পথ না হেরি
ঐছে মিলল গোকুলচন্দ গোবিন্দদাস-গায়নি।।
Vocal : অনিল কুমার ভট্টাচার্য
Category : পদাবলী-কীর্তনTag: গোবিন্দদাস কবিরাজ

07/11/2025

জয় নৃসিংহ শ্রীনৃসিংহ।
জয় জয় জয় শ্রীনৃসিংহ ॥
উগ্রং বীরং মহাবিষ্ণুং
জ্বলন্তং সর্বতোমুখম্।
নৃসিংহং ভীষণং ভদ্রং
মৃর্ত্যোর্মৃত্যুং নমাম্যহম্ ॥
শ্রীনৃসিংহ, জয় নৃসিংহ, জয় জয় নৃসিংহ।
প্রহ্লাদেশ জয় পদ্মামুখপদ্মভৃঙ্গ ॥

অনুবাদ– জয় শ্রীনৃসিংহদেব, জয় শ্রীনৃসিংহদেব, শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক! জয় হোক! জয় হোক! সর্বদিক প্রজ্জ্বলনকারী উগ্র বীর, মহাবিষ্ণু, যিনি মৃত্যুরও মৃত্যুস্বরূপ সেই ভীষণ ভদ্র শ্রীনৃসিংহদেবকে প্রণাম জানাই। প্রহ্লাদের প্রভু, পদ্মা অর্থাৎ লক্ষ্মীদেবীর মুখপদ্মের প্রতি ভ্রমর রূপ শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক, শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক, জয় হোক।

05/11/2025

আজকের এই কার্তিক পূর্ণিমা বা রাসপূর্ণিমার রাতেই অনুষ্ঠিত হয় রাসলীলা।

শ্রীকৃষ্ণ রাসলীলা করেছিলেন মাত্র আট বছর বয়সে। শ্রীমতী রাধা এবং ললিতা, বিশাখা, চিত্রা, ইন্দুরেখা, চম্পকলতা, রঙ্গদেবী, তুঙ্গবিদ্যা ও সুদেবী এই অষ্টসখী সহ গোপীদের প্রত্যেককে কার্তিক পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনের নিধুবনে যমুনার তীরে কদম গাছের তলায় কৃষ্ণ বাঁশী বাজিয়ে আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং তাদের সংখ্যা অনুযায়ী নিজে তত সংখ্যক হয়ে প্রত্যেকগোপীর সাথে একই সময় নৃত্য করেছিলেন। মাঝখানে শ্রীমতী রাধা ও কৃষ্ণ কে রেখে গোপীরাও বৃত্তাকৃতি হয়ে নৃত্য করেছিলেন।

রাস হল ভক্ত এবং ভগবানের মিলন উৎসব — এক অসামান্য আনন্দ উৎসব। দৈহিক কামনা বাসনার দেবতা কামদেব রাস মন্ডলে এসে দৈহিক কাম ছড়াতে চেয়েছিল বলে শ্রীকৃষ্ণ তাকে কদম গাছের সাথে বেঁধে রেখেছিলেন। কেননা পরমাত্মার সাথে আত্মার মিলনে কোন কামনা বাসনা থাকে না, শুধু থাকে পবিত্র প্রেমভক্তি।

গোপীরা কৃষ্ণকে স্বামী হিসাবে পাবার জন্য একমাসের কাত্যায়ন ব্রত করেন। এই এক মাস গোপীরা দলবদ্ধভাবে যমুনা নদীতে এসে এক সাথে স্নান করতো। এই সময় গোপীরা সকল বস্ত্র নদীর পারে রেখে উলঙ্গ অবস্থায় নদীতে স্নান করতে নামতো। কৃষ্ণ এই ব্রতের শেষ দিনে গোপীদের অনুসরণ করে নদীর পারে আসেন। গোপীরা বস্ত্র ত্যাগ করে নদীতে নামলে কৃষ্ণ পরিত্যাক্ত বস্ত্রগুলি অপহরণ করেন। এরপর কৃষ্ণের কাছে গোপীরা নিজেদের সমর্পণ করে বস্ত্র সংগ্রহ করলেন। এই বস্ত্র হরণের দিন কৃষ্ণ গোপীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি তাদের প্রত্যেকের সাথে নৃত্য করে রাসলীলা করবেন।

পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে বৃন্দাবনের যমুনা তীরে ধীরে ধীরে সাঁঝ নামছে। পাখিরা কুলায় ফিরে যাচ্ছে। সাঁঝবেলায় গোপীরাও যমুনার জলে গা ধুয়ে তাদের ঘরে ফিরে গিয়েছে। ঘরের কাজে ব্যস্ত তারা। যমুনার আশেপাশে জঙ্গল জুড়ে নেমে আসছে ঘন অন্ধকার। সেই ঘন অন্ধকারে আকাশকে রক্তিম আভায় রাঙিয়ে দিয়ে একসময় আকাশে ওঠে গোল থালার মত চাঁদ। এই পূর্ণিমার রাতেই যে অনুষ্ঠিত হবে কৃষ্ণের রাসলীলা। ভগবান কৃষ্ণ গোপীদের সঙ্গে লীলা করবেন। গোপীরা অধীর অপেক্ষা করছে কখন তাদের ডাক আসবে তাদের প্রাণপ্রিয়সখা কৃষ্ণের কাছ থেকে।

এই রাত, এই চাঁদ, চারিদিক মাতাল করা মল্লিকার গন্ধ – এসব কিছুই সাধারণ নয়, এক দিব্যভাবে স্নাত – অলৌকিক এক মায়ায় আচ্ছন্ন। ভগবান কৃষ্ণ যখন দেখলেন ঐ পূর্ণচন্দ্র ধীরে ধীরে রক্তিম থেকে গৈরিক বর্ণ ধারণ করল এবং সমগ্র অরণ্য প্লাবিত হল জ্যোৎস্নায় তখন কৃষ্ণ হাতে তুলে নিলেন মোহন বাঁশী। ফুঁ দিলেন বাঁশীতে। মধুর বংশীধ্বনি ছড়িয়ে পড়ল বনে বনাঞ্চলে, যমুনার তীরে।

ওহ্, কি মধুঢালা সে সুর ! সেই মন মাতাল করা সুর শোনা মাত্রই গোপীদের মন উন্মনা হল। আশ্চর্য এই সুর কেবল গোপীরাই শুনতে পেল, যারা কৃষ্ণপ্রেমে পাগল – কৃষ্ণ যাদের প্রাণপ্রিয়সখা। আর কেউ শুনতে পেল না সেই সুর। এমনকি মা যশোদাও নন। এই সুর এমনই সুর যা গোপীদের তীব্রভাবে আকর্ষণ করল। যেন এই সুর আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলল গোপীদের আর রশির মত টেনে নিয়ে আসতে লাগল তাদের কৃষ্ণের দিকে। বৃন্দাবনের সকল তরুণী গোপী যারা কৃষ্ণের প্রেয়সী – তাদের মন বাঁধা পড়ল কৃষ্ণের সাথে। তারা একে অপরের মনোভাব না জেনেই ছুটে চলল সেই বাঁশির সুরের অনুসন্ধানে। কোথায় কৃষ্ণ ?

কৃষ্ণের এই বাঁশীর সুর ছিল ‘অনঙ্গ বর্দ্ধনম’। কেউ যদি ভগবানকে স্পর্শ করার জন্য উন্মুখ হয় বা খাওয়াবার জন্য ব্যাকুল হয় কিংবা ভগবানের কাছ থেকে আনন্দ পেতে চায় বা তাঁকে আনন্দ দিতে চায়, তখন তাকে বলে অনঙ্গ। যদিও ‘অনঙ্গ’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ ‘কাম’ কিন্তু গোপীদের সম্পর্কে অনঙ্গ শব্দের এমন স্থূল অর্থ করা অপরাধ। কৃষ্ণের প্রতি তাদের প্রেম আধ্যাত্মিক – জাগতিক নয়। তাদের সবটুকু দিয়ে তারা কৃষ্ণকে ভালবেসেছে। সেখানে কোন স্বার্থ নেই, কোন দ্বন্দ্ব নেই। তাই কৃষ্ণের বাঁশী তাদের সেই প্রেমকে আরো আরো ঘনীভূত করেছে। যেমন ধোঁয়ার আড়ালে আচ্ছাদিত আগুন বাতাস লাগলে যেভাবে দ্বিগুণবেগে প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনি গোপীরা কৃষ্ণপ্রেমে মাতোয়ারা হয়ে উঠল।

বাঁশী যেন বলছে, ‘সখীরা, তোমরা তাড়াতাড়ি এসো। আমি তোমাদের জন্য আকুলভাবে অপেক্ষা করে চলেছি। এই স্থান – এখানে কোন জনমানব নেই – নির্জনতায় ঢাকা – নিশীথ রাত্রি এখানে বড় মায়াময় – মল্লিকার সৌরভে আর চাঁদের আলোয় এই স্থান যেন প্লাবিত হচ্ছে। ওগো, গোপীরা, তোমরা যে যেখানে যে অবস্থায় আছো, চলে এসো’।

বাঁশীর সুর চুম্বকের মত আকর্ষণ করল গোপীদের। তারা কেউ কেউ গোরুর দুধ দুইছিল, কেউ বা উনুনে দুধ গরম করছিল। যেই বাঁশীর সুর কানে গেল অমনি তারা দুধ দোওয়া ফেলে ছুটল – গোরুর পা বাঁধা রইল, বাছুরটিকে মায়ের কাছে এনে দিতে ভুলে গেল, উনুনে দুধ উথলে উঠল – না, কোন দিকে নজর নেই – সব ছেড়ে গোপীরা ছুটল। কর্মত্যাগ হল তাদের – যতিকর্ম ত্যাগ।

কেউ কেউ আবার পতিসেবা করছিল বা সান্ধ্য আহার প্রস্তুত করছিল অথবা প্রসাধন করছিল, অঙ্গরাগে অঙ্গমার্জনা করছিল বা পোশাক পরিধান করছিল – সব কাজ তাদের অসম্পূর্ণ রইল – তারা ধাবিত হল কৃষ্ণসন্দর্শনে। তাদের লোকত্যাগ হল অর্থাৎ পরিবার পরিজন আর তাদের আপন রইল না।

কেউ কেউ দুগ্ধপানরত ছোট শিশুকে ফেলে ছুটল – পড়শী, পরিজনরা বলল পাষাণী মা – গোপীদের কানে গেল না সেকথা – তারা শিশু ফেলে ছুটল। স্নেহ বা প্রেম ত্যাগ হল তাদের।

কেউ কেউ ছুটল ভোজন ত্যাগ করে। আবার কেউ বা বস্ত্র অলংকার পরিধান করছিল। সেসব অসমাপ্ত রইল। আলুথালু বেশভূষা নিয়েই তারা ছুটল কৃষ্ণসকাশে। দেহস্মৃতি বা দেহবোধও ত্যাগ হল তাদের। সর্বস্ব ত্যাগ করে গোপীরা ছুটল।

কেউ তাদের ধরে রাখতে পারল না। তীব্র স্রোতের অভিমুখে যেভাবে নৌকা ধাবিত হয়, সেইভাবে গোপীরাও কৃষ্ণ অভিমুখে ধাবিত হল। তারা সংসার ধর্ম ত্যাগ করল, লোকত্যাগ করল, স্নেহ ও জাগতিক প্রেমও ত্যাগ করল। তাদের মন প্রাণ জুড়ে কেবল কৃষ্ণ। আর কিছু জানে না তারা, কেবল কৃষ্ণকেই জানে। ভগবানকে পেতে গেলে এভাবেই তো সর্বস্ব ত্যাগ করতে হয়।

গোপীরা যেন আজ জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিস্থলে দণ্ডায়মানা। তথাপি, ব্রজবালাগণ মৃত্যু-আলিঙ্গন করিতে চাহিল না। মরিলে তো কৃষ্ণকে আর দেখিতে পাইবে না। গোলক ? বৈকুণ্ঠ ? কোথায় কোন স্বর্গ আছে, যা এই প্রেম নিকেতন বৃন্দাবন হইতে লোভনীয়। এমন বাঁশী কোথায় বাজে ? কৃষ্ণানুরাগিণী, কৃষ্ণভাবিনী, কৃষ্ণদরশনাকাক্ষিণী গোপীরমণীগণ হৃদয়ভারে মন্থরপদে সমাগত হইয়া কৃষ্ণগুণগানে মগ্ন হইল।

সর্ব-জীব জননী মেদিনীকে সকাতরে কহিতে লাগিল, মা, শ্যামের ত্তত্ত্ব তুমিই অবগত। নিরন্তর শ্যাম-রূপ ধ্যানে তুমি শ্যামাঙ্গিনী, শ্যাম তোমার অন্তরে বাহিরে। মা, চিরদুঃখিনী ব্রজঙ্গনাদের দয়া কর, শ্যামের সন্ধান দাও, না হ’লে মা, অনাহারে তোমার কোলে প্রাণ বিসর্জন দেব। বলিতে বলিতে গোপীগণ হৃদয়ভারে ক্লান্ত-কায় মেদিনী-অঙ্কে ঢালিয়া দিবার উপক্রম করিতেই এক সুস্পষ্ট পদচিহ্ন তাহাদের দৃষ্টিগোচর হইল। ব্রজঙ্গনাগণ পুলকিত ও চঞ্চল হইয়া উঠিল।

বিশাখা উচ্চৈঃস্বরে বলিয়া উঠিল, সই, দেখ দেখ, এ কার পদচিহ্ন ?

ললিতা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করিতে করিতে সেই পদচিহ্নের আঘ্রাণ লইয়া বলিল, এ সর্ব সুলক্ষণ-চিহ্নিত, পদ্মসুরভি পদচিহ্ন তারই, যার নারীবধে ভয় নাই; সরলা অবলাকে কুলত্যাগিনী করা যার আমোদ ! সই, ত্রিভুবনে এ পুরুষের জোড়া খুঁজে পাবে না। আর, এ চরণেরও তুলনা নাই।

কৃষ্ণের পদচিহ্নের পাশে পাশে এ কোন রমণীর পায়ের ছাপ ! এ তো রাধার ! চল, এই পদচিহ্ন আমাদের পথনির্দেশক হবে।

এদিকে কৃষ্ণকে একা পেয়ে রাধারও বড় অহংকার হল। আমি তাহলে অন্য গোপীদের চাইতেও সৌভাগ্যবতী যে শ্যামকে একা পেলাম ! তাই রাধা শ্যামকে বললেন, ‘ওগো শ্যাম, আমার প্রাণাধিক, এতখানি হেঁটে এসে আমি বড় ক্লান্ত। আমার পা আর চলছে না। দয়া করে আমাকে তোমার কাঁধে তুলে নাও।’

শ্যাম এবার মুচকি হাসলেন। ‘এসো রাধে’ বলে রাধাকে কোলে তুলে নিলেন। এবার পথিমধ্যে রইল শুধু শ্যামের পদচিহ্ন কিন্তু সে চিহ্ন যেন অধিক গভীর। কৃষ্ণ যে রাধাকে কোলে তুলে নিয়েছে ! কিন্তু এ সুখ রাধার কপালে সইল না। কিছুদূর এভাবে যাওয়ার পর শ্যাম আবার অন্তর্হিত হলেন।

‘শ্যাম, শ্যাম, তুমি আমায় ফেলে কোথায় গেলে ?’

