10/04/2023
হুমায়ুন স্যারের
প্রেমের গল্প,
আমার পড়া সবথেকে ভালোলাগা এই গল্পটি ❤️❤️
ইদরিশ বলল, ভাইজান ভালো কইর্যা দেহেন। এর নাম অচিন বৃক্ষ।
বলেই থু করে আমার পায়ের কাছে একদলা থুতু ফেলল। লোকটির কুৎসিত অভ্যাস, প্রতিটি বাক্য দুবার করে বলে। দ্বিতীয়বার বলার আগে একদলা থুতু ফেলে।।
ভাইজান ভালো কইরা দেহেন, এর নাম অচিন বৃক্ষ।
অচিন পাখির কথা গানের মধ্যে প্রায়ই থাকে, আমি অচিন বৃক্ষের কথা এই প্রথম শুনলাম এবং দেখলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরা সবাই বৃক্ষ শব্দটা উচ্চারণ করছে শুদ্ধভাবে। তৎসম শব্দের উচ্চারণে কোনো গণ্ডগোল হচ্ছে না। অচিন বৃক্ষ না বলে অচিন গাছও বলতে পারত, তা বলছে না। সম্ভবত গাছ বললে এর মর্যাদা পুরোপুরি রক্ষিত হয় না।
ইদরিশ বলল, ভালো কইরা দেহেন ভাইজান, ত্রিভুবনে এই বৃক্ষ নাই।
তাই নাকি?
জে। ত্রিভুবনে নাই।
ত্রিভুবনে এই গাছ নাই শুনেও আমি তেমন চমৎকৃত হলাম না। গ্রামের মানুষের কাছে ত্রিভুবন জায়গাটা খুব বিশাল নয়। এদের ত্রিভুবন হচ্ছে আশেপাশের
আট-দশটা গ্রাম। হয়তো আশেপাশে এরকম গাছ নাই।
কেমন দেখতেছেন ভাইজান?
ভালো।
এইরকম গাছ আগে কোনোদিন দেখছেন?
না।
ইদরিশ বড়ই খুশি হল। থু করে বড় একদলা থুতু ফেলে খুশির প্রকাশ ঘটাল।
বড়ই আচানক, কী বলেন ভাইজান?
আচানক তো বটেই।
ইদরিশ এবার হেসেই ফেলল। পান খাওয়া লাল দাত প্রায় সব কটা বের হয়ে এল। আমি মনে-মনে বললাম, কী যন্ত্রণা! এই অচিন বৃক্ষ দেখার জন্যে আমাকে মাইলের উপরে হাঁটতে হয়েছে। বর্ষা কবলিত গ্রামে দুমাইল হাঁটা যে কী জিনিস, যারা কোনোদিন হাঁটেন নি তারা বুঝতে পারবেন না। জুতা খুলে খালিপায়ে হাঁটতে হয়েছে। হুক ওয়ার্মের জীবাণু যে শরীরে ঢুকে গেছে সে বিষয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত।
গাছটা দেখতাছেন কেমন কন দেহি ভাইজান?
আমি দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম। এরা শুধু গাছ দেখিয়ে খুশি নয়, প্রশংসাসূচক কিছুও শুনতে চায়। আমি কোনো বৃক্ষ-প্রেমিক নই। সব গাছ আমার কাছে একরকম মনে হয়।
আশেপাশে মানুষদেরই আমি চিনি না, গাছ চিনব কী করে? মানুষজন তাও কথা বলে, নিজেদের পরিচিত করার চেষ্টা করে। গাছেরা তেমন কিছুই করে না।
অচিন বৃক্ষ কেমন দেখলেন ভাইজান?
আমি ভালো করে দেখলাম। মাঝারি সাইজের কাঠালগাছের মতো উঁচু, পাতাগুলি তেঁতুলগাছের মতো ছোট-ছোট, গাছের কাণ্ড পাইনগাছের কাণ্ডের মতো মসৃণ। গাছ প্রসঙ্গে কিছু না বললে ভালো দেখায় না বলেই বললাম, ফুল হয়?
ইদরিশ কথা বলার আগেই, পাশে দাঁড়ানো রোগা লোকটা বলল, জে না— ফুল ফুটনের