Faris TV 24

Faris TV 24 this page aim is to spread islamic knowledge according to quran and hadith

কুরআন যেভাবে আমাদের জীবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে▬▬▬◆◯◆▬▬▬◈ ১) কণ্ঠ স্বর: নিচু স্বরে কথা বলো। (31: 19)◈ ২) ভাষা:      ● মান...
24/08/2025

কুরআন যেভাবে আমাদের জীবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
◈ ১) কণ্ঠ স্বর: নিচু স্বরে কথা বলো। (31: 19)

◈ ২) ভাষা:
● মানুষের সাথে সুন্দর ভাষায় কথা বলো। (2: 83)
● জ্ঞান ছাড়া কথা বলো না। (17:36)

◈ ৩) হাঁটা: অহংকারের সাথে পথ চলো না। (17: 37)

◈ ৪) চোখ: অন্যের সম্পদের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাবে না। (15: 88)

◈ ৫) কান: মানুষের গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না। (49:11)

◈ ৫) খাদ্য-পানীয়: অপচয় করো না। (7:31)

◈ ৬) সমাজ জীবন:
● ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিবাদ মিটিয়ে দাও। (49:9)
● কারো প্রতি কু ধারণা পোষণ করো না এবং কারো অসাক্ষাতে সমলোচনা করো না। (49:11)

◈ ৭) আচার-ব্যবহার:
● কাউকে উপহাস করো না,
● একে অপরকে দোষারোপ করো না,
● এবং কাউকে মন্দ নামে ডেকো না। (49:12)

মৃত্যুর পর মানুষের ৯টি আফসোস :১. "হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।"( সূরা-নাবা, ৪০) ২. "হায়! যদি পরকালের জন্য কিছু করতাম।"( ...
19/08/2025

মৃত্যুর পর মানুষের ৯টি আফসোস :

১. "হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।"( সূরা-নাবা, ৪০)

২. "হায়! যদি পরকালের জন্য কিছু করতাম।"( সূরা- ফজর, ২৪)

৩. "হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হতো। "(সূরা-হাক্কাহ্, ২৫)

৪. "হায়! আমি যদি শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।"(সূরা-ফুরকান, ২৮)

৫. "হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা.) এর আনুগত্য করতাম।"(সূরা-আহযাব, ৬৬)

৬. "হায়! আমি যদি রাসূল (স.) এর সৎপথ অবলম্বন করতাম।"(সূরা-ফুরকান, ২৭)

৭. "হায়! আমিও যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম, তাহলে বিরাট সফলতা লাভ করতে পারতাম।"(সূরা-আন নিসা, ৭৩)

৮. "হায়! আমি যদি আমার রবের সঙ্গে কাউকে শরীক না করতাম।"( সূরা-কাহাফ, ৪২)

৯. "হায়! এমন যদি কোনো সুরত হতো -- আমাদের কে আবার দুনিয়াতে পাঠানো হতো, আমরা আমাদের প্রভুকে মিথ্যা প্রতিপন্ন না করতাম আর আমরা হতাম ঈমানদারের শামিল।"(সূরা-আনআম, ২৭)

18/08/2025

বালা-মুসীবতের কারণ ও প্রতিকর

মহান রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন-

وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ

অর্থ: তোমাদের উপর যে সব বিপদাপদ আপতিত হয় তা তোমাদেরই কর্মফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (সূরা শূরা; আয়াত ৩০) আল্লাহ রব্বুল আলামীন পুরো বিশ্বজগতকে বিশেষ কুদরতে সৃষ্টি করেছেন এবং অত্যন্ত সুচারুরূপে এর পরিচালনা করছেন। মানবজাতির কল্যাণার্থে তিনি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন সাধারণ ও বিশিষ্ট বহু নেয়ামত। আল্লাহ তা'আলার সাধারণ ও ব্যাপক নেয়ামতরাজির মধ্যে আকাশ-বাতাস, আগুন-পানি, বৃষ্টি-মাটি প্রভৃতি অন্যতম। এগুলো এমনই নেয়ামত যার দ্বারা মানুষ সার্বক্ষণিক উপকৃত হয়। কিন্তু অনেক সময় এগুলো দ্বারাই মানুষ নানা রকম দুর্যোগ-দুর্বিপাকের শিকার হয়। অনাবৃষ্টি- অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অগ্নিকাণ্ড- বজ্রপাত, ভূমিকম্প-ভূমিধ্বস, বন্যা-খরা প্রভৃতি জনপদের পর জনপদ লণ্ডভণ্ড করে দেয়। এতে প্রাণহানী ঘটে হাজার হাজার বনী আদমের। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফল-ফসল, ক্ষেত-খামার, গবাদি পশু। আল্লাহ তা'আলা উল্লিখিত আয়াতে বলছেন, এই যে বিভিন্ন রকম আসমানী ও যমীনী বালা-মুসীবত মানুষের জীবনে দেখা দেয় তা মানুষের বদ আমল ও মন্দ কর্মের দরুন দেখা দেয়; এতে আল্লাহ তা'আলার কোনও দোষ নেই। সুতরাং বালা-মুসীবতে নিপতিত হলে আল্লাহ তা'আলার ব্যাপারে অভিযোগ ও আপত্তি তোলা মোটেই সমীচীন নয়। বরং কৃতকর্মের ব্যাপারে অনুশোচনা করত নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়া উচিৎ। হযরত হাসান রাযি. বলেন, এ আয়াত নাযিল হলে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, (অর্থ) ঐ সত্তার কসম যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ- কারও শরীরে সামান্য আঁচড় লাগে, অথবা শিরা-উপশিরা ধড়ফড় করে, অথবা পা পিছলে পড়ে যায়- এগুলো তার গোনাহের কারণে হয়ে থাকে। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম) হযরত আলী রাযি. থেকেও উল্লিখিত আয়াতের তাফসীরে অনুরূপ কথা বর্ণিত হয়েছে। বুযুর্গানে দীন বলেন, যেমনিভাবে শারীরিক বিভিন্ন অসুখ ও কষ্ট গোনাহের কারণে হয়ে থাকে, তেমনিভাবে ‘আত্মিক রোগও গোনাহের কারণে হয়ে থাকে। কেননা একটি গোনাহ অপর একটি গোনাহের কারণ হয়ে থাকে, ঠিক যেমন একটি নেকী আরেকটি নেকীর কারণ হয়ে থাকে। (মা'আরিফুল কুরআন ৭/৭০১) অপর এক আয়াতে মহান রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

অর্থ: মানুষ নিজ হাতে যা কামায়, তার ফলে স্থলে ও জলে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কতক কৃতকর্মের স্বাদ গ্রহণ করাবেন বলে, হয়তো এর ফলে তারা ফিরে আসবে।(সূরা রূম-৪১) এই আয়াতে ফাসাদ বা অশান্তি বলতে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, জাহাযডুবি, বরকতশূন্যতা, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুর আগ্রাসন, জালিমের আধিপত্য ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। (তাফসীরে মাযহারী ৭/২৮৪, তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন) বোঝা গেলো, এই যে আমাদের উপর একের পর এক বালা-মুসীবত ধেয়ে আসছে তার মূল কারণ আমাদের গোনাহ ও পাপাচার। তবে আল্লাহ তা'আলা পরম করুণাময় বলে আমাদেরকে প্রত্যেক গোনাহের শাস্তি দেন না, বরং বহু গোনাহ মাফ করে দেন। যদি প্রত্যেক গোনাহের কারণে তিনি পাকড়াও করতেন তাহলে একজন মানুষও বাঁচতে পারতো না। বাস্তবতা এটাই যে, আল্লাহ তা'আলা অনেক গোনাহ মাফ করে দেন। আর যে গোনাহগুলো মাফ করেন না সেগুলোর শাস্তিও দুনিয়াতে পুরোপুরি দেন না; আংশিক বা যৎসামান্য অংশেরই শাস্তি দিয়ে থাকেন। উল্লিখিত আয়াতে কারীমায় ‘কতক কৃতকর্মের স্বাদ গ্রহণ করাবেন' বলে এটাই ব্যক্ত করা হয়েছে। মানুষ যখন কোন গোনাহে ব্যাপকভাবে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ তা'আলার নাফরমানীতে জড়িয়ে পড়ে তখন তার প্রতিক্রিয়ায় কখনও বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়, দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে অন্যান্য বোবাপ্রাণীদেরও কষ্ট হয়। এ সময় বোবাপ্রাণীরা মানুষের জন্য আল্লাহর দরবারে বদ-দু'আ করতে থাকে। উপরন্তু কিয়ামতের দিন তারা মানুষের বিপক্ষে মোকদ্দমাও দায়ের করবে। উল্লিখিত আয়াতদ্বয় ও তার তাফসীর এবং নিম্নলিখিত হাদীসসমূহের মধ্যে কারও মনে বৈপরীত্যের সন্দেহ দেখা দিতে পারে- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

