08/03/2025
আজ ৮ মার্চ ২০২৫, আন্তর্জাতিক নারী দিবস!
একটা নারী-বিদ্বেষী Honest Confession দেই?
❝ I hate dealing with female patients, i feel exhausted dealing with them! ❞
কেন বললাম? কয়েকটা দুর্বিষহ ঘটনা বলি তাহলে.......
☞ Skin & Dermatology প্লেসমেন্ট ছিলো সাতদিন, এক বাচ্চা রোগীর মা কাঁনতেছিলো "ম্যাডাম একটা সাদা হওয়ার কিরিম লিখে দেন না, মাইয়ার বাপ সারাদিন গালাগালি করে! মাইয়ার গায়ের চামড়া কালো,বিয়ে দেওন যাইবোনা! মাইয়া পালক দিয়া দিবো নাইলে!" 🙂
☞ Lupus Skin Disease এর পেশেন্ট এসেছে, যিনি ৮ বছর যাবত বহন করে যাচ্ছেন!! কিন্তু হাসপাতালে আসেন নাই, কারণ স্বামী চিকিৎসা করাতে চায়না! দ্বিতীয় বিয়ে করবেন, বউ খুজতেছেন ভদ্রলোক! 😃
☞ Obstucted Labour এর পেশেন্ট আসছে গাইনীতে।বাচ্চা আঁটকাইয়ে আছে, নরমাল ডেলিভারী পসিবল না, তাও সি-সেকশন করাবেনা! কারণ আল্ট্রা থেকে জানতে পারছে, মেয়ে বাচ্চা!! মেয়ে বাচ্চা তাদের দরকারই নাই! তাই এর পেছনে investment এর দরকার নাই! 😊
☞ 2nd Degree Perineal Tear এর এক পেশেন্ট আসছিলো। ৮ বছর ধরে রিপেয়ার করে নাই !!! এখন আসছেন কেনো? কারণ এতোদিন স্বামীর কোনো সমস্যা ছিলোনা, আসতে দেয় নাই। এখন আর ভালো লাগতেছেনা, তাই হাসপাতাল পাঠাইছে! 😅
☞ Molar Pregnancy এর পেশেন্ট, হিমোগ্লোবিন ২, ICU লাগবে,তাও হায়ার সেন্টারে নিবেনা, এতো টাকা ঢালতে পারবেনা! রোগী মা/রা গেলে অবশ্য হস্পিটাল ভাঙ্গচুর করতে ঠিকই পারবে!😆
☞ High Risk Pregnancy! বয়স ৪৫, Eclampsic, চিকিৎসা করাবে না, বাড়িতে নিয়ে যাবে! কারণ হাসপাতালে থাকলে বাড়িতে রান্না বান্নার সমস্যা হয়! তাহলে বাচ্চা নিতেছেন কেনো? আগের ৫ টাই মেয়ে যে! 😂
☞ Full Term Pregnancy, একটা আল্ট্রা নাই,একটা ব্লাডগ্রুপিংও নাই! ব্যাথা উঠছে, বাড়িতে টানা-হেচড়া করে PPH বাধায়ে হাসপাতালে নিয়ে আসছে!
কাজ শেষ, সরকারি হাসপাতাল, সরকারি ডাক্তার বসেই আছে সেবা দেয়ার জন্য,উনাদের আর মাথাব্যাথার দরকার কি? এমন মেন্টালিটির রোগী প্রতিদিন ৫/৭ টা কমন! 🙂
☞ Ra/pe Victim! বেশীলোক জানাজানি করা যাবেনা, পুলিশ কেইস করা যাবেনা! অপরাধীর ধামাচাপা দেয়া হয়ে গেছে, সালিশ হইছে, মেয়ের বাপ টাকা পাইসে, দুইপক্ষ খুশি, এখন মেয়ে সুস্থ হইলেই শেষ, সোনার বাংলাদেশ! ❤️
☞ Physical Assault এর পেশেন্ট আসছে। স্বামী গলা চেঁপে ধরসিল, দেয়ালে নিয়ে মাথা বাড়ি দিসে, কিলাইসে, মারছেও সারারাত!
সকালে রোগী পালায়ে আসছে ডাক্তার দেখাইতে, ঘুষি মারসে, চেয়ার উড়ায়ে মারসে, মাথার চুল কেটে দিছে, হাতে ছ্যাঁকা দিসে, গরম তেল ঢেলে দিছে,এগুলা তো কমন কেস!!!এগুলোর জন্য আলাদা করে কস্ট পাইতে হবে, মনেই আসেনাই কখনো ! 🤗
☞ Male Ward - এ একটা ওষুধ কিনে আনা লাগলে, একটা টেস্ট দিলে, সবাই কো-অপারেটিভ! লিখে দেন, নিয়ে আসি টাইপ 😙 আমি ট্রিটমেন্ট দিয়ে খুশি,রোগীও খুশী,ঝামেলা শেষ! আর,
Female Ward এ patient compliance নিয়ে,বিরক্ত হয়নাই, এমন ডাক্তার আমি কখনো চোখে দেখিনাই,কেউ জেনে থাকলে কমেন্ট বক্সে জানায়েন।
তো দিনশেষে বাস্তবতা কি জানেন?
এদেশে হাজার হাজার মহিলা ডাক্তার দেখাইতে পারেনা, কারণ তাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসার লোক নাই।
মহিলারা তাদের হিস্ট্রি ঠিকঠাকমতো দিতে পারেনা,কারণ তারা তাদের সমস্যা জানেই না!
সরকারি হাসপাতালের একটা ৫০ টাকার টিকেট কিনে আনা, কোন একটা মেডিসিন কিনে আনতে যাওয়ার মতো ব্যাসিক ব্যাপারগুলোতেও এরা অন্যের উপর ডিপেন্ডেন্ট!
বছরের পর বছর পিল খাচ্ছে, MI, Stroke, Obesity বাধাইতেছে, ঠিকমতো না খেয়ে Anaemia বাধাইতেছে, রঙ ফর্সাকারী ক্রিম মেখে Skin Disease বানায়ে ঘুরতেছে!!!
এরা মেয়ে ডাক্তারদের ডাক্তার বলে একনলেজ করতে পারেনা, কারণ একটা বড় জনগোষ্ঠী এখনো মেয়েদের ডাক্তার ব্যারিস্টারী পড়ায়ে কি হবে? এই কনসেপ্ট থেকে বের হয়ে আসতে পারেনাই!
দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ফিমেইল ওয়ার্ডের ৭০% ফিমেইল পেশেন্টের চিত্র এইটা, এর ব্যতিক্রম কি নাই? অবশ্যই আছে! এবং এগুলো বাকী ৩০-৪০% ভাগ্যবতী পেশেন্টের চিত্র,যেগুলা হাতেগোনা যায়।
এতো শুমারী হচ্ছে...... Empowerment, Development এর মতো ভারী ভারী শব্দ উচ্চারণ করা হয়, বাট এগুলো মেজারমেন্টের ক্রাইটেরিয়া কী?
আমার মতো, আমাদের মতো Well Prevailiged মেয়েদের দিয়ে? আমি বা আমরা মতো যে নারীরা উন্নয়নকে রিপ্রেজেন্ট করি, তার ম্যাক্সিমামই , মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর আমরা!
একটা ওয়েল প্রিভিলাইজড এনভায়রনমেন্ট পাইছি বলেই করি, বাকী অধিকাংশ নিম্ন,নিম্ন মধ্যবিত্ত, জনগোস্ঠী তাদের একটা ফান্ডামেন্টাল বেসিক রাইট-চিকিৎসা সেবা সম্পর্কেই জানেনা! জানলেও হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে পারতেছে না,আর আসলেও এনাফ সাপোর্ট পাইতেছে না!
সেখানে শুধু আমাকে দিয়ে বা আমার মতো কয়েকজন নারীকে দিয়ে নারীর উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব?
যদি আমার পিছনে আরো ৮০% নারী অন্ধকারেই জীবন কাটায়!
এগুলা নিয়ে কথা বলা উচিত, কিন্তু এদেশে কথা হয়,রেইপ রেশিও-তে ইউরোপ আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ কতো উন্নত,কিংবা একজন ইভটিজারকে ফুলের মালা দেয়া হয় পাব্লিকলি!!
অথচ আমি দায়িত্ব নিয়ে লিখে দিতে পারবো নিজের ঘরের ফিমেইলদের নিয়ে এদের সচেতনতা শুন্যের কাছাকাছি, অথচ একটা দেশের উন্নয়ন দেশের একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে অন্ধকারে রেখে, অবহেলায় রেখে কখনোই সম্ভব না।
এই সহজ সত্যটাই এই দেশের মানুষ এখনো মেনে নেয় নি, আদৌ কখনো মেনে নিবে কিনা, তা আল্লাহ-ই ভালো জানেন!