09/10/2022
ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন একটি সুস্পষ্ট বিদ‘আত(নব উদ্ভাবিত আমল)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
“কোনো ব্যক্তি যদি আমাদের এই দ্বীনের ভেতর এমন কিছু সৃষ্টি করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।”
[বুখারী ও মুসলিম, রিয়াদুস সলিহীন, বই ১,হাদিস ১৬৯, বিদ’আত বা দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয়ের প্রচলন নিষিদ্ধ অধ্যায় ]
তিনি আরো বলেন,
‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হ’তে সাবধান থাক। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত ও প্রত্যেক বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা’।
[আবু দাউদ ৪৬০৭; মিশকাত ১৬৫, সনদ সহীহ] জাবির(রা) হতে অন্য বর্ণনায় এসেছে, ﻭَﻛُﻞَّ ﺿَﻼَﻟَﺔٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭ
‘এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম’।
[আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ১৫৭৯; দুই ঈদ-এর খুৎবা’ অধ্যায়]
ইমাম মালিক(র) স্বীয় ছাত্র ইমাম শাফিঈ(র)কে বলেছিলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীদের সময়ে যেসব বিষয় ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত ছিল না, বর্তমান কালেও তা ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত হবে না। যে ব্যক্তি ধর্মের নামে ইসলামে কোন নতুন প্রথা চালু করল, অতঃপর তাকে ভাল কাজ বা ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ বলে রায় দিল, সে ধারণা করে নিল যে, আল্লাহর রাসুল(ﷺ) স্বীয় রিসালাতের দায়িত্ব পালনে খেয়ানত করেছেন’।
[আল ইনসাফ, পৃষ্ঠা ৩২]
মিলাদ বিদ‘আত হওয়ার ব্যাপারে চার মাযহাবের ঐক্যমত রয়েছে। ‘আল-ক্বওলুল মু‘তামাদ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, চার মাযহাবের সেরা বিদ্বানগণ সর্বসম্মতভাবে প্রচলিত মিলাদ অনুষ্ঠান বিদ‘আত হওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। উপমহাদেশের উলামায়ে কিরামের মধ্যে মুজাদ্দিদ আলফে সানী আহমাদ সারহিন্দী(র), আল্লামা হায়াত সিন্ধী(র), রশীদ আহমাদ গাংগুহী(র), আশরাফ আলী থানভী(র), মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী(র), আহমাদ আলী সাহারানপুরী(র) প্রমুখ উলামায়ে কেরাম ছাড়াও আহলে হাদীস আলিমগণ সকলে এক বাক্যে প্রচলিত মিলাদ অনুষ্ঠানকে বিদ‘আত ও গুনাহের কাজ বলেছেন।
অনেকেই মনে করেন যে ১২ই রবিউল আউয়াল বুঝি আসলেই নবী (ﷺ) এর জন্মদিন।এ ব্যাপারে সব থেকে শক্তিশালী মত হচ্ছে— রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মদিবস ৮ই রবিউল আউয়াল সোমবার। ৯ই রবিউল এর মতটিরও প্রসিদ্ধি আছে। ১২ই রবিউল আউয়াল এর মতটি নিতান্তই দুর্বল। ৮ ও ৯ রবিউল আউয়ালের মতগুলোও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নয়। কিন্তু এটা প্রমাণিত যে ১২ রবিউল আউয়াল রাসুলের(ﷺ) মৃত্যুদিবস। অথচ ১২ রবিউল আউয়াল রাসুলের(ﷺ) মৃত্যুদিবসেই তাঁর জন্মবার্ষিকী বা ‘মিলাদুন্নবী’ অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।
