MITON

18/10/2025

18/10/2025

‎সব পথ রুদ্ধ হ'লে তবেই দেবালয়ের দরজা খোলে | আমরা দু' জন পায়ে - পায়ে গিয়ে দাঁড়ালাম আমাদের সব ভরসার শেষ ঠাঁই ----- দাদার সামনে |
‎ পুরোটা শুনলেন তিনি একদৃষ্টে চেয়ে - চেয়ে | তারপর একেবারে নির্বিকার মুখে শান্ত কন্ঠে বললেন, ' এরকম সমস্যা তো বহু মেয়েরই হয় | তুই অত চিন্তা করিস না, তোর ঠিকই বাচ্চা হবে |'
‎ দাদার এত সহজ নিশ্চিন্ত বলার ভঙ্গী দে' খে আমার স্ত্রী যেন নিজের কানকেই ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিল না | আশার আলোয় উথলে উঠে সে চিৎকার ক'রে ব'লে বসল ----- ' আজ্ঞে, সত্যিই আমার বাচ্চা হবে?'
‎ ওর ওই কথা শুনে আচার্য্যদেব এবার হেসে ফেললেন | তাঁর চিরপ্রত্যয়ী মন্দ্র কন্ঠে গম গমগমিয়ে উঠল ----- ' কে বলেছে তোর বাচ্চা হবে না? ' আমি ' বলছি তোর এত্ত বড় বাচ্চা হবে |'
‎ আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম | তিনি যখন ' এত্ত বড়' কথাটা বলতে গিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে নিজের দুই হাত প্রসারিত ক'রে দেখালেন, আমরা আর চোখের জল ধ'রে রাখতে পারলাম না | বাচ্চা হওয়া না - হওয়াটা তো পরের বিষয় ; কিন্তু, তা'র আগেই যে ডাক্তারদের দুয়ারে - দুয়ারে বছরের পর বছর আমাদের ' হবে না' কথাটা শুনে আসতে হয়েছে, ------ অন্তরের সেই ক্ষুধিত পাষানে স্বয়ং তাঁর শ্রীমুখের ওই আশ্বাসবাণীটুকু সগর্জ্জন বৃষ্টিপাতের মত বর্ষিত হ'ল যেন |
‎ দাদা আমাদের দু'জনকে আশ্রমিক ডাক্তার কর্মী ডাঃ কৃতিরঞ্জন গুরুর সাথে কথা বলতে বললেন | গুরুদা আমাদের বললেন বর্ধমানে ডাঃ অভয়চাঁদ নাগকে দেখাতে | তারপর, জিজ্ঞেস করলেন, ' তোমরা স্বস্ত্যয়নী নিয়েছ ?
‎ আমরা জানালাম, ' না ' | তখন তিনি আমার স্ত্রীকে সম্বোধন ক'রে বললেন, 'মা, সুসন্তানের আগমনের জন্য আগে ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হয়, তাই ঠাকুরের যা' - যা' বলা আছে সেগুলি পালন করা লাগে | স্বস্ত্যয়নী গ্রহণ করা, সদাচারে থাকা, সত্তাবিরুদ্ধ আহার্য বর্জন করা, এবং ইষ্টনিষ্ঠ হয়ে ভালবাসার সঙ্গে নিয়মিত নামধ্যান ক'রে চললে বাবা- মা'র মধ্যে সেই উপযুক্ততা গজিয়ে ওঠে |'
‎ হৃদয়ভরা উদ্দীপনা নিয়ে বাড়ি ফিরেই আমরা বর্ধমানে ওই ডাক্তারবাবুর কাছে গেলাম | সমস্ত রিপোর্ট দেখালাম | রিপোর্ট দেখে ওনারও ভ্রু কুঁচকে গেল | কিন্তু , আচার্য্যদেবের আশীর্বাদের কথা শুনে তিনি একমুহূর্তে সব সংশয় ত্যাগ ক'রে আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন, বললেন, ' তিনি যখন বলেছেন, তখন হবেই | তুমি একদম চিন্তা ক'রো না মা |'
‎ তিনি ওষুধ লিখে দিলেন | সেই ওষুধ চলতে লাগল, এবং আশ্চর্যের বিষয় হ'ল এইবারের ওষুধের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেল না | আমাদের আশা বেড়েই চলল
‎ কিছুদিন পর গ্রীষ্মের ছুটি পড়েছে | আমি দেওঘর গেলাম অনুসন্ধিৎসু সভা - কাজ করতে |
‎ সেদিন সভায় আর কেউ ছিল না, আমি একাই আছি | রাত্রে আনন্দবাজার ক'রে এসে একাই ব'সে আছি | বিভিন্ন রকম ভাবনা - চিন্তা মাথায় আসছে | হঠাৎ মনের মধ্যে ভেসে উঠল ডাঃ গুরুর সেই যাজন, ----- ' সুসন্তানের আগমনের জন্য আগে ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হয় | '
