মনের মানুষ

মনের মানুষ মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে বিশ্ববাসীর নিকট ফকির লালন সাঁইজির বাণী প্রচার করার লক্ষ্যে পরিচালিত।
(3)

ফকির লালন সাঁইজির জীবনী নিয়ে তৈরি হয়েছে তিন সিনেমাঅসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার প্রতীক ফকির লালন সাঁই। তার জীবন দর্শন যুগে ...
15/07/2025

ফকির লালন সাঁইজির জীবনী নিয়ে তৈরি হয়েছে তিন সিনেমা

অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার প্রতীক ফকির লালন সাঁই। তার জীবন দর্শন যুগে যুগে মানবতার বার্তা বিলিয়ে যাচ্ছে। শুধু বাংলা ভাষাভাষি মানুষকেই নয়, তার জীবন দর্শন প্রভাবিত করেছে পৃথিবীর কৌতুহলী প্রতিটি মানবিক মানুষকে।

তাঁর ১৩০তম তিরোধান দিবস শনিবার (১৭ অক্টোবর)। এদিন তাকে স্মরণে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে বিরাট আসর বসে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা এবার হচ্ছে না। তবু তিনি বিভিন্নভাবে এই দিনে স্মরিত হচ্ছেন।

লালন, শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি মানুষ নন। তাকে নিয়ে গবেষণা হয়েছে বিস্তর। তার জীবন দর্শনে প্রভাবিত হয়ে গল্প কবিতার সংখ্যাও কম নয়। প্রামাণ্যচিত্রেও তাকে ও তার বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেছেন নির্মাতারা।তবে সে তুলনায় তাকে নিয়ে বাংলা ভাষায় সিনেমার সংখ্যা হাতে গোনা।

মানবতাবাদী লালনের মৃত্যুদিনে তাকে নিয়ে নির্মিত বাংলাদেশের তিনটি উল্লেখযোগ্য কাহিনিচিত্রের কথা থাকলো এখানে, যারমধ্যে ‘মনের মানুষ’ নামের চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত:

মনের মানুষ: গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘মনের মানুষ’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে। যৌথ প্রযোজনার এ ছবিতে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর ‘মনের মানুষ’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিতে লালন ফকিরের জীবন ও কর্মের কিছু চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিতে লালনের চরিত্রে অভিনয় করেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, চঞ্চল চৌধুরী, শুভ্র কুন্ডু, পাওলি দাম, প্রিয়াংশু চ্যাটার্জী, তাথৈ, নাউফেল জিসান, চম্পা, হাসান ইমাম, শাহেদ আলী সহ আরও অনেকে।

লালন: লালনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বহু আগে থেকেই কাজ করলেও ২০০৪ সালে লালন ফকিরের জীবন, সংগীত ও দর্শন নিয়ে কাহিনীচিত্র নির্মাণ করে তানভীর মোকাম্মেল। তার নির্মিত চলচ্চিত্রটি তৎকালীন সময়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এই সিনেমায় লালনের চরিত্রে অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। এছাড়াও অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম, শমী কায়সার, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, রামেন্দু মজুমদার ও খুরশীদুজ্জামান উৎপল। চলচ্চিত্রটি ২৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।

লালন ফকির: মানবতাবাদী লালন ফকিরের জীবনী নিয়ে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ‘লালন ফকির’। এটি ১৯৭২ সালে মুক্তি পায়। যা নির্মাণ করেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম। সিনেমায় ফকির লালন সাঁইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন ঢাকাই ছবির এক সময়ের তারকা অভিনেতা উজ্জ্বল। ছবিতে আরো অভিনয় করেন কবরী, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

মুক্ততথ্য ভাণ্ডার উইকিপিডিয়া বলছে, হাসান ইমাম নির্মিত এটি ফকির লালন সাঁইকে নিয়ে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র। নাট্যকার আসকার ইবনে শাইখ এর লালনকে নিয়ে নাটক ঢাকার নাট্যমঞ্চে বেশ কয়েকবার মঞ্চায়িত হয়েছিল। এ নাটকটি অবলম্বনেই সৈয়দ হাসান ইমামের সংলাপ, চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়। চলচ্চিত্রটিতে ফকির লালনের জীবন ও বাঙ্গালি সংস্কৃতির রুপায়ন তুলে ধরা হয়েছে।চলচ্চিত্রটির দুটি কপি এখনো বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে।

নন্দিত অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদের আজ জন্মদিন যার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হতে হয় প্রতিবার, তিনি আর কেউ নন স্বনামধন্য অভিনেতা রা...
15/07/2025

নন্দিত অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদের আজ জন্মদিন

যার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হতে হয় প্রতিবার, তিনি আর কেউ নন স্বনামধন্য অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। কেবল সুঅভিনেতাই নয়, তার আরও বড় একটি পরিচয় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার অভিনয় দেখে বোঝা যায় শিল্প কাকে বলে, অভিনয় কাকে বলে। সিনেমা বা নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিবারই দর্শকদের মুগ্ধ করেন এ অভিনেতা।

