17/01/2025
https://www.facebook.com/share/p/18T2Bos7KN/
একটি ছোট, পরিত্যক্ত গ্রামের মধ্যে এক মেয়ে বাস করত, যার নাম ছিল আমিনা। সে ছিল এক কৃষকের মেয়ে, এক সাদামাটা মেয়ে, যার হৃদয় ছিল তার কাজের ক্ষেত্রের মতো বিশাল। তার দিনগুলি কেটেছে কঠোর পরিশ্রমে, জমি চাষ করতে এবং প্রাণীদের যত্ন নিতে, আর মাঝে মাঝে অন্য এক জীবনের স্বপ্ন দেখত, যেখানে সে নিজের সীমা ছাড়িয়ে ভাবতে পারবে। কিন্তু, জীবন তাকে অন্য পথে নিয়ে গিয়েছিল।
আমিনার পরিবার ছিল দারিদ্র্যসীমার কাছে, তবে তারা ছিল প্রেম এবং ঐতিহ্যে পূর্ণ। তাদের জীবনে অভাব ছিল, কিন্তু আমিনা তার হাসি হারাত না, তার চোখে আশা ছিল। তার একমাত্র মুক্তি ছিল সেই গল্পগুলি, যা সে মাঝে মাঝে পথচারীদের কাছে শুনত। সে এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখত, এমন একটি জীবন যেখানে সে আর ভূমি ও দারিদ্র্যের সঙ্গে আবদ্ধ থাকবে না।
একদিন, পাশের শহরে একটি রাজনৈতিক সমাবেশের খবর শুনে আমিনা জানতে পারল এক তরুণ বামপন্থী রাজনীতিবিদ আরিফের কথা। সে সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য উত্সাহী, গরীব ও অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করে। তার বক্তৃতাগুলি শোনার পর, আমিনা সিদ্ধান্ত নিল সে সমাবেশে যাবে।
আরিফ ছিল এক কারিশম্যাটিক নেতা, যার কণ্ঠে ছিল এক অদ্ভুত সমাহার—একদিকে শক্তি, অন্যদিকে সহানুভূতি। যখন সে সমতাভিত্তিক অধিকার, ভূমি সংস্কার, এবং গরীবদের উন্নতির কথা বলল, আমিনার মধ্যে এক অগ্নিসংযোগ ঘটল। সে কখনও এমন কারো কথা শোনেনি, যিনি এত গভীরভাবে পরিবর্তন, এমন এক পৃথিবী সম্পর্কে কথা বলতেন, যেখানে তার মতো মানুষদের জন্যও ভাল জীবন অপেক্ষা করছে।
সমাবেশের পর, আমিনা লাজুক, কিন্তু আশাবাদী হয়ে আরিফের কাছে গিয়ে কথা বলল। আরিফ তার দিকে তাকাল, তার সাধারণ পোশাক এবং মাটি ভর্তি হাতের মাধ্যমে তার জীবনকথা বর্ণিত হচ্ছিল। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলল—স্বপ্ন, সংগ্রাম এবং তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।
ধীরে ধীরে, তাদের সম্পর্ক গভীর হতে শুরু করল। আমিনা তার খামার থেকে পালিয়ে আরিফের বক্তৃতায় অংশ নিত, আর আরিফও তার গ্রামে এসে কৃষকদের সহায়তা করত এবং তাদের সমস্যা শুনত। তাদের মধ্যে এক নিরব ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল, যা তারা পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও, দুজনেই তা মূল্যবান মনে করত।
কিন্তু, পৃথিবী নিষ্ঠুর ছিল। আরিফের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়তে থাকল, এবং যত সে সফলতার দিকে এগোতে থাকল, তত তার সময় কমে যাচ্ছিল। যখন সে ক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছাল, তখন সে আমিনার থেকে আরও দূরে চলে গেল। তার বক্তৃতাগুলি আরও ঘন ঘন হতে শুরু করল, তার সময় হয়ে উঠল আরও কম। আমিনা, যদিও তার কাজের প্রতি গর্বিত ছিল, তবে সে অনুভব করতে লাগল যে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে।
একদিন, একটি দুর্ঘটনাজনিত বিপর্যয় গ্রামটিকে তছনছ করে দিল। আমিনার পরিবারটির খামার ভেসে গিয়েছিল, এবং গ্রামবাসীরা সমস্ত কিছু হারিয়ে ফেলেছিল। আমিনা desesperate হয়ে আরিফের খোঁজে বের হলো, মনে করেছিল যে সে তাকে সাহায্য করবে, কিন্তু সে রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে আটকে পড়েছিল। তার পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি একে একে প্রতিশ্রুতি থেকে আপসের মধ্যে পরিণত হয়েছিল, এবং সে আর সেই ব্যক্তি ছিল না, যার সঙ্গে আমিনা প্রথম প্রেমে পড়েছিল।
যখন আরিফ গ্রামে আসল, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। ক্ষতি অপরিবর্তনীয় হয়ে গিয়েছিল, এবং আমিনার হৃদয়, যা একসময় আশা নিয়ে পূর্ণ ছিল, এখন বেদনা এবং হতাশায় পরিপূর্ণ। সে আরিফের সামনে দাঁড়িয়ে, চোখে জল নিয়ে বলল, “আমি ভেবেছিলাম তুমি পৃথিবীটাকে বদলে দেবে, কিন্তু এখন... এখন আমি সত্যিটা বুঝতে পারছি।”
আরিফ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল, কিছু বলতে পারছিল না। সে জানত যে তার ক্ষমতায় ওঠার জন্য যে মূল্য তাকে দিতে হয়েছে, তা সে বুঝতে পারেনি, যতক্ষণ না এই মুহূর্তটি আসেনি।
সে দিন আমিনা তাকে ছেড়ে চলে গেল, তার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে ছিল, ভালোবাসা আর বিশ্বাসের মধ্যে বিভক্ত। বৃষ্টি থামল না, কিন্তু আমিনার জন্য, তার হৃদয়ে যে ঝড় ছিল, তা কখনও থামবে না। আরিফের বিপ্লবী স্বপ্ন ব্যর্থ হয়ে গেল, আর সেগুলোর সঙ্গে, তাদের ভালোবাসাও হারিয়ে গেল।
বছর পার হয়ে গেল, কিন্তু আমিনা কখনও ভুলে যায়নি। সে তার জীবন আবার গড়ে তুলল, একে একে, কিন্তু যে ভালোবাসাটি হারিয়ে গিয়েছিল তা তাকে চিরকাল তাড়া করেছিল, এক তিক্ত স্মৃতি হিসেবে, যা তাকে মনে করিয়ে দিত যে একসময় সে একটি জীবনের স্বপ্ন দেখেছিল।
আর আরিফ? সে ক্ষমতায় উঠেছিল, কিন্তু তার মধ্যে যে শূন্যতা ছিল, তা কখনও চলে যায়নি। সে গরীবদের জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু প্রতিটি বক্তৃতা, প্রতিটি জয়ের মধ্যেও সে জানত, যে একমাত্র মানুষটি কখনও তার প্রতি বিশ্বাস করেছিল, সে আর নেই।
শেষে, তারা দুজনেই তাদের নিজ নিজ নির্বাচিত পৃথিবীতে বন্দি ছিল, চিরকাল বিচ্ছিন্ন, তাদের শেয়ার করা আদর্শের মধ্যে বিভক্ত। তাদের ভালোবাসা ছিল এক মুহূর্তের জন্য, একটি স্বপ্ন, যা কখনও সেই কঠিন বাস্তবতাকে টেকেনি।