Bhoutik Kotha

Bhoutik Kotha ভৌতিক কথার ইউটিউব চ্যানেল - https://www.youtube.com/
ফেইসবুক গ্রুপে জয়েন করুন - https://www.facebook.com/groups/bhoutikkothaofficial/

PlayList
https://www.youtube.com/playlist?list=PLvrcsbnfeOyU-_OkMbBB7TAXusNM92ZNp
BHOUTIK KOTHA is a Bengali weekly horror storytelling show which is brought to you by it's own Youtube channel, hosted by Jeffrey Khan horror storyteller of Bangladesh. In this show, Jeffrey Khan and many other guests share thier supernatural experiences & stories for their listeners. If u want to share your own story with us then email us here - [email protected]

 #খালি মাঠে মাঝরাতে ছায়ার সারি দাঁড়িয়ে থাকা।**লেখক:** অনিমেষ রায়সালটা সম্ভবত ২০০৮ কি ২০০৯ হবে। আমি তখন সবেমাত্র ঢাকার এক...
12/08/2025

#খালি মাঠে মাঝরাতে ছায়ার সারি দাঁড়িয়ে থাকা।
**লেখক:** অনিমেষ রায়

সালটা সম্ভবত ২০০৮ কি ২০০৯ হবে। আমি তখন সবেমাত্র ঢাকার একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। থাকতাম ঢাকার অদূরে, সাভারের কাছাকাছি একটা এলাকায়। সেখান থেকে প্রতিদিন ভার্সিটিতে যাতায়াত করাটা বেশ কষ্টকর ছিল, তাই কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি একটা বাসা ভাড়া নেব। তাতে যাতায়াতের সুবিধা হবে, আবার একসাথে পড়াশোনাটাও করা যাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আমরা চার বন্ধু—আমি, সুমন, রাশেদ আর নয়ন মিলে একটা দুই রুমের মোটামুটি মানের ফ্ল্যাট খুঁজে বের করলাম। বাড়িটা একদম নতুন না হলেও বেশ পরিচ্ছন্ন ছিল, আর সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল, ছাদটা ব্যবহারের অনুমতি ছিল। আমাদের আনন্দের সীমা রইল না।

বাসা নেওয়ার পরের কয়েকটা দিন খুব আনন্দে কাটলো। নতুন পরিবেশ, নতুন স্বাধীনতা। ক্লাস শেষে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেওয়া, একসাথে খাওয়া-দাওয়া, গভীর রাত পর্যন্ত ছাদে বসে গিটার বাজিয়ে গান গাওয়া—সব মিলিয়ে সময়টা স্বপ্নের মতো কাটছিল। আমাদের ফ্ল্যাটটা ছিল চারতলা বাড়ির তিনতলায়। বাড়ির মালিক দোতলায় থাকতেন, আর নিচতলা আর চারতলা অন্য ভাড়াটেদের দখলে ছিল। বাড়ির পাশেই ছিল একটা বিশাল ফাঁকা মাঠ। দিনের বেলায় সেখানে ছোট ছোট ছেলেরা ক্রিকেট খেলত, বিকেলে এলাকার বয়স্করা হাঁটাহাঁটি করতেন। কিন্তু রাত নামলেই মাঠটা কেমন যেন নিস্তব্ধ, অন্ধকার হয়ে যেত। মাঠের এক কোণে কয়েকটা পুরনো তালগাছ এমনভাবে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন রাতের আঁধারে কোনো অশরীরী প্রহরী।

ঘটনার শুরুটা হয়েছিল খুব সাধারণভাবেই। তখন শীতকাল আসন্ন। সন্ধ্যা তাড়াতাড়ি নেমে আসে আর রাতগুলো হয় দীর্ঘ আর শীতল। আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল, তাই রাত জেগে পড়াশোনা করাটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সারাদিন ক্লাস আর পরীক্ষার পর রাতে যখন পড়তে বসতাম, রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করত। তাই ক্লান্তি দূর করতে আমরা প্রায়ই ছাদে যেতাম, কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে চা খেতাম।

একদিন রাতে, আনুমানিক দেড়টা কি দুটো বাজে, আমি আর সুমন বারান্দায় দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম। বাকি দুজন তখন ঘুমে অচেতন। হালকা কুয়াশা নামতে শুরু করেছে, চারপাশটা কেমন যেন থমথমে। রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলো কুয়াশার চাদর ভেদ করে একটা ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করেছে। হঠাৎ করেই সুমনের চোখে পড়ল মাঠটার দিকে।

ও চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে নিচু গলায় বলল, “কিরে, মাঠের মধ্যে ওগুলো কীসের আলো?”

