Fun & Entertainment

Fun & Entertainment সমাজের ভালোর জন্য সর্বদা প্রস্তুত♥️

26/09/2024

হাজার বছর ধরে হাটতেছি পথ আমি পৃথিবীর পথে,

“বনের রাজা সিংহ তার আন্ডাবাচ্চা নিয়া রোদ পোহাচ্ছিলো। এমন সময় বাঁদর এসে তার লেজ ধরে দু’টা ঝাঁকি দিলো। সিংহ যতোটা না অবাক ...
26/09/2024

“বনের রাজা সিংহ তার আন্ডাবাচ্চা নিয়া রোদ পোহাচ্ছিলো।
এমন সময় বাঁদর এসে তার লেজ ধরে দু’টা ঝাঁকি দিলো।
সিংহ যতোটা না অবাক হলো, তার চেয়ে বিরক্ত হইলো বেশী।

বাঁদর একটু দূরে দাঁড়িয়ে সিংহকে কয়েকটা ভেংচি কেটে হাসতে হাসতে চলে গেলো।

সিংহের বাচ্চা সিংহকে উদ্দেশ্য করে বললো, “এত্তোবড় বেয়াদবী! আর আপনি তাকে কিছুই বললেন না বাপজান। ”

সিংহ বললো, বলার সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। একটু সময় অপেক্ষা করো, সবকিছু দেখতে পাবে।”

কয়েকদিন পর হঠাত করেই বাঁদর সিংহের সামনে পড়লো এবং এক থাপ্পরে তাকে শেষ করে দিলো সিংহ।

সিংহের বাচ্চা অবাক হয়ে সিংহকে জিজ্ঞেস করলোঃ
“বাপজান,,,, সেদিন এতো অন্যায় করলো। কিন্তু আপনি কিছুই বললেন না তাকে । অথচ আজকে সে কিছুই করেনি। কিন্তু তাকে মেরে ফেললেন ?

সিংহ জবাবে বললো,,,, “ এটাই কৌশল বাবা। সেদিনের পর বাঁদরটা ভালুককে লাথি মেরেছে,,,,হাতির শুড় ধরে দুলছে,,,,গন্ডারের পিঠে চড়ে নেচেছে,,,,হায়নাকে সে কাতুকুতু দিয়েছে,,,,জিরাফকে থাপ্পড় দিয়েছে আর সবাইকেই বলছে,,,, রাজাকেই আমি মানি না সেখানে তুমি কে?”

“সেদিন ওকে মারলে সবাই আমাকে বলতো, ক্ষমতা দেখাচ্ছি, স্বৈরাচারী এবং খুনী আমি। আজকে একটু পর দেখবি- সবাই এসে বলবে, থ্যাংক ইউ রাজা সাহেব।”

শোন মাঝে মাঝে লাই দিয়া মাথায় তুলতে হয়,,,,যাতে শক্ত করে আছাড় দিলে বেশী ব্যথা পায় এবং আপদ শেষ হয়ে যায় একেবারে।”

 #কিছু জগদীশচন্দ্র ইংল্যান্ডে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা গল্পটি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করে বিখ্যাত মার্কিন সাহিত্য প...
25/09/2024

#কিছু

জগদীশচন্দ্র ইংল্যান্ডে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা গল্পটি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করে বিখ্যাত মার্কিন সাহিত্য পত্র হারপার্স ম্যাগাজিনে পাঠিয়ে ছিলেন।প্রত্যাশা ছিল পত্রিকার পাতায় লেখাটি প্রকাশিত হবে। ভারত তথা বাঙালির দুই গর্ব রবীন্দ্রনাথ ও জগদীশচন্দ্র বসু পরস্পরের শুধু মাত্র গুণমুগ্ধ নয় তাদের মধ্যে গভীর সখ্য ছিল। মার্কিন ম্যাগাজিনটি অবশ্য রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা গল্পটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করল না, একই সঙ্গে জগদীশ বোস কে জানিয়ে দিল "ভারতীয় লেখক সম্পর্কে মার্কিন পাঠকদের কোনও আগ্ৰহ নেই"। এই অপমান জগদীশচন্দ্র ভুলতে পারেন নি, ঘটনার রেশ থেকে গিয়েছিল প্রতিবাদী বিজ্ঞানীর মননে। শুধু তাই নয় শেষ পর্যন্ত ওই পত্রিকাকে বিজ্ঞানীর কাছে ভুল স্বীকার করতে হয়।

বেশ কিছু বছর অতিক্রান্ত হয়েছে ,রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য নোবেল পেলেন ১৯১৩সালে। সারা বিশ্বের মানুষের প্রশংসা পেলেন কবি,সবাই রবীন্দ্রনাথ কে আরও বিশদে জানতে চায়। কেন পিছিয়ে থাকবে তাঁর লেখা প্রকাশে প্রত্যাখান করা মার্কিন পত্রিকা হারপার্স। তারা যোগাযোগ করলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর সঙ্গে।বিজ্ঞানী কে অনুরোধ করে লিখলেন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কিছু লিখে পাঠাও।

জগদীশচন্দ্র পুরনো স্মৃতি ভুলে যাননি তিনি হারপার্স ম্যাগাজিন কে লিখলেন -একদিন তারা রবীন্দ্রনাথ কে জানতে চায়নি, তাঁর অনুবাদ ফেরত পাঠিয়েছে। তাদের অপমানকর চিঠিটাও তিনি সঙ্গে পাঠাচ্ছেন।আশা করেন হারপার্স সেই চিঠিটাও প্রকাশ করবে।

বলা বাহুল্য শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি জগদীশচন্দ্র হেসেছেন। রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তির পরে হারপার্স পত্রিকা জগদীশচন্দ্র বসুর কাছে তাদের ভুল স্বীকার করে শুধু তাই নয়, ১৩বছর পরে পত্রিকায় জগদীশচন্দ্র বসু কে প্রত্যাখ্যানের অপমানকর চিঠিটাও ছাপতে বাধ্য হয়।

কলমে ✍🏻 অরুণাভ সেন।।

পুস্তক ঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার, হাসিকান্না হীরাপান্না, চণ্ডী লাহিড়ী

25/09/2024

সক্রেটিস ধ‍্যান করছেন। নিঃশ্চুপ বসে হয়তো জীবনবোধ নিয়ে ভাবছেন। সে সময় এক তরুণ তার কাছে গিয়ে বসলো। সক্রেটিস টের পেলেন না।

অনেকক্ষণ পর সে তরুণকে লক্ষ‍ করলেন। তরুণটি বললো, সক্রেটিস, আমার একটা প্রশ্ন ছিলো।
—কী প্রশ্ন?
—সফলতার রহস‍্যটা কী? What is the secret to success?
সক্রেটিস হাসলো। বললো, কাল সকালে নদীর ধারে এসো। তখন বলবো।

পরদিন সকালেই তরুণ নদীর ধারে গিয়ে হাজির। সক্রেটিস আসলেন। বললেন, চলো নদীতে নামি। পানিতে নামতে নামতে দুজন গলা অবধি নেমে গেলো। তরুণ খুবই বিস্মিত হতে লাগলো! হঠাৎ, সক্রেটিস সে তরুণের ঘাড় চেপে পানিতে ডুবিয়ে দিলেন। তরুণটা ছটফট করতে লাগলো। সক্রেটিসের শক্তির সাথে পেরে উঠছিলো না। কতক্ষণ পর সক্রেটিস তাকে তুললেন। তরুণের চেহারা ফ‍্যাকাসে হয়ে গেছে। বুকভরা নিঃশ্বাস নিয়ে সে যেনো জীবন খুঁজে পেলো।

