03/02/2025
মীলাদ-কিয়াম নিয়ে চলমান অস্থিরতায় আমার কিছু কথা-
মুহা: আলাউদ্দীন ছালেহ
*******
মীলাদ মাহফিল বা মিলাদ কিয়ামের বর্তমান আকার-আকৃতি তথা সুরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় ছিল না, এটা স্বত:সিদ্ধ একটি ব্যাপার। তবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা সাহাবা, তাবেয়ীদের যামানায় না থাকলেই যে তা বিদআত হয়ে যাবে, এটা একটা প্রসিদ্ধ প্রোপাগান্ডা। যে প্রোপাগান্ডার শিকার হয়ে বর্তমানে আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেক ভাই-বেরাদর, আলেম-উলামা জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে খারেজিয়্যাত চর্চায় লিপ্ত।
রাসুল, সাহাবা, তাবেয়ীদের যুগে ছিলনা বলেই যদি বিদআত হয়ে যায়, তবে প্রচলিত অনেক বিষয়ই বিদআত হয়ে যাবে। আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি সেদিকে যাচ্ছি না। তবে বিদআতের প্রসিদ্ধ যে হাদিস হাদিসটি লক্ষ্যণীয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد . ‘আমার এই দ্বীনে যে এমন কোন বিষয়ের আবিষ্কার করল, এই দ্বীনে যার কোন অস্তিত্ব নেই, বা ভিত্তি নেই, তথা যার মূল এই দ্বীনের অংশ নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।’ সহীহ মুসলিম।
এবার এই হাদিসকে সামনে রেখে মীলাদ-কিয়ামের দিকে একটু দৃষ্টি দিন। মিলাদ কিয়ামের মজলিসে যা হয়-
ক. তাওয়াল্লুদ তথা নবীজির জন্মের সময়কার ঘটনা,
খ. কুরআন তিলাওয়াত,
গ. দুরুদ শরীফ,
ঘ. দাঁড়িয়ে সালাম প্রদান,
ঙ. রাসুলের শানে বিভিন্ন কাসীদা,
চ. সর্বশেষে দুআ।
আচ্ছা ভাই ইনসাফের দৃষ্টিতে বলুন তো এই কাজগুলো থেকে কোন বিষয়টার অস্তিত্ব এই শরীয়তে নেই? হ্যাঁ, আপনার আপত্তির সুযোগ এক জায়গাতে, সেটা হলো দাঁড়িয়ে সালাম প্রদান। দাঁড়িয়ে সালাম প্রদানের বিষয়ে আমি বিস্তারিত কোন আলোচনায় না যেয়ে সংক্ষেপে বলব, সুফিয়ায়ে কেরাম, যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসীনে কেরাম নবীজিকে রওজা শরীফ থেকে দূরে থেকে রওজা শরীফের খেয়াল করে দাঁড়িয়ে সালাম আত্মতৃপ্তি পেয়েছেন, ফলে তাঁরা নবীকে সালাম দেওয়ার সময় দাঁড়িয়ে সালাম দেওয়ার প্রচলনটা করে গেছেন। এখানে হাজির-নাজির, ইলমে গাইব ইত্যাদি কোন আকিদার সংমিশ্রণ নেই। তারা এই কাজটাকে ফরজ, ওয়াজিব কিংবা সুন্নাত কোনটাই বলেন নি, বরং বলেছেন এই কাজটি ভাল কাজ। আমাদের কাছে এটা ভাল লাগে। ব্যাস, এতটুকুই। এখন আপনি বলবেন, যে কাজটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবারা কেউ করেনি, যে পদ্ধতিতে তারা কেউ ভালবাসেনি, সেই পদ্ধতি নতুন করে কেন অনুসরণ করতে যাব? আমি বলব, আপনার সেই পদ্ধতি অনুসরণ করার দরকার নেই। আপনার যেভাবে ভাল লাগে সেভাবে করুন। তবে আমি যেটা করছি, এটা আমার কাছে ভাল লাগে। শরীয়তে যদি এ ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা থাকে তবে তা নিয়ে আসুন।
যাহোক মোট কথা হল, মীলাদ-কিয়ামের মজলিসে উল্লেখিত কাজগুলোর আশা করি কোনটাকেই শরীয়তের অকাট্য নস দ্বারা হারাম, মাকরূহ প্রমাণ করার সুযোগ নেই। তাহলে মীলাদ-কিয়ামের কথা শুনলেই আপনার গা জ্বলে উঠে কেন? এখানে আরেকটি বিষয় ইদানিং লক্ষ্য করছি, সেটা হলো- অনেকে আবার মীলাদুন্নবীর মাহফিলকে কিয়াম থেকে আলাদা করতে চান, কিন্তু এটা এক অনর্থক চেষ্টা। হ্যাঁ, প্রচলিত কিয়াম চালু হওয়ার আগের যুগে ফিরে গেলে সেখানে হয়তো কিয়াম ছাড়া মীলাদ মাহফিল খুঁজে পাবেন, কিন্তু কিয়ামের সূচনা হওয়ার পর থেকে কিয়ামটি মীলাদ মাহফিলে অবিচ্ছেদ্য অনুসঙ্গে পরিণত হয়। আপনি যদি মীলাদ মাহফিল বলে সেখান থেকে কিয়াম কে আলাদা করতে চান তবে এমন কোন দলীল নিয়ে আসুন, যা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, মিলাদ মাহফিল থেকে কিয়াম ভিন্ন জিনিস।
আমাদের দেশে উলামায়ে দেওবন্দের একচেটিয়াভাবে সকলেই আগে মিলাদের কথা শুনলেই তাদের গা গরম হয়ে যেত, ইদানিং মিডিয়ার সুবাদে সারা পৃথিবীর মিলাদ-কিয়ামের চিত্র দেখে কাওমী আলেমদের এক শ্রেণি মোটামুটি মিলাদ শব্দের প্রতি তাদের বি:দ্বেষ কেটেছে, যা কিছু কওমী আলেমদের পোস্ট, মীলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে ইফাবা কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় প্রোগ্রামে বেশ কিছু কওমী আলেমদের পদচারণায় স্পষ্ট। তবে কিয়ামের প্রতি তাদের বিদ্বেষ যেন স্বভাবগত। আলমুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ যা আকায়েদে উলামায়ে দেওবন্দ নামে খ্যাত, সেখানেও দেখুন কেয়ামের কথা আছে আলহামদুলিল্লাহ।
আমরা এখানে উলামায়ে দেওবন্দগণের কিছু দ্বিচারিতা নিয়ে এখানে আলোকপাত করতে চাই। তারা একদিকে আরবের বহু আলেমকে সম্মান করেন, মাথায় তুলেন, ইলমী মুরব্বী মানেন, অপরদিকে মিলাদ-কিয়াম প্রসঙ্গ আসলেই ঠিক তারা উল্টো দিকে পোল্ট্রি মারেন। এই কাজটা তারা কেন করেন বোধগম্য নয়। মীলাদ-কিয়ামের মজলিস যদি সকল প্রকার মুনকারাত থেকে মুক্ত হয়, তবে তা জায়েজ বর্তমান দেওবন্দী আলেম ছাড়া সারা পৃথিবীর আহলুস সুন্নাহর সিংহভাগ বরং প্রায় সকলেই এই ব্যাপারে একমত।
......... ইনশাআল্লাহ চলবে।
ছবির ক্রেডিট ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান সাহেবের।