29/06/2024
কল্পনায় ফিরদাউসের এক বিকেল
জান্নাতুল ফিরদাউস। সবুজ প্রান্তরে একটি গাছের নিচে হেলান দিয়ে বসেছেন রাসূলুল্লাহ ﷺ। দুপাশে খানিকটা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসেছেন সাহাবা। মানুষের আবেগ-অনুরক্তির সীমা নেই। এ-ও যাচ্ছে, সাক্ষাত করে ফিরে আসছে।
আমরাও গেলাম৷ দূর থেকে দেখি সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী, হাত দিয়ে এঁকে এঁকে কী যেন বলছেন। কাছে গিয়ে শুনি তিনি আল কুদস বিজয়ের গল্প শুনাচ্ছেন। উমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বি. তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, বিজয়ের পর তুমি ইয়াহূদ ও নাসারার সাথে কীরূপ আচরণ করেছ? সালাহুদ্দীন বললেন, আমীরুল মু‘মিনীন, আমি তাদের প্রতি দয়ার আচরণ করেছি, আল কুদস বিজয়ের পর যেভাবে আপনি তাদের প্রতি দয়া করেছিলেন।
আমরা এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলাম, আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ! জবাব এলো। উসমান রাদ্বি. প্রশ্ন করলেন, তোমরা কোন প্রজন্মের? বললাম, বিংশ-একবিংশ শতাব্দীর সন্ধিক্ষণে আমরা পৃথিবীতে ছিলাম৷ আলী রাদ্বি. প্রশ্ন করলেন, তোমাদের অর্জন কী ছিল? আমরা কেউ তেমন কিছু বলতে পারলাম না! আসলেই কী অর্জন ছিল আমাদের?
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। একদল এলো। আমাদের চেয়ে দু-তিন প্রজন্ম আগের হয়তো। ওরা ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদকে তাড়িয়ে মুসলিম বিশ্বকে স্বাধীন করেছিল। সাহাবারা খুশি হয়ে মুসাফাহা করলেন তাদের সাথে। এলো আরেকটি প্রজন্ম। অনিন্দ্য সুন্দর, রক্তে লাল, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা, খুশবু ছড়ানো এক দল। পরিচয় জানতে চাইলে ওরা আমাদেরকে দেখিয়ে বলল, আমরা ওদের পরের প্রজন্ম। তোমাদের অর্জন কী— উমর রাদ্বি. প্রশ্ন করলেন। ওরা বলল, আমরা তৃতীয়বারের মতো আল কুদসের স্বাধীনতা এনেছি। মূহুর্তেই পাল্টে গেল চারপাশ। সালসাবীলের কলকল রব; নীল-কমলা-জলপাই রঙা পাখিদের কিচিরমিচির; বাতাসে পাতা ঝরার ঝরঝর শব্দে ফিরদাউস উদ্বেল হয়ে উঠল। রাসূল ﷺ এর ঠোঁটে স্নিগ্ধ হাসি। আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বি. এর চোখে প্রসন্নতা। আনন্দে ঝলমল করছে সাহাবার চেহারা। হামযা রাদ্বি. উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, মোবারক হো!
ওরা হাত ইশারায় পাশে ডাকল, আমরা গেলাম। ওরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের পূর্ববর্তী এই বোকা প্রজন্ম তাদের অর্জন সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেনি। কারণ তারা জানে না, তারা কী করে এসেছে। আমরা বলছি। যে ময়দানে লড়ে আমরা কুদসের জন্য বিজয় এনেছি, ওরা সেই ময়দান প্রস্তুত করে দিয়েছে। ওরা পরাজয়ের গ্লানি সয়েছে, হারানোর ব্যথা বয়েছে, তবু চুপ করে থাকেনি। যার হাতে যে মিডিয়া ছিল, তা ব্যবহার করে আওয়াজ উঠিয়েছে। কেউ লিখেছে, কেউ গেয়েছে, কেউ ছড়িয়ে দিয়েছে। ওরা দুনিয়াকে দেখিয়েছে বর্বরতার সেই দৃশ্যগুলো। ওরাই প্রথম প্রজন্ম, যারা ইস্র-এমেরিকান সন্ত্রাসীদের ন্যারাটিভকে চ্যালেঞ্জ করেছে। মুনাফিক শাসকদের রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে ওরা রাস্তায় নেমেছে। ওরা বয়কট করেছে। ওদের বয়কটে শয়তানের ব্যবসায় ধাক্কা লেগেছে। ওরা মজলুম ভাইবোনের জন্য আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। ওরা রাতের পর রাত হাত তুলে, কখনো সিজদায় পড়ে চোখের পানিতে জায়নামাজ ভিজিয়েছে। ইয়া রাসূলাল্লাহ, ওই প্রজন্ম কুদস বিজয় করেনি; তবে এরচেয়ে কমও করেনি।
রাসূল ﷺ এর ঠোঁটে আবার সেই মিষ্টি হাসি। সাহাবা আমাদের দিকে তাকিয়ে বলছেন, মোবারক হো! মোবারক হো!
فَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهِ وَإِنَّا لَهُ كَاتِبُونَ
“সুতরাং কেউ যদি নেক কাজ করে এবং সে ঈমানদার হয়, তার প্রচেষ্টা অস্বীকার করা হবে না। আর আমিই তা তার জন্য লিখে রাখি।” (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-৯৪)
✍️ Marjan Ahmad Chowdhury