আমি ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে মাঠের দিকে তাকালাম। সত্যিই তো! মাঠের ঠিক মাঝখানে, যেখানে দিনের বেলা ছেলেরা ক্রিকেট খেলে, সেখানে কয়েকটা আবছা আলোর বিন্দু দুলছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন কেউ হারিকেন বা মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছে। আলোটা স্থির নয়, অল্প অল্প কাঁপছে।

আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, “এত রাতে মাঠে কে থাকবে? হয়তো এলাকার কেউ বসে আড্ডা দিচ্ছে।”

সুমন মাথা নেড়ে বলল, “আরে না। এত রাতে এই ঠান্ডার মধ্যে মাঠে বসে কে আড্ডা দেবে? আর মানুষ থাকলে তো কথাবার্তার আওয়াজ পাওয়া যেত। দেখ, কী অদ্ভুত রকম চুপচাপ চারপাশটা।”

ওর কথাটা আমারও যৌক্তিক মনে হলো। সত্যিই, কোনো শব্দ নেই। শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। আমরা দুজনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম সেদিকে তাকিয়ে। আলোটা তখনও দুলছে। কিছুক্ষণ পর মনে হলো, আলোর বিন্দুগুলো যেন কয়েকটা ছায়ার মতো আকৃতির চারপাশে ঘুরছে। কুয়াশার কারণে অবয়বগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না, কিন্তু এটা নিশ্চিত যে ওখানে কিছু একটা আছে।

আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন ছ্যাঁৎ করে উঠল। বললাম, “চল তো ভেতরে যাই। ঠান্ডা লাগছে।” আমার গলার স্বরে হয়তো ভয়টা স্পষ্ট ছিল।

সুমন আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করল। বলল, “ভয় পেলি নাকি? আরে ধুর, কিছু না। হয়তো সিকিউরিটি গার্ড বা অন্য কেউ হবে।”

কিন্তু ওর কথাতেও জোর ছিল না। আমরা আর কথা না বাড়িয়ে ভেতরে চলে এলাম। সেই রাতে আমার ঘুমটা ভালো হলো না। বারবার চোখ বন্ধ করলেই মাঠের ওই দুলতে থাকা আলো আর আবছা ছায়ামূর্তিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘটনাটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। ভার্সিটির ব্যস্ততা, ক্লাস, পরীক্ষা—এসবের চাপে রাতের ওই অদ্ভুত দৃশ্যটা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটল কয়েকদিন পর। সেদিন ছিল শুক্রবার, ভার্সিটি বন্ধ। আমরা সারা দিন আড্ডা দিয়ে, সিনেমা দেখে কাটিয়েছি। রাতে খাওয়ার পর সবাই মিলে ছাদে গেলাম। উদ্দেশ্য ছিল কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে তারপর ঘুমাতে যাওয়া।

ছাদে ওঠার পর হিমেল হাওয়ায় শরীরটা জুড়িয়ে গেল। আকাশটা ছিল বেশ পরিষ্কার, কয়েকটা তারা মিটমিট করে জ্বলছে। আমরা ছাদে পাতা একটা পুরনো মাদুরে গোল হয়ে বসলাম। রাশেদ ওর ভাঙা গলায় গান ধরার চেষ্টা করছিল, আর আমরা বাকিরা হাসাহাসি করছিলাম। সময়টা বেশ ভালোই কাটছিল।

হঠাৎ নয়ন বলে উঠল, “আচ্ছা, ওই মাঠটা রাতের বেলা দেখতে এমন ভয়ংকর লাগে কেন রে?”