الدنيا سجن المؤمن وجنة الكافر

অর্থ: দুনিয়া মুমিনের জেলখানা, কাফেরের উদ্যান। (সহীহ মুসলিম; হাদীস ২৯৫৬) অপর এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে

عن مصعب بن سعد عن أبيه قال قلت يا رسول الله أي الناس أشد بلاء؟ قال الأنبياء ثم الأمثل فالأمثل

অর্থ: পৃথিবীতে সর্বাধিক বালা-মুসীবত আসে আম্বিয়ায়ে কেরামের উপর। অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী তাদের উপর। অতঃপর যারা এদের নিকটবর্তী তাদের উপর। (সুনানে তিরমিযী; হাদীস ২৩৯৮, সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদীস ৪০২৩) অপর এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে—

المؤمن يموت بعرق الجبين

অর্থ: মুমিন তার কপালের ঘামের মধ্য দিয়ে ইন্তেকাল করে। (সুনানে তিরমিযী; হাদীস ৯৮২, সুনানে নাসায়ী; হাদীস ১৮২৯)বৈপরীত্যের সন্দেহ দেখা দেওয়ার কারণ হলো, সাধারণভাবে আমরা যেটা প্রত্যক্ষ করি সেটা হলো, পৃথিবীতে মুমিন- মুসলমানগণ ব্যাপকভাবে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে থাকে আর কাফেররা আরাম- আয়েশ ও ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে। এখন আয়াতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী যদি দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ-আপদ গোনাহের শাস্তি স্বরূপই হয়ে থাকে তাহলে তো ব্যাপারটি উল্টো হওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ কাফেরদেরকে ভয়ানক সব শাস্তি ও দুঃখ-কষ্টে নিপতিত করার দরকার ছিল আর মুমিনদেরকে আরাম-আয়েশে রাখার কথা ছিল।এর উত্তর হলো, আয়াতে কারীমায় গোনাহকে বিপদাপদের কারণ বলা হয়েছে ঠিক কিন্তু বিপদাপদের একমাত্র কারণ বলা হয়নি। অর্থাৎ কারও উপর যদি বিপদাপদ আসে তাহলে সেটা তার গোনাহের কারণেই আসে এমনটি জরুরী নয়; বরং এর পেছনে অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। উদাহরণত তাকে পরীক্ষা করা, তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা বা দুনিয়াতেই শাস্তি দিয়ে আখেরাতের শাস্তি মওকুফ করা ইত্যাদি। সুতরাং উল্লিখিত হাদীসসমূহের সঙ্গে আয়াতদ্বয়ের বৈপরীত্য নেই ।কুরআনে কারীমের বহু আয়াতও এই বক্তব্য সমর্থন করে। উদাহরণত আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ

অর্থাৎ আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব (কখনও) কিছুটা ভয়-ভীতি দ্বারা, (কখনও) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনও) জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে, যারা (এরূপ অবস্থায়) সবরের পরিচয় দেয়। (সূরা বাকারা-১৫৫) বোঝা গেলো, বিপদাপদ ও বালা-মুসীবত ধৈর্যের পরীক্ষার জন্যও হতে পারে যে, এসব মুসীবত সত্ত্বেও কে আল্লাহর উপর আস্থা রাখে, আর কে আল্লাহকে অভিযুক্ত করে।অপর এক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-

أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ

অর্থ: (হে মুসলিমগণ!) তোমরা কি মনে করেছ, তোমরা জান্নাতে (এমনিতেই) প্রবেশ করবে, অথচ এখনও পর্যন্ত তোমাদের উপর সেই রকম অবস্থা আসেনি, যেমনটা এসেছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-কষ্ট এবং তাদেরকে করা হয়েছিল প্রকম্পিত, এমনকি রাসূল এবং তাঁর ঈমানদার সঙ্গীগণ বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? মনে রেখো, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই। (সূরা বাকারা-২১৪) লক্ষ্য করুন, নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম এবং তাঁদের সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহ তা'আলার অতি প্রিয় বান্দা ছিলেন। তা সত্ত্বেও তাঁদের জীবনেও এমন সব ভয়াবহ ও মারাত্মক বিপদাপদ এবং চরম দুঃখ-কষ্ট এসেছে যে, তাঁরা আল্লাহর সাহায্য অবিলম্বে আসার আকাঙ্ক্ষায় বলতে বাধ্য হয়েছেন, 'মাতা- নাছরুল্লাহ! আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?তাছাড়া জানা কথা যে, নবী-রাসূলগণ মাছুম বা নিষ্পাপ হয়ে থাকেন। তথাপি তাঁদের উপর বিপদাপদ এসেছে। বোঝা গেলো, বালা-মুসীবত স্রেফ গোনাহের সঙ্গে শর্তযুক্ত নয়; বরং অন্য কোন বিশেষ হিকমত ও উপযোগিতার কারণেও বালা- মুসীবত আসতে পারে।ফিরে আসি আগের কথায়। বালা-মুসীবত যদিও সব সময় গোনাহের কারণে আসে না কিন্তু কুরআন-হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী অধিকাংশ সময় গোনাহের কারণেই এসে থাকে। নিম্নলিখিত হাদীসটি লক্ষ্য করুন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إذا اتخذ الفيء دولا, والأمانة مغنما, والزكاة مغرما, وتعلم لغير الدين, وأطاع الرجل امرأته, وعق أمه, وأدنى صديقه, وأقصى أباه, وظهرت الأصوات في المساجد, وساد القبيلة فاسقهم, وكان زعيم القوم أرذلهم, وأكرم الرجل مخافة شره, وظهرت القينات والمعازف, وشربت الخمور, ولعن آخر هذه الأمة أولها, فليرتقبوا عند ذلك ريحا حمراء, وزلزلة, وخسفا, ومسخا, وقذفا, وآيات تتابع كنظام بال قطع سلكه فتتابع.