—সক্রেটিস বললো, কিছু বুঝলে?
—না!
সক্রেটিস প্রাজ্ঞের হাসি হাসলেন।
—তোমাকে যখন পানিতে ডুবিয়ে রাখা হলো তখন তুমি প্রবলভাবে কি চেয়েছিলে?
—বাতাস। শুধুমাত্র বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চেয়েছিলাম!
—এটাই হলো সফলতার রহস‍্য। একটু বাতাসের জন‍্য তুমি যেমন তীব্রভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছিলে, ঠিক এমন মরিয়া হয়ে কিছু চাইলেই সফলতা আসবে। এটাই সফলতার রহস‍্য। এই বলে, সক্রেটিস বিদায় নিলেন।

সফলতার প্রথম ধাপ হলো—A burning desire. আমাদের ইচ্ছেশক্তি হলো শক্তিশালী স্প্রিং-এর মতো। এটাকে টেনে ধরে রাখাই কঠিন। একটু হেলা করলেই ছোট হয়ে যায়।
………………..
সংগৃহীত 💖💖

প্রাচীন কালের আদিবাসী বাঙ্গালী,কিন্তু একদল লোক আমাকে ভুল প্রমান করতে চাইবে।
25/09/2024

প্রাচীন কালের আদিবাসী বাঙ্গালী,

কিন্তু একদল লোক আমাকে ভুল প্রমান করতে চাইবে।

1) আইনস্টাইনের এক সহকর্মী একদিন তাঁর কাছে তাঁর টেলিফোন নম্বরটা চাইলেন। তখন আইনস্টাইন একটি টেলিফোন বই খুঁজে বের করলেন এবং...
25/09/2024

1) আইনস্টাইনের এক সহকর্মী একদিন
তাঁর কাছে তাঁর টেলিফোন নম্বরটা চাইলেন।
তখন আইনস্টাইন একটি টেলিফোন বই খুঁজে
বের করলেন এবং সেই বই থেকে তাঁর নম্বরটা
খুঁজতে লাগলেন। তখন সহকর্মী তাকে বললেন, ‘কী ব্যাপার, নিজের টেলিফোন নম্বরটাও মনে
নেই আপনার।’ আইনস্টাইন বললেন, ‘না, তার দরকারই বা কী? যেটা আপনি বইতে পাবেন, সে
তথ্যটা মুখস্ত করে খরচ করবেন কেন ?’

2) আইনস্টাইন ছোটবেলায় তুলনামূলক অনেক
দেরীতে কথা বলতে শেখেন। একারণে তাঁর
বাবা মা অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। একদিন
রাতে খাবার টেবিলে বসে সকলে খাচ্ছেন
এমন সময় বালক আইনস্টাইন চিৎকার করে
বললেন, ‘এই স্যুপটা বড্ড গরম। তাঁর বাবা-মা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ছেলের মুখে প্রথম কথা
শুনে বাবা-মা বেশ অবাক হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস
করলেন, ‘আগে তুমি কথা বলোনি কেন?’
উত্তরে আইনস্টাইন বললেন, ‘কারণ এর আগে
তো সব ঠিকই ছিল।

3) 1931 সালে কৌতুক অভিনেতা চার্লি
চ্যাপলিন আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানান
তার একটি শো দেখার জন্য। তখন চ্যাপলিনের
সিটি লাইটস্ সিনেমার স্কিনিং চলছিল। পরে
তারা শহরের পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন
চ্যাপলিন আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘সবাই আমাকে সহজেই বোঝে, এজন্যই আমার
এতো জনপ্রিয়তা। কিন্তু মানুষ আপনাকে
কেন এতো পছন্দ করে বুঝলাম না।’ আইনস্টাইন
সহাস্যে প্রত্যুত্তরে জানালেন, ‘কেউ আমাকে সহজে বুঝতে পারে না বলেই আমার এই জনপ্রিয়তা’।

4) একবার আইনস্টাইন ট্রেনে চেপে যাচ্ছিলেন।
চেকার সকলের টিকিট চেক করার এক পর্যায়ে
আইনস্টাইনের কাছে এসে টিকিট দেখতে
চাইলেন। কিন্তু আইনস্টাইন তাঁর টিকিটটি
খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চেকার আইনস্টাইনকে
চিনতে পেরে বললেন, ‘স্যার আপনাকে আমি
চিনতে পেরেছি। আপনি নিশ্চয়ই টিকিট কেটে
উঠেছেন। আপনাকে টিকিট দেখাতে হবে
না।’ আইনস্টাইন কিছুটা চিন্তিত ভঙ্গিতে
বললেন, ‘না, না, ওটা আমাকে খুঁজে বের করতেই
হবে। না পেলে আমি জানব কি করে যে আমি
কোথায় যাচ্ছিলাম।’

5) আইনস্টাইনের কাছে একবার আপেক্ষিকতার
সহজ ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলো। উত্তরে
আইনস্টাইন বললেন, ‘আপনার হাত একটা জ্বলন্ত
চুল্লীর উপর ধরে রাখুন, মনে হবে এক ঘন্টা পার
হয়ে গেছে। কিন্তু একজন সুন্দরী মেয়ের
পাশে একঘন্টা বসে থাকুন, আপনার কাছে
মনে হবে মাত্র এক মিনিট পার হলো, এটাই
আপেক্ষিকতা।’

6) একবার আইনস্টাইন বাইরে থেকে বাড়িতে
ফিরে দরজায় কড়া নাড়লেন। ভেতর থেকে তাঁর
স্ত্রী ভাবলেন অন্য কেউ হয়তো আইনস্টাইনকে
খুঁজতে এসেছেন, তাই তিনি বেশ বিরক্ত হয়ে
চেচিয়ে বললেন, আইনস্টাইন বাড়িতে নেই।
ব্যস, চিন্তিত আইনস্টাইন কোন কথা না বলে
উল্টো হাঁটা ধরলেন।

আরো_একটি_ঘটনা:-
আইনস্টাইনের যিনি ড্রাইভার ছিলেন,
তিনি একদিন আইনস্টাইনকে বললেন - আপনি প্রতিটি সভায় যে ভাষণ দেন সেইগুলো শুনে শুনে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে ।" -আইনস্টাইন তো অবাক!!!