ওর কথায় আমাদের আড্ডাটা হঠাৎ থেমে গেল। সবাই মাঠটার দিকে তাকালাম। অন্ধকার মাঠটা যেন একটা বিশাল কালো চাদর বিছিয়ে রেখেছে। তালগাছগুলো রাতের আঁধারে আরও বেশি জীবন্ত আর রহস্যময় হয়ে উঠেছে।

সুমন কয়েকদিন আগের রাতের ঘটনাটা ওদের বলল। রাশেদ বরাবরই একটু সাহসী আর যুক্তিবাদী। ও সব শুনে হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলল, “আরে ধুর, তোরা সব ভীতুর ডিম। ও কিছু না। হয়তো শেয়াল বা কুকুর দৌড়াদৌড়ি করছিল, আর তোরা কুয়াশার মধ্যে ওটাকে ছায়ামূর্তি ভেবেছিস।”

আমি বললাম, “কিন্তু আলো জ্বলছিল যে! কুকুরের হাতে তো আর হারিকেন থাকে না।”

আমার কথায় সবাই চুপ হয়ে গেল। রাশেদও আর কিছু বলল না। আমরা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। ছাদের নীরবতায় মাঠের দিক থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝিঁর ডাক আরও প্রকট হয়ে কানে বাজছিল।

ঠিক সেই মুহূর্তে, আমাদের সবাইকে চমকে দিয়ে মাঠের ঠিক মাঝখানটায় আবার সেই আলোটা জ্বলে উঠল। একটা নয়, দুটো নয়, সারি দিয়ে প্রায় সাত-আটটা আলো। আবছা, হলদেটে আলো। সেগুলো স্থির নয়, আগের মতোই অল্প অল্প কাঁপছে। আর সেই আলোর চারপাশে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কয়েকটা দীর্ঘ, অস্পষ্ট ছায়ার সারি। ছায়াগুলো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, নড়ছে না। দেখে মনে হচ্ছে, যেন কতগুলো মানুষ সারি বেঁধে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে।

আমাদের চারজনের মুখেই কথা সরল না। শরীরের রক্ত যেন হিম হয়ে গেল। রাশেদের মতো সাহসী ছেলেও ফ্যাকাশে মুখে সেদিকে তাকিয়ে ছিল। আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম, ওগুলো কোনো কুকুর বা শেয়াল নয়। ওগুলো মানুষের মতোই ছায়া। কিন্তু এত রাতে কারা ওখানে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে? আর কেনই বা থাকবে?

নয়ন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “ও... ওগুলো কারা?”

কেউ কোনো উত্তর দিতে পারল না। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। ছায়াগুলো এক চুলও নড়ছে না। শুধু আলোটা মৃদু কাঁপছে। আমার মনে হচ্ছিল, ছায়াগুলো যেন আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। একটা তীব্র শীতল স্রোত আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল। মনে হলো, এই মুহূর্তে যদি ছায়াগুলো আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে, তাহলে হয়তো ভয়েই আমরা জ্ঞান হারাব।

কতক্ষণ ওভাবে তাকিয়ে ছিলাম জানি না। হঠাৎ করেই, যেমন হুট করে জ্বলে উঠেছিল, ঠিক তেমনই হুট করে আলোসহ ছায়াগুলো মিলিয়ে গেল। মাঠটা আবার আগের মতোই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে গেল। যেন ওখানে কিছুই ছিল না, পুরোটাই আমাদের চোখের ভুল।

কিন্তু আমরা চারজনেই জানি, ওটা চোখের ভুল ছিল না। আমরা সবাই একই জিনিস দেখেছি। ছাদ থেকে নামার জন্য যখন উঠলাম, তখন দেখলাম আমাদের সবার হাত-পা কাঁপছে। সেই রাতে আমরা কেউ একা ঘুমাতে পারিনি। একটা রুমের মধ্যেই চারজন একসাথে শুয়েছিলাম, কিন্তু ঘুম কারো চোখেই আসেনি। সারারাত শুধু ওই একটা কথাই মাথায় ঘুরছিল—খালি মাঠে মাঝরাতে কারা ওই ছায়ার সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে?