মিলাদ উদযাপনকারীরা বলে থাকেন যে, মিলাদ বিদ‘আত হ’লেও তা ‘’বিদ‘আতে হাসানাহ’’। অতএব জায়েয তো বটেই বরং করলে সওয়াব আছে। কারণ এর মাধ্যমে মানুষকে কিছু বক্তব্য শোনানো যায়। উত্তরে বলা চলে যে, সলাত(নামাজ) আদায় করার সময় পবিত্র দেহ- পোশাক, স্বচ্ছ নিয়ত সবই থাকা সত্ত্বেও সলাতের স্থানটি যদি কবরস্থান হয়, মৃত কবরবাসীর ফায়েজ লাভের জন্য নামায পড়ে, তাহলে সে সলাত কবুলযোগ্য হয় না। কারণ এরূপ স্থানে সলাত আদায় করতে আল্লাহর নবী (ﷺ) নিষেধ করেছেন। রাসূল (ﷺ) -এর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঐ সলাত আদায়ে কোন ফায়দা হবে না। তেমনি বিদ‘আতী অনুষ্ঠান করে নেকী অর্জনের স্বপ্ন দেখা অসম্ভব। কলসি ভর্তি দুধের মধ্যে অল্প একটু গোবর পড়লে যেমন পানযোগ্য থাকে না, তেমনি সৎ আমলের মধ্যে সামান্য শিরক-বিদ‘আত সমস্ত আমলকে বরবাদ করে দেয়।
হানাফী মাযহাবের কিতাব ‘ফাতাওয়া বাযযারিয়া’তে বলা হয়েছে, ﻣَﻦْ ﻇَﻦَّ ﺃﻥَّ ﺃﺭﻭﺍﺡَ ﺍﻷﻣﻮﺍﺕِ ﺣﺎﺿﺮﺓٌ ﻧَﻌْﻠَﻢُ ﻳَﻜْﻔُﺮُ - ‘যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মৃত ব্যক্তিদের রূহ হাযির হয়ে থাকে, সে ব্যক্তি কাফের’।
[মিলাদে মুহাম্মাদী পৃঃ ২৫, ২৯]
অনুরূপভাবে ‘তুহফাতুল কুযাত’ কিতাবে বলা হয়েছে, ‘'যারা ধারণা করে যে, মিলাদের মজলিসগুলিতে রা্সুলুল্লাহ (ﷺ) -এর রূহ মুবারক হাযির হয়ে থাকে, তাদের এই ধারণা স্পষ্ট শিরক’। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় জীবদ্দশায় তাঁর সম্মানার্থে উঠে দাঁড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ধমকি প্রদান করেছেন।
[তিরমিযী, আবু দাউদ; মিশকাত ৪৬৯৯ ‘আদাব’ অধ্যায়]
অথচ মৃত্যুর পর তাঁরই কাল্পনিক রূহের সম্মানে দাঁড়ানোর উদ্ভট যুক্তি ধোপে টেকে কি?
‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার নামে মিথ্যা হাদিস রটনা করে, সে জাহান্নামে তার ঘর তৈরী করুক’।
[সহীহ বুখারী ১১০]
'‘তোমরা আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেভাবে খ্রিষ্টানগণ ঈসা(আ) সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করেছে।... বরং তোমরা বল যে, আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল।’’
[সহীহ বুখারী ৩৪৪৫]
মিলাদ উদযাপনকারী ভাইদের মিথ্যা ও জাল হাদীস বর্ণনার দুঃসাহস দেখলে শরীর শিউরে ওঠে। সেখানে এই সব লোকেরা কেউবা জেনে-শুনে, কেউবা অন্যের কাছে শুনে ভিত্তিহীন সব কল্পকথা ওয়াযের নামে মিলাদের মজলিসে চালিয়ে যাচ্ছেন ভাবতেও অবাক লাগে। তারা নবী মুহাম্মাদ(ﷺ)কে নূরের তৈরি বলে মিথ্যাচার করেন। ‘নূরে মুহাম্মাদী’র আকিদা মূলতঃ আহলে কিতাব খ্রিষ্টানদের কিছু ফিরকা [Jehovah’s Witness খ্রিষ্টানরা ঈসা(আ)কে ফেরেশতা মনে করে] এবং হিন্দুদের অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী আকিদার নামান্তর। যাদের দৃষ্টিতে স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য নেই। এরা ‘আহাদ’ ও ‘আহমাদের’ মধ্যে ‘মীমের’ পর্দা ছাড়া আর কোন পার্থক্য দেখতে পায় না [নাউযুবিল্লাহ]। তথাকথিত মা‘রেফাতী পীরদের মুরীদ হলে নাকি মিলাদের মজলিসে সরাসরি রাসুল(ﷺ) -এর জীবন্ত চেহারা দেখা যায়। এই সব কুফরী দর্শন ও আকিদা প্রচারের মোক্ষম সুযোগ হল মিলাদের মজলিসগুলো। বর্তমানে সংবাদপত্র, রেডিও, টিভিতেও চলছে যার জয়জয়কার।
আল্লাহ আমাদেরকে এসব থেকে রক্ষা করুন- আমিন!