আজ এই অসম্ভব প্রতিভাধর ও জনপ্রিয় অভিনেতার ৭২তম জন্মদিন। ১৯৫২ সালের ১৫ জুলাই ঢাকার পুরানা পল্টনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পুরো নাম আসাদুজ্জামান মোহাম্মাদ রাইসুল ইসলাম। শিশুকাল কাটিয়েছেন ঢাকাতেই, বড় হয়েছেন ঢাকার অলিগলিতে। পল্টনে বড় হয়ে ওঠার কারণে এ এলাকার রাজনৈতিক হাওয়াটা উপেক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি তার পক্ষে। সে সময়ে তাদের পাড়ায় উঠতি বয়সিদের একটা ক্লাব ছিল, নাম- একতা বিতান। সেই ক্লাবে খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি রাজনীতি নিয়ে তর্ক-বিতর্কেও মেতে থাকতে পছন্দ করতেন।

১৯৭২ সালে রাইসুল ইসলাম আসাদ প্রথম মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। 'আমি রাজা হব না' এবং 'সর্পবিষয়ক গল্প' নামের ২টি নাটক করেন তিনি, যার মাঝে কোনো বিরতি ছিল না। এরপর একে একে অভিনয় করেন আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে 'পশ্চিমের সিঁড়ি' নাটকে। ১৯৭৩ সালে তিনি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করেন ঢাকা থিয়েটার। এরপর অভিনয় করেন সংবাদ কার্টন, সম্রাট ও প্রতিদ্বন্দ্বীগণ নাটকে। এর পর থেকে ঢাকা থিয়েটারে একের পর এক সাড়া-জাগানো নাটকে অভিনয় করেন তিনি।

ঢাকা থিয়েটার গঠনের বছরেই মুক্তি পায় তার প্রথম চলচ্চিত্র 'আবার তোরা মানুষ হ' এরপরে একে একে অভিনয় করেছেন বহুসংখ্যক সিনেমাতে। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- পদ্মা নদীর মাঝি, লাল দরজা, লালন, পতঙ্গ (হিন্দি), মনের মানুষ, হঠাৎ বৃষ্টি, ঘুড্ডি, একই বৃত্তে, উত্তরা, আমার বন্ধু রাশেদ, দুখাই, লালসালু ইত্যাদির মতো দর্শকপ্রিয় সব সিনেমা। শুধু চলচ্চিত্র ও মঞ্চ নয়, গুণী এই অভিনেতা বেতার, টেলিভিশনেও সমান জনপ্রিয়। নিজের নানা কাজের জন্য একাধিকবার জাতীয় পদকও জয় করেছেন তিনি।

এখনো বিরামহীনভাবে নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন গুণী এই অভিনেতা। শুধু অভিনয় করছেন তাই নয়, জনপ্রিয়তা ও তারকাদের অবস্থানের কাতারে তিনি রয়েছেন শীর্ষে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার অভিনয় ও তার অভিনীত চলচ্চিত্র ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তিনি অভিনয় করেছেন গৌতম ঘোষ এবং তানভীর মোকাম্মেলের মতো পরিচালকের সঙ্গে, তাদের সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্রে। 'লালন' সিনেমায় তিনি 'লালন' চরিত্রে এবং 'মনের মানুষ' সিনেমাতে লালনের গুরু 'সিরাজ সাঁই' চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

এছাড়া পদ্মা নদীর মাঝিতে তিনি কুবের চরিত্রেও অভিনয় করে নিজের অভিনয়জীবন সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি অভিনয় করেছেন বহু নাটকে। তার অভিনীত জনপ্রিয় নাটকগুলোর মাঝে আছে- সংশপ্তক, হৃদয়ের ছবি, পৌষ ফাগুনের পালা, চিঠি আসে না ইত্যাদি। কাজ করেছেন টেলিফিল্মেও। শুধু অভিনয় নয়, গুণী এই ব্যক্তি করেছেন পরিচালনার কাজও। ২০১০ সালে পরিচালনা করেন ধারাবাহিক নাটক 'আলো ছায়া' যার রচয়িতা ছিলেন আজাদ আবুল কালাম। গুণী একজন মানুষের কর্মপরিধি শুধু এক স্থানেই আটকে পড়ে থাকে না। শিল্পের সব শিখরই ছুঁয়ে যান তিনি। এর জ্বলন্ত উদাহরণ গুণী অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। শুধু অভিনয়ে সীমাবদ্ধ থাকেননি এই গুণী মানুষটি। গানও গেয়েছেন তিনি।

২০০৬ সালে 'ঘানি' ও ২০১৩ সালে 'মৃত্তিকা মায়া' সিনেমার জন্য পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। এছাড়া ৪৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন। আর ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

রাইসুল ইসলাম আসাদ ১৯৭৯ সালের ৯ নভেম্বর তাহিরা দিল আফরোজের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার একমাত্র কন্যার নাম রুবায়না জামান।