রাধারাণী এ শোক সইতে পারলেন না। জ্ঞান হারালেন। সেই মূহুর্তে গোপীরা খুঁজতে খুঁজতে রাধাকে একা অচৈতন্য অবস্থায় পেয়ে অবাক হয়ে গেল। রাধার জ্ঞান ফিরলে তারা সকলে মিলে রোদন করতে করতে ফিরে গেল যমুনার তীরে। কৃষ্ণের ধ্যান করতে করতে তারা গাইতে লাগল গোপিকা গীত।

হে কৃষ্ণ, আমরা তোমার জন্য সব কিছুই ত্যাগ করলাম। লোক, লাজ, ভয়, কাম, অহংকার – সকলই ত্যাগ করলাম। আমাদের অন্তর জুড়ে শুধু তুমি। তুমি আমাদের হৃদয়ে আছো সখা। আমরা চিরকাল তোমাকে হৃদয়েই অধিষ্ঠিত করে রাখবো। শুধু তুমি দেখা দাও, নাথ, তুমি দেখা দাও। গোপীরা সম্পূর্ণভাবে কৃষ্ণের শরণাগত হল। শরণাগত। শরণাগত। হে প্রভু, তোমাকে ছাড়া আর কিছুই জানি না। তাদের দুচোখে দরদর অশ্রুধারা। অন্তর প্রেমে উদ্বেল।

এবার ভগবানের আসন টলল। কৃষ্ণ গোপীদের সম্মুখে আবির্ভূত হলেন। কি অপূর্ব রূপ তাঁর। রূপ থেকে যিনি গোপীদের অরূপে নিয়ে গেলেন – সেই নবদূর্বাদলশ্যামের গলায় বৈজয়ন্তীফুলের মালা, পরনে পীতবাস। মুখে মধুর হাসি। কৃষ্ণকে দেখে গোপীদের চোখের পলক পড়ে না। তারা নবজীবন লাভ করল।

কৃষ্ণ গোপীদের পরীক্ষা করার জন্য বললেন, এই যে তোমরা এই রাতে পরিবার পরিজন সংসার ছেড়ে চলে এলে – এ তোমরা ঠিক করো নি। তোমরা ফিরে যাও।

কৃষ্ণের মুখে এই কথা শুনে গোপীরা স্তম্ভিত হয়ে গেল। হে নাথ তোমার চরণস্পর্শ যে একবার লাভ করেছে তার কাছে এইসব জাগতিক বন্ধন যে মিছে। আবার যদি আমাদের সংসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয় সে তো আমাদের চরম দুর্ভাগ্য হবে প্রাণনাথ।

চন্দ্রাবলী ছুটিয়া গিয়া যুগলকরে কৃষ্ণের করকমল ধারণ করিল। শ্যামলা শ্যামের মৃনাল-বাহু নিজ স্কন্ধে রাখিল। প্রেম-কোপ-বিহ্বলা রাধা যুগল কুন্দদন্তে কুসুমাধর চাপিয়া তীব্রদৃষ্টিতে দয়িতকে বিঁধিতে লাগিল। অভিমানিনী ললিতার নির্নিমেষ নয়নযুগল প্রানপ্রিয়র মুখসংলগ্ন হইয়া রহিল।

প্রিয়মুখদরশণে পরমানন্দে বিহ্বলা বিশাখা গভীর ধ্যানে তন্ময় হইয়া গেল। প্রেমাস্পদের নয়নকিরণে গোপীগনের সকল সন্তাপ বিদূরিত হইল। কৃষ্ণকে মন্ডলাকারে বেষ্টন করিয়া তাঁর উপবেশনের জন্য সকলে নিজ নিজ অঞ্চল বিছাইয়া দিল।

ললিতা কহিল, কেশব, কালিয় বুঝি তার স্বভাবটি তোমায় দিয়ে গেছে ? তাই সুযোগ পেয়ে তুমি অদর্শন হয়ে দংশন করলে ?

কৃষ্ণ ঈষৎ হাসিয়া উত্তর দিল, ভালবাসার সাধ তাকে খুঁজে নিক; তাই লুকোচুরি খেলে। বিরহই প্রেমের পরীক্ষা। অদর্শনে ভালবাসা শতগুণ বর্ধিত হয়। মনে কি হয় জানো ? মনে হয় এ তো নিরন্তর অন্তরে ধরে রেখেছে, আমি একে কোথায় রাখব ? আমি ভিন্ন তোমাদের অন্য কামনা নাই। দুশ্ছেদ্য সংসারবন্ধন ছেদন করে, সর্বস্ব ছেড়ে এ ঘোরা রজনীতে তোমরা আমার জন্য এসেছ। যদি দেবতাদের পরমায়ু পাই, তোমাদের এ নিষ্কাম ভালবাসার প্রতিদান দিতে পারব না। অনন্তকাল ধরে অনন্তভাবে বিভক্ত হয়ে যদি আমি ক্রীতদাস হয়ে থাকি, তোমাদের প্রেমঋণ পরিশোধ হবে না। তোমরা আমার উপর প্রসন্ন হও।

এই প্রীতিপূর্ণ পীযুষ-বাণী শ্রবণে ভাবময়ী গোপীগণ উচ্ছসিত আনন্দে তাহাদের প্রেমাস্পদকে মন্ডলাকারে বেষ্ঠন করিয়া দাঁড়াইল। কিন্তু দন্ডায়মান হইবামাত্র বিচিত্রভাবে ভাবিত হইয়া প্রত্যেক গোপীরই মনে হইল, সুকোমল বাহুতে কণ্ঠ বেষ্ঠন করিয়া শ্রীকৃষ্ণ তাহারই পাশে।

সহসা তখন কোটি বামাকন্ঠের মিলিত ঝঙ্কারে স্তব্ধ কানন মুখরিত হইয়া উঠিল। কৃষ্ণভামিনী ব্রজঙ্গনাগণ কৃষ্ণসঙ্গে রাসমণ্ডলে নাচিতেছে। সঙ্গে সঙ্গে বলয়-নূপুর-কিঙ্কিণী তালে তালে সিঞ্জিত হইতেছে। অসংযত অঞ্চল, এলায়িত কুন্তল পবনে উড়িতেছে। নৃত্যরঙ্গে, রসতরঙ্গে শ্রীবৃন্দাবন টলটলায়মান, জগৎ প্লাবিত। আনন্দ হিল্লোলে, অপরূপ নৃত্যছন্দে তরুলতা তালে তালে দুলিতে লাগিল। ভৃঙ্গ, বিহঙ্গ, যমুনার তরঙ্গ একতানে সুর তুলিল।

গোপীদের কন্ঠস্বর ক্রমে উচ্চ হতে উচ্চতর স্তরে উঠিতে লাগিল। দ্রুত হইতে দ্রুততর নৃত্যভঙ্গীতে মেদিনীর শ্যামবক্ষে বিদ্যুৎ ঝলসিতেছে। শ্যামচাঁদের স্বরমাধুরীতে বিমুগ্ধ শ্রবণ, মধুর স্পর্শে কন্টকিত-কায়, নামরসে সুধা সিঞ্চিত রসনা, মদনমোহনররূপে মোহিত নয়ন, শ্রীঅঙ্গের সৌরভ মোদিত ঘ্রাণ – পঞ্চেন্দ্রিয়ের এই যুগপদ উন্মাদনায় গোপীরা আজ কোটী রমণ-সুখের আনন্দে আত্মহারা।

