30/07/2023
জীবন হলো এক কঠিন বাস্তবতা। কখনো দুঃখ,কখনো সুখ এটাই জীবনের আবর্তন চক্র।কেউ সবসময় সুখী হয়না,আবার সবসময় দুখীও থাকেনা।সুখ কিংবা দুঃখ দুটোই আপেক্ষিক স্থায়ী না।এই অনুভব গুলো ও আপেক্ষিক।
তবুও আমাদের সবার মনে এই প্রশ্নটাই আসে বার বার যে-কিভাবে এই পৃথিবীতে সুখী হওয়া যায়?আঘাতে জর্জরিত জীবন সবসময়ই সুখ চায়। জীবন এই সুখের আশায় কাটিয়ে দেই।কষ্ট সহ্য করতে চাইনা। অথচ মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ
নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই আছে সুখ।
সূরা ইনশিরাহ,আয়াতঃ০৬
সুখী হতে হলে কষ্ট পেতেই হবে।কষ্ট বা আঘাত না পেলে সুখ কি জিনিস এই উপলব্ধিই কখনো মনে আসবেনা। সুখের অনুপস্থিতিই আমাদের কাছে সুখের আকাঙ্খা বাড়িয়ে দেয়। জীবনে কষ্টের উপস্তিতি আছে বলেই সুখের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।যদি কষ্টই না থাকত সুখের কোন মূল্য থাকতনা ঠিক যেমন অন্ধকার না থাকলে আলোর মূল্য নেই।
জীবনে এমন পরিস্থিতি আসবে যখন পাহাড়সম কষ্ট সহ্য করতে হবে।আর এটা খুব জরুরিও।এই উপলব্ধি গুলো অনেক দরকার।জীবনকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য।মহান আল্লাহর নেয়ামত সমূহের পূর্ণ শুকরিয়া আদায়ের জন্য দুঃখ,কষ্ট,বিপদে পতিত হওয়া আশীর্বাদ সরূপ।কারণ এই সময়গুলো আমাদের মহান আল্লাহর কাছে যেতে সহায়তা করে।
মানুষের স্বভাবই হলো অকৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ
এদেরকে বলো আল্লাহইতো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনিই তোমাদের শ্রবণশক্তি,দৃষ্টিশক্তি,ও বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন। তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো।-সূরা মুলকঃ২৩
মানুষ এমনিতেই অকৃতজ্ঞ আর এই অকৃতজ্ঞতা সুখ বা আনন্দের সময়গুলোতে বেড়ে যায়।তখন আমরা রবের দেয়া নেয়ামতগুলোর কথা ভুলে যাই।মানুষের এই স্বভাব সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ
আর যখন মানুষকে কোন মুসিবত পেয়ে বসে তখন সে শুয়ে,বসে ও দাড়ানো অবস্থায় আমার নিকট আকুল আবেদন করে,কিন্তু আমি যখন তার থেকে মুসিবত দূর করে দেই তখন সে এমনভাবে চলে যেন সে কখনোও তার উপর আপতিত মুসিবতের জন্য আমার নিকট প্রার্থনা করেনি। -সূরা ইউনূসঃ১২
বাস্তবতা হলো কষ্টের সময়গুলোতেই আমরা প্রার্থনা,ইবাদতে বেশি মনোযোগী হই।
মহান আল্লাহ নানাভাবে আমাদের পরিক্ষা করেন। আমরা ভাবি শুধু কষ্টের সময়ই আমাদের পরিক্ষা করা হয়। অথচ মহান আল্লাহ সুখ স্বাচ্ছন্দ ও দান করেন আমাদের পরিক্ষা করার জন্য।আর আমরা কষ্টের সময় তাকে স্মরণ করলেও সুখের সময় ভুলে যাই।মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
আমরা তোমাদের মন্দ ও ভালো(এ উভয়)অবস্থার মধ্যে ফেলেই পরিক্ষা করি।-সূরা আল আম্বিয়াঃ৩৫
মহান আল্লাহ সুখের সময় আমাদের ধৈর্যের পরিক্ষা নেন। আমরা কতটুকু নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি তা যাচাই করেন।আর সুখ ও স্বাচ্ছন্দের সময় এটা পরিক্ষা করেন যে আমরা তার নেয়ামতের কতটুকু শুকরিয়া আদায় করতে পারছি।আমরা কি কৃতজ্ঞ নাকি অকৃতজ্ঞদের দলে।
আর আমরা কি করি?দুঃখের সময় হতাশ হয়ে পড়ি।বিষণ্ণতা ঘিরে ধরে জীবন।আমাদের ঈমান এমনিতে দূর্বল তার উপর যখন দুঃখ কষ্ট আপতিত হই তখন আরো দূর্বল হয়ে যায়।আমাদের ঈমানের বিপরীতে শয়তানের চাল বিজিত হয়।শয়তানই আমাদের দূর্বল ঈমানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিষণ্ণতায় হতাশায় ডুবিয়ে দেয়।মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
মুমিনদের বিষণ্ণ করার জন্য শয়তানের পক্ষ থেকে গোপন পরামর্শ বা চুক্তি করা হয়ে থাকে। -সূরা আল মুজদালাঃ১০