শারীরিক অবস্থার উন্নতি, ফরিদা পারভীনকে আইসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়েছেবরেণ্য লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনকে নিবিড় পরিচর্...
15/07/2025

শারীরিক অবস্থার উন্নতি, ফরিদা পারভীনকে আইসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে

বরেণ্য লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। রবিবার (১৩ জুলাই) রাতে ফরিদা পারভীনকে কেবিনে নেওয়া হয়। তার ছেলে ও ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমাম জাফর নূমানী সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইমাম জাফর নূমানী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “গতকাল রাতে মা’কে আইসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। মা আগের চেয়ে ভালো আছেন। তিনি কথাও বলতে পারছেন। ডাক্তার বলেছেন ভিজিটর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অবস্থা আবারও অবনতি হতে পারে। তিনি যেন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরতে পারেন, সবার কাছে এ দোয়াই চাই।”

তিনি আরও বলেন, “মা এখন অবজারভেশনে রয়েছেন। তাকে কিছুদিন অবজারভেশনে রাখা হবে। তিনি কবে বাসায় যেতে পারবেন তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। আরও দুই-তিন পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন চিকিৎসকরা।”

অন্যদিকে, ফরিদা পারভীনের স্বামী যন্ত্রসংগীতশিল্পী গাজী আবদুল হাকিম বলেন, “গতকাল দুপুরের দিকে তাকে আইসিইউতে দেখতে গিয়েছিলাম। তার সঙ্গে কথাও হয়েছে। অল্প অল্প করে কথা বলতে পারছেন। ক্রমেই তার উন্নতি হচ্ছে। গতকাল রাতে তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে।”

এর আগে, গত ৫ জুলাই তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ফরিদা পারভীন। তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা। রক্ত ধরা পড়ে সংক্রমণ। কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যাওয়ায় সপ্তাহে তিনদিন তাকে ডায়ালাইসিস করানো হয়। এ সময় তার চেতনাও কাজ করছিল না। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শিল্পীকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড।

প্রসঙ্গত, সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ফরিদা পারভীন ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান। ১৯৯৩ সালে প্লেব্যাকের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

15/07/2025

তলে তলে তলগোজা খায়
লোকের কাছে সতী কওলায়। #লালন

বাংলাদেশের কিংবদন্তি বংশীবাদক বারী সিদ্দিকীবাংলাদেশের লোকসংগীত অঙ্গনে এমন কিছু শিল্পী জন্মেছেন, যারা তাদের কণ্ঠ, সুর এবং...
14/07/2025

বাংলাদেশের কিংবদন্তি বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী

বাংলাদেশের লোকসংগীত অঙ্গনে এমন কিছু শিল্পী জন্মেছেন, যারা তাদের কণ্ঠ, সুর এবং সাধনার মাধ্যমে সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ এবং হৃদয়ে তুলেছেন স্থায়ী আসন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন কিংবদন্তি বংশীবাদক ও কণ্ঠশিল্পী বারী সিদ্দিকী। একাধারে তিনি ছিলেন একজন উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী, বাউল গায়ক, গবেষক ও বাঁশির সাধক। তার কণ্ঠে যেমন ছিল বিষাদের কান্না, তেমনি ছিল আধ্যাত্মিক প্রশান্তি। এ প্রতিবেদনে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো।

জন্ম ও শৈশব
বারী সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলায়। সংগীতের প্রতি আকর্ষণ ছিল পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উভয়ভাবেই। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি বাঁশির প্রতি অনুরাগ অনুভব করেন এবং গানের তালিম নিতে শুরু করেন মায়ের অনুপ্রেরণায়। সংগীতচর্চার এই আগ্রহ তার পুরো জীবনকে ঘিরে ধরে।

শিক্ষাজীবন ও সংগীত প্রশিক্ষণ:
বারী সিদ্দিকী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করেন নেত্রকোনা সরকারি কলেজ ও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সংগীত শিক্ষায় তিনি গুরু হিসেবে পেয়েছেন পণ্ডিত গোপাল দত্ত, ওস্তাদ আমিনুর রহমান এবং ভারতীয় বাঁশিবাদক পণ্ডিত ভিজি কার্নাডকে। পুনে শহরে থাকাকালীন সময়ে তিনি উচ্চাঙ্গ সংগীতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। তার সংগীতচর্চা ছিল কেবল শখ নয়, বরং সাধনা।

সংগীতজীবনের উত্থান:
প্রথমবার তিনি টেলিভিশনের পর্দায় আসেন ১৯৯৫ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত “রঙের বাড়ি” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তবে জাতীয়ভাবে পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’-এ গাওয়া “শুয়া চান পাখি” গানের মাধ্যমে। এই গান রাতারাতি তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয় এবং তিনি হয়ে ওঠেন গ্রামীণ লোকসংগীতের এক উজ্জ্বল প্রতিভা।

