29/06/2025
পাঠ প্রতিক্রিয়া...
মধ্যরাতের পরে...
: 56
বইয়ের তথ্য :
শিরোনাম : মধ্যরাতের পরে
লেখক : এশরার লতিফ
ধরন : রহস্য উপন্যাস
প্রকাশনী : Aajob Prokash - আজব প্রকাশ
প্রচ্ছদ : এশরার লতিফ
পৃষ্ঠা : ১৩৬
প্রকাশকাল : বইমেলা ২০২৫
মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ ৳
আপনার কি দারুণ ও ভিন্নমাত্রার এন্ডিং ভালো লাগে? গতানুগতিক ধারার রহস্য উন্মোচনে বিরক্ত হয়ে গেছেন? এবার তাহলে একটু ভিন্ন স্বাদ নিন। বলছিলাম লেখক এশরার লতিফ - এর রহস্য উপন্যাস "মধ্যরাতের পরে" নিয়ে। উপন্যাসের শুরুটা অন্যসব ক্রা*ইম থ্রিলারের মতোই। আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ, প্রতিটা ক্রাইম সিনে কমন কিছু চরিত্র থাকে। তবে এটা একটু বেশিই ভিন্ন। কেননা এখানে পুলিশের সরাসরি অবদানের চেয়ে ডিটেকটিভ অফিসারদের অবদান বেশি। আর তাদের একটা চক্রও আছে। যার নাম 'অলাতচক্র'। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো এই চক্রটার নাম সেই ডিটেকটিভ অফিসারদের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে। আর লেখক বলেছেন 'অলাতচক্র' নামের একটি সিরিজও রয়েছে। তবে আমি আর কোনো বই পড়ার সুযোগ পাইনি। এটাই লেখক এশরার লতিফ -এর পড়া আমার প্রথম বই।
বইটা পড়ার যাত্রা আমার অনেক আরামদায়ক আর উপভোগ্য ছিল। সেটার সবচেয়ে বড় কারণ- আমার সংগ্রহে ক্রাউন সাইজের আরও বই থাকলেও সেগুলো এখনও পড়া হয়নি। প্রথম এটাই পড়েছি। এত কম্ফোর্টেবল ছিল! আর পেইজের কোয়ালিটিও ছিল ভীষণ ভালো।
প্রচ্ছদ দেখে মনে হচ্ছে না একটা মেয়ে কী শান্তিতে নিদ্রায় শায়িত? উপন্যাসটির ডিটেকটিভ চরিত্রের একজন ব্যক্তির অনুভূতিটাও এই দৃশ্য নিয়ে এমন ছিল। প্রচ্ছদ যেন কাহিনি সহজ করে দিলো। তবে ক্রি*মিনাল বের করা কি আসলেও এতটা সহজ? বিশেষ করে আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থায় ইন্টারনেট সবকিছু যত সহজ করেছে মানুষের ক্রা*ইম প্রসেসও উন্নত হয়েছে। আসলেই দেশ এগিয়ে গেছে (লেখকের বাক্য ব্যবহার করলাম)।
উপন্যাসটি রচিত হয়েছে প্রচ্ছদে ফুটে উঠা মেয়েটিকে নিয়েই। মেয়েটি সাধারণ একটা রিপোর্টার ছিল। রিপোর্টারদের তো শত্রু থাকা স্বাভাবিক। সমাজের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মুখোশ যে উন্মোচন করে। তাদের বুঝি ভ*য় নেই? হ্যাঁ, মেয়েটা সেই আগুনেই ঝলসে ফেলেছে নিজেকে। তবে, মেয়েটি কি আসলেই এতটা সাধারণ, নিষ্পাপ ছিল? সে কি শুধুমাত্র এই পেশার জন্যই এত করু*ণ পরিণতির শিকার হয়েছে? উপন্যাসটি পড়ার পর বোকাবনে যাবেন।
এই মেয়েটির বান্ধবীর কাজটা উত্তম ছিল। যদিও আমি এই কাজ সমর্থন করিনা। আমার মনে হয়, মেয়েটির এমন ফিডব্যাক পাওয়ার প্রয়োজন ছিল। তবে সে যাদের মুখোশ উন্মোচন করেছে তাদের প্রকাশ্যে এনে শাস্তির বিষয়টা উপন্যাসে উল্লেখ করলে আরও ভালো হতো। স্পয়লার দিবো না বলে স্পষ্ট করলাম না বিষয়টা।
যাইহোক, আমার একটা দারুণ জার্নি ছিল। তবে হ্যাঁ, আমিও কিন্তু প্রধান অপরাধী কে আঁচ করতে পেরেছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমার ধারণা মিলে গিয়েছিল। কিন্তু, এমন এন্ডিং আমি ভাবিনি। গতানুগতিক ধারার এন্ডিং ভেবেছিলাম। তাই এন্ডিং পড়ে একটু অন্যরকম লেগেছিল।
একটা বিষয় স্পষ্ট করি। পৃষ্ঠা সংখ্যা দেখে বইটার দাম প্রথমে বেশি মনে হতে পারে। আমার কাছেও তাই মনে হয়েছিল। কিন্তু যখন প্রোডাকশন কোয়ালিটি, এবং লিখার কোয়ালিটি দেখলাম তখন যথার্থই মনে হয়েছে। প্রাইস শুধু পৃষ্ঠা অনুসারেই হয়না। তার জন্য লেখকের পরিশ্রমও জড়িত। কতটুকু চিন্তাভাবনা ও সময় দিয়ে একটা গল্পকে দাঁড় করাতে হয় সেটা শুধুমাত্র লেখ্ই অনুধাবন করতে পারেন! সেজন্য মূল্যটা স্বাভাবিক মনে হয়েছে।
আরও কিছু রিভিউ-এ উল্লেখ করা যেত। এই যেমন : ফ্ল্যাপ, সারাংশ, চরিত্রের বর্ণনা অথবা স্পয়লারসহ রিভিউ দিয়ে। কিন্তু আমার মনে হয় এগুলো একজনের রিভিউ-এর অংশ হতে পারে না বা হওয়া ঠিক না। কেননা এগুলো ইচ্ছে করলেই রকমারি থেকে জেনে নেওয়া যায়। ভূমিকা, সারাংশ ইত্যাদি দেওয়ায়ই থাকে। রিভিউ হওয়া উচিত নিজস্ব শব্দচয়নে। প্রকৃতপক্ষেই একজনের কেমন লেগেছে, ভালো-মন্দ অথবা কোনো পরামর্শ এইসব ব্যক্তিগত বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত।
সবার জন্য শুভকামনা রইল। বইটা সবার জন্যই উপযুক্ত মনে হয়েছে। কেননা এখানে কোনো ভায়োলেন্স নেই,অশ্লীলতার ছোঁয়া নেই আর না কোনো অপ্রয়োজনীয় শব্দচয়ন রয়েছে। তবে সবার যে ভালো লাগবে সেটার নিশ্চয়তা আমি দিচ্ছি না। কেননা সবার পছন্দ এক নয়। সেটা নির্ভর করে কাহিনির উপর, গল্পের থিম এর উপর।
প্রচ্ছদও বুঝতে অসুবিধা হবে না কারোর। আর সম্পাদনাও ভালো হয়েছে। আমার কোনো বানান ভুল চোখে পড়েনি। তাই বললাম- যে কারোর জন্য উপযুক্ত। যেহেতু নেতিবাচক কিছুই নেই।
হ্যাপি রিডিং।
শুভকামনা রইল।