উনি তখন বললেন "বেশ তাহলে এর পরের মিটিংয়ে যেখানে যাবো তারা আমাকে চেনেন না, তুমি আমার হয়ে ভাষণ দিও আর আমি ড্রাইভার হয়ে বসে থাকবো।"

-এরপরে সেই সভায় তো ড্রাইভার হুবহু আইনস্টাইন-এর ভাষণ গড় গড় করে বলে গেলেন,,, উপস্থিত বিদ্বজ্জনেরা তুমুল করতালি দিলেন । এরপর তাঁরা ড্রাইভারকে আইনস্টাইন ভেবে গাড়িতে পৌঁছে দিতে এলেন ।

-সেই সময়ে একজন অধ্যাপক ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলেন "স্যার, ঐ আপেক্ষিক এর যে সংজ্ঞাটা বললেন, আর একবার সংক্ষেপে বুঝিয়ে দেবেন ?"-আসল আইনস্টাইন দেখলেন বিপদ, এবার তো ড্রাইভার ধরা পড়ে যাবে।কিন্তু তিনি ড্রাইভার-এর উত্তর শুনে তাজ্জব হয়ে গেলেন । ড্রাইভার উত্তর দিল।।
-"এই সহজ জিনিসটা আপনার মাথায় ঢোকেনি ? আমার ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করুন সে বুঝিয়ে দেবে ।"

বিঃদ্রঃ-- জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাথে চলাফেরা করলে আপনিও জ্ঞানী হবেন। আপনি যেমন মানুষের সাথে ঘুরবেন তেমনই হবেন।

এই জন্যে কথায় আছে,
"সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস,
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ"।

🪴'সম্রাট অশোকের সন্ধানে'🔺                      ৷  কর্নাটকের মাস্কি গ্রামে সোনা খুঁজতে গিয়েছিলেন বিলেতের ইঞ্জিনিয়ার। সে স...
25/09/2024

🪴'সম্রাট অশোকের সন্ধানে'🔺


কর্নাটকের মাস্কি গ্রামে সোনা খুঁজতে গিয়েছিলেন বিলেতের ইঞ্জিনিয়ার। সে সময়েই চোখে পড়ে দেওয়ালে কী যেন হিজিবিজি লেখা! নিজে পুরালিপি পড়তে পারতেন না। কিন্তু এই দেওয়াল লিখনের কথা জানিয়েছিলেন তৎকালীন পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণকে। তাদের বিশেষজ্ঞরা সেই লেখা পড়ে বুঝতে পারেন, পুরালেখটি অশোক নামে এক সম্রাটের এবং এত দিন ‘প্রিয়দর্শী’ নামে যে সম্রাটের শিলালিপি পাওয়া গিয়েছিল, ইনিই তিনি!


এ ভাবেই ১৯১৫ সালে অতীতের গর্ভ থেকে উঠে এসেছিলেন পাটলিপুত্রের সম্রাট অশোক।

"দেবানাম্পিয় পিয়দসি লাজ হেবাম্ অহা ...
দেবগণের প্রিয় প্রিয়দর্শী রাজা এমত কহিলেন ..."

কী বলেছিলেন প্রিয়দর্শী রাজা? তাঁর পরিচয়ই বা কী? ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ই জুন কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটির মাসিক সভায় যখন বলতে উঠেছিলেন সম্পাদক জেমস প্রিন্সেপ, তখনও তিনি সেই রাজার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেননি। সাঁচি স্তূপের অনেক জায়গায় খোদাই করা ছোট ছোট লিপি থেকে প্রিন্সেপ সদ্য ব্রাহ্মী লিপির জট খুলেছেন প্রিন্সেপ। চিনতে পারছেন ব্রাহ্মীর বর্ণমালা। সেই গল্পই তিনি সে দিন শুনিয়েছিলেন সোসাইটির সদস্যদের। কিন্তু লিপির প্রাথমিক জট খুললেই তো হবে না, ঠিক মতো পড়তে হবে দিল্লি, ইলাহাবাদ, বেতিয়া-য় পাথরের স্তম্ভে, কিংবা গিরনার আর ধৌলি-র পাথরের গায়ে এই লিপিতে কী লেখা আছে! তার পরে তো দেবানাম্পিয় পিয়দসি রাজার পরিচয় জানার প্রশ্ন।


অনেক দিন ধরেই দিল্লি থেকে মধ্যভারত হয়ে বিহার পর্যন্ত নানা জায়গায় পর্যটকদের চোখ পড়ছিল বিস্ময়কর সব পাথরের স্তম্ভের উপর। তিরিশ থেকে পঞ্চাশ ফিট উঁচু, পঁচিশ থেকে পঞ্চাশ টন ওজনের এই সব স্তম্ভ একটাই পাথর কেটে তৈরি, গায়ে অসম্ভব ঝকঝকে পালিশ, কোনও কোনওটার মাথায় আলাদা ভাবে সিংহ, হাতি, ষাঁড় ইত্যাদির মূর্তি বসানো। কোনও স্তম্ভের গায়ে অপরিচিত লিপিতে খোদাই করা দীর্ঘ বক্তব্য। প্রায় সব জায়গায় স্থানীয় কিংবদন্তি, এ সবই নাকি মধ্যম পাণ্ডব ভীমের লাঠি! চতুর্দশ শতকে দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক টোপরা (আজকের হরিয়ানা) এবং মেরঠ-এ এ রকম দুটো স্তম্ভ দেখতে পেয়ে খুবই অবাক হন। একটা তো সোনার মতো ঝকঝকে, ফিরোজ নামই দিয়ে দেন ‘মিনার-ই-জরিন’। ঠিক করে ফেলেন, দিল্লিতে তাঁর তৈরি নতুন রাজধানী সাজাতে দুটো স্তম্ভই তুলে নিয়ে আসবেন। করাও হল তাই। শুধু নিয়ে আসা নয়, আজ যেখানে ফিরোজ শা কোটলা-র বিখ্যাত ক্রিকেট মাঠ, সেখানে তাঁর দুর্গের চূড়োয় তোলাও হল একটাকে। অন্যটা ঠাঁই পেল আজকের দিল্লি রিজ-এ, ফিরোজের এক শিকারঘাঁটিতে। দুটোরই গায়ে কিছু লেখা আছে দেখে ফিরোজ নানা পণ্ডিতকে ডেকেছিলেন, কেউই কিছু বলতে পারেননি। ব্রিটিশ পর্যটক উইলিয়াম ফিঞ্চ জাহাঙ্গিরের সঙ্গে গিয়ে ইলাহাবাদে এমন একটি স্তম্ভ দেখেছিলেন। ১৬৭০-এ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী জন মার্শাল উত্তর বিহারে বেতিয়ার উত্তরে এ রকম আর একটি ‘ভীমের লাঠি’র খোঁজ পান, আজ জায়গাটি লৌরিয়া-নন্দনগড় নামে পরিচিত। এশিয়াটিক সোসাইটির প্রথম দিকের এক সভায় শখের প্রত্নানুসন্ধানী টমাস ল বেতিয়ার দক্ষিণে লৌরিয়া অররাজ-এ আর একটি স্তম্ভের কথা জানান।

ইউরোপীয়দের মনে হয়েছিল, এত চমৎকার সব স্তম্ভ ভারতীয়দের বানানো হতেই পারে না। এ নিশ্চয়ই গ্রিকদের কীর্তি। তবে এর সঙ্গে সম্রাট অশোকের সম্পর্কের কথা সে দিন কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি।
এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা, ভাষাতাত্ত্বিক উইলিয়াম জোন্স ভারতবিদ্যা চর্চায় নতুন দিগন্ত এনে দিলেন। তিনি অবশ্য ফিরোজ শাহের স্তম্ভে কী লেখা আছে পড়তে পারেননি। তার আগেই ভারতের প্রাচীন ইতিহাস উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি পড়েছিলেন গভীর সমস্যায়। মুসলমান ঐতিহাসিকরা তাঁদের কালের খুঁটিনাটি সব লিখে গিয়েছেন, কিন্তু তাঁরা আসার আগে এ দেশের ইতিহাস কী ছিল কোথায় জানা যাবে? তেমন তো কোনও বইপত্র নেই। জোন্সের সহকারী ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা আঠারোটা পুরাণ ছাড়া আর কিছুই তাঁকে দেখাতে পারেননি। এই সব পুরাণ থেকে একটা ভাসা ভাসা ছবি মিলল ঠিকই, কিন্তু কার পর কোন রাজবংশ, কিংবা কার পর কোন রাজা কত দিন রাজত্ব করেন, তা নিয়ে দেখা গেল নানা মুনির নানা মত। তবে এটুকু জানা গেল, মগধে মৌর্য বংশে অশোক নামে এক রাজা ছিলেন, যদিও ব্রাহ্মণদের লেখা এই ইতিবৃত্তে অশোক আর পাঁচটা রাজার মতোই, তাঁকে আলাদা কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