জনপ্রিয় গান ও অ্যালবাম:
বারী সিদ্দিকীর কণ্ঠে গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো – “শুয়া চান পাখি”, “আমার গায়ে যত দুঃখ সয়”, “মানুষ ধরো মানুষ ভজো”, “পুবালি বাতাসে”, “তুমি থাকো কোন ছায়ায়” ইত্যাদি। তার বেশ কয়েকটি অ্যালবামও শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গেঁথে নেয়, যেমনঃ লোকোখো তারা, মাটির দেহ, মাটির মালিকানা, মন বেড়ো জ্বালা প্রভৃতি।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচরণ: বারী সিদ্দিকী কেবল দেশেই নয়, দেশের বাইরেও তার সুরের যাদু ছড়িয়ে দেন। ১৯৯৯ সালে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত World Flute Conference-এ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পী ছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, ইরান, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে সংগীত পরিবেশন করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবন:
বারী সিদ্দিকীর স্ত্রী ফারিদা এহসান। তাদের ঘরে দুই পুত্র (সব্বির, বিলাশ) ও এক কন্যা (এ্যালমা) রয়েছে। তার মেয়ে এ্যালমা নিজেও সংগীতচর্চার সঙ্গে যুক্ত, বিশেষ করে বাউল ধারায়। বারী সিদ্দিকী নেত্রকোনায় ‘বাউল বাড়ি’ নামে একটি সংগীত গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলেন যেখানে তিনি লোকসঙ্গীত নিয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের পরিবেশ তৈরি করেন।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার:
২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। জানাজা শেষে তাকে তার জন্মভূমি বারহাট্টায় দাফন করা হয়।

বারী সিদ্দিকী ছিলেন এক অনন্য সাধক, যার গানে মিশে ছিল বাউল দর্শন, আধ্যাত্মিক চেতনা, লোকজ সংস্কৃতি ও আত্মিক বিষাদ। তার বাঁশির সুর ছিল এমনই যে, একবার শুনলে সেই সুর শ্রোতার হৃদয়ে রয়ে যেত চিরকাল। আজও তার গান বাংলার গ্রামে-গঞ্জে, শহরের অলিতে-গলিতে বাজে – যেন এক ব্যথাতুর আত্মার ভাষ্য। বারী সিদ্দিকী ছিলেন, আছেন, থাকবেন – বাংলার গানে ও প্রাণে। #লালন #মনেরমানুষ

14/07/2025

একদিকেতে নিশি হলে, অন্যদিকে দিবা বলে।
আকাশতো দেখে সকলে খোদা দেখে কয়জনে। #লালন

বাংলাদেশের আরেক প্লেব্যাক সিঙ্গার খালিদ হাসান মিলু।খালিদ হাসান মিলু ছিলেন একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী। ১৯৮০ সালের প্রথমা...
14/07/2025

বাংলাদেশের আরেক প্লেব্যাক সিঙ্গার খালিদ হাসান মিলু।

খালিদ হাসান মিলু ছিলেন একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী। ১৯৮০ সালের প্রথমার্ধে তার সঙ্গীত জীবন শুরু হয়। মিলুর প্রকাশিত একক এ্যালবাম সংখ্যা ১২টি এবং মিশ্র ও দ্বৈত এ্যালবাম সংখ্যা প্রায় ১২০টি। তিনি প্রায় ২৫০টি চলচ্চিত্রে কণ্ঠে দিয়েছেন। তিনি সর্বমোট প্রায় ১৫০০-এর মতো গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ১৯৯৪ সালে 'হৃদয় থেকে হৃদয়' চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

খালিদ হাসান মিলুর জন্ম ৬ এপ্রিল, ১৯৬০ সালে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার আদর্শপাড়া গ্রামে। ওনারা ছিলেন ৫ ভাই এবং ২ বোন। ভাইদের মধ্যে মিলু ছিলেন সবার ছোট। ওনার ভাইরা কেউ বেঁচে নেই।

