28/05/2025
রাত ঠিক দশটা। দরজায় ঠকঠক।
খুলতেই দেখি এক ছাত্রলীগ টাইপ নেতা। গলা খসখসে, চোখেমুখে উগ্র ভাব।
– **“হুমায়ূন আপনার নাম?”**
– জি।
– **“ছাত্র ইউনিয়ন করেন?”**
– না ভাই, পড়াশোনা করি।
– **“হাত দেখে টাকা নেন?”**
– হাত দেখি, টাকা নেই না।
– **“আমারটা দেখে দিন।”**
– “রাত দশটার পর আমি হাত দেখি না।”
– **“ক্যান?”**
আমি শান্ত গলায় বললাম, “আমার গুরু বেনহাম, উনি বলে গেছেন, রাতের বেলা হাত দেখা নিষেধ।”
– **“বেনোম কোন দেশের?”**
– “জার্মান।”
– **“উনি আপনার গুরু কীভাবে?”**
– “তাঁর বই পড়ে শিখেছি। গুরু মানে তো জ্ঞানদাতা, তাই না?”
নেতাজি একটু চুপ, তারপর আবার আগুন ঝরানো প্রশ্ন:
– **“শুনছি আপনি মানুষ হিপনোটাইজ করতে পারেন। সত্যি?”**
– “সত্যি।” (মিথ্যা!)
– **“তাহলে আমাকে করেন। না পারলে খবর আছে।”**
আমি থ! এ আমি কোন দুঃস্বপ্নে পড়লাম? হিপনোটাইজ তো সিনেমায় দেখেছি, করব কীভাবে?
স্টেজের এক ম্যাজিশিয়ান মনে পড়ল—কোনো এক মেলায় দেখেছিলাম। লোকটাও ফাঁকিবাজ মনে হয়েছিল। যাক, সেই নাটকই শুরু করলাম।
নেতাকে একটা চেয়ারে বসালাম। চোখের দিকে তাকিয়ে দু-একটা গম্ভীর ভঙ্গি, তারপর বললাম:
– “এখন আপনি চেয়ারে আটকে গেছেন। যতই চেষ্টা করুন, উঠতে পারবেন না!”
এবং বিশ্বাস করো, পাণ্ডা উঠতেই পারল না।
ওর চোখ গোল, সঙ্গীদের চোখ ডাবল গোল, আমার তো একেবারে **তিনগুণ গোল**!
– **“যথেষ্ট হয়েছে! এবার ঠিক করে দিন!”** — পাণ্ডার গলা এবার একেবারে মিনতির সুরে।
আমি নাটক চালিয়ে গেলাম —
– “দুইবার হাততালি দিলে আপনি উঠে যাবেন।”
দু'বার তালি দিলাম।
..পিনড্রপ সাইলেন্স।
পাণ্ডা নড়ে না। চেয়ার যেন ওর আত্মার অংশ!
এবার আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল কেউ এসে বলবে, “হিপনোটাইজার সাহেব, চলো রিমান্ডে!”
শেষমেশ ঠিক হলো, তাকে মেডিকেল কলেজে নেওয়া হবে। চেয়ারে বসা অবস্থায়ই শরীর লোহার মতো শক্ত। চ্যাংদোলা করে নামানো হচ্ছে, মুখে লোকের কানাঘুষি:
– “স্যার বেঁকে গেছে...”
হাসপাতালে ডাক্তার ইনজেকশন দিলেন — মাসল রিল্যাক্সার।
আমি এক কোণে বসে দোয়া ইউনুস পড়ছি। মুখে ঘাম, মনে প্রার্থনা:
**“হে আল্লাহ, এই পাণ্ডাটারে ঠিক করে দাও, আমি আর হিপনোটাইজের গপ্পো বলব না!”**