11/06/2025
সকালটা ছিল একটু ব্যস্ত। পাকিস্তানের খ্যাতনামা এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. আরিফ হুসেইন করাচি থেকে লাহোরের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা। একটি আন্তর্জাতিক মেডিকেল কনফারেন্সে তাঁর বক্তৃতা ছিল—সব প্রস্তুতি নেওয়া, কিন্তু শেষ মুহূর্তে কিছুটা যানজটে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছাতে দেরি করে ফেলেন।
ফলাফল: প্লেন মিস।
হতাশ হয়ে ড. হুসেইন এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে বসে আছেন। হঠাৎ একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ভয়ে-ভয়ে কাছে এসে বলল,
“স্যার, কাছেই একটা ছোট সরকারি হাসপাতালে একজন ছোট মেয়ের খুব জটিল হার্টের সমস্যা। ডাক্তাররা বলছে আপনি থাকলে হয়তো কিছু হতো। আপনি প্লেন মিস করেছেন, যদি একটু দেখে যান…?”
ড. হুসেইনের মনটা কেমন যেন ধাক্কা খেলো। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। গাড়িতে করে পৌঁছে গেলেন স্থানীয় সেই হাসপাতালটিতে।
সেখানে গিয়ে দেখলেন, আট বছরের ছোট্ট এক মেয়ে—সারারাত কষ্ট পাচ্ছে। তার মা—একজন গরিব কাজের মহিলা—হাসপাতালের করিডোরে বসে শুধু কাঁদছেন। মেয়েটির হার্টে একটি গুরুতর ছিদ্র ধরা পড়েছে। অপারেশন ছাড়া বাঁচানো সম্ভব নয়। কিন্তু এমন অপারেশন শুধু অভিজ্ঞ এবং দক্ষ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞই করতে পারেন।
ড. হুসেইন নিজে মেয়েটির অবস্থা পরীক্ষা করলেন। সময় নষ্ট না করে সাথে সাথে জরুরি অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিলেন। টিম জোগাড় করে রাতভর অপারেশন করলেন তিনি নিজেই।
সকাল হতেই মেয়েটি ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে। মা ছুটে এসে ড. হুসেইনের পায়ে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
ড. হুসেইন তখন আস্তে করে শুধু বললেন—
“আমার প্লেনটা হয়তো ঠিক সময়েই উড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি যেখানে পৌঁছানো দরকার ছিল, সেখানেই ঠিক সময়ে পৌঁছেছি।”
জীবনের সব বিলম্ব মানেই ব্যর্থতা নয়। কখনো কখনো কোন বিলম্ব আল্লাহ আমাদের ঠিক সেই জায়গায় পৌঁছে দেন, যেখানে একটি প্রাণ অপেক্ষা করে, ভাল কিছু অপেক্ষা করে ।