অর্থ: যখন (এক) গনীমতের মালকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করা হবে, (দুই) আমানতের মালকে গনীমতের মালের মতো যথেচ্ছা ব্যবহার করা হবে, (তিন) যাকাত প্রদানকে জরিমানা মনে করা হবে, (চার) দুনিয়া হাসিলের জন্য দীন শিক্ষা করা হবে, (পাঁচ) পুরুষেরা স্ত্রীদের তাবেদারী করে মায়ের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে, (ছয়) বন্ধুদেরকে কাছে টেনে পিতাকে দূরে ঠেলে দিবে, (সাত) মসজিদগুলোতে শোরগোল হতে থাকবে, (আট) পাপাচারী লোক গোত্রের সর্দার হবে, (নয়) নীচ প্রকৃতির লোক জাতির হর্তকর্তা হবে, (১০) জুলুম ও অত্যাচার থেকে আত্মরক্ষার জন্য লৌকিকতা বশত মানুষকে সম্মান করা হবে, (১১) নর্তকীর সংখ্যা বেড়ে যাবে, (১২) বাদ্যযন্ত্রের প্রসার ঘটবে, (১৩) মদ (ও নেশাদ্রব্য ব্যাপকভাবে) পান করা হবে, (১৪) পরবর্তী প্রজন্ম পূর্বসুরীদের অভিশাপ দিবে তখন তোমরা অপেক্ষা করো অগ্নিঝড়, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, আকৃতি- বিকৃতি, উল্কাবৃষ্টি এবং এমন ক্রমাগত বিপর্যয়ের যেমন কোন পুরনো মালা ছিড়ে গেলে দানাগুলো একের পর এক দ্রুত বেরিয়ে আসে। (সুনানে তিরমিযী; হাদীস ২২১১) অপর এক হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

«ما ظهر الغلول في قوم قط إلا ألقي في قلوبهم الرعب، ولا فشا الزنا في قوم قط إلا كثر فيهم الموت، ولا نقص قوم المكيال والميزان إلا قطع عنهم الرزق. ولا حكم قوم بغير الحق إلا فشا فيهم الدم. ولا ختر قوم بالعهد إلا سلط الله عليهم العدو»

অর্থ: (এক) যখন কোন জাতি আমানতে খেয়ানত করেছে, আল্লাহ তাদের অন্তরে শত্রুভীতি ঢেলে দিয়েছেন, (দুই) যে জাতির মধ্যে ব্যভিচার (অশ্লীলতা) বৃদ্ধি পেয়েছে, তাদের মধ্যে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে, (তিন) যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কম দিয়েছে, তারা প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে, (চার) যখন কোন জাতি না-হক বিচার করেছে, তখন তাদের মধ্যে রক্তপাত, হানাহানি ছড়িয়ে পড়েছে, (পাঁচ) যখন কোন জাতি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, তখন আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর শত্রুকে চড়াও করে দিয়েছেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক হাদীস ১৩২৩)দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য যে, প্রথম হাদীসে বর্ণিত ১৪ টি আর দ্বিতীয় হাদীসে বর্ণিত ৫টি গোনাহ ও অপকর্মের সব ক'টিই বর্তমানে ব্যাপকভাবে সংঘটিত হচ্ছে। শুধু এগুলোই নয়, এগুলো ছাড়া আরও বিভিন্ন গোনাহ দ্বারা আমাদের দেশ ও সমাজ কলুষিত। ফলে আমাদের ওপর নেমে আসছে একের পর এক বালা- মুসীবত, আযাব-গযব।এই তো সেদিন ২২ জুলাই ২০২২ সালে এক প্রচণ্ড ভূমিকম্পে আফগানিস্তানে প্রাণ হারিয়েছে দেড় সহস্রাধিক মানুষ। সীতাকুণ্ডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়েছে অর্ধশতাধিক বনী আদম, আহত হয়েছে পাঁচশতাধিক। চলমান বন্যায় শুধু সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় মারা গেছে ৮৮ জন আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ লক্ষাধিক মানুষ। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে বাংলাদেশেই মারা যাচ্ছে তিনশতাধিক। অনুরূপভাবে নিকট ও দূর-অতীতের বিভিন্ন সাইক্লোন, টর্নেডো, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস ও সুনামীতে মুহূর্তেই প্রাণ হারিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। ক্যান্সারসহ নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীতে প্রতিদিন কতো লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে তার হিসেব নেই। এক করোনার ছোবলেই পুরো পৃথিবীতে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে এপর্যন্ত ৬৩ লক্ষাধিক মানুষ। এমনই এক চরম দুর্যোগ ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে আমাদের ভাবা উচিৎ,এতো এতো দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সম্মুখীন হয়েও আমরা কয়টি গোনাহ বর্জন করতে পেরেছি এবং নেকীর কাজে আমাদের যে সীমাহীন গাফলতি তার কতোটুকু ক্ষতিপূরণ করতে পেরেছি। যদি আমরা তা না করে থাকি তাহলে এই ধারাবাহিক মুসীবত ও দুর্যোগ থেকে কিভাবে মুক্তির আশা করতে পারি! কেউ বিষ পান ছাড়বে না আবার বেঁচে থাকারও আশা করবে, এটা কি করে সম্ভব! গোনাহ ও আল্লাহর নাফরমানী তো বিষতুল্য। ধ্বংস ও বরবাদী এর অনিবার্য পরিণতি। এই ধ্বংস ও বরবাদী থেকে আত্মরক্ষা করতে চাইলে নিজেদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيْرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ

অর্থ: জেনে রেখো, আল্লাহ কোনও জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। (সূরা রা'দ-১১)এজন্য আযাব-গযব থেকে বাঁচতে হলে হিম্মত করে গোনাহ ছেড়ে দেয়া এবং হিম্মত করে নেকীর কাজ শুরু করে দেয়া আমাদের প্রধান কর্তব্য। তবে মুহূর্তেই সব গোনাহ ছেড়ে দেয়া এবং সকল নেককাজ সম্পন্ন করে ফেলা অতো সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে মরদুদ শয়তান, পাশবিক চাহিদা, দূষিত পরিবেশ এবং জেঁকে বসা বদঅভ্যাস আমাদের প্রধান শত্রু হয়ে দেখা দেয়। এজন্য বুযুর্গানে দীন আমাদেরকে বিশেষ ধারাক্রম অনুসরণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁরা বলেছেন, তিনটি গোনাহ এরূপ রয়েছে যেগুলো ছাড়তে পারলে অন্যান্য গোনাহ ছেড়ে দেয়া সহজ হয়। ১. বদ নেগাহী-কুদৃষ্টি। ২. বদ যুবানী-কুকথা।বদ গোমানী-কুধারণা। তাঁরা আরও বলেছেন, তিনটি নেককাজ এমন রয়েছে, যেগুলোর উপর আমল করতে পারলে অন্যান্য নেকীর কাজ সহজ ও আসান হয়ে যায়। ১. সালামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার। ২. উন্নত কাজে ও উন্নত স্থানে ডানদিককে প্রাধান্য দেওয়া, নিম্নমানের কাজে ও নিম্নমানের স্থানে বামদিককে প্রাধান্য দেওয়া। ৩. বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা। হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক হারদূয়ী রহ, বালা-মুসীবত চলাকালীন আমাদেরকে বিশেষভাবে তিনটি কাজে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ১. ইলম তথা দীনী জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ। ২. আল্লাহ তা'আলার প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা বৃদ্ধির পন্থা জেনে তা বাস্তবায়ন। ৩. অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভয় সৃষ্টির উপায় জেনে খোদাভীতি অর্জন।জনসাধারণের জন্য ইলম অর্জনের সহজ পন্থা হলো- (ক) জুমু'আর দিন আগেভাগে মসজিদে গিয়ে এবং হক্কানী উলামায়ে কেরামের দীনী মজলিসগুলোতে শরীক হয়ে মনোযোগ দিয়ে দীনী কথা শ্রবণ করা। (খ) হক্কানী উলামায়ে কেরাম লিখিত নির্ভরযোগ্য দীনী কিতাব অধ্যয়ন করা। (গ) দাওয়াত-তাবলীগের মেহনতে বের হয়ে পারস্পরিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করা।আল্লাহর প্রতি মহব্বত বৃদ্ধির পন্থা হলো- (ক) আল্লাহর নেয়ামতরাজির কথা স্মরণ করে শোকরগোজার হওয়ার চেষ্টা করা। (খ) দৈনিক কমপক্ষে ১০০ বার কালিমা তাইয়িবা পাঠ করা, ১০০ বার ইস্তিগফার করা এবং ১০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করা। (গ) যে কোন নেকীর কাজ করার সময় এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে মহব্বত বৃদ্ধির নিয়ত করা। (ঘ) কোন নির্ভরযোগ্য পূর্ণাঙ্গ সীরাতগ্রন্থ পাঠ করা। (ঙ) কোন আল্লাহওয়ালা বুযুর্গের নিয়মতান্ত্রিক সান্নিধ্য অবলম্বন করে নিজেকে সংশোধন করতে থাকা। অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করার উপায় হলো- (ক) বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করা। (খ) আল্লাহর জেলখানা জাহান্নাম ও তার শাস্তির কথা চিন্তা করা। (গ) কোন খোদাভীরু বুযুর্গের সান্নিধ্য অবলম্বন করে তার দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী আমল করতে থাকা।উল্লিখিত পন্থায় ইলমে দীন হাসিল, আল্লাহর মহব্বত বৃদ্ধি, খোদাভীতি অর্জন এককথায় গোনাহ বর্জন ও নেকী অর্জনের পাশাপাশি দুর্দশাগ্রস্ত ও দুর্যোগকবলিত মানুষের সেবায় সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়াও বিপদাপদ থেকে আত্মরক্ষার অন্যতম উপায়। আল্লাহ তা'আলা আমল করার তাওফীক নসীব করুন। আমীন।

