08/07/2025
ইমাম হোসেন (রাঃ) ছাহেবের শিরোচ্ছেদকারী সীমার এবং কারবালার যুদ্ধে প্রথম অস্ত্র নিক্ষেপকারী আমর বিন সাদ মুখতারের সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার হয়। তাহারা মুখতারের সম্মুখে নীত হয়। মুখতার কারবালার ঘটনার নায়কদের দেখিয়া ক্রুদ্ধ হইয়া বলিয়া উঠেন, "হে আমর! তোমরাই না অর্থের লোভে, উচ্চ চাকুরীর আশায়, নিঃসহায় ইমামকে কারবালায় হত্যা করিয়াছ। তখন কি একবারও আল্লাহর বিচারের কথা স্মরণ হয় নাই? হে সীমার! তুমিই না ভূ-লুণ্ঠিত ইমামের বক্ষে চড়িয়া নির্মমভাবে তাহাকে জবেহ করিয়াছ?” মুখতারের হুংকারে সীমার ও আমর ভীত সন্ত্রস্ত। তাহাদের মুখে কোন শব্দ নাই। অতঃপর মুখতারের নির্দেশে জল্লাদ প্রকাশ্যে জনসম্মুখে তাহাদের শিরোচ্ছেদ করেন। ইহার পর কারবালার যুদ্ধে নবী বংশের বিপক্ষে যাহারা অস্ত্রধারণ করিয়াছিল, একে একে তাহাদের সবাইকে মুখতার হত্যা করেন।
সীমারের এক অনুচর। নাম খোলি বিন ইয়াজিদ। এই খোলিই ইমাম ছাহেবের ছিন্ন শির বর্শাবিদ্ধ করিয়া সীমারের অগ্রে অগ্রে কুফায় আব্দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের নিকট লইয়া গিয়াছিল। খোলিও ধরা পড়ে। মুখতারের নির্দেশে তাহার হস্তপদ কাটিয়া ফেলা হয়। রক্তক্ষরণ হইতে হইতে সেই পাপিষ্ঠ মারা পড়ে।
অতঃপর কারবালার যুদ্ধে নৃশংস হত্যাকান্ডের আসামীদের মধ্যে বাকী থাকে একমাত্র ওবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ। মুখতার এই ইবনে যিয়াদের দিকে মনোনিবেশ করেন। ওবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ তখন দামেস্ক শাসনকর্তা আব্দুল মালেকের সেনাপতি।
মুখতার প্রখ্যাত সেনাপতি ইব্রাহিম ইবনে মালেক ওশতুরের নেতৃত্বে বিরাট একদল সৈন্যবাহিনীকে প্রেরণ
করেন ওবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য। ইতিহাস প্রসিদ্ধ জ্বাব নদীর তীরে উভয় পক্ষের মধ্যে ভীষণ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুখতারের সেনাবাহিনীর হাতে ওবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ নিহত হয়। কুফার সৈন্যরা যিয়াদের কর্তিত মস্তক বর্শাবিদ্ধ করিয়া মহা উল্লাসে কুফাপানে ধাবিত হয়। ইবনে যিয়াদের কর্তিত মস্তক মুখতারের সম্মুখে রাখা হয়।
রহস্যময়ের রহস্যের অন্ত নাই। কুফাস্থিত প্রাসাদে বসিয়া এই ওবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদই প্রাসাদস্থিত টেবিলের উপর ইমাম হোসেন (রাঃ) ছাহেবের শির রাখিয়া দম্ভ প্রকাশ করিয়াছিল। আজ সেই প্রাসাদে মুখতার বসিয়া প্রাসাদস্থিত সেই ঐতিহাসিক টেবিলেই দুরাচার ইবনে যিয়াদের শির রাখিয়া সকলকে সম্বোধন করিয়া বলেন, "ভাইসব! আল্লাহর মহিমা দেখ। দুনিয়ায় সব কিছুই আল্লাহতায়ালার এখতিয়ার। এই ওবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ একদিন কাহাকেও পরোয়া করিত না। তাহার বিরাট বাহিনী আজ আমাদের মত নগণ্য ব্যক্তিগণের হাতে বিধ্বস্ত। যে ইবনে যিয়াদ জীবিত থাকিতে আমার ন্যায় ক্ষুদ্র ব্যক্তিকে গ্রাহ্য করা দূরের কথা, ক্ষমতার গর্বে কারবালায় ইমাম হোসেন (রাঃ) এর অনুরোেধও উপেক্ষা করিয়াছিল, আজ তাহারই সিংহাসনে বসিয়া আমি তাহার ছিন্ন মস্তক নিরীক্ষণ করিতেছি। শত সহস্র বার সেই আল্লাহর শোকর। তাহারই অনুগ্রহে তোমরা বিজয়ী হইয়াছ। তোমাদের গৌরবে আজ আমিও গৌরবান্বিত।”
এমনিভাবে মুখতারের প্রচেষ্টায় কারবালার প্রান্তরে পৈশাচিক হত্যাকান্ডের যাহারা নায়ক ছিল, তাহাদের জীবন লীলা সাংগ হয়; আপন আপন অপরাধের জবাবদিহিতার জন্য পরপারে চলিয়া যায়।
তথ্যসূত্রঃ নসিহত সকল খন্ড একত্রে ৪০৫ ও ৪০৬ পৃষ্ঠা, নসিহত নং ৪৭।
ধারাবাহিক ভাবে চলবে। (৮ম পর্ব)
#সত্যঘটনা #কারবালারইতিহাস #নসিয়তশরীফ #আশুরা #ইতিহাস।