ছাদের সেই রাতের ঘটনার পর আমাদের চারজনের মধ্যেই একটা চাপা আতঙ্ক কাজ করতে শুরু করল। দিনের বেলায় ভার্সিটির ব্যস্ততা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই একটা необъясনীয় অস্বস্তি আমাদের গ্রাস করত। যে বারান্দাটা একসময় আমাদের খুব প্রিয় ছিল, এখন সেদিকে যেতেও গা ছমছম করে। মাঠের দিকে তাকাতে কেমন যেন ভয় হয়। আমরা পারতপক্ষে সন্ধ্যার পর আর বারান্দায় যেতাম না, ছাদের দিকে তো পা-ই বাড়াতাম না।

কয়েকদিন পর, আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলো। হাতে বেশ কয়েকদিনের ছুটি। অন্য সময় হলে হয়তো আমরা খুশিতে হইচই করতাম, বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করতাম। কিন্তু এবার সবার মনই ভার। বাড়িওয়ালা, পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ভদ্রলোক, নাম আনোয়ার সাহেব। তিনি আমাদের সাথে বেশ ভালো ব্যবহারই করতেন। একদিন সকালে বাজারে যাওয়ার পথে সিঁড়িতে তার সাথে দেখা। তিনি আমাদের দেখে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন, “কী খবর বাবা, তোমাদের পরীক্ষা তো শেষ? চেহারা এমন শুকনো কেন? শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক আছে তো?”

আমরা একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলাম। সুমনই প্রথম মুখ খুলল। ইতস্তত করে বলল, “না আঙ্কেল, শরীর ঠিক আছে। আসলে পরীক্ষার চাপে কয়েক রাত ভালো ঘুম হয়নি তো, তাই হয়তো এমন দেখাচ্ছে।”

আনোয়ার সাহেব আমাদের মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তার অভিজ্ঞ চোখ হয়তো আমাদের মনের ভেতরের ভয়টা পড়তে পেরেছিল। তিনি গলার স্বরটা একটু নামিয়ে এনে বললেন, “অন্য কোনো সমস্যা নেই তো? মানে, রাতে কোনো অসুবিধা হয়?”

তার প্রশ্নটা এত সরাসরি ছিল যে আমরা চমকে উঠলাম। রাশেদ, যে কিনা সবচেয়ে বেশি যুক্তিবাদী ছিল, সে-ই এবার থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করে বসল, “আঙ্কেল, আপনি কিছু জানেন নাকি? মানে... ওই মাঠটা নিয়ে...”

আনোয়ার সাহেবের মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল। তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। তিনি চারপাশে একবার দেখে নিয়ে আরও নিচু গলায় বললেন, “তোমরাও কিছু দেখেছ, তাই না?”

তার এই একটা প্রশ্নেই আমাদের সব দ্বিধা কেটে গেল। আমরা বুঝতে পারলাম, এই বাড়ির রহস্য বা মাঠের এই অস্বাভাবিকতার কথা তিনি জানেন। আমরা চারজনেই একসাথে মাথা নাড়লাম। আনোয়ার সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “আমি তোমাদের বলেছিলাম, এই বাড়িটা নেওয়ার আগে। বলেছিলাম, এই এলাকায় কিছু ঝামেলা আছে। তোমরা তখন ছেলেমানুষি করে উড়িয়ে দিয়েছিলে।”

আমরা অবাক হলাম। তিনি কখন বলেছিলেন? পরে মনে পড়ল, বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় তিনি কথায় কথায় বলেছিলেন, “এলাকাটা ভালো, তবে রাত-বিরেতে বেশি বাইরে থেকো না। আর ছাদ বা বারান্দায় বেশি রাত পর্যন্ত থাকার দরকার নেই।” আমরা তখন তার কথাটাকে সাধারণ সতর্কবার্তা হিসেবেই ধরে নিয়েছিলাম। এর পেছনে যে এত গভীর কোনো রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে, তা কল্পনাও করিনি।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কীসের ঝামেলা আঙ্কেল? ওই মাঠে রাতে কী হয়? আমরা যা দেখেছি, তা কি সত্যি?”

