19/08/2025
♦️কসাই জিয়াউল আহসান: ♦️
ঢাকার অলিগলি আর নদীর বুকে এক অদৃশ্য আতঙ্কের নাম ছিল জিয়াউল আহসান। মানুষ জানতো, বুঝত কিন্তু কেউ কল্পনায়ও তার নাম মুখে নিত না।
এদেশের সব শ্রেনীর না হোক একটা অন্ততঃ ভিক্টিম শ্রেনী ছিল যারা এক সময় বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছিল যে, এদেশে প্যাগাসাস সফটওয়্যার আসার পর থেকে মানুষের কল্পনাও আর গোপন থাকছে না।
মনে মনেও যদি কেউ জিয়াউল আহসানের নাম নেয়, যে কোনো সময় তাকে যে কেউ উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমি এখন এই যে লেখাটা লিখছি, আমি জানি সে এখন জেলে আছে। তবু আমি স্বস্তিতে নেই, কাল্পনিক একটা ভয় আমাকে ঘীরে ধরে আছে। জিয়া ত একা ছিলেন না এবং জিয়ার সাথে যারা কাজ করত তারা সবাই জেলে নয়। ফলে ভয় আমাকে চেপে ধরে রাখবে এটাই স্বাভাবিক।
যাই হোক যা বলছিলাম। জিয়াউল আহসান। দিনে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা। রাতে তিনি রূপ নিতেন এক ভিন্ন মানুষে—একজন কসাই, যিনি রক্ত এবং ছিন্নভিন্ন মগজ দেখেই আনন্দ পেতেন।
প্রথমে তিনি ভিক্টিমদের কালো কাপড়ে বেঁধে নদীর মাঝখানে নিয়ে যেতেন। মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে এক বা একাধিক গুলি—এরপর ছিটকে যাওয়া রক্ত আর মগজের গরমে অদ্ভুত এক সুখ খুঁজে নিতেন তিনি। শীতলক্ষ্যা আর ধলেশ্বরীর জল অনেকবার রাঙা হয়েছে তার ছোঁড়া লাশে। প্রতিটি লাশের সাথে বাঁধা থাকত ২৪টি ইট, ৫ ফিফটি নটে রশিতে শক্ত করে পেঁচানো।
আবার কখনও তিনি ইনজেকশনে ভিক্টিমকে মেরে ট্রেন লাইনে ফেলে রাখতেন। রাতের অন্ধকারে ট্রেনের চাকায় গুঁড়ো হয়ে যেত দেহ।
ঢাকার টঙ্গি থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যে অজানা লাশগুলো মেলে—সেগুলোর দিকে শহরের মানুষ চুপচাপ তাকিয়ে থাক্ত। সরকার যা ভাষ্য প্রচার করত, এরা তাই শুনে চুপচাপ চলে যেত। বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে চিন্তা করতেও ভয় পেত।
অসমর্থিত যে তথ্যটা জানা যায়, সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল তার এসিড-পদ্ধতি। উচ্চপদস্থ শত্রু বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করে টুকরো টুকরো দেহ এসিডে ডুবিয়ে গলিয়ে ফেলত সে।
গলিত খন্ডাংশ ভাসিয়ে দিত গংগায়, যমুনায়। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় দশক ধরে চলেছিল এই রক্তের হোলি খেলা।
এ দেশে যারা এই সময়টায় নিবিড় আন্দোলনে জড়িত ছিল, বাড়িঘর ছাড়া ছিল, চিকিৎসা পায়নি তাদের অনেকেই এখন নানান অসুস্থতা, বিষন্নতায় আক্রান্ত। তারা যে জিয়াউল আহসানের বিচার চায়, এ দাবিটা করার বোধ শক্তিও অনেকের নেই।
যেসব লেখকেরা নিয়মিত লিখত, তারাও কলম থামিয়ে নির্বাক বসে আছে। সবাই যেন বলছে, আমরা আমাদের করনীয় করে দিয়েছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। তোমরা এবার লুটপাটের অংশ না হয়ে দেশকে গড়ে তুলো, কসাইদের বিচার কর। লীগকে কোন ফর্মেটেই ক্ষমা করে দেয়ার মত আত্মঘাতী হয়ো না।
---
জিয়াউলের কাহিনি শুনলে মনে হয় এ কি তবে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার? বিশ্বে এর আগে বা পরে কারা ছিল এমন?
লুইস গারাভিতো (কলম্বিয়া, 1990s) – ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস কিলার। অন্তত ১৯৩ জন শিশু হত্যা করেছে, সংখ্যা ৩০০’রও বেশি হতে পারে। প্রতিটি ভিক্টিমকে ভয়ংকর নির্যাতনের পর হত্যা করা ছিল তার রীতি।
পেদ্রো লোপেজ (কলম্বিয়া/ইকুয়েডর/পেরু, 1970s–80s) – ডাকনাম Monster of the Andes। প্রায় ৩০০’র বেশি মেয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
হ্যারল্ড শিপম্যান (যুক্তরাজ্য, 1975–1998) – সাধারণ ডাক্তার হয়েও ২০০’র বেশি রোগীকে ধীরে ধীরে ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলেছিল।
গ্যারি রিজওয়ে (আমেরিকা, 1980s–1990s) – Green River Killer, অন্তত ৪৯ জন নারীকে হত্যা করে, দাবি আরও বেশি। সাধারণত গলা টিপে মেরে ফেলার পর লাশ ফেলে দিত দূরে।
স্যামুয়েল লিটল (আমেরিকা, 1970–2005) – এফবিআই-এর মতে আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার। ৫০ জন হত্যার প্রমাণ, কিন্তু স্বীকার করেছে ৯৩ জনকে।
এই তালিকাটা কেন দিলাম ? এ তালিকা দেয়া হল এজন্য যে, এদেশের মানুষ এ বিষয়টায় নিশ্চিত হোক যে, এখানে সোনার মানুষ যেমন জন্মে তেমনি এখানে জন্মে বিশ্ব ইতিহাসের সবচে বড় এবং বর্বর সিরিয়াল কিলারও।
আমরা এতোটা বছর কাদের সাথে মুখোমুখি ফাইট করে গেছি তার একটা ক্লিন কনসেপ্ট এদেশের মানুষের মনে থাকা উচিত। এরা যেন আর কখনো কোন অবস্থাতেই এদেশে না জন্মে সে ব্যাবস্থাও নেয়া উচিত।
একবার এক গাড়ি ব্যাবসায়ী দামি গাড়ি আমদানি করল। কিন্তু কাস্টমস্কে জানালো সে গাড়ির ভাংগারি আমদানি করেছে। আদালত থেকে বলা হল চেক করে দেখতে। চেক করে দেখা গেল সেটি দুইটি দামি গাড়ি।
আদালত আদেশ দিল, ব্যাবসায়ী সাহেব আমদানি হিসেবে যা উল্লেখ করেছেন, গাড়ি গুলোকে সেভাবে বুঝিয়ে দিতে। মানে নতুন গাড়ি গুলোকে ভাংগারি করে তাকে বুঝিয়ে দিতে।
রাষ্ট্রের আইনে যদি সম্ভব হত এবং আমার যদি ক্ষমতা থাকত তবে আমি ওই খুনীকে অবশ্যই ১০৩০ টুকরো করে কাচের জারে ভরে রেখে দিতাম যেন ভিক্টিম পরিবার গুলো চাইলে একটা করে জার নিজেদের কাছে নিয়ে রাখতে পারে। ভবিষ্যতের জন্য, ইতিহাসের জন্য, ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে তুলে রাখার জন্য।