মিলুর সঙ্গীত জীবন শুরু হয় ১৯৮০ সালের প্রথমার্ধে। ওনার কর্মজীবন শুরু হয় ওনার বাবা মোদাসের আলী মিয়ার হারমোনিয়াম দিয়ে। মিলুর প্রকাশিত একক এ্যালবাম সংখ্যা ১২ টি, মিক্সড-ডুয়েট এ্যালবাম সংখ্যা প্রায় ১২০ টি। তিনি প্রায় ২৫০ টি চলচ্চিত্রে কণ্ঠে দিয়েছেন। তিনি সর্বমোট প্রায় ১৫০০ এর মতো গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ১৯৮০ সালে তার প্রথম এ্যালবাম 'ওগো প্রিয় বান্ধবী' প্রকাশিত হয়। তার প্রকাশিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য এ্যালবাম সমূহ হলোঃ 'আহত হৃদয়', 'শেষ খেয়া', 'নীলা', 'শেষ ভালোবাসা', 'মানুষ', 'অচিন পাখী' ও 'আমি একা বড় একা'। বন্যাট্য সংগীত জীবনে মিলুর গাওয়া কিছু জনপ্রিয় গান হলো : 'প্রতিশোধ নিও অভিশাপ দিও', 'ওগো প্রিয়় বান্ধবী', সেই মেয়েটি আমাকে ভালবাসে কিনা', ‘অনেক সাধনার পরে আমি’, 'আহত হৃদয় ছুটে আসি', 'সজনী আমিতো তোমায় ভুলিনি', ‘কতদিন দেহি না মায়ের মুখ’, ‘নিশিতে যাইয়ো ফুলবনে’, 'নীলা তুমি আবার এসো ফিরে’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’, 'ও ভূবন মাঝি আমায় তুমি', 'হৃদয় থেকে হৃদয়’, তুমি আমার হৃদয়ে যদি থাকো’, ‘পৃথিবীকে ভালোবেসে সুরে সুরে কাছে এসে’, ‘শোনো শোনো ও প্রিয়া প্রিয়া গো’, ‘যে নদী মরু পথে পথটি হারাল’, ‘যতদূরে যাও মনে রেখো’, ‘যদি পারো ভালোবেসে এসো’, 'হাসলে তোমার মুখ হাসেনা', 'কে বলে সালাম নেই', প্রভৃতি। ১৯৮২ সাল থেকে তিনি চলচ্চিত্রের গানে নেপথ্যে কণ্ঠ দেওয়া শুরু করেন এবং প্রায় ২৫০টি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৯৪ সালে 'হৃদয় থেকে হৃদয়' চলচ্চিত্রের "ভালবাসা ভালবাসা মানে না কোন পরাজয়" গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন। মিলু ওনার জীবনের শেষ গান 'জীবনের এই আনন্দময়দিন' গেয়েছিলেন ইত্যাদি অনুষ্টানে ওনার ছেলে প্রতীক হাসানের সাথে। তার ছেলেদের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল সেই গান দিয়েই। ওনার মৃত্যু কিছুদিন পর ওনার ছেলে প্রতীক হাসান ওনার গান ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’ গানটা গিয়েছিলেন ইত্যাদি অনুষ্টানে।

তার দুই ছেলের নাম প্রতীক হাসান ও প্রীতম হাসান। দুজনেই সঙ্গীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০২২ সালে মিলুর ছোট ছেলে প্রীতম হাসান মডেল এবং অভিনেত্রী শেহতাজ মনিরা হাশেম কে বিয়ে করেন। মিলুর বড় ছেলে প্রতীক হাসানের একমাত্র মেয়ের নাম প্রীতিকা হাসান।

মিলুর দুই ছেলে সংগীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও মিলু কোনোদিন তার ছেলেদেরকে গান শেখাননি। মিলু চাইতেন ওনার ছেলেরা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে তারপর গান শেখাতে।

মিলুর স্ত্রী হচ্ছে ফাতেমা হাসান পলাশ। ওনাদের বিয়ে হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। মিলু ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত অসুস্থ ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। অসুস্থ থাকার সময় তিনি ২ বার সিঙ্গাপুর ও ২ বার থাইল্যান্ডে গিয়েছেন। যেহেতু মিলু মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে ভুগছিলেন, তাই তিনি স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিশক্তি হ্রাসে ভুগছিলেন। এতো অসুস্থতার মধ্যে, তিনি কখনো তার ২ ছেলেকে ভুলে যেতেন না। মিলুর বড় ছেলে প্রতীক হাসান একটা ইন্টার্ভিউতে বলেছিলেন যে মিলুকে একটা জায়গায় ভুল চিকিৎসা করানো হয়েছিল। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের হওয়ার কারণে মিলুকে অনেক হাঁটতে হয়েছে যার কারণে ওনার লিভারে ক্ষতি হয়ে যায়। মস্তিষ্কের ডাক্তার বলেছিলেন যে তাকে হাঁটতে হবে এবং লিভারের ডাক্তার বলেছিলেন যে তাঁর সম্পূর্ণ বিছানা বিশ্রামে থাকা দরকার। তিনি দীর্ঘদিন লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছিলেন যেটা অনেক পরে জানা গিয়েছে। লিভারের ডাক্তার বলেছে অতিরিক্ত হাঁটার কারণে ওনার লিভারে ক্ষতি হয়েছে আর অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

উনি অসুস্থ থাকার কারণে উনাকে গান গাওয়া থেকে বিরতি নিতে হয়েছে কয়েক বছরের জন্য যার ফলে তার পরিবার আর্থিকভাবে সংকটে পড়েছিল। অসুস্থ থাকার কারণে মিলুকে ওনার সব সম্পদ বিক্রি করে দিতে হয়েছে। তার অসুস্থতার সময় তার আত্মীয়স্বজনরা তার পরিবারকে সাহায্য করলেও, তারা মিলুর চিকিৎসার জন্য কোন খরচ বহন করতে সক্ষম ছিলেন না। ১৯ মে, ২০০৪ তারিখে তিনি ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান, হানিফ সংকেত, জেমস (সঙ্গীতজ্ঞ), বেবী নাজনীন, ইজাজ খান স্বপন, এন্ড্রু কিশোর, ফকির আলমগীর এবং অন্যান্য শিল্পীদের সহায়তায় তার জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। চিকিৎসার পর তিনি ২৫ মে, ২০০৪ তারিখে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