অন্য দিকে, ইতালীয় পর্যটক মার্কো পোলো ভারত ঘুরে যাওয়ার পর ইউরোপে এটুকু প্রচারিত হয় যে বুদ্ধ নামের কোনও ধর্মগুরু বা দার্শনিকের সঙ্গে জড়িত কোনও ধর্ম এ অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। কিন্তু ভারতে, জোন্সের সময়, বুদ্ধের উপাসনার কোনও প্রমাণ কেউ জানত না। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে কোথাও কোথাও বুদ্ধের নাম থাকলেও ভারতে সে সময় কোনও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ, কিংবা কোনও বৌদ্ধ স্থাপত্যের কথা জানা ছিল না। বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসই যেখানে হারিয়ে গিয়েছিল, সেখানে সেই ধর্মের সব থেকে বড় পৃষ্ঠপোষকের কথা যে লোকে ভুলে যাবে সেটাই তো স্বাভাবিক!

জোন্স দেখেছিলেন বুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর পণ্ডিতদের ধারণা রীতিমতো খারাপ। হিন্দু শাস্ত্রে বুদ্ধ বিষ্ণুর নবম অবতার, অথচ ব্রাহ্মণরা তাঁকে এক ধর্মদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা হিসেবেই ভাবেন। আবুল ফজল তাঁর আইন-ই-আকবরি-তে ঠিক এই কথাই লিখেছিলেন। এই বৈপরীত্য কেন, জোন্স তা বুঝতে পারেননি।

বুদ্ধ এবং বৌদ্ধধর্ম নিয়ে জোন্স যা ভাবছিলেন, তা ১৭৮৯-এর এশিয়াটিক রিসার্চেস পত্রিকায় ছাপা হল। সঙ্গে সঙ্গে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করল। ভারতে কোনও হদিশ না পাওয়া গেলেও আশপাশের নানা দেশ থেকে পালি ও সংস্কৃতে লেখা বৌদ্ধ শাস্ত্রগ্রন্থের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল। যাঁরা এ সব নিয়ে নিজেদের মতো করে চর্চা করছিলেন, তাঁদের চিঠিপত্র থেকে বোঝা গেল দুটো বিষয়ে সব পুথিই একমত এক, বৌদ্ধধর্মের সূচনা ভারতে, আরও নির্দিষ্ট ভাবে বললে মগধে; আর দুই, শাক্যমুনি বা গৌতম বুদ্ধই এই ধর্মের উদ্গাতা, তাঁরও জন্ম-মৃত্যু মগধে। ইতিমধ্যে এর সমর্থনে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণও মিলতে শুরু করল।

কিন্তু সাল-তারিখের পুরনো সমস্যাটা তো মিটল না। জোন্স এ বার নজর ফেরালেন তাঁর ছোটবেলায় পড়া ক্লাসিকগুলির দিকে - হেরোডোটাস, স্ট্রাবো, মেগাস্থেনিস, আরিয়ান, টলেমি ... আলেকজান্ডারের ভারত-অভিযান ঐতিহাসিক ঘটনা, গ্রিক ঐতিহাসিকরা তো ফলাও করে সে কথা লিখে গিয়েছেন। সেই সব বিবরণীর মধ্যে কোথাও কি কোনও সূত্র লুকিয়ে থাকতে পারে?

পারস্যে দারিয়ুসকে পরাজিত করার পর খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে ভারত আক্রমণ করেন আলেকজান্ডার, আর দেশে ফেরার পথে ব্যাবিলনে তাঁর মৃত্যু হয় ৩২৩ অব্দের গ্রীষ্মকালে। আরও আঠারো বছর পর তাঁর অন্যতম সেনাপতি সেলুকস যখন অনেক দিন আগেই তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়া ভারতীয় এলাকাগুলি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেন, তখন তাঁকে এক অত্যন্ত শক্তিশালী ভারতীয় সম্রাটের মুখোমুখি হতে হয়। গ্রিক বিবরণে এই যুদ্ধের ফলাফল স্পষ্ট করে বলা নেই, এটুকুই আছে যে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাতে সেলুকস পাঁচশো রণহস্তী উপহার পেয়েছিলেন আর নিজের মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় রাজপরিবারে। বোঝাই যায়, সেলুকসকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সিন্ধুনদের পূর্ব দিকের সব এলাকা, এমনকী গান্ধারও ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে।

কে এই ভারতীয় সম্রাট? আলেকজান্ডারের বিশ্বজয়ী বাহিনী যাঁর বিরাট সেনাদলের কথা শুনে আর এগোতে চায়নি, ইনি তো সেই আগ্রামেস বা জান্ড্রামেস নন। গ্রিকদের নানা বিবরণীতে নানা রকম নাম আছে, মোটের উপর সান্ড্রোকোপ্টস নামটা দাঁড় করানো যায়। আজ একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এটা শুনলে হয়তো সহজেই ‘চন্দ্রগুপ্ত’ মনে হবে, কিন্তু আঠারো শতকের শেষে উইলিয়াম জোন্সের পক্ষে নিশ্চিত হওয়াটা আদৌ সহজ ছিল না। কী করে বোঝা যাবে চন্দ্রগুপ্তই সেলুকসের সমসাময়িক? সে জন্য দরকার আরও প্রমাণ। সেলুকস দূত পাঠিয়েছিলেন সান্ড্রোকোপ্টস-এর সভায়। সেই দূত মেগাস্থেনিস লিখেছিলেন ইন্ডিকা নামে ভারত-বিবরণ। ইন্ডিকা-র সামান্য অংশই আমাদের কাল অবধি পৌঁছেছে, তা থেকে জানা যায় সান্ড্রোকোপ্টস-এর রাজধানী ‘পালিম্বোথ্রা’ ছিল গঙ্গা এবং ‘এরানোবোয়াস’ নদীর সঙ্গমে।

জোন্স আর তাঁর সঙ্গী পণ্ডিতরা সংস্কৃত পুথিপত্র তন্নতন্ন করে খুঁজেও ‘পালিম্বোথ্রা’ কি ‘এরানোবোয়াস’-এর কোনও হদিশ পেলেন না। তবে দেখা গেল, মগধের রাজধানী পাটলিপুত্রের কথা সেখানে ঘুরেফিরেই এসেছে। এবং বাংলার প্রথম সার্ভেয়ার জেনারেল তথা মানচিত্রকার মেজর জেমস রেনেল জোন্সকে লিখলেন, পটনা, পাটলিপুত্র আর ‘পালিম্বোথ্রা’ একই হতে পারে। আধুনিক পটনার কাছেই গঙ্গা আর সোন নদীর সঙ্গম। এক সময় সোন নদীর পুরনো খাত গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগে দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়ে মাঝে একটা লম্বাটে ডিমের মতো দ্বীপ সৃষ্টি করেছিল, যার মধ্যে মেগাস্থেনিসের ‘পালিম্বোথ্রা’ ভাল ভাবেই ধরে যেতে পারে।

সত্যই কি সুদর্শন ছিলেন তিনি?

