04/02/2025
এদেশের স্বনামধন্য লেখক স্যার হুমায়ুন আহমেদ ভালোবাসা সম্পর্কে বলেছিলেন — পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে। ভালবাসার অত্যাচার হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক অত্যাচার। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলা যায় না, শুধু সহ্য করে নিতে হয়।
রোনালদোকে যারা নিজের মনে স্থান দিয়েছেন, যারা রোনালদোর প্রেমে একটি মূহুর্তের জন্যে হলেও পড়েছেন শুধু তারাই ভালোবাসার প্রকৃত সংজ্ঞাকে ব্যাখা করার ক্ষমতা রাখেন।
রোনালদো একজন মানুষ যাকে ভালোবাসার পর কোন কিছুই আর অপূর্ণ থাকে না। রোনালদোর খেলা দেখা যার ভাগ্য হয়েছে, তাদের জীবনের আনন্দের কোন সীমা কিংবা অবকাশ নেই।
অথচ নিজের সবচাইতে প্রিয় মানুষটির একসময় জন্ম নেওয়ারই কথা ছিলো না। বহু সমস্যায় জর্জিত পরিবারে জন্ম নেওয়া রোনালদো তার মা-বাবার বিবেকের সাথে যুদ্ধ করে ১৯৮৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী পর্তুগালের, মাদেইরার ফাঞ্চাল শহরে জন্ম গ্রহণ করেছেন।
জন্মের পরপরই পরিচয় হয় দারিদ্রের সাথে, বেড়ে উঠেছেন সংগ্রাম করে। সারাদিনে ক্ষুধানিবৃত্তির পরেও নিজের জন্য সময় বাচিয়ে রাখতেন, যেন ফুটবলকে নিজের করে নেয়া যায়।
শৈশবে যখন রেসিং হার্ট ধরা পড়ে তখন ডাক্তার বলেছিলেন তিনি আর কখনোই ফিরতে পারবেন না সবুজ গালিচায়। সেদিন ডাক্তারের কথাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শুধু মাঠেই ফেরেননি বরং বিশ্ব জয় করেছেন। হয়তো সেদিন বিধাতাই চেয়েছিলেন, রোনালদোকে।
অভাবের সাথে যুদ্ধ করা সেই ছেলেটাই রোনালদো যিনি একসময় একটি বার্গারের জন্য অন্যের নিকটবর্তী হতেন, অথচ আজ তিনি চাইলেই কয়েক হাজার দোকান কিনে ফেলতে পারেন। রাস্তার পাশে ঝাড়ু দেওয়া সেই ছেলেটিই রোনালদো, যিনি ফুটবল বিশ্বের প্রথম বিলিয়নিয়র ফুটবলার।
এসব কোন রুপকথা নেয়, এগুলো জ্বলন্ত আগুনের শিখার উপর হেটে নিজেকে গড়ার এক রোমাঞ্চকর গল্প।
২০০২ সালে শুরু করা ২৪ বছরের প্রফেশনাল ফুটবল ক্যারিয়ারে রোনালদোই একজন যিনি নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। রোনালদোই একটি নাম — যিনি শুধু ফুটবল নয় বরং সমস্ত ক্রীড়াঙ্গনেই ভক্তরা তাকে হাজির করেছেন আবেগ, অনূভুতি এবং একনিষ্ঠ ভালোবাসা দিয়ে।
রোনালদো আপনি ফুটবলের একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড় থেকে আমার জীবনের ক্যালকুলাস বনে গিয়েছেন। আপনি আমায় শিখিয়েছেন কিভাবে ভাঙার পরেও উঠে দাড়াতে হয়, আপনি শিখিয়েছেন কিভাবে পরিশ্রম করে নিজ লক্ষ্যে জয়ী হওয়া যায়, আপনি শিখিয়েছেন কিভাবে জীবনে উদরতা এবং ছোট্ট খুশিগুলোকে নিয়েই বেচে থাকতে হয়।
আপনি লিওনেল মেসি ফ্যান হতেই পারেন তবে আপনি কি অস্বীকার করতে পারেন — ২০০৮ এর সেই বিধ্বংসী রোনালদোকে, আপনি কি অস্বীকার করতে পারেন লা-ডাসিমার সেই অবিশ্বাস্য ১৭টি গোলকে কিংবা আপনি কি অস্বীকার করতে পারেন বুফেনের বিপক্ষে করা সেই বাইসাইকেল গোলকে যার ব্যাখা আজও বুফন খুজতেছে।
আপনার ৪০ তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম বিষাদিত হয়ে, অশ্রুসিক্ত হয়ে। রোনালদো যদি কখনো আমার চিঠি আপনার কাছে পৌঁছায় তবে জেনে রাখবেন —
" আমি আজও আপনার গোলে শহর জাগ্রত করি, আমি আজও আপনার বিষণ্ণতায় অশ্রুর জোয়ার সৃষ্টি করি "
আপনি চলুন, যেন হারিয়ে না যান! শুভ জন্মদিন আমার ভোরের শিশির, আমার গোধূলি সন্ধ্যার ঝলকানো শুকতারা