আনন্দ, আনন্দ, দেশ-কাল-পাত্রের অতীত আনন্দ। সেই অনাবিল আনন্দের ছবি হৃদয়ে ধরিয়া রাখিবার নিমিত্ত কাল যেন নিশ্চল হইয়া দাঁড়াইল। দেবাদিদেব মহাদেব বৃন্দাবনে এলেও স্বয়ং যোগমায়া নিধুবনের দ্বাররক্ষী হয়ে থাকায় তিনি বাধাপ্রাপ্ত হলে এক গোপীর বেশে গোপেশ্বর মহাদেব রূপ ধারণ করিলেন। দেবদেবীগণ অবিশ্রান্ত পুষ্পবৃষ্টি করিতে লাগিল।

প্রেমদানে আজ কৃষ্ণ কল্পতরু। যমুনার কামনা পূর্ণ করিবার নিমিত্ত প্রিয় সখীগণসহ অবগাহন করিয়া জলকেলি-রত হইলেন। সে অপুর্ব দৃশ্য ক্ষণিক দেখিবার জন্য পূর্ব গগনে উষা দেখা দিল। আনন্দময়ী রাসরজনী পোহাইয়া গেল। গোপীগণ চক্ষুঃ ফিরাইয়া রসরাজকে বারবার দেখিতে দেখিতে গৃহ পানে চলিল।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে

(সংগৃহীত)

04/11/2025

🌼শৌভরি মুনির কাহিনী🌼

🌼শ্রীমদ্ভাগবতের নবম স্কন্ধে শৌভরি মুনির কাহিনী আছে। তিনি অত্যন্ত ক্ষমতাবান যোগী ছিলেন। বর্তমান জড়জগতের যে কোন মানুষের জড় ইন্দ্রিয়তৃপ্তির ইচ্ছা পূর্ণ করার ক্ষমতা থেকে লক্ষগুণ অধিক ক্ষমতাবান। তিনি অসীম অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা লাভ করেছিলেন। যখনই কেউ আধ্যাত্মিক ও জড়জাগতিক দিক থেকে অধিক ক্ষমতাবান হয়, তার মধ্যে অহঙ্কারী মনোভাব দেখা দেয় এবং অহঙ্কারে বৃহত্তম বিপদ হয় যে আমরা সাধু ব্যক্তিদের প্রতি অপরাধ করে ফেলি। সেইজন্য শৌভরি মুনি কোনওভাবে মহান ভক্ত গরুড়ের প্রতি অপরাধ করেন। এর ফলে, যদিও তিনি অত্যুচ্চ মর্যাদার জন্য অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন, যদি শ্রীকৃষ্ণ আমাদের রক্ষা না করেন তাহলে যতই মহান, যতই আধ্যাত্মিকভাবে অগ্রসর হই না কেন আমরা স্থূলতম কার্যাবলী করা থেকে আমাদের ইন্দ্রিয় সকলকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হব না। এটি অসম্ভব। আধ্যাত্মিক জীবনেও সর্বোত্তম ভ্রম হলো এই যে, আধ্যাত্মিক অগ্রগতির মাধ্যমে আমরা নিজেদের মায়ার কবলে পতিত হওয়া থেকে মুক্ত করতে পারি, কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হলো।

রাগদ্বেষবিমুক্তৈত্ত্ব বিষয়ানিন্দ্রিয়েশ্চরন। আত্মবশৈর্বিধেয়াত্মা প্রসাদমধিগচ্ছতি।।

(গীতা ২/৬৪)

🌼শুধুমাত্র কৃষ্ণকৃপার দ্বারাই আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক স্তর রক্ষা করতে সক্ষম। কৃষ্ণকৃপার দ্বারাই মায়াশক্তির সামান্যতম প্রলোভন থেকে আমরা আমাদের ইন্দ্রিয় সকলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমাদের নিজশক্তির দ্বারা নয়। আমাদের সামর্থ্য অনুসারে আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের রীতি নীতিসমূহ অনুসরণ করা উচিত এবং সখন শ্রীকৃষ্ণ দেখেন যে আমরা নিষ্ঠাবান ও বিনম্রভাবে প্রয়াস করছি, তিনি তখন আমাদের ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ করার এবং মায়ার প্রলোভন অতিক্রম করার ক্ষমতা দেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের সাহায্য বিনা আমরা কিছুই করতে পারিনা।

সুতরাং যৌগিক ক্রিয়াকলাপে অত্যন্ত উন্নত

🌼 হওয়া সত্ত্বেও শৌভরি মুনি এই অহঙ্কারে একজন মহান ভক্তের প্রতি অপরাধ করেন এবং সেইজন্যে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর কৃপা প্রত্যাহার করেন। যদি শ্রীকৃষ্ণ এইরূপ মহান অধ্যাত্মবাদী থেকে তাঁর কৃপা প্রত্যাহার করেন তাহলে সেই সকল জড়বাদী সম্বন্ধে কি বলা যায় যারা পৃথিবীতে আনন্দের সন্ধান করেন। তিনি একজন ক্ষমতাবান যোগী ছিলেন। হাজার হাজার বছর ধরে তিনি যমুনার জলের তলায় ধ্যান করেছেন। আমাদের মধ্যে কে সেটি করতে পারে? তিনি এমন কি তাঁর শ্বাসক্রিয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। হাজার হাজার বছর। ধরে তিনি এমন কি শ্বাসও নেননি। এই প্রকার ক্ষমতাবলে তিনি তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন।