ইতিহাস নিরুত্তর। সম্রাট অশোকের চেহারা বা মুখাবয়ব
সম্পর্কে কোনও প্রামাণ্য তথ্য আজও মেলেনি। অনুরাগী তাঁকে যে রূপে দেখতে চান, তিনি সেই রূপেই প্রিয়দর্শী।

অতএব, সমস্যা তবু থেকেই গেল। নদীর নামটা তো সোন, ‘এরানোবোয়াস’ কোথা থেকে এল? শেষে একটা সংস্কৃত সূত্র থেকেই দেখা গেল, নদীটি ছিল ‘হিরণ্যবাহ’, যা থেকে গ্রিকরা ‘এরানোবোয়াস’ লিখেছিলেন। আর ‘হিরণ্য’ থেকে সোন-এ পরিণত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। ফলে পাওয়া গেল পাটলিপুত্র, পাওয়া গেল চন্দ্রগুপ্তকে। একটা আবিষ্কার আর একটার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এর পরের রাস্তাটা খুলে দিল সংস্কৃত সাহিত্যেরই দুটো অপঠিত পুথি, সোমদেবের কথাসরিৎসাগর আর বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস। নন্দবংশ ধ্বংস করে বিক্ষুব্ধ ব্রাহ্মণ চাণক্যের সাহায্যে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কী ভাবে পাটলিপুত্রে ক্ষমতায় এলেন, তার গল্প বিস্তারিত ভাবে পাওয়া গেল এখানে।

পৌরাণিক বিবরণে এ গল্প ছিল, তবে এত খুঁটিনাটি ছিল না। এ বার তা মিলিয়ে নেওয়া গেল গ্রিকদের বর্ণনার সঙ্গে, নিশ্চিত হওয়া গেল সান্ড্রোকোপ্টস-ই চন্দ্রগুপ্ত। শুধু তাই নয়, বোঝা গেল, আলেকজান্ডারের সঙ্গে যাঁর দেখা হয়েছিল, গ্রিক বিবরণীর সেই ‘সিসিকোটাস’ বা শশীগুপ্ত আর চন্দ্রগুপ্ত অভিন্ন। একেবারে প্রদোষচন্দ্র মিত্র বা ‘সন্ধ্যাশশী বন্ধু’র নির্ভুল ডিডাকশন!

১৭৯৩-এর ২৮শে ফেব্রুয়ারি এশিয়াটিক সোসাইটির দশম বর্ষপূর্তি সভায় উইলিয়াম জোন্স এক দিকে পটনা-পাটলিপুত্র-পালিম্বোথ্রা, আর অন্য দিকে সান্ড্রোকোপ্টস-চন্দ্রগুপ্ত, দুটি আবিষ্কারের কথাই ঘোষণা করলেন। এশিয়াটিক রিসার্চেস-এ ছাপা হল প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের প্রথম সুনির্দিষ্ট কালপর্ব।

আলেকজান্ডারের দুই প্রতিনিধির ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় থেকেই চন্দ্রগুপ্তের রাজ্য-সূচনা (৩১৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ধরেছিলেন জোন্স। চন্দ্রগুপ্ত (৩১৭-২৯৩), বিন্দুসার (২৯২-২৬৮), অশোক (২৬৭-২৩০) হয়ে মৌর্য সাম্রাজ্য মোটামুটি ১৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। জোন্সের ঘোষণা ভারতের অতীত ইতিহাসকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দিল। পরের দুশো কুড়ি বছরে এই সময়সারণিতে খুব বড় রকম পরিবর্তন আনার মতো কিছু ঘটেনি।

চন্দ্রগুপ্তকে পাওয়া গেল, তাঁর সূত্র ধরে অশোককেও। কিন্তু দেশজোড়া নানা খোদিতলিপির আড়ালে কী লুকিয়ে আছে সেটা তো এখনও জানা যায়নি। মুশকিল হল, ১৭৯৫-এ উইলিয়াম জোন্সের মৃত্যুর পর এশিয়াটিক সোসাইটির কাজের গতিটাই নষ্ট হয়ে গেল। সভাপতি, সম্পাদকদের আসাযাওয়ার মাঝে দেশবিদেশ থেকে পাঠানো লেখা, খবরের স্তূপে ধুলো জমতে লাগল, কত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শুধু সামান্য উৎসাহের অভাবে চাপা পড়ে গেল তার ইয়ত্তা নেই। হোরেস হেম্যান উইলসন প্রায় বাইশ বছর সোসাইটির সম্পাদক ছিলেন, এই পর্বে সংস্কৃত চর্চা যতটা গুরুত্ব পেয়েছিল, বৌদ্ধধর্ম বিষয়ক চর্চা তার ধারেকাছে নয়। অথচ এই পর্বেই চিন, শ্রীলঙ্কা ও ব্রহ্মদেশে বৌদ্ধ শাস্ত্র, কাহিনির বহু পুথির খবর আসছিল। বৌদ্ধধর্মের উৎস যে ভারত, বুদ্ধ যে সত্যিই ঐতিহাসিক চরিত্র, এ সবেরই আরও জোরাল প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল। ভারতের প্রথম সার্ভেয়ার জেনারেল কলিন ম্যাকেঞ্জি অনেকটাই নিজের উদ্যোগে, নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সমীক্ষা চালালেন, অন্য দিকে সরকারি নির্দেশে ফ্রান্সিস বুকানন ব্রহ্মদেশ, নেপাল, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি এবং সব শেষে বাংলা-বিহারে তথ্য সংগ্রহ করলেন। এ সবের মাধ্যমে অনেক ধোঁয়াশা কাটতে লাগল। অন্ধ্রের অমরাবতী বৌদ্ধস্তূপ থেকে বিরাশিটি অমূল্য ভাস্কর্যফলক উদ্ধার করে নিয়ে আসার কৃতিত্ব ম্যাকেঞ্জির। এই অমরাবতী থেকেই পাওয়া একটি ফলকে ‘রাজচক্রবর্তী’র ভাস্কর্য খোদিত আছে। বর্তমানে প্যারিসের বিখ্যাত সংগ্রহশালা মুসে গিমে-তে রক্ষিত ফলকটিতে দেখা যাচ্ছে, রাজমূর্তির পিছনে স্তম্ভের উপর একটি চক্র রয়েছে। ‘চক্রবর্তী’ রাজার এই চিত্র যে অশোকের ধর্মের ভিত্তিতে সুশাসনের প্রতীক, তা বুঝতে অবশ্য আরও অনেক সময় লেগেছিল। সারনাথ থেকে পাওয়া চক্রের কল্যাণে আজ তা সবারই জানা, জাতীয় পতাকার মাঝেও তা স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।

ম্যাকেঞ্জির মতো বুকাননও ছিলেন স্কটল্যান্ডের লোক। ভারতে বৌদ্ধধর্মের মূল শিকড় খুঁজে বার করার কাজে এই মানুষটির গুরুত্ব বোধহয় সবথেকে বেশি। বিহারে সমীক্ষার সময় বুকানন দেখেন, পুরো অঞ্চলটাই সুপ্রাচীন ধ্বংসস্তূপে ভর্তি। বুদ্ধগয়ার মূল মন্দির আর তার চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অজস্র মূর্তি যে বৌদ্ধদের, তা বুকানন প্রথমে বুঝতে পারেননি। হিন্দু ভক্তরাই সেখানে থাকেন, পুজোও দিতে আসেন হিন্দুরা, বিশেষ করে মন্দিরের দুটি জায়গায়একটি পাথরের বেদী আর অন্যটি এক অশ্বত্থ গাছ। একেবারেই কাকতালীয় ভাবে বুকাননের সঙ্গে স্থানীয় একজনের দেখা হল, কয়েক বছর আগে ব্রহ্মদেশের রাজার পাঠানো দুই তীর্থযাত্রী তাঁকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁরাই বলেন, বুদ্ধ এখানে থাকতেন, আর এই মন্দির ছিল ভারতবিখ্যাত ধর্মীয় কেন্দ্র। ব্রহ্মদেশের মানুষের কাছে এই মন্দিরের গুরুত্ব তখনও বিপুল। আর ওই পাথরের বেদী বা অশ্বত্থ গাছ রাজা ধর্মাশোকের কীর্তি, হিন্দুদের অনেক আগে থেকেই তা বৌদ্ধদের শ্রদ্ধার স্থান। এ বার বুকানন বুঝলেন, যে সব মূর্তি হিন্দু দেবদেবীর বলে তাঁর মনে হচ্ছিল, আসলে সেগুলি বৌদ্ধ মূর্তি ব্রহ্মদেশ বা কাঠমান্ডুতে তিনি যেমন মূর্তি দেখেছেন, তেমনই।
দক্ষিণ বিহারে ঘুরতে ঘুরতে বুকানন বুঝতে পারলেন, এই অঞ্চলটি এক সময় বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্র ছিল। যেমন রাজগির পুরাণে জরাসন্ধের রাজধানী বলা হলেও বৌদ্ধদের কাছে বিন্দুসারের রাজধানী হিসেবেও সমান গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাঁরই রাজত্বকালে বুদ্ধ ধর্মপ্রচার করেন। ভারতে বৌদ্ধধর্ম কত ব্যাপক এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেটা পণ্ডিতরা বুঝতে পারছিলেন। বুদ্ধ এবং অশোক কাছাকাছি আসছিলেন, কিন্তু সূত্রগুলো চোখের সামনে থাকলেও কেউ সে ভাবে নজর দিচ্ছিলেন না। হোরেস হেম্যান উইলসন এই পরিস্থিতির জন্য অনেকটাই দায়ী।

এশিয়াটিক সোসাইটির স্থবিরতা কাটল ১৮৩২-এ। দায়িত্বে এলেন এক তরুণ প্রতিভা, জেমস প্রিন্সেপ। প্রিন্সেপ দেখলেন, ইলাহাবাদ, দিল্লি আর বিহারের স্তম্ভগুলির গায়ে যা খোদিত আছে, তা একই রকম দেখতে। কী লেখা থাকতে পারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এই সব লিপিতে? কোনও রাজার বিজয়বার্তা? ভারতজোড়া কোনও সাম্রাজ্যের সীমানাচিহ্ন? নাকি কোনও ধর্মীয় বাণী? এই সময়েই শ্রীলঙ্কা থেকে জর্জ টার্নার দেখালেন, বৌদ্ধ পুথি দ্বীপবংশ-মহাবংশে গৌতম বুদ্ধের জীবনী এবং পরে বৌদ্ধধর্মের বিপুল সমৃদ্ধির পিছনে সম্রাট অশোকের ভূমিকা বিস্তারিত ভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে। আস্তে আস্তে স্পষ্ট হয়ে উঠল পৌরাণিক বিবরণে সম্পূর্ণ অবহেলিত অশোকের ছবিটা। বৌদ্ধবিরোধী ব্রাহ্মণরা কেন পুরাণে অশোককে আদৌ গুরুত্ব দেননি, এ বার বোঝা গেল সেটাও।

ইতিমধ্যে প্রিন্সেপের হাতে এল ভুবনেশ্বরের ধৌলি লিপি, লেফটেনান্ট মার্কহ্যাম কিটো জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে ভাল্লুকের তাড়া খেয়েও কোনও রকমে যেটার কপি করে পাঠিয়েছিলেন। সাঁচি থেকেও এল বেশ কিছু লিপির কপি। সাঁচির লেখাগুলো পরপর সাজাতে গিয়ে প্রিন্সেপের মনে হল, প্রায় সবগুলোই দুটো একই অক্ষরে শেষ হচ্ছে। তার আগের অক্ষরটাও অনেক ক্ষেত্রেই এক। তা হলে কি এটা সাঁচির বৌদ্ধস্তূপে ভক্তদের কিছু দান বা উৎসর্গের কথা বোঝাচ্ছে? শব্দটা ‘দানম্’ হতে পারে কি?

এর পর ব্রাহ্মী লিপির বাকি অক্ষর খুঁজে বার করতে প্রাচীন মুদ্রা বিশেষজ্ঞ প্রিন্সেপের খুব অসুবিধে হয়নি।
অক্ষর তো চেনা গেল। এ বার লিপিগুলো পড়া শুরু করা যাক। দেখা গেল, সব কটিরই শুরু ‘দেবানাম্পিয় পিয়দসি লাজ হেবাম্ অহা...’ দিয়ে। কোন রাজা এমন ভাবে প্রজাদের উদ্দেশে বলছেন? দেশের সব প্রান্তে তাঁর লিপি, কত বড় ছিল তাঁর সাম্রাজ্য? টার্নারের অনুবাদে যাঁর কথা ছিল, প্রিন্সেপ ভেবেছিলেন, ইনি বোধহয় সেই শ্রীলঙ্কার রাজা দেবানামপিয়তিস্স। তবে টার্নারই ফের আসল হদিশ দিলেন। শ্যামদেশ থেকে পাওয়া দ্বীপবংশ-এর আরও পুরনো এক পুথি থেকে জানা গেল, স্তম্ভলিপির প্রিয়দর্শীই অশোক মৌর্য।

ভারত-ইতিহাসের বোধহয় সবথেকে বড় জট খুলে গেল এ ভাবেই। ১৮৩৮-এর মধ্যে প্রিন্সেপ অশোকের বেশ কিছু লিপি অনুবাদ করে ফেললেন। বোঝা গেল, ভারতজোড়া সাম্রাজ্য স্থাপন শুধু নয়, বৌদ্ধধর্মকে পরের প্রায় দেড় হাজার বছর টিকে থাকার শক্তি দিয়ে গিয়েছিলেন অশোক, যে শক্তির জোরে দেশের মাটি থেকে মুছে যাওয়ার পরও তা এশিয়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হয়ে উঠতে পেরেছিল। পাশাপাশি রাজধর্মকে তিনি দিয়েছিলেন নতুন মাত্রা, যা তাঁকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল আদর্শ রাজা হিসেবে।

অশোককে আলোয় ফিরিয়ে আনার পর খুব অল্প দিনই বেঁচেছিলেন জেমস প্রিন্সেপ। উনিশ শতকের বাকি সময়টা অশোক এবং বৌদ্ধচর্চার কেন্দ্রে ছিলেন দুই চিনা পর্যটক - পঞ্চম শতকে ফাহিয়ান আর সপ্তম শতকে জুয়াংঝাং (এক সময় যাকে হিউয়েন সাং লেখা হত)। এঁদের লেখাপত্র ১৮৪১ থেকেই অনুবাদ হতে শুরু করে, আর ১৮৪২-এই প্রিন্সেপের শিষ্য আলেকজান্ডার কানিংহাম দেখান, বৌদ্ধধর্মের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থলগুলির অবস্থান বুঝতে এই দুই পর্যটকের লেখা বিবরণী খুবই সাহায্য করবে। বস্তুত, কানিংহাম ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই বিবরণী পকেটে নিয়েই বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্র খুঁজে বার করার চেষ্টা করে গিয়েছেন। তবে অশোকের রাজধানী পাটলিপুত্রের ধ্বংসাবশেষ তিনি খুঁজে বার করতে পারেননি। বিশ শতকের গোড়ায় ডেভিড স্পুনার পটনার কাছে কুমরাহার-এ পাথরের স্তম্ভযুক্ত যে বিশাল স্থাপত্য উদ্ধার করেন, সেটি সম্ভবত তৃতীয় বৌদ্ধ ধর্মসম্মেলনের জন্যই অশোক তৈরি করিয়েছিলেন। অজাতশত্রুর রাজত্বকালের পটভূমিতে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘অমিতাভ’ গল্পে আছে:

“(তথাগত) বহুক্ষণ স্থিরদৃষ্টিতে গঙ্গা-শোণ সঙ্গমে দুর্গভূমির প্রতি তাকাইয়া রহিলেন। শেষে স্বপ্নাবিষ্ট কণ্ঠে কহিলেন, ‘আমি দেখিতেছি, ... এই ক্ষুদ্র পাটলিগ্রাম... এক মহীয়সী নগরীতে পরিণত হইবে। বাণিজ্যে, ঐশ্বর্যে, শিল্পে, কারুকলায়, জ্ঞানে, বিজ্ঞানে পৃথিবীতে অদ্বিতীয় স্থান অধিকার করিবে। সদ্ধর্ম এইস্থানে দৃঢ়প্রতিষ্ঠা লাভ করিবে।”

অশোকের উদ্যোগে সদ্ধর্ম সত্যিই দৃঢ়প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।

মহাভারতীয় ট্র্যাডিশনের বাইরে বেরিয়ে তিনিই পঞ্চম শিলালেখে প্রথম ঘোষণা করেছিলেন, প্রাণীহত্যা বা অন্য কোনও কারণে জঙ্গল পোড়ানো যাবে না।

প্রশ্ন অন্যত্র। ময়না, চক্রবাক, রাজহাঁস, গোসাপ, সজারু শিকারও নিষিদ্ধ করেছিলেন অশোক। ১৩ নম্বর শিলালিপিতে তাঁর হুঙ্কার: আটবিক, অর্থাৎ অরণ্যের অধিবাসীরা শিকার বন্ধ না করলে ব্যবস্থা করা হবে। মহারাজ বৌদ্ধ, শিকার ছেড়ে দিয়েছেন, অতএব তাঁর অরণ্যচারী প্রজাদেরও অমনটাই করতে হবে! বনবাসীদের উৎসবে মদ-মাংস খাওয়াও নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন অশোক। এ যেন রাজা নিরামিষাশী বলে সবাইকে নিরামিষ খাওয়ানোর প্রয়াস।

ইতিহাসবিদ ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায় তাঁর সাম্প্রতিক গ্রন্থে জানিয়েছেন, বনবাসীদের উৎসব বন্ধে অশোক যা-ই করে থাকুন না কেন, ধোপে টেকেনি। পরে অনেক রাজা জৈন এবং বৌদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বনবাসীদের উৎসবে হাত দেননি।

মাস্কি নিয়ে শুধু নয়, কর্নাটকে অশোকের শিলালিপি খুঁজে পাওয়ার অনেক গল্প। ভীমা নদীর পাড়ে এক মন্দিরে কয়েকশো বছরের পুরনো পাথরের বিগ্রহ ভেঙে গিয়েছিল। নতুন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেদী-সহ পুরনো বিগ্রহটি বাইরে সরিয়ে আনা হয়। তখনই ইতিহাসবিদদের নজরে পড়ে বেদীতে ব্রাহ্মী হরফে লেখা রয়েছে অশোকের বার্তা। শুধু পর্যটন বা ছবি নয়, কেন অশোক কর্নাটকে এত শিলালিপি স্থাপন করলেন, কেনই বা দাক্ষিণাত্যে ব্যবহারহীন পালি ভাষায় শিলালিপি লেখালেন তার ব্যাখ্যাও তথ্যচিত্রে দিয়েছেন রণবীর চক্রবর্তী, ভৈরবীপ্রসাদ সাহু, কৃষ্ণমোহন শ্রীমালির মতো ইতিহাসবিদেরা। তাঁদের মতে, কর্নাটকে সোনা এবং লোহার খনি ছিল। মৌর্য সাম্রাজ্যের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সেই খনির উপরে নিজের অধিকার কায়েম রাখতে চেয়েছিলেন অশোক।
রানা চক্রবর্তী. Contributed by
Stay Curious SIS
Siddiqui's International School

[ আয়মান সাদিক, হিরো আলম, এ মানুষগুলোর উত্থানের মূল কারণ ]"প্রকৃতিতে ডোয়ার্ফিজম ও জাইগান্টিজম নামে দুটি ঘটনা ঘটে। ঘটনাগুল...
24/09/2024

[ আয়মান সাদিক, হিরো আলম, এ মানুষগুলোর উত্থানের মূল কারণ ]


"প্রকৃতিতে ডোয়ার্ফিজম ও জাইগান্টিজম নামে দুটি ঘটনা ঘটে। ঘটনাগুলো আমি এখানে একটু ব্যাখ্যা করছি:

কোনো বড় প্রাণী, যেমন হাতি, বাঘ, সিংহ, এরা যখন ছোট ও বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপে বসবাস শুরু করে, তখন বংশপরম্পরায় এদের আকার ছোট হতে থাকে। তাদের শরীর, মগজ, সবই ধীরে ধীরে খর্বাকায় হয়। কারণ বড় শরীর ধারণের জন্য যে-পরিমাণ খাবার দরকার, তা ছোট দ্বীপ বা এলাকায় পাওয়া যায় না। ফলে টিকে থাকার তাগিদে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, প্রাণীগুলোর আকার খর্ব হয়ে আসে, যেন কম খাবারে বেশিদিন বেঁচে থাকা যায়। বড় অতিকায় প্রাণী পরিণত হয় বেঁটে জন্তুতে।

অন্যদিকে ছোট প্রাণীরা, যেমন ইঁদুর, ছুঁচো, টিকটিকি, এগুলো ওই পরিবেশে বংশ পরম্পরায় বড় হতে থাকে। কারণ ছোট দ্বীপে বড় প্রাণীর খাবার কম থাকলেও, ছোট প্রাণীর খাবার থাকে অঢেল। প্রিডেটর বা শিকারী প্রাণীর ভয়ও সেখানে কম। ফলে ছোট প্রাণীগুলো নির্ভয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এতে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, ছোট প্রাণী পরিণত হয় বড় প্রাণীতে।

যেমন মাদাগাস্কার, সার্ডিনিয়া, ও মৌরিশাসে ইঁদুর, টিকটিকি, কোমোডো, এসব প্রাণী দানবাকৃতির, কিন্তু হাতি, ছাগল, জলহস্তী, এগুলো খর্বাকৃতির।

এই যে কোনো এলাকায়, রসদের অভাবে বড় প্রাণীর ছোট হয়ে যাওয়া, এটি হলো ডোয়ার্ফিজম; আর রসদের প্রাচুর্যে, ছোট প্রাণীর বড় হয়ে যাওয়া, এটি হলো জাইগান্টিজম।