মিলু ২০০৫ সালের ২৯ মার্চ রাত ১২ টা ১০ মিনিটে ঢাকার মনোয়ারা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। অসুস্থতার কারণে মার্চের ২৩ তারিখে ওনাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাকে মিরপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। মিলুর মৃত্যুর সময়, প্রতীকের বয়স ছিলো ১৮ এবং প্রিতমের বয়স ছিলো ১২।

আগের চেয়ে ভালো আছেন ফরিদা পারভীনবরেণ্য লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন গত ৫ জুলাই থেকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে কি...
14/07/2025

আগের চেয়ে ভালো আছেন ফরিদা পারভীন

বরেণ্য লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন গত ৫ জুলাই থেকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে কিডনি রোগ ও শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে চিকিৎসাধীন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গায়িকার উন্নত চিকিৎসার জন্য গত বুধবার ৯ জুলাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করা হয়।

বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে ফরিদা পারভীনের উন্নত চিকিৎসা চলছে। একুশে পদক প্রাপ্ত সংগীতশিল্পীর শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ জানতে তাঁর স্বামী গাজী আবদুল হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘এখন আগের থেকে একটু ভালো আছেন। ডাক্তাররা সারাক্ষণ দেখছেন। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।’

৭০ বছর বয়সী লালনগীতি শিল্পী ফরিদা পারভীন দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যা এবং ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। কিছু দিন আগে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে জানানো হয়, তিনি বেঁচে আছেন।

নজরুলসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান দিয়ে সংগীতজীবন শুরু করেন ফরিদা পারভীন। পরে লালনসংগীত দিয়ে শ্রোতাদের কাছে পরিচিতি পান। সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। ২০০৮ সালে জাপান সরকারের ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কার পান তিনি।

ভেতরের আগুন ক্রোধ: কেন মানুষ এখানে নিয়ন্ত্রণ হারায়? ক্রোধ মানুষের এক আদিম এবং শক্তিশালী আবেগ। এটি যেমন আত্মরক্ষার সংকেত ...
13/07/2025

ভেতরের আগুন ক্রোধ: কেন মানুষ এখানে নিয়ন্ত্রণ হারায়?

ক্রোধ মানুষের এক আদিম এবং শক্তিশালী আবেগ। এটি যেমন আত্মরক্ষার সংকেত হতে পারে, তেমনই হতে পারে ধ্বংসের কারণ। ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থাকা চালকের অসহিষ্ণু হর্ন, তুচ্ছ কথায় সহকর্মীর সঙ্গে বিবাদ, কিংবা পারিবারিক কলহে আসবাবপত্র ভাঙচুর—এইসবই আমাদের পরিচিত দৃশ্য। আমরা সবাই জানি, ক্রোধ ক্ষতিকর। তবুও জেনে-বুঝে মানুষ কেন তার ভেতরের এই প্রজ্জ্বলিত আগুনের লাগাম টানতে পারে না? কেন একটি সাধারণ আবেগ মুহূর্তেই এক অবাধ্য দৈত্যে পরিণত হয়? এই প্রতিবেদনে আমরা সেই কারণগুলোই অনুসন্ধান করব।

১. মস্তিষ্কের বিজ্ঞান: যখন যুক্তি আবেগের কাছে হেরে যায়
ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে আমাদের মস্তিষ্কের গঠন।

বিবর্তনগত প্রতিক্রিয়া (Fight or Flight): বিপদের সম্মুখীন হলে আমাদের মস্তিষ্ক কোটি বছর পুরনো এক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু করে, যা "Fight or Flight" (লড়ো অথবা পালাও) নামে পরিচিত। এই অবস্থায় মস্তিষ্কের আবেগকেন্দ্র অ্যামিগডালা (Amygdala) সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোনগুলো শরীরকে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করে—হৃৎপিণ্ড দ্রুত চলে, রক্তচাপ বাড়ে এবং পেশি শক্ত হয়ে যায়। এই জৈবিক প্রক্রিয়ার সময় মস্তিষ্কের যুক্তিবাদী অংশ, প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (Prefrontal Cortex), প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ফলে, মানুষ তখন কী বলছে বা করছে, তার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সহজ কথায়, আবেগ তখন যুক্তিকে ছাপিয়ে যায়।

২. মনস্তাত্ত্বিক কারণ: ভেতরের না বলা যন্ত্রণা
ক্রোধ অনেক সময়ই একটি দ্বিতীয় স্তরের আবেগ (Secondary Emotion)। এর আড়ালে লুকিয়ে থাকে অন্য কোনো গভীর যন্ত্রণা।

অব্যক্ত কষ্ট ও ভয়: অনেক ক্ষেত্রে মানুষ তার আসল অনুভূতি—যেমন কষ্ট, অপমান, অসহায়ত্ব বা ভয়—প্রকাশ করতে পারে না। এই অব্যক্ত অনুভূতিগুলোই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমে ক্রোধের রূপ নেয়। ক্রোধ প্রকাশ করা তুলনামূলকভাবে সহজ এবং এটি মানুষকে দুর্বলতার অনুভূতি থেকে সাময়িক মুক্তি দেয়।

