
18/08/2025
মৌলভীবাজারে ব্যবসায়ী রুবেল হত্যা রহস্য উন্মোচন, গ্রেফতার যুবক
আলী মোহাম্মদঃ
মৌলভীবাজার শহরের শমসেরনগর রোডে সংঘটিত ব্যবসায়ী শাহ ফয়জুর রহমান রুবেল (৫৫) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। গত ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় সিএনজি স্ট্যান্ডসংলগ্ন এফ রহমান ট্রেডিং দোকানে অজ্ঞাত এক যুবক ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে রুবেলকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর নিহতের পরিবার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
ঘটনার পরপরই পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম-সেবা’র নির্দেশে বিশেষ টিম গঠন করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খায়ের, ওসি গাজী মাহবুবুর রহমান এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা তদন্তে যুক্ত হন। তদন্তকারীরা প্রথমেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করেন। একই সঙ্গে হত্যার পর পালানোর সময় ব্যবহৃত অটোরিকশার চালককে শনাক্ত করা হয়। তার দেওয়া তথ্য এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে হত্যাকারীর পরিচয়।
১৭ আগস্ট দুপুরে শ্রীমঙ্গলের লইয়ারকুল গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে জুহেল মিয়া ওরফে জুয়েল ওরফে আলিফ (২২)-কে। গ্রেফতারের সময় তার হাতে ব্যান্ডেজ থাকায় সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুহেল হত্যার দায় স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন বেকার থাকায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং আর্থিক সংকটে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। ৬ আগস্ট শহরে ঘুরে সুযোগ না পেয়ে পরদিন আবার ফিরে আসে। দোকান পর্যবেক্ষণ করতে করতে প্রথমে পাশের একটি হার্ডওয়্যার দোকান থেকে এলবো ও সাসপেনশন গ্লু কেনে। পরে সুযোগ বুঝে রুবেলের দোকানে প্রবেশ করে।
সেদিন রুবেল নামাজ শেষে দোকানে ফিরলে জুহেল ক্রেতা সেজে ভেতরে গিয়ে ধারালো ছুরি বের করে তাকে আঘাত করে। প্রতিরোধ করতে চাইলে এলোপাতাড়ি আঘাত চালায়। রুবেল মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে দোকানের ক্যাশ থেকে মাত্র ১,১০০ টাকা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তদন্তে হত্যার সময় ব্যবহৃত ধারালো ছুরি, আসামির মাস্ক ও জুতা, রক্তমাখা ১০ টাকার নোট, এলবো ও গ্লু উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রুবেল কুলাউড়া উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে শহরে ব্যবসা করে আসছিলেন তিনি।
এই হত্যাকাণ্ডে শহরের ব্যবসায়ী মহলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাত্র এক হাজার একশ টাকার জন্য একজন মানুষকে এভাবে হত্যা করা দুঃখজনক এবং ভীতিকর। সন্ধ্যার পর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে এখন অনেকেই শঙ্কায় আছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ছিনতাই। তবে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত গ্রেফতারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।