18/08/2025

আজকে
পবিত্র কুরআনের আলোকে নজর হেফাজতের কিছু পন্থা
লেখক: আল্লামা যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী

পবিত্র কুরআনের আলোকে কুদৃষ্টি থেকে বাঁচার সাতটি পন্থা উল্লেখ করা হলো:

১. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِہِمۡমুমিন পুরুষদের বলে দিন তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি নিচু রাখে। (সূরা আন নুর - ২৪:৩০)কুদৃষ্টি থেকে মুক্তির সর্বোত্তম ওষুধ হচ্ছে দৃষ্টি নিচু রাখা। সুতরাং আধ্যাত্মিক পথের পথিকদের উচিত রাস্তাঘাটে, বাজারে চলার সময় স্বীয় দৃষ্টি নিচু রাখার অভ্যাস গড়বে। পায়ে হেঁটে চলার সময় শুধু পথের দিকে দেখবে। বাহনে আরোহণ অবস্থায় দৃষ্টি এই পরিমাণ উঠাবে যাতে অন্যান্য বাহন ও পথিকদের অতিক্রমণ সম্পর্কে অবগত হতে পারে। কারও চেহারার দিকে দেখবে না। কেননা ফিতনার সূচনা এখান থেকেই হয়। যদি ভুলে দৃষ্টি পড়ে যায় তাহলে ইস্তেগফার পড়বে এবং পুনরায় দৃষ্টি নিচু করে নেবে। এতে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকবে, যাতে তা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। যদি অফিসিয়াল কোনো কাজ বা কেনাকাটার সময় কোনো নারীর সাথে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে তাহলে তার চেহারার দিকে দৃষ্টি দেবে না। যেমন পরস্পরের প্রতি অসন্তুষ্ট দুই ব্যক্তি কোনো অপারগতার কারণে কথা বললেও কেউ কারও মুখের দিকে তাকায় না, চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। অনুরূপভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে, পরনারীর প্রতি আল্লাহ তাআলার জন্য আমি অসন্তুষ্ট। সুতরাং তার চেহারা দেখা যাবে না।

২. আল্লাহ তাআলা বলেন:فَانۡکِحُوۡا مَا طَابَ لَکُمۡ مِّنَ النِّسَآءِ'নারীদের থেকে যাকে তোমাদের ভালো লাগে বিয়ে করে নাও। (সূরা আন নিসা - ৪:৩)যত দ্রুত সম্ভব হয় দ্বীনদার, বাধ্যগত, সুন্দরী কোনো মেয়ে বিয়ে করে নেবে। যাতে জৈবিক প্রয়োজন পূরণ করা যায়। কোনো ক্ষুধার্ত ব্যক্তি যদি তার ক্ষুধা নিবারণের জন্য মনে করে দুই রাকাত নফল নামায পড়ে নিই, ক্ষুধা মিটে যাবে, তাহলে তার নিজের চিকিৎসা করানো উচিত। ক্ষুধার ওষুধ হলো আহার করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষুধা নিবারণের দুআ করবে।অনুরূপ দৃষ্টি পবিত্র রাখার ওষুধ হলো বিয়ে করে নেবে এবং আল্লাহ তাআলার নিকট পবিত্র দৃষ্টি লাভের দুআ করবে। যখন সুযোগ হয় নিজ স্ত্রীকে মহব্বতের দৃষ্টিতে দেখবে। আর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করবে যে, যদি এই নেয়ামত না পেতাম তাহলে কতই-না মুশকিল হয়ে যেত। যে লোলুপ দৃষ্টি অলিগলিতে, বাজারে বেপর্দা ঘুরে বেড়ানো নারীদের দিকে দিত, তা নিজ স্ত্রীর দিকে দেবে। স্ত্রীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার তাগিদ দেবে, ভালো কাপড়- চোপড় কিনে দেবে।পরনারীর কাছে যা আছে তা সবই স্ত্রীর কাছেও আছে। মনে মনে ভাববে, আমি যদি পরনারীকে দেখি তাহলে আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হবেন। আর যদি নিজ স্ত্রীকে দেখি তাহলে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হবেন। যা হালাল তা প্রাণভরে দেখে নেবে, যাতে হারামকে দেখার আগ্রহই না জাগে। যখনই চোখ পরনারীকে দেখার ইচ্ছা করবে তখনই কল্পনায় নিজ স্ত্রীর চেহারা ভাবতে থাকবে। (ইনশাআল্লাহ) গুনাহের খেয়াল দূর হয়ে যাবে।

৩. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: اِنَّ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا اِذَا مَسَّہُمۡ طٰٓئِفٌ مِّنَ الشَّیۡطٰنِ تَذَکَّرُوۡا فَاِذَا ہُمۡ مُّبۡصِرُوۡنَ'নিশ্চয়ই যারা আল্লাহকে ভয় করে, শয়তানের কোনো দল যখন তাদের ঘিরে ধরে, তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। সুতরাং তাদের অনুভূতি চলে আসে। (সূরা আল আ'রাফ - ৭:২০১)এই বরকতপূর্ণ আয়াত থেকে এই রহস্য উদ্ঘাটিত হয় যে, যখনই শয়তান মানুষের ওপর হানা দেয় বা অন্তরে গুনাহের কুমন্ত্রণা ঢেলে দেয়, মানুষ যেন আল্লাহ তাআলার যিকিরের মাধ্যমে তা প্রতিহত করে। সুতরাং বাজার দিয়ে অতিক্রমের সময় যিকিরের প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। সম্ভব হলে হাতে তাসবীহ রাখবে। অন্যথায় মনে মনে তো যিকির করতেই থাকবে। উদাসীনতা গুনাহের ভূমিকা। যিকিরের দ্বারা উদাসীনতাকে দূর করবে। যিকিরের নূর ধীরে ধীরে অন্তরে এমন প্রশান্তি আনয়ন করবে যে, অন্যের দিকে দৃষ্টি দিতে ইচ্ছে করবে না।دو عالم سے کرتی ہے بیگانہ دل کو عجب چیز ہے لذت آشنائی'দোজাহান থেকে অপিরিচিত করে অন্তরবন্ধুত্বের স্বাদ বড় আশ্চর্যকর।'