অপূর্ণ প্রত্যাশা ও অবিচার: যখন আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয় না বা আমরা মনে করি আমাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে, তখন প্রচণ্ড ক্রোধ জন্মায়। এই অনুভূতি যদি বারবার ফিরে আসে, তবে ক্রোধ একটি স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হতে পারে।

অহংবোধ (Ego): সমালোচনা, অসম্মান বা প্রত্যাখ্যান আমাদের অহংবোধে আঘাত করে। এই আঘাতকে প্রতিহত করার জন্য ক্রোধ একটি ঢাল হিসেবে কাজ করে। নিজের দুর্বলতা ঢাকতে অনেকেই আগ্রাসী হয়ে ওঠেন।

৩. শেখা আচরণ: শৈশবের ছায়া
ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বা অক্ষমতা অনেকাংশেই আমাদের শেখা আচরণের ওপর নির্ভরশীল।

পারিবারিক পরিবেশ: শৈশবে যদি কেউ এমন পরিবারে বড় হয়, যেখানে ঝগড়া, চিৎকার বা শারীরিক সহিংসতা স্বাভাবিক ঘটনা, তবে সেও ক্রোধকে এভাবেই প্রকাশ করতে শেখে। তার কাছে এটাই আবেগ প্রকাশের একমাত্র পরিচিত পথ হয়ে দাঁড়ায়। সে কখনও আবেগ নিয়ন্ত্রণের স্বাস্থ্যকর কৌশল শিখতে পারে না।

৪. আধুনিক জীবনের চাপ: ফুরিয়ে আসা ধৈর্য
একবিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রা ক্রোধের আগুনকে আরও উসকে দিচ্ছে।

অবিরাম মানসিক চাপ: কর্মক্ষেত্রের চাপ, আর্থিক অনিশ্চয়তা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং সম্পর্কের টানাপোড়েন—এই সবকিছু আমাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে রাখে। একটি ক্লান্ত ও পীড়িত মন খুব সহজেই ধৈর্য হারায় এবং সামান্য কারণেই ক্রোধান্বিত হয়ে পড়ে। আমাদের ধৈর্যের পাত্রটি সব সময় কানায় কানায় পূর্ণ থাকে বলে সামান্য আঘাতেই তা উপচে পড়ে।

ক্রোধ নিবারণের পথ: নিয়ন্ত্রণ কি অসম্ভব?
ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এটি একটি দক্ষতা, যা অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্ত করা যায়।

আত্ম-সচেতনতা: প্রথম পদক্ষেপ হলো নিজের ক্রোধকে চেনা। কোন পরিস্থিতিতে বা কোন কথায় আপনার রাগ হয়, তা শনাক্ত করা জরুরি।

বিরাম নেওয়া (The Pause): রেগে যাওয়ার মুহূর্তে প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থামুন। গভীর শ্বাস নিন। এই সামান্য বিরতি মস্তিষ্ককে যুক্তিসঙ্গতভাবে চিন্তা করার সুযোগ করে দেয়।

স্বাস্থ্যকর প্রকাশ: রাগ প্রকাশের গঠনমূলক উপায় খুঁজে বের করুন। যেমন—ব্যায়াম করা, পছন্দের গান শোনা, ডায়েরি লেখা বা বিশ্বস্ত কারো সঙ্গে কথা বলা।

দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন: নিজেকে প্রশ্ন করুন—"এই বিষয়টি কি পাঁচ বছর পরেও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ থাকবে?" অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, যে কারণে আপনি রেগে যাচ্ছেন, তা আসলে খুবই তুচ্ছ।

ক্রোধ একটি প্রাকৃতিক সংকেত, যা আমাদের জানায় যে কোথাও কোনো সমস্যা আছে। সমস্যাটি ক্রোধ নয়, বরং এর ধ্বংসাত্মক প্রকাশ। মানুষ ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কারণ তার মস্তিষ্ক, মনস্তত্ত্ব এবং পারিপার্শ্বিকতা তাকে সেদিকেই ঠেলে দেয়। তবে সচেতন প্রচেষ্টা ও অনুশীলনের মাধ্যমে এই লাগামহীন ঘোড়াকে বশ মানানো সম্ভব। ক্রোধকে দমন না করে, একে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে শেখাই হলো আত্মনিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি। যে মানুষ নিজের ভেতরের আগুনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে, সে কেবল নিজেকেই নয়, তার চারপাশের পৃথিবীটাকেও শান্তিময় করে তোলে। (ছবি-এআই)

13/07/2025

আপন ঘরে কে কথা কয়
না জেনে আসমানে তাকায়।
#লালন

পপগুরু আজম খানমোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান একজন বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা, সংগীতশিল্পী, অভিনেতা, ক্রিকেটার ও বিজ্ঞাপনের মডেল ছি...
13/07/2025

