
05/06/2025
হাসির গল্প: আজব সমস্যা
আমাদের পাড়ার রফিকের ভাই, নাম তার আব্দুল সাহেব, খুবই শান্তশিষ্ট আর সহজ-সরল একজন মানুষ। তার জীবনে বড় কোনো ঝামেলা নেই, তাই তিনি ছোটখাটো বিষয় নিয়েও খুব চিন্তাভাবনা করেন।
একদিন আব্দুল সাহেব বাজার থেকে একজোড়া নতুন জুতো কিনলেন। জুতো জোড়া দেখতে দারুণ, কিন্তু সাইজে একটু ছোট। আব্দুল সাহেব ভাবলেন, "ধুর বাবা! নতুন জুতো, একটু আটোসাটো হবেই। পরতে পরতে ঠিক হয়ে যাবে।"
সেদিন সন্ধ্যাবেলা তিনি জুতো পরে একটু হাঁটতে বের হলেন। পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই তার পায়ের অবস্থা কাহিল! জুতো এত টাইট যে পা লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। তিনি কোনোমতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাড়িতে ফিরলেন।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আব্দুল সাহেব দেখেন, তার পা দুটো এমন ফুলেছে যে জুতো পরা তো দূরের কথা, ঘরে থাকা স্লিপারও ঢোকে না! তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন। কী করা যায়? এই জুতো নিয়ে তো আর বাজারে গিয়ে ফেরতও দিতে পারবেন না, কারণ দোকানের মালিক এমন পাজি যে একবার জিনিস নিলে আর ফেরত নেয় না।
তিনি তখন বুদ্ধি খাটাতে লাগলেন। হঠাৎ তার মাথায় এক মহা বুদ্ধি এলো। "আরে! জুতো ছোট হলে কী হবে? পা'টা যদি ছোট করে ফেলি, তাহলে তো জুতো ঠিক ফিট হবে!"
যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। তিনি পাশের বাড়ির কদম আলীর কাছে গেলেন। কদম আলী একজন গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার, সব রোগের চিকিৎসা সে নিজেই করে। আব্দুল সাহেব তাকে বললেন, "কদম আলী ভাই, আমার পা ছোট করার কোনো ওষুধ আছে?"
কদম আলী তো শুনে হতবাক! সে বলল, "আব্দুল ভাই, পা ছোট করার ওষুধ! এ কেমন কথা?"
আব্দুল সাহেব তখন তাকে সব খুলে বললেন। জুতো ছোট, পা ফুলে গেছে, তাই পা ছোট করতে চান। কদম আলী কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবল। তারপর গম্ভীর গলায় বলল, "আহা! এই তো সামান্য ব্যাপার। আমার কাছে একটা অব্যর্থ টোটকা আছে। তুমি এক বালতি গরম জলে নিম পাতা আর লবণ মিশিয়ে তাতে তোমার পা ডুবিয়ে রাখো। টানা তিন ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখবে। দেখবে, পা একদম চিকন হয়ে যাবে।"
আব্দুল সাহেব কদম আলীর কথা মতো পরদিন থেকেই চিকিৎসা শুরু করলেন। প্রতিদিন সকালে এক বালতি গরম জলে নিম পাতা আর লবণ মিশিয়ে তাতে পা ডুবিয়ে বসে থাকেন। প্রথম দিন পা আরও ফুলে গেল, দ্বিতীয় দিন ব্যথা বাড়ল, তৃতীয় দিন পা'টা একদম লাল টকটকে।
বাড়ির সবাই তাকে জিজ্ঞাসা করে, "কী হয়েছে আব্দুল সাহেব? এত নিম পাতা আর লবণ দিয়ে কী করছেন?"
আব্দুল সাহেব হাসিমুখে উত্তর দেন, "আরে বাবা, পা ছোট করছি! নতুন জুতো তো!"
কয়েকদিন এভাবে চিকিৎসা করার পর, আব্দুল সাহেবের পা এতটাই ব্যথা করতে শুরু করল যে তিনি আর হাঁটতেই পারলেন না। শেষে তার স্ত্রী বিরক্ত হয়ে তাকে টেনে নিয়ে আসল ডাক্তারের কাছে।
ডাক্তার সাহেব পরীক্ষা করে হাসতে হাসতে বললেন, "আব্দুল সাহেব, আপনার তো জুতোর সাইজ ছোট ছিল, পা নয়। আর আপনার পা ফুলেছে কারণ জুতো টাইট ছিল, এখন আপনি গরম জলে পা ডুবিয়ে ডুবিয়ে আরও ফোলাচ্ছেন!"
আব্দুল সাহেব তখন বুঝলেন, তিনি আসলে জুতো ছোট করার বদলে নিজের পা'কেই ছোট করার চেষ্টা করছিলেন! জুতো জোড়া শেষ পর্যন্ত তার ছোট ভাইয়ের হলো, আর আব্দুল সাহেবের জ্ঞান বাড়লো যে, সব সমস্যার সমাধান উল্টো পথে হয় না।