৪. আল্লাহ তাআলা বলেন:أَلَمْ يَعْلَمُ بِأَنَّ اللَّهَ يَرَى'সে কি জানে না আল্লাহ তাআলা দেখছেন? (সূরা আল আলাক - ৯৬:১৪)আধ্যাত্মিক সাধনাকারীর মন যখনই পরনারীর দিকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করবে তৎক্ষণাৎ সে ভাবতে থাকবে, আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন। দৃষ্টি সংযত রাখা সহজ হয়ে যাবে। বিষয়টি এই দৃষ্টান্ত থেকে বুঝে নাও, যদি ওই নারীর বাবা অথবা স্বামী আমাদেরকে দেখতে থাকে তাহলে এমতাবস্থায় আমরা কি ওই নারীর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারব? আমাদের অস্বস্তিবোধ হবে। মনে হবে এই নারীর বাবা বা স্বামী আমাদের ওপর মারাত্মক রেগে যাবে। এমনইভাবে এরূপ ভাবা চাই যে, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দেখছেন এবং পরনারীর প্রতি দৃষ্টি দিতে আমাদেরকে নিষেধও করেছেন। এতৎসত্ত্বেও যদি আমরা দেখতে থাকি তাহলে নিশ্চিত আল্লাহ তাআলার রাগ আসবে। আর যদি আমাদের পাকড়াও করেই ফেলেন তাহলে আমাদের কী অবস্থা হবে?

৫. আল্লাহ তাআলার বাণী:وَالَّذِیۡنَ جَاہَدُوۡا فِیۡنَا لَنَہۡدِیَنَّہُمۡ سُبُلَنَا'যারা আমার রাস্তায় পরিশ্রম করে আমি অতি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথসমূহের দিশা দান করি। (সূরা আল আনকাবুত - ২৯:৬৯)মুফাসসিরীনে কেরাম লিখেছেন, শরীয়ত অনুযায়ী আমল করার ক্ষেত্রে প্রবৃত্তিবিরোধী কাজ করাকে মুজাহাদা বলে। এটা বাস্তব যে, মুজাহাদার দ্বারা মুশাহাদা তথা আল্লাহর সরাসরি সাক্ষাৎ লাভ হয়। এ কারণেই মন যখনই পরনারী দেখার প্রতি ধাবিত হবে, নিজের ইচ্ছাশক্তি দ্বারা তার বিরুদ্ধাচরণ করবে। এ কথা স্মরণ করবে যে, এই মুজাহাদার দরুন আমার প্রকৃত প্রেমাস্পদের দর্শন লাভ হবে। তা ছাড়া এই পরিশ্রম তো স্বল্প সময়ের। পক্ষান্তরে আল্লাহর দর্শন লাভের স্বাদ হবে চিরদিনের জন্য। মনে রাখবে, অনুশাসনের নূর দ্বারা অন্তর খুব দ্রুত পরিষ্কার হয়ে যায়। তাসবীহদানা এর সমকক্ষ হতে পারে না। হিম্মত ছেড়ে দেয়ার দ্বারা সমস্যা সমাধান হয় না; বরং হিম্মত করার দ্বারা সমাধান হয়। সুতরাং স্বীয় প্রবৃত্তির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং তাকে শরীয়তের লাগাম পরিয়ে দিতে হবে। যাতে করে কেয়ামতের দিন সৌভাগ্যের মালা পরিধান করা যায়।

৬. আল্লাহ তাআলার বাণী:إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا'আল্লাহ তাআলা তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন তোমরা যেন আমানতসমূহ যাথাযথ হকদারদের নিকট পৌঁছে দাও। (সূরা আন নিসা - ৪:৫৮)আধ্যাত্মিক পথিক নিজ মনে এ কথা গেঁথে নেবে যে, আমার চোখ আল্লাহ তাআলার দেয়া আমানত। আমাকে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী এই আমানত ব্যবহার করতে হবে। যদি তার বিপরীত করি, তাহলে আমানতের খেয়ানত হবে। নিয়ম হলো কেউ যখন একবার কোনো জিনিসে খেয়ানত করে ফেলে তার কাছে দ্বিতীয়বার অন্য কোনো জিনিস আমানত রাখা হয় না। এমন না হয়ে যায় যে, দুনিয়াতে আমি আল্লাহর দেয়া দৃষ্টিশক্তি পরনারী দেখায় ব্যবহার করে খেয়ানত করে ফেললাম। যার ফলে কেয়ামতের দিন আমাকে সেই দৃষ্টিশক্তি পুনরায় আর দেয়াই হলো না। যদি সেদিন অন্ধ করে উঠানো হয় তাহলে আমার কী অবস্থা হবে?কুরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছে, কেয়ামতেন দিন কিছু মানুষকে অন্ধ করে উঠানো হবে। তখন তারা প্রশ্ন করবে:قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِیۡۤ اَعۡمٰی وَقَدۡ کُنۡتُ بَصِیۡرًا'হে আমার রব, আমাকে অন্ধ করে কেন উঠানো হলো? অথচ আমি তো দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ছিলাম।' (সূরা ত্বা-হা - ২০:১২৫)এটিও চিন্তার বিষয় যে, আমরা এমন সময় দুনিয়াতে এসেছি যখন আল্লাহ তাআলার প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দর্শন আমাদের ভাগ্যে জুটেনি। যদি কেয়ামতের দিনও অন্ধ করে উঠানো হয় তাহলে সেদিনও আমরা আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পারব না। দ্বিতীয় সুযোগেও এরূপ বঞ্চিত হওয়া থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। সুতরাং দৃষ্টির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা খুবই জরুরি বিষয়। যাতে কেয়ামতের দিন দৃষ্টির এই আমানত পুনরায় নসীব হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى جَمِيلٌ'নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সুন্দর।' (মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদিস নং: ৫১০৮)এ বিষয়টি মাথায় রেখে চিন্তা করো, যদি আমি দুনিয়ার সুন্দরীদের কুনজরে দেখি, তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা স্বীয় রূপ ও সৌন্দর্য দেখা থেকে আমাকে বঞ্চিত করে দেবেন।

৭. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:اَلَمۡ یَاۡنِ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡ تَخۡشَعَ قُلُوۡبُہُمۡ لِذِکۡرِ اللّٰہِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الۡحَقِّ'যারা ঈমান এনেছে, তাদের জন্য কি এখনো সেই সময় আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হবে?' (সূরা আল হাদীদ - ৫৭:১৬)আধ্যাত্মিক পথের পথিকের প্রবৃত্তি যখনই কুদৃষ্টির গুনাহে লিপ্ত হতে চাইবে, তৎক্ষণাৎ মনে মনে এই আয়াতের শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করবে। মুমিনদের জন্য কি এখনো সময় হয়নি যে, তাদের অন্তর আল্লাহকে ভয় করবে। যতবারই চোখ তুলে দেখার ইচ্ছা জাগবে ততবারই নিজেকে সম্বোধন করে বলবে, মুমিনদের কি এখনো আল্লাহকে ভয় করার সময় হয়নি? প্রতি পলকে এই বিষয়টি ভাবতে থাকবে আর আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে স্বীয় ভয় ঢেলে দেবেন এবং কুদৃষ্টি থেকে খাঁটি তাওবা নসীব হয়ে যাবে।

[এখন যৌবন যার - বই থেকে]

07/08/2025

দারসুল কুরআন | সূরা আনয়াম ১৫১-১৫৩ নং আয়াত।
বিষয় : তাকওয়ার অন্তরায় যে জিনিসগুলো।
মুদাররিস: ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মান্নান

#আরবি
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ مِنْ إِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ (১৫১) وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى وَبِعَهْدِ اللَّهِ أَوْفُوا ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ (১৫২) وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ (১৫৩)

ুবাদ :

