18/07/2025
অনলাইনে নতুন ফাঁদ: সাবধান! একটি ভুলেই হারাতে পারেন অর্থ ও সম্মান
সম্প্রতি অনলাইনে একটি নতুন প্রতারণার কৌশল চালু হয়েছে, যা আপনার সামান্য অসতর্কতাতেও আপনার সর্বস্ব কেড়ে নিতে পারে। এর মাধ্যমে আপনি হারাতে পারেন আপনার সম্মান, অর্থ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য। চলুন, জেনে নিই কীভাবে কাজ করে এই নতুন ফাঁদ।
প্রতারণার কৌশল: ধাপে ধাপে সর্বনাশ
প্রতারকরা সাধারণত সুন্দরী নারীর ছদ্মবেশী আইডি ব্যবহার করে আপনাকে মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠাবে। আপনি সরল বিশ্বাসে উত্তর দিলে, প্রথমেই তারা আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চাইবে। আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী বা পরিচিত ব্যক্তি হন, তবে এই ধরনের অনুরোধ স্বাভাবিক মনে হতে পারে এবং আপনি সহজেই নম্বরটি দিয়ে দেবেন। এখানেই প্রতারক তার প্রথম ধাপে সফল হয়ে যায়।
প্রথম ধাপ: হোয়াটসঅ্যাপে যাত্রা
আপনার নম্বর পাওয়ার পর, প্রতারক হোয়াটসঅ্যাপে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। সে আপনার পেশা, অবস্থান এবং কিছু প্রাথমিক তথ্য জানতে চাইবে। এর উদ্দেশ্য হলো আপনি আর্থিকভাবে সক্ষম কিনা, তা যাচাই করা। যখন তারা নিশ্চিত হবে যে আপনি আর্থিকভাবে সক্ষম, তখন তারা পরবর্তী ধাপে যাবে।
দ্বিতীয় ধাপ: ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও কলের প্রলোভন
এই ধাপে প্রতারক আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত ছবি পাঠাবে। যদি আপনি এতে আগ্রহী হন, তবে তারা আপনাকে ভিডিও কলে আসার প্রস্তাব দেবে এবং সেখানে আপত্তিকর কিছু প্রদর্শিত হতে পারে। একবার আপনি এই ফাঁদে পা দিলেই আপনি তাদের চক্রে আটকে যাবেন।
বিকল্প কৌশল: চাকরির লোভ ও ক্ষতিকর লিংক
যারা দ্বিতীয় ধাপে তাদের সাথে তাল মেলায়নি, তাদের জন্য প্রতারকদের কাছে রয়েছে অন্য একটি কৌশল। তারা আকর্ষণীয় চাকরির প্রস্তাব দেবে, যেখানে ভালো আয়ের লোভ দেখানো হবে। এরপর তারা একটি লিংক দেবে এবং সেই লিংকে ক্লিক করলেই আপনি তাদের ফাঁদে আটকা পড়বেন। এরপর তাদের শর্ত মানতে আপনাকে বাধ্য করা হবে।
মেসেঞ্জারেও ফাঁদ
যারা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেয়নি, তাদের জন্যও প্রতারকদের কৌশল ভিন্ন নয়। তারা মেসেঞ্জারে ভিডিও কলে আসার প্রস্তাব দেবে। যদি আপনি রাজি না হন, তবে এমন কিছু প্রস্তাব দেবে যা আপনি হয়তো বুঝতেই পারবেন না। তাদের মূল লক্ষ্য হলো যেকোনো কৌশলে আপনাকে ফাঁদে ফেলা।
নতুন পদ্ধতি: হোয়াটসঅ্যাপের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ!
আগে প্রতারকরা ভিডিও কলের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করত, কিন্তু এখন তারা আরও ভয়ংকর পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। তারা এখন আপনার সম্পূর্ণ হোয়াটসঅ্যাপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
১. হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চাওয়া: প্রথমে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চাইবে। আপনি নম্বরটি দিলে, তারা হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব ব্যবহার করে আপনাকে বলবে আপনার কাছে একটি লিংক গেছে এবং সেখানে 'OK' চাপতে বলবে।
২. পিনের অনুরোধ: 'OK' চাপার পর, তারা আপনার কাছে একটি পিন চাইবে। আপনি সেই পিনটি দিলে, আপনার মোবাইলের সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস তাদের হাতে চলে যাবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ: আপনার ডিজিটাল জীবনের নিয়ন্ত্রণ
আপনার মোবাইলের অ্যাক্সেস পাওয়ার পর, তারা আপনার ফেসবুক এবং ইমেইলের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দেবে। আপনার ছবি থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য তাদের হাতে চলে যাবে। কারণ আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টসহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছে চলে যাবে। এরপর তারা আপনার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে আপনার কাছে টাকা চাইবে এবং টাকা না দিলে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করবে।
সামান্য ভুলে সর্বনাশ: কেন এত বিপজ্জনক?
একটি ছোট্ট ভুল আপনার জীবনকে বিষাদময় করে তুলতে পারে। শুধুমাত্র অসচেতনতার কারণে আপনার অর্থ, সম্মান এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রতারকদের হাতে চলে যেতে পারে। কারণ এখন প্রায় সবার ফেসবুক আইডির সাথে হোয়াটসঅ্যাপ যুক্ত থাকে, যেখানে আপনার নম্বর, ছবি এবং এমনকি ব্যাংক কার্ডের তথ্যও ব্যাকআপ হিসেবে থাকতে পারে।
প্রতারকদের বৈশিষ্ট্য: সতর্ক থাকুন!
* এই ধরনের প্রতারক আইডিগুলোতে সাধারণত সুন্দরী নারীদের ছবি ব্যবহার করা হয়।
* ছবিগুলো প্রায়শই খোলামেলা হয়।
* অধিকাংশ ক্ষেত্রে হিন্দু/সনাতন ধর্মীয় নাম ব্যবহার করা হয়।
* তাদের লোকেশন প্রায়শই ভারতে দেখানো হয়।
* আইডিগুলোতে খুব বেশি ব্যক্তিগত তথ্য বা পোস্ট থাকে না, শুধুমাত্র কিছু ছবি বা ভিডিও ছাড়া।
এই ধরনের হ্যাকিং ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইমোতেও হতে পারে। বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুণরা এই ফাঁদে বেশি আটকা পড়ছে।
আমাদের করণীয়: সচেতনতা ও সতর্কতা
একটি বিষয় মনে রাখবেন, "খুব খেয়াল না হইলে দেখাবে রান, নিয়ে যাবে সম্মানের সব ধান।" তাই, সুন্দরী মেয়ের আইডি দেখামাত্রই ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া এবং ভিডিও কলে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আসুন, আমরা অনলাইনে সচেতন হই, নিজে জানি এবং অন্যদেরও জানিয়ে দেই।
আপনার সচেতনতাই আপনাকে এবং আপনার প্রিয়জনদের এই অনলাইন ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে পারে।