🌼জলের তলায় বাসকালীন একদিন তিনি একটি পুরুষ
ও স্ত্রী মৎস্যকে যৌনসুখ উপভোগ করতে দেখলেন। তাঁর তুলনায় ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণে আমাদের কি অবস্থা। যখন আমরা পাখী, পতঙ্গ অথবা মৎস্যদের যৌনসুখ উপভোগ করতে দেখি, তা আমাদের মনকে চঞ্চল করে? আমরা শুধু হেঁটে চলে যাই, কোন কিছুই মনে হয় না। কিন্তু ভগবানের মায়াশক্তি এত শক্তিশালী যে যদি একজন ভগবান দ্বারা সুরক্ষিত না হন। তাহলে এইরূপ নগন্য বিষয়ও একজনের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। সুতরাং শৌভরি মুনি এইসব দেখে ভাবলেন "ও! যৌনসুখ কত সুন্দর। দেখ মাছগুলি কেমন উপভোগ করছে। তিনি ভাবলেন আমারও এই সুবিধা ভোগ করা উচিত। তিনি জল থেকে বেরিয়ে এসে শুধু জড় সুখ ভোগের নিমিত্ত একজন সঙ্গীর সন্ধান করছিলেন এবং তিনি কয়েকজন সুন্দরী মেয়েকে দেখেন যারা রাজকন্যা ছিল। তাদের পিতার নিকটে গিয়ে অভিলাষ ব্যক্ত করলে তাদের পিতা বলেন, "আপনি বৃদ্ধ এবং আমার কন্যাগণ আপনার প্রতি আকৃষ্ট নয়।" বৃদ্ধাবস্থা ব্যতীত তাঁর লম্বা ধূসর জটা, বহুকাল জলের নীচে থাকায় তাঁর চর্ম কুঞ্চিতও হয়েছিল। তারা আকৃষ্ট হয়নি। যুবতীরা এমন পতি চায় না যে বৃদ্ধ সাধু। তারা পছন্দ করে কোন শক্তিশালী, সুপুরুষ এবং ধনবানকে। সেইজন্য তাঁর অতীন্দ্রিয় ক্ষমতাবলে মুনি তাঁর আকৃতি পরিবর্তিত করলেন এক সুপুরুষ রাজপুত্রে। আমাদের মধ্যে কে তা পারবে? তারপর তিনি যখন এলেন, সকল রাজকুমারীই তাঁকে প্রার্থনা করলেন। সেইজন্য তিনি তাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজেকে বিস্তার করলেন। এইরূপে তিনি বিবাহ করে সকল উপভোগ করলেন। তাঁকে প্রচুর ঐশ্বর্য, ক্ষমতা প্রদান করা হলো। যৌগিক ক্ষমতাবলে তিনি উপভোগের নিমিত্ত সুন্দর রাজধানী, সুন্দর সুখভোগের উপকরণ সৃষ্টি করতে সমর্থ ছিলেন। প্রকৃত অর্থেই তাঁর যৌগিক ক্ষমতার দ্বারা তিনি তাঁর ইঙ্গিত সমস্ত কিছুর নিয়ন্ত্রক ছিলেন এবং তাঁর শ্বশুর মহাশয়ের নিকটও তিনি সুন্দরী রাজকন্যাগণসহ অকল্পনীয় সামগ্রীর উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। তিনি তাঁর বিবাহিত জীবন উপভোগ করছিলেন। কিন্তু স্বল্পকাল পরেই তিনি উপলব্ধি করলেন যে তিনি যতই নিজেকে বিস্তৃত করুন, যৌগিক ক্ষমতাবলে যত ঐশ্বর্যই সৃষ্টি করুন, যত সুন্দর রাজকন্যাগণ হোন না কেন তিনিও হতাশ এবং তারাও হতাশ হয়ে পড়ছেন। তিনি বুঝতে পারলেন তিনি বিরাট ভুল করেছেন এবং তিনি উপলব্ধি করলেন ভগবানের ভক্তের প্রতি অপরাধ করায় তিনি তাঁর সম্পূর্ণ বুদ্ধি হারিয়েছেন। অবশেষে তিনি এবং তাঁর স্ত্রীগণ সকল কিছু ত্যাগ করলেন এবং সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন। অতএব এই কাহিনী হতে কি শিক্ষা হলো। প্রথমতঃ আমরা যেই হই না কেন, যত মহানই হই না কেন যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা বিনম্রতার সাথে ভগবানের শ্রীচরণপাদপদ্মের শরণ গ্রহণ করছি আমাদের পক্ষে আমাদের ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, কারণ আমরা তাঁর অধীন। তিনি আমাদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নিতে পারেন। আমাদের মায়ার দ্বারা আবৃত করতে পারেন। তিনি আমাদের যোগমায়ার দ্বারা আবৃত করতে পারেন। তিনি তাঁর ইচ্ছানুসারে কিছুই করতে পারেন। আমরা তাঁর নিত্যদাস।

🌼ইতিহাসে এই পৃথিবীর মহান শক্তিশালী নায়কেরা আজ তারা কোথায়? তারা সবাই মৃত। তারা সবাই বার্ধক্যে পতিত হয়েছেন। তারা সবাই পরাজিত হয়েছেন। জড়াপ্রকৃতি প্রত্যেককে পরাজিত করেছে এবং এই হলো গীতায় একাদশ অধ্যায়ের মূল কথা, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বিশ্বরূপ দর্শনে প্রকাশ করলেন যে আমি সবাইকে নিজমধ্যে গ্রাস করছি, আত্মস্থ করছি। কালরূপে প্রত্যেকে আমার অধীন এবং কেউ এর থেকে এক সেকেণ্ডের জন্যও পলায়ন করতে পারি না এবং সর্বোত্তম মায়া হলো এই যে আমরা পলায়ন করতে সক্ষম। সুর এবং অসুরে এই পার্থক্য, দৈত্য এবং ভক্ত হলো সরলভাবে এই। সেইজন্য আমি স্বাধীনভাবে শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছা বিনা কৰ্ম্ম করব। ভগবান বিশ্বরূপে প্রকাশ করলেন যে তিনি মহান নায়ক থেকে নগণ্য পতঙ্গ পর্যন্ত সকল জীবাত্মাকে কালরূপে গ্রাস করছেন। ভক্তগণ এটি স্বীকার করেন। ভক্তগণ মানেন, "হ্যা, শ্রীকৃষ্ণ আপনি নিয়ন্ত্রক। আপনি সৃষ্টি করেছেন, আপনি পালন করেন এবং সংহারও করবেন। আমি আপনার শরণাগত।" শ্রীল প্রভুপাদ উদাহরণ দিতেন যে, একটি বিড়াল তার দাঁতে ধরে একটি ইঁদুরকে নিয়ে যাচ্ছে এবং যখন সেই ইঁদুর বিড়ালের দিকে ভয়ে ভীত হয়ে তাকাচ্ছে সে বিড়ালের মধ্যে সাক্ষাৎ মৃত্যুকে দর্শন করছে। একই বিড়াল যখন তার বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছে সেই মুখে করেন এবং কর্মফলের প্রতি তিনি আসক্ত নন। কারণ তিনি জানেন শ্রীকৃষ্ণই পরম নিয়ন্ত্রণকর্তা। আমি সফল বা ব্যর্থ যাই হই না কেন সেটি আমার হাতে নেই। সেটি ভগবানের হাতে। আমি শুধুমাত্র আমার সর্বোত্তম বিষয় দেবার প্রচেষ্টা করব। এইরূপ ভক্ত যিনি সর্বদা প্রেমে মগ্ন, ভক্তিমূলক সেবায় বিনম্র, এইরূপ একজন ভক্ত উপলব্ধি করেন যে মৃত্যু আমার প্রভু যিনি কৃপা করে আমাকে তাঁর নিত্যধামে নিয়ে যেতে এসেছেন। ভক্ত মৃত্যুকে ভয় পায় না। ভক্ত জীবনে মরণে শ্রীকৃষ্ণকেই দর্শন করে কারণ। ভক্ত শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত।

ভজহুরে মন, শ্রীনন্দনন্দন,

অভয়চরণারবিন্দরে।

🌼হে প্রিয় মন, দয়া করে ভগবানের শ্রীচরণ পদ্মের আশ্রয় গ্রহণ কর। তাঁর শরণ নাও। তাঁর দাস হও। এই পথেই শুধুমাত্র তুমি ভয়, উদ্বেগ, হতাশা এবং যন্ত্রণা হতে মুক্ত হবে। কিন্তু অন্য যে কোন ব্যবস্থা করার প্রয়াসই আমরা করি না কেন সেটি কোন আধ্যাত্মিক অথবা জড় পথ, অবশেষে আমরা হতাশায় এবং উদ্বেগে পতিত হব যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা বিনম্রভাবে ভগবানের সেবার আশ্রয় নেব। আমরা ব্রহ্মচারী গৃহস্থ, বাণপ্রস্থী বা সন্ন্যাসী যাই হই না কেন আমাদের অবশ্যই জ্ঞাত হওয়া উচিত যে ভগবানের কৃপা, ভগবানের সাহায্য বিনা এক মুহূর্তের জন্যও মন এবং ইন্দ্রিয়সমূহকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।

04/11/2025

নমস্তে গিরিরাজায় শ্রী গোবর্ধন নামিনে।
অশেষ ক্লেশ নাশায় পরমানন্দ দায়িনে।।

02/11/2025

🚩 গৌরাঙ্গ! নিত্যানন্দ! গৌরাঙ্গ! নিত্যানন্দ! || দামোদর মাসের ২৭ তম দিন || Daspara, Kuliarchar

02/11/2025

🚩 দামোদর মাসে আমলকী ফল নিবেদনের মাধ্যমে অশেষ সুফল লাভ করুন!