বলুন, এসো তোমাদের রব তোমাদের উপর যা হারাম করেছেন তোমাদেরকে তা তেলাওয়াত করি, তা হচ্ছে, তোমরা তাঁর সাথে কোনো শরিক করবে না, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে, দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, আমরাই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিজিক দিয়ে থাকি। প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজের ধারে কাছেও যাবে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করবে না। তিনি তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা বুঝতে পার (১৫১)।

আর ইয়াতিম বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ছাড়া তোমরা তার সম্পত্তির ধারে কাছেও যাবে না এবং পরিমাপ ও ওজন ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দেবে। আমরা কাউকেও তার সাধ্যের চেয়ে বেশি ভার অর্পণ করি না। আর যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে সম্পর্কে স্বজন হলেও এবং আল্লাহকে দেওয়া অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর (১৫২)।

আর এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ কর এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও (১৫৩)।

📎 (সূরা আনআম, ১৯তম রুকু, আয়াত : ১৫১-১৫৩)

আলোচ্য আয়াত তিনটিতে ৯টি হারাম কাজের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এরপর দশম নির্দেশ হিসাবে আল্লাহ বলেছেন, এই দ্বীনই হচ্ছে আমার সরল পথ এবং এ পথের অনুসরণ কর। আগত আয়াতসমূহে যে ১০টি বিষয় বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, ২. পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার না করা, ৩. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করা, ৪. অশ্লীল কাজ করা, ৫. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, ৬. ইয়াতিমের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করা, ৭. ওজন ও মাপে কম দেওয়া, ৮. সাক্ষ্য ও কথাবার্তায় অবিচার করা, ৯. আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ না করা এবং ১০. আল্লাহর সোজা-সরল পথ ছেড়ে অন্য পথ অবলম্বন করা। মুফাসসির আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, সূরা আলে ইমরানের মুহকাম আয়াতের বর্ণনায় এ আয়াতগুলোকেই বুঝানো হয়েছে। আদম (আ) থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মাদ সা. পর্যন্ত সমস্ত নবীগণের শরীয়তই এসব আয়াতের হুকুম বহাল রেখেছে। কোন দ্বীন বা শরীয়তই এগুলোর কোনটিই মানসুখ বা রহিত করেনি। (মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৩১৭) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘যে কেউ রাসূল সা. সর্বশেষ যে বিষয়ের উপর ছিলেন সেটা জানতে চায় সে যেন সূরা আনআমের এ আয়াতগুলো পড়ে নেয়। (ইবনে কাসীর)

#আলোচ্য_বিষয়

আল্লাহর পক্ষ থেকে হারাম বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, এখানে কোন আন্দাজ অনুমানের প্রভাব নেই, কাজেই এসব বিষয় থেকে আত্মরক্ষা করতে যত্নবান হও।

#নামকরণ ও অন্যান্য তথ্য এ সূরারই ১৩৬, ১৩৯ ও ১৪২ নম্বর আয়াতসমূহে উল্লিখিত ‘আনআম’ শব্দ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। এর অর্থ গবাদি পশু। সূরাটি মাক্কী, আয়াত সংখ্যা ১৬৫। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যখন রাসূল সা.-এর উপর সূরা আনআম নাজিল হচ্ছিল, তখন জিবরাইল (আ)-এর সাথে এত ফেরেশতা অবতরণ করেছিলেন যে, তাতে আকাশের প্রান্তদেশ ছেয়ে যায়। (মুস্তাদরাকে হাকিম, ২/২৭০;২৪৩১) এ সূরার কয়েকটি আয়াত বাদে গোটা সূরাটি একযোগে মক্কায় অবতীর্ণ হয়।

#ব্যাখ্যা

✅ প্রথম- আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক বা অংশীদার করো না :

তোমরা আরবের মুশরিকদের মত দেব-দেবীদেরকে ইলাহ বা উপাস্য মনে করো না। ইয়াহুদি ও নাসারাদের মত নবীগণকে আল্লাহ কিংবা আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করো না। অন্যদের মতো ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা আখ্যা দিও না। মূর্খ জনগণের মত নবী ও ওলিগণকে জ্ঞান ও শক্তি সামর্থ্যে আল্লাহর সমতুল্য সাব্যস্ত করো না।

আল্লাহর জন্য যে সমস্ত ইবাদত করা হয়, তা অপর কাউকে দিও না; যেমন, দোয়া, জবেহ মান্নত ইত্যাদি। এখানে ‘শাইয়্যা; শব্দের অর্থ শিরকে ‘জলি’ অথবা ‘খফি’ উভয় প্রকার শিরক থেকে বিরত থাকা। শিরকে জলি হলো, ইবাদাত-আনুগত্য ও অন্য বিশেষ গুণে আল্লাহর সাথে অন্যকে শরিক করা। আর শিরকে খফি হলো, নিজ নিজ কর্মে দ্বীনি ও পার্থিব উদ্দেশ্যসমূহে এবং লাভ- লোকসানে আল্লাহ তায়ালাকে কার্যনির্বাহী বলে বিশ্বাস করেও কার্যত অন্যদেরকে কার্যনির্বাহী মনে করা এবং যাবতীয় প্রচেষ্টা অন্যদের সাথেই জড়িত রাখা। এছাড়া লোকদেখানো ইবাদত করা, নাম-যশ লাভের উদ্দেশ্যে দান-সাদকা করা, লাভ লোকসানের মালিক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সাব্যস্ত করা শিরক।

✅ দ্বিতীয়- পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে :

আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ো না। তাদেরকে কষ্ট দিয়ো না। তাদের আনুগত্য ও সুখবিধানকে আল্লাহ তায়ালা ইবাদতের সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا “আপনার রব নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।” (সূরা ইসরা : ২৩) অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ (১৪) “আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং পিতা-মাতার। তারপর আমার দিকেই প্রত্যাবর্তন।” (সূরা লুকমান : ১৪) আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, ্রرَغِمَ أَنْفُ، ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ، ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُগ্ধ، قِيلَ: مَنْ؟ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: ্রمَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ، أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَগ্ধ একদিন রাসূল সা. তিনবার বললেন, ধ্বংস হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ কে ধ্বংস হয়েছে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি পিতা-মাতাকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারেনি। (মুসলিম-২৫৫১)

✅তৃতীয়- সন্তান হত্যা করা :

এখানে সন্তানের হক বর্ণিত হয়েছে, যা পিতা-মাতার কর্তব্য। জাহেলি যুগে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত হত্যা করার বিষয়টি ছিল তার সাথে অসদ্ব্যহার করার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। বিষয়টিকে হারাম ঘোষণা করে এ আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُم “তোমরা দারিদ্র্যের কারণে স্বীয় সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমরা তোমাদেরকে ও তাদেরকে- উভয়কেই রিজিক দান করব।” দরিদ্রতা এবং যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দাস হয়ে যাওয়ার ভয়ে কন্যাসন্তানদেরকে তারা জীবিত হত্যা করত। আল্লাহ বলেন, وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ (৮) بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ “যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাসন্তানকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।” (সূরা তাকভীর : ৮-৯)

✅চতুর্থ- নির্লজ্জ-অশ্লীল কাজ হারাম :

