15/08/2024
জেন জি বা জেনারেশন জেরা করছেটা কি ???
প্রতিটি প্রজন্মই আগের প্রজন্ম থেকে এগিয়ে থাকে। বর্তমানে ১২ থেকে ২৭ বছর বয়সী তরুণ জেন-জিদের বা জেনারেশন জেদদের প্রশংসায় সবাই এখন পঞ্চমুখ। অথচ এই প্রজন্মকেই ডিজিটাল জালে আটকা পড়া প্রজন্ম হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল, এই প্রজন্ম সমাজ–সংসারের প্রতি উদাসীন। বাংলাদেশের ২০২৪ সালের রক্তিম ইতিহাস রচনার সূচনালগ্ন থেকে দেশের ক্রান্তিকালেও হাল ধরেছেন তাঁরাই। কী না করে চলেছেন এই কিশোর-তরুণেরা? আবর্জনা পরিষ্কার থেকে রাস্তার যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, দেয়ালচিত্র অঙ্কন থেকে চোর-ডাকাত ধরতে পাড়ার নিরাপত্তা বিধান—সব দায়িত্বই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তাঁরা। এই জেন জি বা জেনারেশন জেদদের কর্মকান্ড নিয়ে বিস্তারিত থাকছে আজকের লেখায়। পড়া এবং মন্তব্যের অনুরোধ রইলো............
১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত যারা জন্মগ্রহণ করেছন তারা এই প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত। ২০২৪ সালের হিসেবে সবচেয়ে বড় জেড সদস্যের বয়স ২৭, আর সর্বকনিষ্ঠজনের বয়স ১২ বছর। জেন-জি প্রজন্ম বড় হয়েছে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে। হাতের মুঠোয় মোবাইল ও ইন্টারনেট থাকায় সারা দুনিয়া এদের মুঠোবন্দি। এই প্রজন্ম ইন্টারনেট ছাড়া তাদের দুনিয়া ভাবতে পারে না।
নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে যখন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদকে শপথ নিতে দেখলাম, তখন আনন্দে মনটা ভরে গেল। কেনই বা খুশি হব না? তারা যে আমাদের প্রজন্মরেই প্রতিনিধি! কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়ে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন; প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। বিদেশী গণমাধ্যম এ বিপ্লবকে বলছে ‘জেন-জি বিপ্লব’। কারণ, সারা বিশ্বে জেন-জিদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ও সফল বিপ্লব এটাই।
একটু পেছনে ফেরা যাক। ১৪ জুলাই রাতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মাঝরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে নেমে এলেন রাস্তায়। পরদিন পুলিশের অস্ত্রের সামনে বুক পেতে দাঁড়ালেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। রক্তাক্ত হলো বাংলাদেশের হৃদয়। এভাবেও অকুতোভয় হয়ে উঠতে পারে এক প্রজন্ম!’এভাবেও একটা তরুণ হয়ে উঠতে পারে কোটি অচেনা মানুষের ‘আপনজন’! পারে, পারে, এই জেন-জি সব পারে।
জীবন দিতে পারে অধিকারের জন্য, ‘পানি লাগবে, পানি?’ বলে বিক্ষুব্ধ সময়ে পানি বিলিয়ে দিতে গিয়ে নিজের প্রাণটাই বিলিয়ে দিয়ে আসতে পারে।
৫ আগস্ট দুপুরের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত অবস্থানে ছিল, তার মাঝে আরেক নারীর সঙ্গে দেখা। তিনি সন্তানকে নিয়ে তিনি এসেছেন লংমার্চের আহ্বানে। দেশের তরুণীরা যেভাবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রেখেছে রাজপথ, গণমাধ্যমে যেভাবে যৌক্তিকভাবে তুলে ধরেছে নানা অসংগতি, অন্যায় তাতে আর বুঝতে বাকি থাকে না, সময়ের সেরা নারীবাদী বাংলাদেশের এই তরুণীরাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই বিপ্লবের লাল রং ছড়িয়ে দিয়েছেন এই জেন-জিরা।
২৪ এর অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি সামলানোর ভারও অনেকটাই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তাঁরা। ডাকাত ডাকাত চিৎকারে পাড়ায় যখন হইচই। দৌড়ে এল জেন-জিরা। তারা ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করেছে এলাকায় ডাকাতের উপস্থিতি আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। আচ্ছা আপনারা কি ড্রোনের এ রকম অভিনব ব্যবহার জানতেন?
নানাভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করে আলোচনায় এই জেন–জি। ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে কাজ করার সময় অনেকের এই তরুণদের দিয়েছেন খাবার, পানীয়। সেগুলো অতিরিক্ত হয়ে গেলে আবার বিলি–বণ্টন করেছে রিকশাচালকদের মধ্যে।
রাস্তা ঝাড়ু দিতে হবে? চিন্তা নেই, জেন-জি আছে তো! নিজেদের গড়া ইতিহাসের ছবি আঁকতেও নেমে পড়ল তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে। ভবিষ্যতের স্বপ্নও আঁকলেন দেয়ালে।
লুটপাট হওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপও নিয়েছেন তাঁরা। কী করছে জেন-জি, এই তালিকা বিশাল!
একটা দেশকে বদলে দেওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে যে প্রজন্ম এখন রাজপথে, তাঁদের জয়জয়কার তো হতেই হবে।
কপিরাইট:
সাকিব আল হাসান
তরুণ গণমাধ্যমকর্মী