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন করুণাসাগর। সাধু ও শাস্ত্র সিদ্ধান্ত আমাদের জানিয়েছেন, আমরা ভগবানের কৃপা পেতে যত না উৎসুক, ভগবান আমাদের কৃপা করতে সহস্রগুণ বেশি উৎসুক। তবে, ভগবান ভক্তদের যশস্বী করতে চান বলেই কিছু নিয়মাদি দিয়েছেন,আবার অল্পের জন্য বিশাল প্রতিদানের কথা দিয়েছেন, যাতে আমরা সহজেই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভগবানের প্রিয় হতে পারি। তাছাড়া কৃপা মানেই হলো, ‘নির্দিষ্ট কৃত্য করার ফলে যা লাভ হয়।’

দামোদর মাস এমনই একটি সুযোগ, যার মাধ্যমে আমরা যেকোনো ভক্তিমূলক সেবায় সহস্র গুণে বেশী কৃপা লাভ করতে পারি। দামোদর মাসে দীপদান, তুলসীকাষ্ঠের প্রদীপ নিবেদনের পাশাপাশি আরেকটি সুযোগ হলো ভগবানের সেবায় আমলকী নিয়োজন।
অতি ক্ষুদ্র, মধুরতাবিহীন এই ফলটিকেই বৈদিক শাস্ত্রে বিশদ ভাবে মহিমান্বিত করা হয়েছে। পুরাণে বলা হয়েছে, কোনো এক কল্পে দেবী লক্ষ্মী ও পার্বতী একত্রে হরিকথা আলোচনার সময় ভক্তিপূর্ণ অশ্রু বিসর্জন করায় সেই প্রেমাশ্রু থেকে আমলকীর উৎপত্তি। এর পরবর্তী কোনো কল্পে জড়জগতে আদিবৃক্ষরূপে আমলকীর আবির্ভাব।

আমলকী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এত প্রিয় যে বলা হয়েছে, আমলকী বৃক্ষের তলে বসে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা, জপ প্রভৃতি করলে প্রতি ক্ষণে মহাযজ্ঞের ফল লাভ হয়। (স্কন্দপুরাণ)

উক্ত পুরাণে আরো বর্ণিত হয়েছে, ভগবানের চরণে নিবেদিত আমলকী ফল আর তুলসীপত্র গ্রহণ করা হলে কোটি কোটি তীর্থদর্শনের ফল লাভ হয়। এছাড়া তুলসীপত্রের পর অন্য পত্র সমূহের মধ্যে আমলকীর পত্রও ভগবানের প্রিয়।

তুলসী যেমন ভগবানের সবকিছুর মধ্যে সবথেকে বেশী প্রিয় ফলের মধ্যে আমলকীও তেমনি প্রিয়। তুলসীর ন্যায় তাই ভগবানের চরণে আমলকীফল, ভোগে আমলকী আবার এমনকি আমলকী ফল দিয়ে মালা গেঁথে দিলেও কৃষ্ণ সেবকের প্রতি কোটিগুণ সন্তুষ্ট হন।

প্রত্যহ কৃষ্ণের প্রসাদী আমলকী ও তুলসী ভক্ষণের মাধ্যমে নিখিল পাতক ও দুর্ভাগ্য দূর হয়, জীব ভগবানের ন্যায় নির্মল হয়ে নিজ প্রকৃত শুদ্ধসত্ত্বময় স্বরূপ লাভ করে,পরিশেষে বিশুদ্ধ ভগবদ্ভক্তি লাভ করে থাকে।

এই দামোদর মাসে ভগবানের ইচ্ছায় প্রতি বছর আমলকীফল পরিপুষ্ট হয়। তাই ভগবৎপ্রদত্ত এই সুযোগ গ্রহণ করুন, তুলসীকাষ্ঠের প্রদীপ, তুলসী মঞ্জরীর সাথে সাথে আমলকী ফল ভগবানের সেবায় প্রদান করে পরম ভক্তিসহকারে তা গ্রহণ করে কৃতার্থ হোন।
হরেকৃষ্ণ!

02/11/2025

🚩 আজ থেকে মঙ্গলময় ভীষ্ম পঞ্চক ব্রতের সূচনা:

ভীষ্ম পঞ্চক ব্রত সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য:

ভীষ্ম পঞ্চক ব্রতের এই দিনগুলি পালন করে কোন ব্যক্তি সমস্ত চাতুর্মাস্য ব্রতের সুফল লাভ করতে পারে যদি সে চাতুর্মাস্য ব্রত পালন করতে অসমর্থ হয়ে থাকে।

ভীষ্ম পঞ্চক ব্রত:

ব্রতটি ২রা নভেম্বর (রবিবার) একাদশীর দিন থেকে শুরু হয় এবং ৫ই নভেম্বর রাসপূর্ণিমার দিন পর্যন্ত চলবে (শ্রীধাম মায়াপুরের সময়সূচি। কৃপাপূর্বক আপনার স্থানীয় দিনপঞ্জি অনুসরণ করুন)। এই ব্রত রাসপূর্ণিমার দিন সূর্যাস্ত (অথবা চন্দ্রোদয়) পর্যন্ত সম্পন্ন হয়। সাধারণত একাদশীতে সম্পূর্ণ উপবাস এবং তারপর পরবর্তী দিনগুলিতে ফলমূল গ্রহণ করতে বলা হয়। অথবা কেউ পাঁচদিনই ফলমূল গ্রহণ করতে পারে।

ব্রতের ৩টি স্তর:

ভক্তরা তাদের সুবিধামতো নিম্নোক্ত স্তরগুলির যেকোনটি অনুসরণ করতে পারেন। এটি যেন তাদের সাধারণ ভক্তিমূলক সেবা ও দৈনন্দিন সাধনায় বিঘ্ন সৃষ্টি না করে।

১ম স্তর:
পঞ্চগব্যের একেকটি একেক দিনে গ্রহণ করা যেতে পারে।
১ম দিন: গোময়
২য় দিন: গোমূত্র
৩য় দিন: দুধ (ক্ষীর)
৪র্থ দিন: দধি
৫ম দিন: গোমাতা হতে প্রাপ্ত সমস্ত দ্রব্যের মিশ্রণে তৈরি পঞ্চগব্য।

২য় স্তর:

যদি কেউ ১ম স্তর অনুসরণ করতে না পারেন তবে ফলমূল গ্রহণ করা যেতে পারে। যেসব ফলে প্রচুর বীজ রয়েছে যেমন - পেয়ারা, ডালিম, পেঁপে, শসা প্রভৃতি বর্জন করা উচিত। আলু, কাঁচাকলা বা মিষ্টিআলু সেদ্ধ করে গ্রহণ করা যেতে পারে। স্বাদের জন্য সৈন্ধব লবণ ব্যবহার অনুমোদিত। কাজুবাদাম, কিসমিস ও খেজুর গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে এই স্তরের ব্রতে দুধ বা দুগ্ধজাত কোন দ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না। নারকেল ও নারকেলের জল গ্রহণ করা যাবে।

৩য় স্তর:

যদি কেউ ২য় স্তর পালনে অসমর্থ হন তবে "হবিষ্যান্ন" গ্রহণ করতে পারেন।

উৎস: পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড- ২৩ অধ্যায়; স্কন্দ পুরাণ, বিষ্ণুখণ্ড- কার্তিক মাহাত্ম্য- ৩২ অধ্যায়; গরুড় পুরাণ, পূর্বখণ্ড- ১২৩ অধ্যায়।