চতুর্থ হারাম হলো নির্লজ্জ কাজ। আল্লাহ বলেন, “তোমরা প্রকাশ্য ও গোপনে কোন ধরনের অশ্লীলতার ধারে কাছেও যেও না।” ‘ফাওয়াহেশ’ শব্দের অর্থ অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ। যাবতীয় বড় গোনাহ এর অন্তর্ভুক্ত। এ আয়াতে প্রকৃত অর্থে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ, প্রকাশ্য ও গোপন সকল গোনাহ ও ব্যভিচারের সকল পন্থা নির্দেশ করে। এ সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ হলো তোমরা এগুলোর ধারে কাছেও যেও না। এর অর্থ এরূপ মজলিশ ও স্থান থেকে বেঁচে থাকা যেখানে গেলে গোনাহে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ, যে লোক নিষিদ্ধ জায়গার আশপাশে ঘোরাফেরা করে, সে তাতে প্রবেশ করার কাছাকাছি হয়ে যায়। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ “বলুন নিশ্চয় আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা।” (সূরা আরাফ : ৩৩) আল্লাহ আরো বলেন, وَذَرُوا ظَاهِرَ الْإِثْمِ وَبَاطِنَهُ “আর তোমরা প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন পাপ বর্জন কর।” (সূরা আনআম : ১২০) রাসূল সা. বলেন,

لَا أَحَدَ أَغْيَرُ مِنْ اللهِ وَلِذَلِكَ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ “আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মভিমানী কেউ নেই, সেজন্য তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতা হারাম করেছেন।” (বুখারী-৪৬৩৪, মুসলিম-১৬৭৬)

✅পঞ্চম- অন্যায়ভাবে হত্যা :

“আল্লাহ তায়ালা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না, তবে ন্যায়ভাবে ছাড়া।” ন্যায়ভাবে হত্যার ব্যাখ্যায় রাসূল সা. বলেন, لاَ يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلاَثٍ النَّفْسُ بِالنَّفْسِ وَالثَّيِّبُ الزَّانِي وَالْمَارِقُ مِنْ الدِّينِ التَّارِكُ لِلْجَمَاعَةِ. “তিনটি কারণ ছাড়া কোনো মুসলিমকে হত্যা করা হালাল নয়; এক: বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও ব্যভিচারে লিপ্ত হলে, দুই: অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করলে তার কেসাস হিসাবে তাকে হত্যা করা যাবে এবং তিন: সত্য দ্বীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলিমদের জামাআত থেকে পৃথক হয়ে গেলে।” (বুখারী-৬৮৭৮, মুসলিম-১৬৭৬) বিনা কারণে কোনো মুসলিমকে হত্যা যেমন হারাম তেমন কোনো অমুসলিমকে হত্যা করাও হারাম। রাসূল সা. বলেন, مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَهُ ذِمَّةُ اللهِ وَذِمَّةُ رَسُولِهِ لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ سَبْعِينَ عَامًا “যে ব্যক্তি কোন জিম্মি অমুসলিমকে হত্যা করে, সে আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। যে আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি সত্তর বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যায়।” (ইবনে মাজাহ-২৬৮৭)

✅ ষষ্ঠ- হারাম ইয়াতিমের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করা :

এ আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ইয়াতিমের সম্পদকে আগুন মনে করে অবৈধভাবে খাওয়া ও নেওয়ার ব্যাপারে নিকটবর্তী হয়ো না।’ অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا ‘যারা ইয়াতিমের মাল অন্যায় ও অবৈধভাবে ভক্ষণ করে, তারা নিজেদের পেটে আগুন ভর্তি করে।’ (সূরা নিসা : ১০) রাসূল সা.-এর যুগে একটি ঘটনা, جَاءَتِ امْرَأَةُ سَعْدِ بْنِ الرَّبِيعِ بِابْنَتَىْ سَعْدٍ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَاتَانِ ابْنَتَا سَعْدٍ قُتِلَ مَعَكَ يَوْمَ أُحُدٍ وَإِنَّ عَمَّهُمَا أَخَذَ جَمِيعَ مَا تَرَكَ أَبُوهُمَا وَإِنَّ الْمَرْأَةَ لاَ تُنْكَحُ إِلاَّ عَلَى مَالِهَا ‏.‏ فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى أُنْزِلَتْ آيَةُ الْمِيرَاثِ فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَخَا سَعْدِ بْنِ الرَّبِيعِ فَقَالَ ‏ "‏ أَعْطِ ابْنَتَىْ سَعْدٍ ثُلُثَىْ مَالِهِ وَأَعْطِ امْرَأَتَهُ الثُّمُنَ وَخُذْ أَنْتَ مَا بَقِيَ ‏"‏ ‏ সাদ ইবনে রবী রা.-এর স্ত্রী রাসূল সা.-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা.! এরা দুইজন সাদ ইবনে রবীর কন্যা। তাদের বাবা উহুদ যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। আর তাদের চাচা তাদের সব সম্পদ নিয়ে গেল। তাদের জন্য কোন সম্পদ বাকি রাখল না, অথচ সম্পদ ছাড়া বিবাহও হয় না। তখন রাসূল সা. বলেন, আল্লাহ এর ফয়সালা করবেন। ফলে সূরা নিসার ১০-১৩ নম্বর আয়াত নাযিল হয়। এখানে ইয়াতিমের মিরাস প্রতিষ্ঠিত হয়। আয়াত নাযিলের পর রাসূল সা. তার চাচার কাছে লোক পাঠান এবং বলেন, তুমি সাদের কন্যাদ্বয়কে দুই- তৃতীয়াংশ ও তাদের মাকে এক অষ্টমাংশ দিয়ে দাও। আর যা বাকি থাকবে তা তোমার। (আবু দাউদ-২৮৯১, ২৮৯২, তিরমিজি-২০৯২, ইবনে মাজাহ, ২৭২০, মুসনাদে আহমাদ ৩/৩৫২) পূর্ণ আমানতদারিতার সাথে তাদের সম্পদ বালেগ ও বুদ্ধি হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। অন্য হাদীসে রাসূল সা. বলেন, اجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ “তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ পরিহার কর। সাহাবায়ে কেরাম রা. বলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা.! সেগুলো কী? রাসূল সা. বলেন, ১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না, ২. জাদু করো না, ৩. অন্যায়ভাবে কোন প্রাণ সংহার করো না, ৪. সুদ খেয়ো না, ৫. ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাস করো না, ৬. যুদ্ধের মাঠ থেকে পলায়ন করো না এবং ৭. মুমিনা পবিত্রা নারীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ো না। (বুখারী-২৭৬৬)

✅ সপ্তম- হারাম ওজন ও মাপে কম দেওয়া :

দ্রব্য আদান-প্রদানে ওজন ও মাপে কম- বেশি করাকে কুরআন কঠোর হস্তে হারাম করেছে। কুরআনুল কারীমের অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ (১) الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ (২) وَإِذَا كَالُوهُمْ أَوْ وَزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ “দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, আর যখন তাদেরকে মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।” (সূরা মুতাফফিফীন : ১-৩) আল্লাহ আরো বলেন, وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ “মাপার সময় পুরো মাপবে এবং সঠিক পাল্লা দিয়ে ওজন করবে।” (সূরা ইসরা : ৩৫) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, أَلَّا تَطْغَوْا فِي الْمِيزَانِ (৮) وَأَقِيمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيزَانَ ওজনে বাড়াবাড়ি করো না, ঠিক ঠিকভাবে ইনসাফের সাথে ওজন করো এবং পাল্লায় কম করে দিয়ো না। (সূরা রাহমান : ৮-৯) শুয়াইব (আ)- এর সম্প্রদায়ের উপর এ অপরাধের কারণে আজাব নাজিল হয়।

✅অষ্টম- নির্দেশ ন্যায় ও সুবিচারের বিপরীত কাজ ও কথা হারাম :

আল্লাহ বলেন, “তোমরা যখন কথা বলবে তখন ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে, যদি সে আত্মীয়ও হয়।” এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কোন ব্যাপারে সাক্ষ্য হোক কিংবা বিচারকের ফয়সালা হোক অথবা পারস্পরিক বিভিন্ন প্রকার কথাবার্তাই হোক সবক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় ন্যায় ও সত্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে কথা বলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসূল সা. বলেন, “আমার মেয়ে ফাতিমাও যদি চুরি করতো তাহলে অবশ্যই আামি তার হাত কেটে দিতাম।”

