Sa Qib

Sa Qib Well come to my official page "SA Qib"

06/08/2023

গল্প হলেও অনেক স্বামী স্ত্রীর বাস্তবতার শিকার।

স্ত্রী যখন আট মাসের গর্ভবতী তখন আমার শাশুড়ি এসে স্ত্রীকে নিয়ে গেলো বাপের বাড়ি।

ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার দুদিন পর শাশুড়ি স্ট্রোক করলো। এতে তার শরীরের বাঁ দিক অবশ হয়ে গেলো। যে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলো দেখাশোনা করার জন্য, সেই মেয়ে এখন উল্টো মাকে দেখাশোনা করতে লাগলো।

অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে গিয়ে স্ত্রীকে বললাম,"সন্তান জন্মের পরই বাড়িতে চলে এসো।"
স্ত্রী বললো,"বাবা সারাদিন চাকরিতে ব্যস্ত থাকেন। ছোটো ভাইও ভার্সিটি, টিউশনি নিয়ে দিনভর বাইরে থাকে। গোটা দিন মাকে দেখার কেউ নেই। এই অবস্থায় অসুস্থ মাকে রেখে কী করে যাই?"
"কী বলতে চাও তুমি?"

"মা নিজে নিজে উঠতে বসতে পারলে, এবং কিছুটা হাঁটতে পারলে আমি চলে যাবো। সেই পর্যন্ত আমাকে থাকতে দাও।"
বিরক্ত হয়ে বললাম,"তোমার মায়ের ঐ অবস্থায় আসতে ছয় মাস লাগবে। ততোদিন থাকবে এখানে?"
"ছয় মাস লাগবে না। ডাক্তার বলেছেন দু মাসের মধ্যে মা সুস্থ হয়ে যাবে।"

অসন্তুষ্ট হয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এলাম।
যথা সময়ে আমার একটা ছেলে সন্তান হলো।
স্ত্রী ঐ সদ্যজাত ছেলেকে নিয়ে মায়ের সেবা করে যেতে লাগলো।

এই সময় আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়লো। এবার তো স্ত্রীকে আনতেই হবে।

স্ত্রীকে যেদিন আনতে গেলাম সেদিন অসুস্থ শাশুড়ি বাচ্চাদের মতো কাঁদলো।
শাশুড়ি মেয়ের হাত ধরে বারবার বলছিলো,"তুই চলে গেলে আমি মরে যাবো।
একদম মরে যাবো।"
উত্তরে মেয়ে বললো,"মাগো, মেয়েদের জীবন এতো কঠিন কেনো...?
নিজের অসুস্থ মাকে ফেলে কেনো চলে যেতে হয়...?

মেয়ে চলে যাক এটা ওদের বাড়ির কেউ চাইছিলো না। কিন্তু আমি নিরুপায়। স্ত্রী যেমন তার মায়ের কথা ভাবছিলো, আমিও তেমনি আমার মায়ের কথা ভাবছিলাম।

স্ত্রীকে নিয়ে আসার পর শাশুড়ির শরীরের অবস্থার অবনতি হলো।
আমার মা কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে স্ত্রী একদিন আমাকে বললো,"আমাকে এবার মায়ের কাছে যেতে দাও।
তুমি তো জানোই মায়ের শরীর খুব খারাপ হয়ে গেছে।"

স্ত্রী চলে গেলে মায়ের সেবা যত্নের ঘাটতি হবে।
এতে মা'র অসুস্থতা বেড়ে যেতে পারে।
তাই বললাম,"অবশ্যই না। আমার মা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তুমি যেতে পারবে না।

সে স্তব্ধ হয়ে আমার দিকে চেয়ে রইলো।
এর কিছু দিন পর আমার শাশুড়ি মারা গেলো।
সেদিন স্ত্রী আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো, যার অর্থ হলো, "তোমার জন্য আমার মা মারা গেলো।

জানি, মায়ের মৃত্যুর জন্য সে আজীবন আমাকে দায়ী করবে।
কিন্তু সে কখনোই আমার অবস্থার কথা ভাববে না।

তবে সাতাশ বছর পর এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, যখন আমি প্রমাণ করতে পারলাম, শাশুড়ির মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী নই ¡!¡