শয়তানই আমাদের পরাজিত করার জন্য চুড়ান্ত চেষ্টা করে। আমরা হতাশায় ডুবে গেলে মুলত শয়তানকেই বিজিত করতে সাহায্য করি।অথচ একজন প্রকৃত মুমিনের জন্য হতাশ হওয়া কখনোই উচিত না।বরং সবসময় মহান আল্লার দয়া,রহমতের উপর ভরসা রাখা উচিত। মহান আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেছেনঃ
তাদের কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবেনা।-সূরা বাক্বারাহঃ৩৮
আমাদের প্রকৃত মুমিন হতে হলে যেকোন পরিস্থিতিতে হতাশ হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আর এ কথা মাথায় রাখতে হবে যেকোন সময় আমাদের সাথে একজন আছেন যিনি কখনোই আমাদের ছেড়ে দেননা।কখনোই তার রহমত তেকে বঞ্চিত করেন না। তিনি হলেন আমাদের রব।
মানুষের আরেকটা স্বভাব হলো যখন খুব খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় তখন কাউকে খুজে যে তাকে শান্তনা দেবে। এমন কারে সহযোগীতা কামনা করে যে ভরসা দিয়ে পাশে থাকবে।আচ্ছা সেই আপনজন যদি আমাদের সবচেয়ে আপনজন আমাদের রব হন তাহলে তো কথাই নেই।যিনি কখনোই আমাদের নিরাশ হতে বারণ করেছেন।শত কষ্টে আমাদের প্রশান্ত করার ক্ষমতা একমাত্র তারই আছে।আমাদের অন্তর যখন জর্জরিত ব্যথার আঘাতে তখন তিনিই বলেনঃ
বিষণ্ণ হয়োনা,আল্লাহ তোমাদের সাথেই আছেন।-সূরা তাওবাহ
যেখানে মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সাথে আছেন সেখানে দুনিয়ার সবাই ছেড়ে গেলেও মুমিন হৃদয় কখনো ব্যথিত হতে পারেনা।দুনিয়ার পাহাড়সম কষ্টও তাকে হতাশ করতে পারেনা।বরং ঈমানের পরিক্ষায় আরো খাটি করে তুলে।
একজন মুমিন ব্যক্তি পাচওয়াক্ত সালাত যেমন আদায় করবে,তাসবিহ জিকির পাঠ করবে ঠিক তেমনি সবসময় ভরসা রাখবে মহান রবের উপর।মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ
আর যদি তোমরা সত্যিকার মুমিন হয়ে থাকো,তবে আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।-সূরা মায়েদাহঃ২৫
আর তোমার প্রভুই পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে যথেষ্ট। -সূরা ফুরকানঃ৩১
জীবনে যাই পরিস্থিতি আসুক না কেন সবসময় একটা কথাই মনে রাখতে হবে যে-
কখনো নয় নিশ্চয়ই আমার সাথে আমার প্রভু আছেন,তিনি আমাকে পথ দেখাবেন।-সূরা আশ শুয়ারা
এই ভরসাটুকুই আমাদের পথ চলার পাথেয় হবে।আমাদের তে সবচেয়ে আপন একজনই। তিনিই আমাদের রব।তিনি সবসময়ই আমাদের আবেদন বা দোয়ায় সাড়া দেবেন যদি আমরা তাকে ডাকি।জীবনে যখনই কোন পরিস্থিতি আসবে যেখানে কষ্টের কথা বলার মত বা বুঝার মত কেউ নাই।ব্যথার প্রশমন করতে পারে এমন কেউ নেই।তখনই মনে আনবেন আমাদের মহান রবের সেই বাণী।যেখানে তিনি আমাদের বলেছেনঃ
তোমরা আমাকে ডাক[আমার]নিকট আকুল আবেদন কর। তাহলেই আমি তোমাদের আবেদনে সাড়া দেব। -সূরা আল মুমিনঃ৬০
অনেক বিপদেই ত পড়ি আমরা, অনেক কষ্টের সময় পার করি।কখনো কি সেই সময় গুলোতে হতাশ না হয়ে মহান রবের কাছে দোয়া করেছি যে,
হে আল্লাহ,
তুমি তো একমাত্র কষ্ট লাঘবকারী,দুঃখমুচনকারী।তুমি ছাড়া তো এ ব্যথিত হৃদয়ের ব্যথাগুলো দেখা,বুঝার ক্ষমতা কারো নাই।তুমি তো চাইলেই পারো এ অন্তরকে প্রশান্ত করে কষ্টগুলোকে সুখে রূপান্তর করতে।আমার কেউ নাই তুমি ছাড়া তাই তোমার কাছেই প্রার্থনা করছি এই সময়গুলোকে অনুকূলে করে দাও,অন্তরের শক্তি বাড়িয়ে দাও,সকল কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দাও।
আমিন
দোয়া হলো মুমিনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।আর আমরা কঠিন সময় গুলোতে এই অস্ত্র প্রয়োগ না করে অধৈর্য আর হতাশ হয়ে পড়ি।অথচ ঐ সময়ে ধৈর্য ধারণ করলে আমাদের জন্য কতইনা উত্তম প্রতিদান দেবেন আমাদের রব।তিনি বলেছেনঃ
তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক;কেননা তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিল ;চুড়ান্ত গৃহ কতইনা চমৎকার। -সূরা রাদঃ২৪
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।আমিন
✍️লেখা: Amatullah Sumaiya