শ্রী শ্রী হরিভক্তিবিলাসের ১৩ অধ্যায়ের ১০-১৩ নং শ্লোকে হবিষ্যান্নের উপাদান উল্লেখ করা হয়েছে:
নিম্নোক্ত উপাদানগুলো হবিষ্যান্ন তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে। সাধারণত হবিষ্য চাল এবং মুগ ডাল দিয়ে তৈরি করা হয়। যারা একাদশী থেকে একাদশী পর্যন্ত চাতুর্মাস্য পালন করছেন, নিয়মানুযায়ী তাদের কার্তিক মাস একাদশী পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে, তাই তারা তাদের হবিষ্যে মুগ ডাল গ্রহণ করতে পারেন। যাইহোক, অধিকাংশ ভক্তগণ পূর্ণিমা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত একাদশী ব্রত পালন করেন, তাই ভীষ্ম পঞ্চকের হবিষ্যে মুগ ডাল অনুমোদিত হবে না। সকল প্রকার তেল পরিত্যাজ্য।

* আতপ চাল
* ঘি
* সৈন্ধব লবণ
* পাকা কলা
* কাল শাক
* গম
* বার্লি

এই উপাদানগুলিও গ্রহণ করা যেতে পারে:
* ফল (স্কন্দপুরাণের নাগরখণ্ডে অবশ্যই একটি ছোট বীজের অথবা কম বীজপূর্ণ ফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে)
* আম
* কাঁঠাল
* লাবালী ফল
* কেয়া ব্যতীত সকল মূল
* পিপলী
* হরিতকি
* আমলকি
* নারঙ্গ
* ইক্ষুদ্রব্য (গুড় ব্যতীত)
* ননীপূর্ণ গোদুগ্ধ

নিম্নবর্ণিত দ্রব্যগুলো হবিষ্যান্নের অন্তর্ভুক্ত হলেও তা কার্তিক মাসে বর্জন করতে বলা হয়েছে:
* মুগ ডাল
* তিল তেল
* বেতো শাক
* সাত্ত্বিক শাক
* মূলা
* জিরা
* তেঁতুল

একজন ব্যক্তির প্রতিদিন গঙ্গা অথবা যেকোন পবিত্র নদীতে স্নান করা উচিত। নিম্নলিখিত মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে তিনবার ভীষ্মদেবের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা উচিত:

তর্পণ মন্ত্র
(তর্পণ দেয়ার সময় উপবীতকে পেছনদিকে নিয়ে (যাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) এবং উভয় হাতে জল নেয়া হয়। মন্ত্র উচ্চারণ করা হয় এবং দুই হাত ডানদিকে এবং নিচে কাত করে নিবেদন করা হয় যাতে জল ডান বৃদ্ধাঙ্গুলির নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য নিবেদনের একটি উপায়। আপনারা ভীষ্ম পঞ্চকে এটি ভীষ্মদেবের উদ্দেশ্যে করেন।)

তর্পণ:
ওঁ বৈয়াগ্রপদ্য গোত্রায়
সংস্কৃতি প্রবরায় চ।
অপুত্রায় দদাম্যেতৎ
সলিলং ভীষ্মবর্মণে।।

অর্ঘ্য:
বসুনামাবতারায়
শান্তনোরাত্মজায় চ।
অর্ঘ্যং দদামি ভীষ্মায়
আজন্ম ব্রহ্মচারিণে।।

প্রণাম:
ওঁ ভীষ্ম শান্তনবো বীরঃ
সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ।
অভিরদ্ভিরবাপ্নোতু
পুত্রপৌত্রচিতাং ক্রিয়াম্।।

** যদি আপনার কাছাকাছি কোন পবিত্র নদী না থাকে:
যারা "গঙ্গা, গঙ্গা, গঙ্গা" উচ্চারণ করেন, তারা এই পবিত্র নদীতে স্নান করার সুফল লাভ করেন, যা যেকোন স্থানেই করা সম্ভব। ভক্তেরা যেকোন নদী, হ্রদ অথবা সমুদ্রে স্নান করতে পারেন।

ভগবানের নিকট নিবেদন:
ভক্তরা নিম্নের ফুলগুলি বিগ্রহকে নিবেদন করতে পারেন:

১ম দিন- শ্রীবিগ্রহের শ্রীচরণে অবশ্যই পদ্মফুল,
২য় দিন- শ্রীবিগ্রহের ঊরুতে বিল্বপত্র,
৩য় দিন- শ্রীবিগ্রহের নাভিদেশে গন্ধদ্রব্য
৪র্থ দিন- শ্রীবিগ্রহের স্কন্ধদেশে জবাফুল এবং
৫ম দিন- শ্রীবিগ্রহের মস্তকে(শিরোদেশে) মালতী ফুল নিবেদন করা উচিত।

যদি কখনো দু'টি তিথি একত্রে পড়ে তবে ঐদিন দুইদিনের উদ্দিষ্ট ফুলগুলো একই দিনে নিবেদন করতে পারেন।

** যদি আপনার নিকট ফুলগুলি না থাকে, তবে ভগবানের নির্ধারিত স্থানে নির্ধারিত ফুলগুলি আপনি মানসিকভাবে নিবেদন করতে পারেন।

উৎস: গরুড় পুরাণ

🙏 হরিবোল 🙏

01/11/2025

🚩 হরে কৃষ্ণ, আগামীকাল ০২ নভেম্বর, ২০২৫, রোজ : রবিবার। পবিত্র উত্থান একাদশী ব্রত। ভগবানের প্রীতি বিধানের জন্য সকলে একাদশী ব্রত পালন করুন।

💠 উত্থান একাদশী (ত্রিস্পৃশা মহাদ্বাদশী) ব্রতের মাহাত্ম্য:

💠 কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী মাহাত্ম্য স্কন্দপুরাণে ব্রহ্মা নারদ সংবাদে বর্ণিত আছে।

