15/09/2025
কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠান হয়ে উঠলো দলীয় আধিপত্যের প্রদর্শনী
স্টাফ রিপোর্টার, বরমচাল মর্ণিং নিউজ:
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া সরকারি কলেজে গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) একাদশ শ্রেণির নবাগত শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের আয়োজনে এ অনুষ্ঠান হলেও শেষ পর্যন্ত তা রূপ নেয় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রদর্শনীতে।
প্রত্যাশিত শিক্ষামূলক পরিবেশ ছাপিয়ে রাজনীতি
কলেজ সূত্রে জানা যায়, নবীন বরণ অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল নতুন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানো এবং তাদেরকে পড়াশোনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনুষ্ঠানটি দখল করে নেয় কলেজ ছাত্রদল। অনুষ্ঠান জুড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বক্তব্য এবং উপস্থিতি নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
ধারাবাহিক বক্তব্যে প্রাধান্য পেল দলীয় ভাবধারা
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাইফুর রহমান, কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মৌসুম সরকার, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান টিপু, যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন ও শামীম আহমেদ, সদস্য সাইদুর রহমান নিশান ও সানি।
তাদের বক্তব্যে মূলত ছাত্রদলের অবস্থান, কার্যক্রম ও দলীয় ভাবধারার প্রচারই মুখ্য হয়ে ওঠে।
ক্ষোভে নবাগত শিক্ষার্থীরা
নতুন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন,
“আমরা ভেবেছিলাম কলেজে স্বাগত জানানো হবে, কিন্তু এখানে এসে দেখি ছাত্রদল নিজেদের আধিপত্য দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে এটা কলেজ নয়, বরং রাজনীতির ঘাঁটি।”
আরেকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আগে শুনতাম ছাত্রলীগ কলেজে আধিপত্য করতো, এখন দেখি ছাত্রদল একইভাবে করছে। এর ফলে আমাদের পড়াশোনায় সমস্যা হবে।”
কলেজ কর্তৃপক্ষের অস্বস্তি
বিষয়টি নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
“আমি এখানে নতুন এসেছি। শুনলাম, আগে থেকেই এ ধরনের রেওয়াজ প্রচলিত আছে। নাকি তাদের বক্তব্য না দিলে কলেজে পরিবেশগত অশান্তি সৃষ্টি হয়।”
অধ্যক্ষের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়, রাজনৈতিক চাপ ও অস্বস্তির মধ্যেই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করতে হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষকে।
বাণিজ্যের অভিযোগ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই ভর্তি, ফরম পূরণসহ নানা কাজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল বক্তব্য রাখা সাত নেতার মধ্যে অন্তত কয়েকজন এই অভিযোগে জড়িত। বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে কুলাউড়া ডট কম অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।
অভিভাবক ও সচেতন মহলের শঙ্কা
অভিভাবকরা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,
রাজনীতি যদি এভাবে শিক্ষাঙ্গনে আধিপত্য বিস্তার করে, তাহলে সন্তানদের পড়াশোনায় মনোযোগ নষ্ট হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় প্রভাবমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।”
গতকালের নবীন বরণ অনুষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের জন্য উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা হওয়ার বদলে পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন কলেজে স্বাভাবিক শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেবে।