09/07/2025
আমার ছোট্ট জীবনে আমি শুধু চাইতাম কেউ আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসুক, যত্ন করুক, শুধু 'আমার মানুষ' হয়ে থাকুক। ভালোবাসার বেলায় এর চেয়ে বেশি চাওয়া আমার ছিলো না।
আমি ভাবতাম, পৃথিবীটা অনেক সহজ, সুন্দর। আমি কারো জন্য এফোর্ট দিলে তার বিনিময়ে আমার জন্যও সে এফোর্ট দিবে। কাউকে আমি ভরসা করলে, সেই মানুষটাও আমার ভরসার মূল্য দিবে। আমি চোখ বুজে বিশ্বাস করতাম, আমি কারো সাথে অন্যায় না করলে আমার সাথেও কেউ অন্যায় করবে না।
পৃথিবী আমাকে খুব নিষ্ঠুরভাবে বুঝিয়েছিলো, জীবনটা আসলে ভয়ংকর রকমের আনফেয়ার। এখানে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েও কারো ভালোবাসা পাওয়া যায় না, এখানে অন্যায় না করলেও বিনিময়ে যাবজ্জীবন সাজা পেতে হয়, এখানে অনেক ভরসার ভালোবাসার মানুষও ভীষণ ঠাণ্ডা মাথায় অমানবিক কষ্ট দেয়, দিতেই থাকে।
একটা সময় আমি আফসোস করতাম, অভিযোগ করতাম। তারপর বুঝলাম, আফসোস কিংবা অভিযোগে নিয়তি বদলায় না। আমাদের জীবনে কোনো UNDO বাটন নাই, কোনো টাইম মেশিন নাই। আমাদের অতীত বদলানো যায় না, চাইলেও কোনো ভুল মুছে দেওয়া যায় না।
হাজারো কান্না, হাজারো শাস্তি, নিরন্তর আফসোস, অপরাধবোধ, আক্ষেপ কিংবা অভিযোগেও কোনো কিছু এক বিন্দু বদলানো যায় না।
শেষমেশ জীবন আমাকে শীতল কণ্ঠে বলেছে মেনে নিতে। আমি মেনে নিয়েছি। কোনো প্রকার যদি, কিন্তু, কেন - ছাড়াই মেনে নিয়েছি।
আমি মেনে নিয়েছি, হলুদ খামে স্থায়ী ঠিকানার জায়গাতে যে ঠিকানা লেখা হয় - সেই ঠিকানা ছেড়েও মাঝে মাঝে চলে আসতে হয়; জীবনের প্রয়োজনে, নিয়তির স্ক্রিপ্ট মেনে কিংবা অসুখে ধুঁকে ধুঁকে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া ঠেকাতে।
আমার এক বিন্দু অভিযোগ কিংবা আফসোস নেই। কারণ আমার খুব প্রিয় একটা লেখাতে আমি লিখেছিলামঃ
দিনশেষে আমরা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে জীবনের সমস্ত ঠিকঠাক হিসেব নিকেশের ভুলভাল মরে যাওয়া দেখি। ডিঙি নৌকাটা ঘুরে যায় অন্য দিকে, আমরা শুধু দেখি। আমরা দর্শক, আমরা অসহায় যাত্রী। আমরা নিজেকে মাঝি ভাবি। আমরা আসলে মাঝি নই, আমরা কখনোই মাঝি ছিলাম না।
নিজের জীবনটাকে প্রায়শই দর্শকের সারিতে বসে দেখতে হয়। দর্শকের চাওয়াতে জীবনের কোনো দৃশ্য থেমে যায় না, কোনো কাহিনী বদলায় না, চলতে থাকে নিয়তির স্ক্রিপ্ট মেনে।
আমার জীবনের একটা বড় অধ্যায় শেষ হয়েছে। সেই অধ্যায়টা চাইলেই অনেক লম্বা হতে পারতো। হ্যাঁ, 'চাইলেই'। কিন্তু স্রষ্টা কিংবা স্রষ্টার তৈরি করা মানুষ - কেউই তা চায় নি। বছরের পর বছর যন্ত্রণা টেনে নিয়ে হ্যাপি এন্ডিং নামক মরীচিকার পিছু ছুটে যাওয়ার মতো বোকামি আর হয় না। তাই কোনো কোনো উপন্যাস মাঝপথেই শেষ হয়, শেষ করে দিতে হয়।