11/08/2025
লেখাটা ভয়ঙ্কর সুন্দর!💜
"মৃ*ত্যু ছাড়া মানুষের একান্ত নিজের কিছু নেই,
জীবন অন্যরা ভাগ করে নেয় খুব প্রকাশ্যেই।"
জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির একটা ছেলের মা*রা যাওয়ার খবর দেখে হুট করেই মনে হলো, মৃ*ত্যু ছাড়া আমাদের আসলে নিজের বলতে আছেটা কী?
এই ছেলেটা গ্র্যাজুয়েশন করেছে। বিয়ে করেছে। দুইটা বাচ্চা আছে। বৌ আছে। ৪১ তম বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছে। ৪৩ তমর ভাইবাও দিয়ে ফেলেছে।
এই এতো এতো স্ট্রাগল, এতো এতো পরিশ্রম এক মুহূর্তে শূণ্য হয়ে গেল, ছেলেটার তাহলে নিজের বলে থাকলো কী?
ভালো ক্যারিয়ার, অসম্ভব পরিশ্রম করে তিলে তিলে গড়ে তোলা ক্যারিয়ার, এই ক্যারিয়ারটাও কি আসলে আমার নিজের? না তো। এই ক্যারিয়ারে মায়ের ভাগ আছে, বাপের ভাগ আছে, ভাইয়ের লেখাপড়া আছে, বোনের বিয়ে আছে, বৌ এর শখ আছে, বাচ্চার দুধ আর খেলনাও আছে।
এবং এই একটা ক্যারিয়ার বানানোর জন্য মানুষরে সবকিছুই ছাড়তে হয়। লিটারালি সবকিছুই। টাকার ব্যাপারটা তো আছেই, সময়ের ব্যাপারটাও খুব ভাইটাল। চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে বহু ছেলেমেয়ে ট্যুর দেওয়া ছেড়ে দেয়, বই পড়া ছেড়ে দেয়, প্রেম করা ছেড়ে দেয়, রেস্টুরেন্টে খাওয়া ছেড়ে দেয়, এমনকি অনেকে তো ইবাদত পর্যন্ত করতে পারে না।
একবার এক ভাইরে রাতের বেলা অনেক নামাজ পড়ার কারণ জিজ্ঞেস করে জানছিলাম, সারাদিন ল্যাবে কাজের ঠেলায় নামাজটা পর্যন্ত পড়তে পারেন নাই। খাওয়া তো দূরের কথা। মলিন হাসি মুখে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, আমি ধনী হইতে চাই না ভাই, শুধু এতোটুকু অবসর চাই, যতটুকু অবসর পাইলে আমি একটু শান্তিমতো নামাজটা পড়তে পারি।
কেউ সরারাত ফোন নিয়ে রাতে দাঁড়াইয়া থাকে, বাপ অসুস্থ, বাপের কাছে যাইতে পারে না। শুধুমাত্র একটা ক্যারিয়ারের জন্য। একটা ব্রাইট ফিউচারের জন্য।
সমস্যা হলো, ফিউচার প্ল্যানে আমরা সবকিছুই ইনক্লুড করি, শুধু মৃ*ত্যুটা ছাড়া। আমাদের প্ল্যানে পরিবার থাকে, প্রেমিকা থাকে, গাড়ি থাকে, বাড়ি থাকে, বাট মৃ*ত্যুটা থাকে না।
অথচ মৃ*ত্যুটাকে প্ল্যানে রাখতে পারলেই কিন্তু আমার আপনার অনেক প্রায়োরিটি লিস্ট চেঞ্জ হয়ে যাবে। সেন্টমার্টিন ট্যুরটা দিয়ে ফেলা যাবে, ওয়্যার এন্ড পিসটা পড়ে ফেলার সময় হবে, তাহাজ্জুদ পড়ার সময়টাও বের করে ফেলতে পারবেন। কারণ, আপনি জানেন, মৃ*ত্যু ওয়েট করতেসে। আপনার হাতে খুব বেশি সময় নাই।
না, আমি নিজে বোহেমিয়ান টাইপ মানুষ না, আপনাকেও বাউন্ডুলে হতে বলতেসি না। বরং পরিবারকে আমরা ওউন করবো, ভালোবাসবো, দায়িত্ব পালন করবো, সবটাই করবো।
সাথে সাথে ওউন করে নিবো আমাদের দুর্বলতাকেও, আমাদের মৃ*ত্যুকেও।
তখন দেখবেন, কিছু কাজ যেইটা আপনি একান্তই আপনার বলে অবহেলায় ফেলে রেখেছেন, কাজটা আপনার করা হয়ে যাবে। মৃ*ত্যু আপনার পরিবারের পাশাপাশি আপনাকেও আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।
জীবন নিয়ে প্ল্যান করার সময় একটা জিনিস মাথায় রাইখেন, জীবনটা আপনার না। এইখানে আপনার ভাগ কম। আপনার জীবন আপনার চোখের সামনেই ভাগ করে নেবে আপনার পরিবার, আপনার বন্ধু বা আপনার আত্মীয়রা।
বাট মৃত্যুটা আপনার একান্তই নিজের। আপনার মৃত্যুর ভাগটা কেউ নেবে না, ঐটা আপনাকেই নিতে হবে। তাই, যে কোন প্ল্যানে জীবনের আগে মৃ*ত্যুর কথাটা থাকা চাই। ক*ষ্ট করতে করতে নিজেরে যন্ত্র করে ফেলার আগে মনে থাকা চাই কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের লেখা দুইটা লাইন,
"মৃ*ত্যু ছাড়া মানুষের একান্ত নিজের কিছু নেই,
জীবন অন্যরা ভাগ করে নেয় খুব প্রকাশ্যেই।"
পেজ– #সংগৃহীত