💠 মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন---হে পুরুষোত্তম! কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম আমার কাছে কৃপা করে বর্ণনা করুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন---হে রাজন! কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী 'উত্থান' বা 'প্রবোধিনী' নামে পরিচিত। প্রজাপতি ব্রহ্মা পূর্বে নারদের কাছে এই একাদশীর মহিমা কীর্তন করেছিলেন। এখন তুমি আমার কাছে সেই কথা শ্রবণ কর। দেবর্ষি নারদ প্রজাপতি ব্রহ্মাকে বললেন---হে মহাত্মা! যে একাদশীতে ভগবান শ্রী গোবিন্দ শয়ন থেকে জেগে ওঠেন, সেই একাদশীর মাহাত্ম্য আমার কাছে সবিস্তারে বর্ণনা করুন। ব্রহ্মা বললেন---হে নারদ! উত্থান একাদশী যথার্থই পাপনাশিনী, পুণ্যকারী ও মুক্তি প্রদানকারী। এই ব্রত নিষ্ঠা সহকারে পালন করলে এক হাজার অশ্বমেধ যজ্ঞ ও শত শত রাজসূয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়। জগতের দুর্লভ বস্তুর প্রাপ্তির কথা কি আর বলব। এই একাদশী ভক্তি পরায়ন ব্যক্তিকে ঐশ্বর্য, প্রজ্ঞা, রাজ্য ও সুখ প্রদান করে। এই ব্রতের প্রভাবে পর্বত প্রমাণ পাপরাশি বিনষ্ট হয়। যারা একাদশীতে রাত্রি জাগরণ করেন, তাদের সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হয়। শ্রেষ্ঠ মুনিগণ তপস্যার দ্বারা যে ফল লাভ করেন, এই ব্রতের উপবাসে তা পাওয়া যায়। যথাযথ ভাবে এই ব্রত পালনে আশাতীত ফল লাভ হয়। কিন্তু অবিধিতে উপবাস করলে স্বল্পমাত্র ফল লাভ হয়। যারা এই একাদশীর ধ্যান করেন, তাদের পূর্বপুরুষেরা স্বর্গে আনন্দে বাস করেন। এই একাদশী উপবাস ফলে ব্রহ্মহত্যা জনিত ভয়ঙ্কর নরক যাতনা থেকে নিস্তার পেয়ে বৈকুণ্ঠগতি লাভ হয়। অশ্বমেধ যজ্ঞ দ্বারাও যা সহজে লাভ হয় না, তীর্থে স্বর্ণ প্রভৃতি দান করলে যে পুণ্য অর্জিত হয়, এই উপবাসের রাত্রি জাগরণে সেই সকল অনায়াসে লাভ হয়। যিনি সঠিক ভাবে উত্থান একাদশী অনুষ্ঠান করেন, তার গৃহে ত্রিভুবনের সমস্ত তীর্থ এসে উপস্থিত হয়। হে নারদ! বিষ্ণুর প্রিয়তমা এই একাদশী উপবাস ফলে সর্ব শাস্ত্রে জ্ঞান ও তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করে চরমে মুক্তি লাভ হয়। যিনি সমস্ত লৌকিক ধর্ম পরিত্যাগ করে ভক্তি সহকারে এই ব্রত পালন করেন তাকে আর পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না। এমনকি মন ও বাক্য দ্বারা অর্জিত পাপরাশিও শ্রী গোবিন্দের অর্চনে বিনষ্ট হয়। হে বৎস! এই ব্রতে শ্রদ্ধা সহকারে শ্রী জনার্দনের উদ্দেশ্যে স্নান, দান, জপ, কীর্তন ও হোমাদি করলে অক্ষয় লাভ হয়। যারা উপবাস দিনে শ্রী হরির প্রতি ভক্তি সহকারে দিন যাপন করেন, তাদের পক্ষে জগতে দুর্লভ বলে আর কিছু নেই। চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণে স্নান করলে যে পুণ্য হয়, এই উপবাসে রাত্রি জাগরণ করলে তার সহস্র গুন সুকৃতি লাভ হয়। তীর্থে স্নান, দান, জপ, হোম ধ্যান আদির ফলে যে পুণ্য সঞ্চিত হয়, উত্থান একাদশী পালন না করলে সে সমস্ত নিষ্ফল হয়ে যায়। হে নারদ! শ্রী হরি বাসরে শ্রী জনার্দনের পূজা বিশেষ ভক্তি সহকারে করবে। তা না হলে শতজন্মার্জিত পুণ্য ও বিফল হয়। হে বৎস! যিনি কার্তিক মাসে সর্বদা ভাগবত শাস্ত্রাদি অধ্যয়ন করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে সমস্ত যজ্ঞের ফল লাভ করেন। ভগবান হরি ভক্তি মূলক শাস্ত্রপাঠে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। কিন্তু দান, জপ, যজ্ঞাদি দ্বারা তেমন প্রীত হন না। এই মাসে শ্রী বিষ্ণুর নাম, গুন, রূপ, লীলাদি শ্রবণ কীর্তন অথবা শ্রীমদ্ভাগবত আদি শাস্ত্র গ্রন্থ পাঠের ফলে শত শত গোদানের ফল লাভ করা যায়। অতএব হে মুনিবর! কার্তিক মাসে সমস্ত গৌণধর্ম বর্জন করে শ্রী কেশবের সামনে হরি কথা শ্রবণ কীর্তন করা কর্তব্য। কোনো ব্যক্তি যদি ভক্তি সহকারে এই মাসে ভক্তসঙ্গে হরিকথা শ্রবণ কীর্তন করেন, তবে তার শতকুল উদ্ধার হন এবং হাজার হাজার দুগ্ধবতী গাভী দানের ফল অনায়াসে লাভ হয়। এই মাসে পবিত্র ভাবে শ্রীকৃষ্ণের রূপ গুনাদির শ্রবণ কীর্তনে দিন যাপন করলে তার আর পুনর্জন্ম হবে না। এই মাসে বহু ফলমূল, ফুল, অগুরু, কর্পূর ও চন্দন দিয়ে শ্রী হরির পূজা করা কর্তব্য। সমস্ত তীর্থ ভ্রমণ করলে যে পুণ্য হয়, উত্থান একাদশীতে শ্রীকৃষ্ণ পাদপদ্মে অর্ঘ্য প্রদানে তার কোটি গুন সুকৃতি লাভ হয়। শ্রবণ কীর্তন, স্মরণ বন্দনাদি নববিধা ভক্তির সাথে তুলসীর সেবার জন্য যারা বীজ রোপণ, জল সেচন ইত্যাদি করেন, তারা মুক্তি লাভ করে বৈকুণ্ঠ বাসী হন। হে নারদ! সহস্র সুগন্ধি পুষ্পে দেবতার অর্চনে বা সহস্র সহস্র যজ্ঞ ও দানে যে ফল লাভ হয়, এই মাসে হরি বাসরে একটি মাত্র তুলসী পাতা শ্রী ভগবানের চরণ কমলে অর্পণ করলে তার অনন্ত কোটি গুন লাভ করা যায়।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

01/11/2025

🚩 কার্তিক মাসে অগস্তফুল বা বকফুলের বিশেষ মাহাত্ম্য ‼️

যিনি কার্তিক মাসে অপরাপর অন্য পুষ্প বাদ দিয়ে কেবল মাত্র অগস্ত পুষ্প দ্বারা শ্রী হরির অর্চনা করেন, তাঁহার অশ্বমেধ যজ্ঞানুষ্ঠানের ফল লাভ হইয়া থাকে। শ্রী হরির অগস্ত পুষ্প এত প্রিয় যে, কার্তিক মাসে যে অগস্ত পুষ্প দ্বারা শ্রী হরির অর্চনা করেন, গগন মন্ডলে যত দিন চন্দ্র সূর্য থাকে তত কাল তিনি শ্রীহরির সমীপে বাস করেন।

অযুতসংখ্যক গো দানে যে ফল লাভ হয় কার্তিক মাসে শ্রী হরির পাদপদ্মে একটি মাত্র অগস্ত পুষ্প অর্পন করলে সেই ফল লাভ হয়।
পদ্মপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে,—

"মুনিপুষ্পৈর্যদি হরিঃ
পূজিতঃ কার্তিকে নরৈঃ
মুনিনামেব গতিদো
জ্ঞানীনামুদ্ধর্রেতসাম॥"

কার্তিক মাসে অগস্তপুষ্প দ্বারা শ্রী হরির পূজা করিলে প্রভু তাহাদিগকে উর্দ্ধরেতা গনের গতি প্রদান করেন। সর্বোপরি এই দামোদর মাসে শ্রী শ্রী রাধা দামোদর দেবের প্রিয় অগস্ত পুষ্প তাঁর সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দ্যেশ্যে পূর্ন নিষ্কাম ভাবে নিবেদন করাই কর্তব্য।

🙏 হরিবোল 🙏

Vaisnava Dasa Nu Das

08/11/2025

08/11/2025

07/11/2025

05/11/2025

04/11/2025

04/11/2025

02/11/2025

02/11/2025

02/11/2025

01/11/2025

01/11/2025

Address

Website

Alerts

Contact The Business

Shortcuts

Share