#ঘটনা_কী_হয়েছিলো_বলি।
আমার স্ত্রী তখন অসুস্থ। ছেলের বউ তার সেবা করছিলো। এই সময় আচমকা ছেলের শাশুড়িও অসুস্থ হয়ে পড়লো।
তাকে দেখাশোনা করার কেউ নেই।

ছেলের বউ তখন বাপের বাড়ি যেতে চাইলে ছেলে ঠিক আমার কথাটাই বললো,"অবশ্যই না। আমার মা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তুমি যেতে পারবে না।

ছেলের বউ স্তব্ধ হয়ে তার স্বামীর দিকে তাকালো, ঠিক যেভাবে আমার স্ত্রী একদিন আমার দিকে তাকিয়েছিলো।

আমি সেদিন আমার স্ত্রীকে বললাম,তোমার মায়ের মৃত্যুর জন্য তুমি আমাকে দায়ী ভাবো।
কিন্তু এখন নিজের ছেলেকে দেখে বুঝলে তো, আমি পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম।
আমার মা যদি সে সময় অসুস্থ না থাকতো, তাহলে তোমাকে যেতে দিতাম। আমার কিছু করার ছিলো না।"
স্ত্রী শোয়া অবস্থায় বললো,"কিছু করার ছিলো না?"
--না--..?

সে তখন ছেলেকে আর ছেলের বউকে ডাকলো।
ওরা এলে প্রথমে ছেলেকে বললো,"তুই নিজের মায়ের কথা ভাবছিস, এটা মা হিসেবে আমার জন্য আনন্দের। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না, তোর শাশুড়ি হলো তোর স্ত্রীর মা।

তোর যেমন মন কাঁদছে মায়ের জন্য, তোর বউয়েরও তেমন মন কাঁদছে তার মায়ের জন্য।
ছেলে তখন বললো,"কিন্তু আমি কী করতে পারি...?

তোমাকে এই অবস্থায় রেখে বউকে তো আর বাপের বাড়িতে পাঠাতে পারি না।"

আমার স্ত্রী তখন যে কথা বললো তার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না।
সে বললো,"তোর শাশুড়িকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আয়।

নতুবা আমাকে নিয়ে চল তোর শ্বশুরবাড়িতে।
তারপর ছেলের বউকে বললো, এক সাথে দুই অসুস্থ মায়ের সেবা করতে আপত্তি নেই তো তোমার...?

ছেলের বউ অপ্রত্যাশিত এই কথা শুনে আমার স্ত্রীর হাত ধরে কেঁদে দিলো।
এবং বললো,"কোনো আপত্তি নেই মা।
ছেলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,"শাশুড়িকে এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি।

খরচ নিয়ে ভাবতে হয় নি।
ছেলের শ্বশুরবাড়ি থেকে সব খরচ বহন করা হয়েছিলো। এমনকি আমার স্ত্রীর চিকিৎসার খরচও তারা অনেকখানি দিয়েছিলো।

মেয়ের সান্নিধ্যে থেকে ছেলের শাশুড়ি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলো।
এবং যেদিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলো, সেদিন থেকে অপরাধ বোধের কারণে স্ত্রীর চোখের দিকে আর তাকাতে পারি নি।
কেননা, অবশেষে শাশুড়ির মৃত্যুর জন্য দায়ী হয়ে গেলাম।

আমার স্ত্রী ছেলের শাশুড়িকে এনে যে সমাধান দিয়েছিলো সেটা আমার শাশুড়ির ক্ষেত্রেও করতে পারতাম।
কিন্তু করতে পারি নি, কারণ সেদিন শুধু আমার মায়ের কথা ভেবেছিলাম।
স্ত্রীর মায়ের কথা নয়।
আর তাছাড়া আমার স্ত্রী যদি সেদিন এই সমাধানের কথা বলতো, তবে ঝামেলা হবে ভেবে রাজি হতাম না।

আসলে অন্যের জন্য ভাবতে গেলে বড়ো মন লাগে।
যা আমার স্ত্রীর আছে। আমার নেই।

এই শেষ বেলায় চাওয়া এখন একটাই, ছেলে তার মায়ের মতো হোক। বাবার মতো নয়।

_Collected💔🥀

Address

Kulaura
Kulaura

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sa Qib posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share