‎ আমার মন বলতে লাগল, হয়তো কোনো উন্নত আত্মা আমাদের কাছে সন্তান হিসাবে আসতে চাইছে | আমাদের আধার তা' র পক্ষে উপযুক্ত নয় ব'লেই হয়তো আসতে পারছে না | আমাদের অবিলম্বে স্বস্ত্যয়নী গ্রহন করা উচিত |
‎ সেই রাত্রে নামধ্যান করছি আর ঠাকুরের কাছে পর্থনা করছি, ' ঠাকুর, সস্ত্যয়নী নেব | অচ্যুতভাবে তোমার আদর্শের অনুগমন করব | তোমার মনের মত জীবন যাপন করব |' দাদার মুখখানা বার - বার আমার মানসপট ছুঁয়ে - ছুঁয়ে যাচ্ছিল, আর স্বস্তায়নী নেওয়ার ভাবনাটা ততই তীব্র হয়ে উঠছিল |
‎ পরবদিন সকালে প্রার্থনা ক'রে আসার পরই আমি বাড়ীতে একটা ফোন ক'রে সবাইকে সেদিনই ঠাকুরবাড়ী চ'লে আসতে বললাম | কীসের ভরসায় যে বললাম আমি নিজেও জানি না | দুইজন মহিলা, তাঁরা একা - একা বাড়ীর বাইরে কোথাও কোনোদিন যাতায়াত করেন নি | আর এমন কেউ নেইও, যিনি দায়িত্ব নিয়ে এতটা পথ তাঁদের নিরাপদে পৌঁছে দেবেন | কিন্তু, আমার ফোন পেয়ে ওপার থেকে আমার মা এক মুহূর্তও চিন্তা না ক'রে বললেন , ' ঠিক আছে, যাচ্ছি | কীভাবে যাব, ব'লে দে |'
‎ কাজকর্ম যা' ছিল সব ফে' লে রেখে সঙ্গে - সঙ্গে তৈরী হয়ে বাড়ীতে তালা দিয়ে বর্ধমান স্টেশন চ'লে এল | স্টেশন থেকে সঠিক ট্রেনে উঠে জসিডি পৌঁছে গেল কীভাবে , সেটাই আজও ভাবি | স্বস্ত্যয়নীর পঞ্চনীতিতেই আছে, শুভ কর্তব্য ব'লে মনে যখনই যা' আসবে , বিলম্ব না ক'রে তৎক্ষণাৎ তা' করার কথা |
‎ স্টেশন থেকে মায়েদের এনে মনমোহিনীধামে ঘর নিয়ে সেখানে রাখলাম | আমাদের আনন্দ আর ধরছে না যেন তখন | আগামীকাল আমাদের স্বস্ত্যয়নী হবে | আমার আকুল ডাক তাঁর কানে পৌঁছেছে |
‎ পরদিন , ২৯শে জুন, ২০১৮ ' দাদা' স্বয়ং আমাদের সমগ্র পরিবারকে দয়া ক'রে স্বস্ত্যয়নী ব্রত প্রদান করলেন |
‎ আর, স্বস্তয়নী গ্রহনের ছয় মাসের মধ্যেই আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হ'ল | যেমনটি তিনি দুই হাত প্রসারিত ক'রে দেখিয়ে বলেছিলেন , ঠিক তত বড়ই আকার নিয়ে ভূমিষ্ঠ হ'ল আমাদের কন্যা | দাদা - ই দয়া ক'রে তা'র নামকরণ করলেন ---- ' সুধৃতা' ; সু অর্থাৎ শুভ যাকে ধারন ক'রে আছে |
‎ আমি তো জনে - জনে সোচ্চারে বলব ------ ঠাকুর ছিলেন , তাই একটা নষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষ আজ মরণের কবল থেকে সোনার খনিতে গিয়ে পৌঁছেছে | জানি না, কালের কোন গহ্বরে তলিয়ে যেতাম , যদি তিনি তাঁর মঙ্গল হস্তখানি আমার দিকে প্রসারিত ক'রে না দিতেন | আজ আমার জীবননদী যখন সেই মহাসাগরের নাটমণ্ডপে এসে থামে , পিছনে ফে' লে - আসা আমার সেই উপল - কর্কশ যাত্রাপথের উপর তাঁর অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ , যা' আজ আমাকে মোহনায় পৌঁছে দিয়েছে , তা' রন্ধ্রে - রন্ধ্রে অনুভব করি | আর ব'লি ' জীবন ভর তুমিই তো আমাকে পূর্ন ক'রে সব কিছু দিয়ে গেলে ঠাকুর , আমি তোমাকে কী দিলাম ? আমার মনটা নাও | ওটা সম্পূর্ণরূপে শুধু তোমারই থাকুক |'
‎
‎ অকূলের তরী
‎
‎
‎কলমেঃ- সপ্তর্ষি দানা
‎

08/10/2025

#বন্দে_পুরুষোত্তমম্ 💛🙏🙏🙏
#তিনি_এঁকমাএ_ধ্যেয়_ও_ধ্যান_জয়গুরু। 🙏🙏🙏