02/04/2024
সূরা আত-তাকভীরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সৃষ্টির প্রত্যক্ষ সকল প্রমাণ বর্ণনা করার পরে মানুষদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন—
“সুতরাং, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?”[১]
রব হিশেবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার একত্ববাদ, জীবনবিধান হিশেবে ইসলামের পরিপূর্ণতা এবং মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নুবুওয়াতের ব্যাপারে আমাদের অন্তরে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ থাকার কথা নয়। হৃদয়ের গভীর থেকে আমরা সেগুলোকে বিশ্বাস করি। কিন্তু অন্তরে বিশ্বাস করলেও, জীবনে সেসবের মর্মকে ধারণ করতে পেরেছি কি?
আমাদের সামনে সবকিছুই ঝরনার স্বচ্ছ পানির মতো স্পষ্ট, কিন্তু আমাদের যে জীবনবোধ ও জীবনপ্রক্রিয়া, আল্লাহর দ্বীনের স্বীকৃতি কি তাতে আদৌ প্রতিফলিত হচ্ছে?
ঈমানের প্রতিটা বিষয়ে আমাদের অটুট বিশ্বাস, কিন্তু আমাদের জীবন ডুবে আছে চরম উদাসীনতায়! আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি, কিন্তু সেই বিশ্বাস আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের প্রতি অনুরক্ত করে তুলতে পারে না। আমরা নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসি, কিন্তু সেই ভালোবাসা আমাদেরকে ফজরের সালাতের জন্য জাগাতে পারে না। কিয়ামাত দিবসে আমাদের পূর্ণ আস্থা, কিন্তু সেই দিনটার ভয়াবহতা আমাদের হৃদয়ে তৈরি করে না ভয়ের কাঁপুনি। আমরা সব জানি এবং বুঝি কিন্তু পালন করার ব্যাপারে আমাদের কোথায় যেন রাজ্যের অনীহা।
সূরা আত-তাকভীরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যে প্রশ্নটা মানবজাতির উদ্দেশে ছুড়েছেন, সেটা যদি আমি নিজের দিকে টেনে আনি, এর প্রাসঙ্গিকতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? একবার ভাবুন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন—“সুতরাং, কোথায় যাচ্ছ?”
আসলেই তো! আমি আসলে কোথায় যাচ্ছি? কোন সে অন্ধকারের দিকে আমার নিরন্তর ছুটে চলা? আলোর সমস্ত আয়োজন আমার চেনা, কিন্তু কেন অন্ধকারকে আমি জীবনের গন্তব্য করে নিয়েছি? জীবনের লক্ষ্য আর উদ্দেশ্যের সমস্ত রাস্তা আমার সম্মুখে খোলা আছে, কিন্তু সেই চিরচেনা পথে কেন আমি বাড়াতে পারি না পা?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআয়ালা প্রশ্ন করেছেন—কোথায় যাচ্ছ? কিন্তু, আল্লাহকে ছেড়ে আমি আসলে কোথায় যাব? তিনি ছাড়া আমার আর কে আছে আপন? কোন সে পথ যা আমাকে দিতে পারে মুক্তির আনন্দ আর স্বাধীনতার স্বাদ?
আল্লাহকে বাদ দিয়ে যে পথের দিকে আমার নিরন্তর ছুটে চলা, সেই পথের শেষে আছে নিঃসীম অন্ধকার। সেই পথের গন্তব্য-বিন্দুতে আছে প্রজ্জ্বলিত আগুন যা তিনি তৈরি করেছেন পথভোলা, অবাধ্য আর অহংকারীদের জন্য। সিদ্ধান্ত আমার—আমি কি আলোর দিকে যাত্রা করব, নাকি হারাব অতল এক অন্ধকারে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে—‘আসলে, আমি কোথায় যাচ্ছি?’
রেফারেন্স: [১] সূরা তাকভীর, ৮১ : ২০।
( এই অংশটি আমার লিখিত ‘হায়াতের দিন ফুরোলে’ বইয়ের ‘সুতরাং, কোথায় যাচ্ছ’ অধ্যায় থেকে নেওয়া।)