✅ নবম- নির্দেশ আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা :

“আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ কর।” এ অঙ্গীকারের দাবি হলো, পালনকর্তার কোনো নির্দেশ অমান্য করা যাবে না। তিনি যে কাজের আদেশ দেন, তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি যে কাজে নিষেধ করেছেন, তার ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না এমনকি সন্দেহযুক্ত কাজ থেকেও বাঁচতে হবে। এছাড়া আল্লাহকে দেওয়া যাবতীয় অঙ্গীকার এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন- আল্লাহ বলেন, أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آدَمَ أَنْ لَا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ “হে বনি আদম! আমি কি তোমাদের থেকে এ অঙ্গীকার নেইনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করো না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা ইয়াসিন : ৬০) আল্লাহ আরো বলেন, وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدْتُمْ “আর তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করো যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর।” (সূরা নাহল : ৯১) অনুরূপভাবে মানুষের মধ্যে পরস্পর যে সমস্ত অঙ্গীকার হয়ে থাকে সেগুলো উদ্দেশ্য। আল্লাহ বলেন, وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا “আর প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণ করবে।” (সূরা বাকারাহ: ১৭৭) আল্লাহর সাথে মানুষের এবং মানুষের সাথে মানুষের কৃত এই অঙ্গীকার অবশ্যই কোনো কাগজে লিপিবদ্ধ হয়নি ঠিকই কিন্তু এ অঙ্গীকার ও চুক্তির বাণী মানুষের শিরা উপশিরায় ও তার প্রতিটি লোমকূপে মোহরাঙ্কিত হয়ে আছে। এ চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন, الَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ أُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ “যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারের পর তা ভঙ্গ করে, আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখতে আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং জমিনের উপর ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।” (সূরা বাকারা : ২৭) আবুল আলিয়া বলেন, এটি মুনাফিকদের ছয়টি স্বভাবের অন্তর্গত। ১. তারা কথা বললে মিথ্যা বলে, ২. ওয়াদা করলে খেলাফ করে, ৩. আমানত রাখলে খেয়ানত করে, ৪. আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, ৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং ৬. জমিনের উপর ফাসাদ সৃষ্টি করে। (তাফসিরুস সহীহ) এছাড়া আলমে আরওয়াতে আমরা আল্লাহর সাথে যে অঙ্গীকার করেছিলাম তা মনে করিয়ে দিয়ে আল্লাহ বলেন, وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ “আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব আদম সন্তানের পিঠ থেকে তার বংশধরদেরকে বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলেছিল, হ্যাঁ অবশ্যই, আমরা সাক্ষী রইলাম। এটা এ জন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বল, আমরা তো এ বিষয়ে গাফেল ছিলাম।” (সূরা আরাফ : ১৭২)

✅ দশম- নির্দেশ ইসলামকে আঁকড়ে থাকবে :

বলা হচ্ছে মুহাম্মাদ সা. আনীত শরীয়তই সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথে চল এবং অন্য পথে চলো না। কেননা সেসব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছন্ন করে দেবে। রাসূল সা. বলেন, ‏"‏ إِنَّ اللَّهَ ضَرَبَ مَثَلاً صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا عَلَى كَنَفَىِ الصِّرَاطِ دَارَانِ لَهُمَا أَبْوَابٌ مُفَتَّحَةٌ عَلَى الأَبْوَابِ سُتُورٌ وَدَاعٍ يَدْعُو عَلَى رَأْسِ الصِّرَاطِ وَدَاعٍ يَدْعُو فَوْقَهُ‏:‏ ‏(‏وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى دَارِ السَّلاَمِ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ‏)‏ وَالأَبْوَابُ الَّتِي عَلَى كَنَفَىِ الصِّرَاطِ حُدُودُ اللَّهِ فَلاَ يَقَعُ أَحَدٌ فِي حُدُودِ اللَّهِ حَتَّى يُكْشَفَ السِّتْرُ وَالَّذِي يَدْعُو مِنْ فَوْقِهِ وَاعِظُ رَبِّهِ ‏" আল্লাহ একটি উদাহরণ পেশ করেছেন এভাবে; একটি সরল পথ এ পথের দু’পাশে প্রাচীর রয়েছে, তাতে দরজাগুলো খোলা। আর প্রত্যেক দরজার উপর রয়েছে পর্দা। পথটির মাথায় একজন আহ্বানকারী আহবান করছে যে, আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। পথের দু’পাশের দরজাগুলো আল্লাহর সীমারেখা, যে কেউ আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করবে তার জন্য সে পর্দা তুলে নেওয়া হবে। উপরের আহ্বানকারী হলো তার রব আল্লাহর পক্ষ থেকে উপদেশ প্রদানকারী। (তিরমিজি-২৮৫৯) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, একদিন রাসূল সা. আমাদের সামনে একটি সরল রেখা টানলেন। অতঃপর এর ডানে ও বামে আরো কয়েকটি রেখা টেনে বললেন, ডান-বামের এসব রেখা শয়তানের আবিষ্কৃত পথ। এর প্রত্যেকটিতে একটি করে শয়তান নিয়োজিত রয়েছে। সে মানুষকে সে পথেই চলার উপদেশ দেয়। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী সরল রেখার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘আর এটা আমার সরল পথ সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ কর।’ (মুসনাদে আহমাদ ১/৪৩৫) কাজেই দ্বীনের ব্যাপারে শাখা-প্রশাখা বের করা ও বিভেদ সৃষ্টি করা হারাম ও শয়তানের কাজ। আল্লাহ প্রদত্ত এ পথনির্দেশ গ্রহণ না করলে মানুষকে দুটি বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এক. অন্য পথ অবলম্বন করার কারণে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের অনিবার্য পথ থেকে মানুষ সরে যায়। দুই. এ সঠিক পথ থেকে সরে যাওয়ার সাথে সাথেই অসংখ্য সরু পথ সামনে এসে যায়। এ পথে চলতে যেয়ে গোটা মানবসমাজ দিকভ্রান্ত, বিক্ষিপ্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং দুনিয়ার সুখ শান্তি উন্নতি ও স্বপ্নগুলোকে চিরতরে ধূলিসাৎ করে দেয়। এজন্য আল্লাহ বলেন, অন্য পথে চলো না, কারণ তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে সরিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে। কুরআন মুক্তির পথকে ‘সিরাতুল মুসতাকিম’ বা ‘সাওয়া-উস- সাবিল’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাইতো আমরা প্রতিদিন অসংখ্যবার বলি, ‘আমাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখান’।

#আয়াতগুলোর_শিক্ষা

১. আল্লাহ প্রদত্ত হালাল-হারামের সীমারেখা মেনে চলার ব্যাপারে কোনো শিথিলতা প্রদর্শন করা যাবে না।

২. আল্লাহ প্রদত্ত সরল সঠিক পথই মুক্তির পথ। এ পথের মধ্যে বক্রতা তৈরি করা যাবে না।

৩. আয়াতে উল্লিখিত হারাম বিষয়গুলো সকল নবী ও রাসূলদের সময় কার্যকর ছিল, তাই সেগুলো মেনে চলার ব্যাপারে কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়। আল্লাহ আমৃত্যু আমাদেরকে তাঁর বিধান বাস্তবায়নে আয়াতে উল্লিখিত হারাম বিষয়গুলোকে পরিহার করে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে কবুল করুন। আমিন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

মুহাব্বাতে মুস্তফা ﷺ ফাউন্ডেশন চট্রগ্রাম
(পোস্ট কপি)

Address

Lakshmipur Sadar
Lakshmipur
3706

Telephone

+8801879076656

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Faris TV 24 posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Faris TV 24:

Share