19/05/2025
যে তিনটি বিষয় অবশ্যই গোপন রাখবেন।
মানুষের জীবন বড় অদ্ভুত! জীবনে বেঁচে থাকার জন্য এবং নিজের জীবনটাকে সুন্দর আর সুগঠিত রাখতে, তাকে শিখতে হয় নানান কৌশল, অবলম্বন করতে হয় নানান উপায়। কখনো তাকে প্রকাশমান থাকতে হয়, কখনো-বা নিজের মধ্যে জমা রাখতে হয় অনেক গল্প। সবটাই তার টিকে থাকা আর বেঁচে থাকার তাগিদ থেকেই।
১.আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
জীবনের এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে, আপনি হয়ত নতুন একটা কিছুর পরিকল্পনা করছেন, তাই তো? আপনার ধারণা, এই পরিকল্পনা মতো এগুতে পারলে বদলে যাবে আপনার জীবন। আপনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। শুধু আপনি একাই নন, এই পরিকল্পনা বাস্তব রূপ পেলে বদলে যাবে আরও অনেকগুলো মানুষের জীবনধারা। তারা হতে পারে আপনার পরিবার-পরিজন, হতে পারে আপনার বন্ধু বা শুভাকাঙ্খী সমাজ।
সেই পরিকল্পনা হতে পারে কোনো ব্যবসা বা স্টার্টাপ যেটা একান্ত আপনার মস্তিষ্কপ্রসূত। যেটা এখনও পর্যন্ত আপনার মস্তিষ্কের ভেতরেই অঙ্কুরোদগম অবস্থায় আছে। যা সম্পর্কে আর কেউ কিচ্ছু জানে না।
সেই পরিকল্পনা হতে পারে কোনো সামাজিক উদ্যোগ যেটা একটা নতুন ধারার সৃষ্টি করবে সমাজে। যেখান থেকে উপকৃত হবে সমাজের সকল স্তরের মানুষ।
সেটা হতে পারে ভালো কোনো চাকরির প্রস্তুতি, ভালো কোনো উদ্যোগ অথবা অন্য যেকোনোকিছু।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা হিশেবে যা-কিছুই আপনি এই মুহূর্তে চিন্তা করছেন, তা জনে জনে কখনোই বলে বেড়ানো উচিত নয়।
আপনি জেনে অবাক হবেন, আপনার পরিকল্পনা জেনে যাওয়ার পর, অনেকগুলো লোলুপ চোখ আর লোলুপ হাত সেই পরিকল্পনা হাইজ্যাক করার চেষ্টায় মেতে উঠতে পারে। আপনি যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারেন, আপনি যাতে আপনার মিশনে সফল হতে না পারেন, সেই চেষ্টা প্রাণপণে করে যাবে এমনকিছু মানুষ, যাদেরকে আপনি ভালোবেসে আর বিশ্বাস করে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাটা জানিয়েছিলেন। যে পরিকল্পনা নিয়ে আপনি রাতের পর রাত চিন্তা করেছেন, স্কেচিং করেছেন, দিন আর রাত এক করে যে জিনিস দাঁড় করানোর জন্য আপনি গাধার মতো খেটেছেন, সেই পরিকল্পনাকে ধূলিসাৎ করতে একজন 'অসৎ' মানুষই যথেষ্ট।
সুতরাং, আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যাকে-তাকে বলে বেড়াবেন না।
২. আপনার উপার্জন বা সমৃদ্ধির গল্প :
আপনার ইনকামের চারপাশে আপনি যাদের সাথে মেশেন, হেসে কথা বলেন, সুখ-দুঃখের গল্প করেন, সবাই কিন্তু আপনার সত্যিকার শুভাকাঙ্খী নয়।
পরেরবার থেকে, আপনার ব্যবসা যদি খুব ভালো করতে শুরু করে, যদি আপনার খুব দ্রুত প্রমোশান হয়, কিংবা যদি আপনার আয় উপার্জনের ক্ষেত্রগুলো উন্নতি করতে শুরু করে, সার্কেলের সকললে সেই কথা বলে বেড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
প্রথমত, মানুষ অন্যের উন্নতি সহ্য করতে পারে খুবই কম। ইবলিশ আদম আলাইহিস সালামের মর্যাদা আর উন্নতিকে সহ্য করতে পারেনি। আদম আলাইহিস সালামের দুই সন্তান, হাবিল আর কাবিলের মাঝে দ্বন্ধের সূত্রপাত ঘটেছে উন্নতি আর মর্যাদা সহ্য করতে না পারার ঘটনা থেকে।
দ্বিতীয়ত, আপনার উন্নতি আর সমৃদ্ধি সম্পর্কে যদি সকলে জ্ঞাত থাকে, তাহলে তাদের অনেকবেশি প্রত্যাশা জন্মাবে আপনার উপর। সেই প্রত্যাশা যদি আপনি পূরণ করতে না পারেন, সেখান থেকে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হবে এবং তা অনেকসময় শত্রুতাতেও পরিণত হতে পারে।
সুতরাং, আপনার উন্নতি আর সমৃদ্ধির গল্প যথাসম্ভব গোপন রাখুন।
৩.আপনার সংসারের সুখের গল্প:
দুনিয়াতে অসুখী মানুষের সংখ্যাই বেশি। আর, মানুষের একটা স্বভাব হলো-সে অন্যের সুখ সহ্য করতে পারে খুবই কম।
আপনার সংসারে যদি সুখের ফোয়ারা বহমান থাকে, যদি আপনার বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান-সকলকে নিয়ে আপনি একটা সুখের রাজ্যে বাস করে থাকেন, আমার বিনীত অনুরোধ, মানুষকে সেই সুখের গল্প বলে বেড়ানো থেকে দূরে থাকুন।
কারণ, বদনজর সত্য।
আপনার সুখের গল্প শুনে কারও মনে যদি তার অতৃপ্তি আর অপ্রাপ্তির বিষাদ জেগে উঠে, সে যদি ঈর্ষাপ্রবণ হয়ে পড়ে, এই একটা সাধারণ ঘটনাই আপনার সুখের জীবনটাকে তছনছ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হতে পারে।
সুতরাং, আপনার সংসারের সুখের গল্পটাকে আপনার ঘরের চার দেয়ালে বন্দী রাখুন।