পপগুরু আজম খান

মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান একজন বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা, সংগীতশিল্পী, অভিনেতা, ক্রিকেটার ও বিজ্ঞাপনের মডেল ছিলেন। তিনি আজম খান নামে সর্বাধিক পরিচিত। তাকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগীতের একজন অগ্রপথিক বা গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে তার অনুজ সংগীতশিল্পী ও সংগীতরসিক মাকসুদুল হক তার ‘পপ সংগীতশিল্পী’ অভিধাকে অপসংজ্ঞায়ন মনে করেন। তিনি তাকে বাংলাদেশের রক সংগীতের অগ্রপথিক হিসাবে বিবেচনা করেন। তার গানের বিশেষত্ব ছিল পশ্চিমা ধাঁচের পপগানে দেশজ বিষয়ের সংযোজন ও পরিবেশনার স্বতন্ত্র রীতি। আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ (রেল লাইনের ঐ বস্তিতে), ওরে সালেকা ওরে মালেকা, আলাল ও দুলাল, অনামিকা, অভিমানী, আসি আসি বলে ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় সংঘটিত কয়েকটি গেরিলা অভিযানে তিনি অংশ নেন। প্রথম কনসার্ট প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনে ১৯৭২ সালে। সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

আজম খান ১৯৫০ সালে ঢাকার আজিমপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে তার ছেলেবেলা কাটে আজিমপুরের ১০ নম্বর সরকারি কোয়ার্টারে। ১৯৫৫ সালে তিনি প্রথমে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তার বাবা কমলাপুরে বাড়ি বানান। এরপর থেকে সেখানে বসতি তাদের। সেখানে তিনি কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাথমিক স্তরে এসে ভর্তি হন। তারপর ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টি অ্যান্ড টি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। মুক্তিযুদ্ধের পর পড়ালেখায় আর অগ্রসর হতে পারেননি।

আজম খানের কর্মজীবনের শুরু প্রকৃতপক্ষে ষাটের দশকের শুরুতে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর ১৯৭২ সালে তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে উচ্চারণ ব্যান্ড গঠন করেন। তার ব্যান্ড উচ্চারণ এবং আখন্দ (লাকী আখন্দ ও হ্যাপী আখন্দ) ভ্রাতৃদ্বয় দেশব্যাপী সংগীতের জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বন্ধু নিলু আর মনসুরকে গিটারে, সাদেক ড্রামে আর নিজেকে প্রধান ভোকালিস্ট করে অনুষ্ঠান করেছেন। ১৯৭২ সালে বিটিভিতে সেই অনুষ্ঠানের এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে ও চার কালেমা সাক্ষী দেবে গান দুটি সরাসরি প্রচারিত হলে ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা পান এই গানের দল। তার পাড়ার বন্ধু ছিলেন ফিরোজ সাঁই। পরবর্তীকালে তার মাধ্যমে পরিচিত হন ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজের সাথে। একসাথে বেশ কয়েকটা জনপ্রিয় গান করেন তারা। এরই মধ্যে আরেক বন্ধু ইশতিয়াকের পরামর্শে সৃষ্টি করেন একটি এসিড-রক ঘরানার গান জীবনে কিছু পাবোনা এ হে হে! তিনি দাবি করেন, এটি বাংলা গানের ইতিহাসে প্রথম হার্ডরক।

আজম খানের মায়ের নাম জোবেদা খাতুন। তার বাবা মোহাম্মদ আফতাবউদ্দিন খান তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগতভাবে হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক ছিলেন। আজমের তিন ভাই ও এক বোন ছিল। বড় ভাই সাইদ খান (সরকারি চাকরিজীবী), মেজো ভাই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক আলম খান; আলম খানের তত্ত্বাবধানে আজম খানের প্রথম গান রেকর্ডিং হয়েছিল। ছোট ভাই লিয়াকত আলী খান (মুক্তিযোদ্ধা) এবং ছোট বোন শামীমা আক্তার খানম। ১৯৮১ সালের ১৪ই জানুয়ারি ঢাকার মাদারটেকে তিনি সাহেদা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে জন্ম নেয় এক ছেলে এবং দুই মেয়ে। প্রথম সন্তানের নাম ইমা খান, দ্বিতীয় সন্তান হৃদয় খান এবং তৃতীয় সন্তান অরণী খান। স্ত্রী সাহেদা বেগমর মৃত্যুর পর থেকে একাকী জীবনযাপন করেন তিনি।

পপসম্রাট আজম খান দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধির সাথে লড়াই করে ৫ই জুন, ২০১১ইং তারিখ, রবিবার সকাল ১০টা বেজে ২০ মিনিটে ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

হোটেলে আটকে রেখে শিশুকে ধ*র্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসাশিক্ষক গ্রেপ্তার[বিস্তারিত কমেন্টে]
13/07/2025

হোটেলে আটকে রেখে শিশুকে ধ*র্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসাশিক্ষক গ্রেপ্তার

[বিস্তারিত কমেন্টে]

Address

Kumarkhali

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মনের মানুষ posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share