আমি ভেবে দেখেছি, ইভোলিউশোনারি বায়োলোজির এ চমৎকার ধারণাটি সংস্কৃতি, দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, এগুলোতেও প্রয়োগ করা যায়। গভীর চোখে তাকালে দেখতে পাবো, জাইগান্টিজম ও ডোয়ার্ফিজম, প্রাণীজগতের মতো সমাজেও প্রতিদিন ঘটে চলেছে।

কোনো এলাকায় যদি মহৎ সাহিত্য, মহৎ দর্শন, মহৎ শিল্পকলা, মহৎ বৈজ্ঞানিক চিন্তা, উঁচু রাজনীতিক ভাবনা, এগুলোর গ্রাহক কমে যায়, বা এপ্রিশিয়েশন উধাও হয়ে যায়, তাহলে ওই এলাকায় প্রতিভাবান মহৎ মানুষের সংখ্যা, ধীরে ধীরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, কমতে থাকে। ফলে যা কিছু উঁচু ও মহৎ, তার আকার ও প্রভাব আস্তে আস্তে বেঁটে ও খর্বাকায় হতে শুরু করে। অর্থাৎ হাই-আর্ট ও হাই-কালচার পর্যবসিত হয় নিম্নমানের মেঠো-শিল্পকলা ও মেঠো-সংস্কৃতিতে। উঁচু সভ্যতা ক্ষয় হয়ে রূপ ধারণ করে বামন-সভ্যতার।

সংস্কৃতির রসদ ও খাদ্য মূলত সমাজের বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের কর্মকাণ্ডেই সংস্কৃতি বেঁচে থাকে। তাদের রুচির ওপরই শিল্পকলা, দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান, এগুলোর বিকাশ ও বিস্তার নির্ভর করে। উঁচু সাহিত্য, উঁচু দর্শন, উঁচু শিল্পকলার জন্য দায়ী মানুষের উঁচু রুচিবোধ। সমাজে মানুষের গড় রুচিবোধ নিচে নেমে গেলে, হাই-আর্ট ও হাই-থট এপ্রিশিয়েট করার মতো ঘিলু মানুষের মাথা থেকে হারিয়ে গেলে, সেখানে বিকাশ ঘটে বেঁটে সাহিত্য, বেঁটে দর্শন, বেঁটে বিজ্ঞান, ও বেঁটে শিল্পকলার। গৌণ বিষয়াদি তখন বিরাজ করতে থাকে মুখ্য রূপে। বেঁটে সংস্কৃতিগুলো পায় উঁচু সংস্কৃতির মর্যাদা।

সংস্কৃতি কী? লর্ড রাগলান বলতেন— মানুষ যা করে, আর বানর যা করে না, তাই সংস্কৃতি। কিন্তু বাংলাদেশে মনে হচ্ছে, বানরদের কাজকর্মই সংস্কৃতির প্রধান শাখা। লোকজন এখানে শরীর ধারণ করছে মানুষের, আর মন ধারণ করছে বানরের (বাস্তবের সুবোধ বানর নয়, কল্পনার নির্বোধ বানর; কারণ আমরা যা করছি, তা জঙ্গলের বানর করে না)। গোশালাকে বলা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়, স্ক্রিপচারকে ডাকছি বিজ্ঞান, পাগলামোকে বলছি রাজনীতি। আইনস্টাইন এ সমাজে জন্মালে তাঁকে ডক্টর ইউনুসের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে হতো। বার্ট্রান্ড রাসেলকে দেখা যেতো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কোনো লোভনীয় পদে। রবীন্দ্রনাথকে খাতির রাখতে হতো শাহবাগ থানার ওসির সাথে। অর্থাৎ কালচারাল ডোয়ার্ফিজম এখানে খুব প্রকট। প্রতিভাবানরা টিকে থাকার তাগিদে প্রতিভা কমিয়ে ফেলছে। উঁচু সংস্কৃতি কদর হারিয়ে পরিণত হচ্ছে বেঁটে সংস্কৃতিতে। আর এই ফাঁকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বিসিএস গাইড, স্পোকেন ইংলিশ, কামিউনিকেশন স্কিল, জায়েদ খান, হিরো আলম, আহমদুল্লাহ, লিংকড ইন, সেলেব্রিটিজম, বিটিএস, মোটিভেশনপীর, এসব। এ জঙ্গলে এগুলোই এখন মেইনস্ট্রিম জাইগান্টিক এনিম্যাল।"

জাপানিরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে যে ভাত সেটার নাম 'স্টিকি'। মানে ভাতের দানা একটার সাথে আরেকটা লেগে থাকে।আমার ধারণা ছিল, স...
21/09/2024

জাপানিরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে যে ভাত সেটার নাম 'স্টিকি'। মানে ভাতের দানা একটার সাথে আরেকটা লেগে থাকে।আমার ধারণা ছিল, স্টিকি ভাত কাঠি দিয়ে সহজে খাওয়া যায় বলেই জাপানিরা এটা এত পছন্দ করে। আমি এই ভাত খেতে একদমই পছন্দ করতাম না।

ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো জাপানের বাজারে জাপানি কৃষকদের উৎপাদিত এই বিশেষ ভাতের চালের দামই সবচেয়ে বেশি।

বাজার থেকে কয়েকবার বিভিন্ন ধরণের চাল কেনার পর বুঝলাম এই চাল যদি জাপানিরা নিজেরা উৎপাদন না করে আশেপাশের কোনও দেশ থেকে আমদানি করতো তাহলে এর দাম বেশ কম পড়তো।
আমি কৌতুহলী হয়ে আমার সুপারভাইজার প্রফেসর কামিজিমাকে একবার জিজ্ঞেসই করে ফেললাম..

"আচ্ছা প্রফেসর, তোমরা এই চাল বিদেশ থেকে আমদানি করো না কেন? আমদানি করলে তো দাম অনেক কম পড়তো!"

কামিজিমা: "তা হয়তো পড়তো.."

আমি: "তাহলে?"

কামিজিমা: "সরকার ইচ্ছে করেই কৃষকদের কাছ থেকে উৎপাদন খরচের অনেক বেশি দামে এই চাল কেনে।"

"কেন?"

"কৃষকদেরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।"

"মানে?"

"কৃষক যদি ভালো দাম না পায় তাহলে কি ওরা আর কৃষিকাজ করবে? পেশা বদলে ফেলবে না!"

"তাই বলে সরকার এত বেশি দামে চাল কিনবে কৃষকদের কাছ থেকে?"

"শোনো, আমরা আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা ভুলিনি। জাপান একটা দ্বীপরাষ্ট্র। ঐরকম একটা যুদ্ধ যদি আবার কখনো লাগে আর শত্রুরা যদি আমাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে! তখন কী হবে ভেবেছ?"

"বুঝলাম না!"

"বাইরে থেকে কোনও খাবার জাপানে আসতে পারবে? আমরা কি তখন এই টয়োটা গাড়ি খাব? কৃষক যদি না বেঁচে থাকে তাহলে ঐসময় আমরা বাঁচব?!"

আমি অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলাম কামিজিমার কথা শুনে। ভাবলাম,আমরা কী অবলীলায়ই না আমাদের কৃষকদেরকে মেরে ফেলার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করছি।

"The Mind Game" বই থেকে উদ্ধৃত

©NJ Snigdha

Shout out to my newest followers! Excited to have you onboard! Amit Hasan Shakil Khan
21/09/2024

Shout out to my newest followers! Excited to have you onboard! Amit Hasan Shakil Khan

Address

Madaripur

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Fun & Entertainment posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Fun & Entertainment:

Share