19/07/2025
গুগল ব্লগস্পট (Google Blogspot), যা বর্তমানে মূলত "ব্লগার" (Blogger) নামেই পরিচিত, তার একটি সম্পূর্ণ ধারণা নিচে উদাহরণসহ ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো।
গুগল ব্লগস্পট/ব্লগার: A to Z ধারণা
গুগল ব্লগার হলো গুগলের একটি বিনামূল্যের ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম, যা ব্যবহার করে যে কেউ খুব সহজে নিজের একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করতে পারে। এটি নতুনদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় কারণ এর জন্য কোনো হোস্টিং কেনার বা জটিল কোডিং জানার প্রয়োজন হয় না।
ব্লগার (Blogger) এবং ব্লগস্পট (Blogspot) এর মধ্যে পার্থক্য:
* Blogger: এটি হলো প্ল্যাটফর্ম বা সার্ভিসটির নাম, যেখানে আপনি আপনার ব্লগ তৈরি ও পরিচালনা করেন (যেমন: blogger.com)।
* Blogspot: এটি হলো আপনার ব্লগের ডিফল্ট ডোমেইন বা ঠিকানা (যেমন: yourblogname.blogspot.com)।
সহজ কথায়, আপনি "ব্লগার" ব্যবহার করে একটি ব্লগ তৈরি করেন, যার ঠিকানা হয় "ব্লগস্পট" ডোমেইনের অধীনে।
কেন ব্লগার ব্যবহার করবেন?
* সম্পূর্ণ বিনামূল্যে: হোস্টিং এবং সাবডোমেইনের জন্য কোনো টাকা লাগে না।
* খুব সহজ: নতুনরাও কোনো টেকনিক্যাল জ্ঞান ছাড়াই ব্লগিং শুরু করতে পারে।
* গুগলের নিরাপত্তা: গুগল নিজে এর সার্ভার পরিচালনা করে বলে এটি অত্যন্ত নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য।
* গুগল অ্যাডসেন্স: খুব সহজে গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSense) যুক্ত করে ব্লগ থেকে আয় করা যায়।
* কাস্টম ডোমেইন: আপনি চাইলে blogspot.com বাদ দিয়ে নিজের কেনা ডোমেইন (যেমন: yourdomain.com) যুক্ত করতে পারেন।
ধাপে ধাপে ব্লগার দিয়ে ব্লগ তৈরির প্রক্রিয়া
ধাপ ১: গুগল অ্যাকাউন্টে সাইন ইন করুন
প্রথমে blogger.com ওয়েবসাইটে যান। আপনার যদি একটি জিমেইল (Gmail) অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে সেটি দিয়েই সাইন ইন করুন। গুগল অ্যাকাউন্ট না থাকলে একটি তৈরি করে নিন।
ধাপ ২: আপনার ব্লগের জন্য একটি নাম দিন
সাইন ইন করার পর আপনাকে আপনার ব্লগের জন্য একটি নাম বা শিরোনাম (Title) দিতে বলা হবে। এটি আপনার ব্লগের প্রধান নাম হিসেবে সবার কাছে প্রদর্শিত হবে।
* উদাহরণ: "আমার বাংলা ব্লগ" বা "টেক রিভিউ"
ধাপ ৩: ব্লগের ঠিকানা (URL) বেছে নিন
এরপর আপনাকে আপনার ব্লগের জন্য একটি ওয়েব ঠিকানা (URL) বেছে নিতে হবে। এই ঠিকানাটি ইউনিক হতে হবে, অর্থাৎ বিশ্বে আর কারো এই নামে ব্লগ থাকা যাবে না।
* উদাহরণ: আপনি যদি amarblog নাম দিতে চান, তাহলে আপনার ঠিকানা হবে amarblog.blogspot.com। যদি এই ঠিকানা উপলব্ধ না থাকে, তবে আপনাকে অন্য নাম চেষ্টা করতে হবে, যেমন amarblog2025.blogspot.com।
ধাপ ৪: আপনার প্রদর্শিত নাম (Display Name) নিশ্চিত করুন
সবশেষে, আপনি যখন কোনো পোস্ট লিখবেন, তখন লেখকের নাম হিসেবে কী দেখানো হবে, তা ঠিক করুন।
* উদাহরণ: আপনার নিজের নাম বা ব্লগের নাম।
এই ধাপগুলো সম্পন্ন হলেই আপনার ব্লগ তৈরি হয়ে যাবে এবং আপনি ব্লগার ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করবেন।
ব্লগার ড্যাশবোর্ডের A to Z পরিচিতি
ব্লগ তৈরি হওয়ার পর আপনি যে প্যানেলটি দেখতে পাবেন, সেটিই হলো আপনার কন্ট্রোল প্যানেল বা ড্যাশবোর্ড। এর বাম পাশের মেনুতেই সব অপশন থাকে।
১. Posts (পোস্ট):
* এটি আপনার ব্লগের মূল অংশ। এখানে আপনি আপনার লেখা বা আর্টিকেলগুলো লিখবেন।
* New Post: নতুন আর্টিকেল লেখার জন্য এখানে ক্লিক করতে হয়।
* All Posts: আপনার লেখা সমস্ত পোস্ট এখানে তালিকা আকারে থাকে। আপনি এখান থেকে পুরোনো পোস্ট এডিট, ড্রাফট বা ডিলিট করতে পারেন।
২. Stats (পরিসংখ্যান):
* এখানে আপনি আপনার ব্লগের ভিজিটর সম্পর্কিত তথ্য দেখতে পাবেন।
* কতজন আপনার ব্লগ পড়ছে (Pageviews), কোন দেশ থেকে পড়ছে, কোন পোস্ট বেশি জনপ্রিয়—এই সব তথ্য এখানে পাওয়া যায়।
৩. Comments (মন্তব্য):
* আপনার পোস্টে পাঠকদের করা সমস্ত মন্তব্য এখানে জমা হয়। আপনি এখান থেকে মন্তব্য প্রকাশ (Publish), স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত (Mark as Spam) বা মুছে ফেলতে (Delete) পারেন।
৪. Earnings (আয়):
* ব্লগ থেকে আয় করার জন্য এখানে গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSense) যুক্ত করার অপশন থাকে।
* আপনার ব্লগ যখন অ্যাডসেন্সের শর্তাবলী পূরণ করবে (যেমন: নির্দিষ্ট পরিমাণ মানসম্মত কন্টেন্ট), তখন আপনি এখান থেকে আয়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৫. Pages (পেজ):
* পোস্ট এবং পেজের মধ্যে পার্থক্য হলো, পোস্ট সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল (যেমন: আজকের খবর), কিন্তু পেজগুলো সাধারণত স্থির থাকে।
* উদাহরণ: "আমাদের সম্পর্কে" (About Us), "যোগাযোগ" (Contact), "গোপনীয়তা নীতি" (Privacy Policy) ইত্যাদি তৈরির জন্য পেজ ব্যবহার করা হয়।
৬. Layout (লেআউট):
* এটি আপনার ব্লগের গঠন বা কাঠামো সাজানোর জায়গা।
* এখানে আপনি বিভিন্ন "গ্যাজেট" (Gadget) বা "উইজেট" (Widget) যুক্ত করতে পারেন। যেমন:
* Header: ব্লগের লোগো ও শিরোনাম।
* Sidebar: সার্চ বার, জনপ্রিয় পোস্টের তালিকা, ক্যাটাগরি (Labels)।
* Footer: কপিরাইট তথ্য বা অন্যান্য লিংক।
* আপনি শুধু ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ (Drag and Drop) করে এই গ্যাজেটগুলোর অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেন।
৭. Theme (থিম):
* থিম হলো আপনার ব্লগের ডিজাইন বা বাহ্যিক রূপ।
* ব্লগারে অনেকগুলো ফ্রি থিম দেওয়া থাকে, আপনি পছন্দমতো যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
* Customize: থিমের রঙ, ফন্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি পরিবর্তন করতে পারবেন।
* Edit HTML: আপনি যদি কোডিং জানেন, তবে এখান থেকে থিমের HTML/CSS কোড সম্পাদনা করে নিজের মতো ডিজাইন করতে পারবেন। এছাড়া, বাইরে থেকে প্রিমিয়াম বা ফ্রি থিম কিনেও এখানে আপলোড করা যায়।
৮. Settings (সেটিংস):
* এটি আপনার ব্লগের কন্ট্রোল সেন্টার। এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অপশন থাকে।
* Basic: ব্লগের শিরোনাম, বর্ণনা পরিবর্তন করা যায়।
* Privacy: আপনার ব্লগ সার্চ ইঞ্জিনে দেখানো হবে কি না, তা ঠিক করতে পারেন।
* Custom Domain: নিজের কেনা ডোমেইন (যেমন: www.yourname.com) এখানে যুক্ত করতে পারেন।
* Meta Tags: সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) এর জন্য আপনার ব্লগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে যুক্ত করতে পারেন।
উদাহরণসহ বিভিন্ন ধরণের ব্লগ
আপনি ব্লগার ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের ব্লগ তৈরি করতে পারেন:
* ব্যক্তিগত ব্লগ (Personal Blog):
* উদাহরণ: একজন ব্যক্তি তার দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ কাহিনী বা শখের বিষয় নিয়ে লেখেন। ঠিকানা হতে পারে rahimerdinlipi.blogspot.com।
* প্রযুক্তি ব্লগ (Technology Blog):
* উদাহরণ: নতুন মোবাইল ফোন, গ্যাজেট রিভিউ, সফটওয়্যার টিউটোরিয়াল নিয়ে লেখা হয়। ঠিকানা হতে পারে probash*tech.blogspot.com।
* রান্নার ব্লগ (Recipe Blog):
* উদাহরণ: বিভিন্ন রান্নার রেসিপি, টিপস ও ছবি দিয়ে সাজানো ব্লগ। ঠিকানা হতে পারে rannaghorbd.blogspot.com।
* শিক্ষামূলক ব্লগ (Educational Blog):
* উদাহরণ: স্কুল-কলেজের বিভিন্ন বিষয়ের নোট, সাজেশন বা সাধারণ জ্ঞানের তথ্য শেয়ার করা হয়। ঠিকানা হতে পারে pathshalaonline.blogspot.com।
শেষ কথা
গুগল ব্লগার হলো ব্লগিং জগতে পা রাখার জন্য একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। যারা কোনো খরচ ছাড়াই লেখালেখি শুরু করতে চান এবং অনলাইন دنیا সম্পর্কে জানতে চান, তাদের জন্য এর চেয়ে ভালো বিকল্প কমই আছে। যদিও WordPress.org-এর মতো উন্নত ফিচার এতে নেই, তবে একজন নতুন ব্লগারের জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই এখানে রয়েছে।
Publish your passions your way. Whether you’d like to share your knowledge, experiences or the latest news, create a unique and beautiful blog.