
12/07/2025
নেতাদের অপরাধ: ব্যক্তি বনাম দলের দায়ভার
প্রায়শই শোনা যায়, "ব্যক্তির দায় দল নেবে না।" এই যুক্তিটি তখন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য, যখন অপরাধী কেবল একজন সাধারণ সমর্থক হিসেবে জড়িত থাকে। কিন্তু যখন সেই ব্যক্তি দলের তালিকাভুক্ত সদস্য, একজন নেতা, অথবা কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে আসীন থাকেন, তখন তার কৃতকর্মের দায়ভার কেবল ব্যক্তিগত থাকে না; বরং তা সরাসরি তার রাজনৈতিক দলের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক প্রভাব ও দলের দায়:
একজন দলীয় নেতা বা দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যের প্রতিটি অপরাধের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব একটি বড় ভূমিকা রাখে। তার ক্ষমতা, পদবি, এবং দলের পরিচয়ের মাধ্যমেই তিনি অনেক অপরাধ সংঘটিত করার সুযোগ পান। এক্ষেত্রে, তার ব্যক্তিগত পরিচয়ের চেয়ে দলীয় পরিচয়ই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বা অন্য কোনো ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে, যদি অপরাধী একজন রাজনৈতিক নেতা হন, তবে জনগণ সেই অপরাধকে তার ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবে না দেখে বরং দলের নীতি ও নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা হিসেবেই গণ্য করে।
দলের ভেতরে তার অবস্থান এবং দলের প্রতিশ্রুতির কারণে জনগণ তাকে বিশ্বাস করে। যখন তিনি সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা করে কোনো অপরাধ করেন, তখন সেই দায়ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে দলের ওপর এসে পড়ে। দল যদি তার সদস্য বা নেতার অপরাধের দায় না নেয়, তবে তা জনগণের কাছে দলের নীতিহীনতা ও জবাবদিহিতার অভাবকে তুলে ধরে।
কেন দল দায়বদ্ধ?
১) সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণের অভাব: যদি দলের একজন সদস্য বা নেতা অপরাধ করেন, তবে এটি দলের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রমাণ করে। একটি সুসংগঠিত দল তার সদস্যদের নৈতিকতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার নির্দেশনা দেয় এবং তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
২) রাজনৈতিক আশ্রয়: অনেক ক্ষেত্রে অপরাধী নেতাকে দলীয় ছত্রছায়ায় আশ্রয় দেওয়া হয়, যা তাকে আরও বেপরোয়া করে তোলে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং জনগণের আস্থা কমে যায়।
৩) জনগণের বিশ্বাস: জনগণ একটি রাজনৈতিক দলকে তার নেতা ও কর্মীদের মাধ্যমে চেনে। যদি দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তবে এটি দলের সামগ্রিক চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সুতরাং, একজন তালিকাভুক্ত সদস্য বা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার অপরাধকে কেবল ব্যক্তিগত দায় হিসেবে দেখলে চলে না। এর বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব রয়েছে, যার সম্পূর্ণ দায়ভার সেই রাজনৈতিক দলের ওপরই বর্তায়। দল যদি এই দায়ভার স্বীকার করে ব্যবস্থা না নেয়, তবে তা কেবল সেই নেতার নয়, বরং সমগ্র দলের নৈতিক স্খলনকেই নির্দেশ করে।