আনোয়ার সাহেব আমাদের নিয়ে তার ফ্ল্যাটের বসার ঘরে গেলেন। তার স্ত্রী আমাদের জন্য চা নিয়ে এলেন। পরিবেশটা থমথমে হয়ে উঠল। তিনি বলতে শুরু করলেন, “তোমরা যা দেখেছ, তা চোখের ভুল নয়। এই মাঠে ওসব দেখা যায়। বিশেষ করে শীতের রাতে, যখন কুয়াশা নামে। আমরা যারা পুরনো বাসিন্দা, তারা সবাই এটা জানি। इसीलिए কেউ রাত নামলে ও মাঠের দিকে ভুলেও তাকায় না।”

তিনি একটু থামলেন। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন, “আজ থেকে প্রায় বছর পনেরো-বিশেক আগের কথা। এই মাঠটা তখন এত ফাঁকা ছিল না। এখানে একটা বিশাল বস্তি ছিল। অনেক গরিব, দিনমজুর মানুষ থাকত। একদিন শীতের এক রাতে, বস্তিতে আগুন লাগে। কীভাবে লেগেছিল, তা কেউ ঠিক করে বলতে পারে না। কেউ বলে রান্নার চুলা থেকে, কেউ বলে ষড়যন্ত্র করে কেউ লাগিয়ে দিয়েছিল। আগুনটা এত ভয়াবহ ছিল যে, কেউ বের হওয়ার সুযোগ পায়নি। ঘুমের মধ্যেই নারী-পুরুষ-শিশুসহ প্রায় জনা পঞ্চাশেক মানুষ পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়।”

ঘটনাটা শুনে আমাদের সবার শরীর দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। যে মাঠে দিনের বেলা ছেলেরা হাসিমুখে ক্রিকেট খেলে, তার মাটির নিচে এতগুলো মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ইতিহাস চাপা পড়ে আছে!

আনোয়ার সাহেব বলে চললেন, “তারপর থেকেই এই মাঠটা অভিশপ্ত হয়ে যায়। বস্তিটা পরিষ্কার করে ফেলা হলেও, এখানে আর কোনোদিন কোনো স্থাপনা তৈরি করা যায়নি। যে-ই চেষ্টা করেছে, কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাতের বেলা প্রায়ই ওখান থেকে কান্নার আওয়াজ, চিৎকার শোনা যেত। আর যা তোমরা দেখেছ—ওই ছায়ার সারি—ওগুলো আসলে ওই আগুনে পুড়ে মরা মানুষগুলোর আত্মা। ওরা প্রতি রাতে ওখানে জমায়েত হয়, নিজেদের পোড়া ঘরবাড়ি খুঁজে বেড়ায়।”

তার কথাগুলো আমাদের বুকের ভেতর হাতুড়ির মতো আঘাত করছিল। একটা বাস্তব ঘটনা কীভাবে এমন হাড়হীম করা ভৌতিক অভিজ্ঞতায় পরিণত হতে পারে, তা ভেবেই শরীর শিউরে উঠছিল।

নয়ন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “কিন্তু... কিন্তু ওরা তো কারো কোনো ক্ষতি করে না, তাই না?”

আ আনোয়ার সাহেব বিষণ্ণ মুখে মাথা নাড়লেন। “না, সরাসরি ক্ষতি করে বলে শুনিনি। তবে যারা ওগুলো দেখে, তাদের ওপর একটা মানসিক চাপ পড়ে। অনেকেই ভয় পেয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। আর একটা কথা প্রচলিত আছে, যদি কেউ ওই ছায়ামূর্তিদের দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকে বা ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে, তাহলে নাকি ওরা তাকে নিজেদের সঙ্গী করে নিতে চায়। তাকেও ওই মাঠের দিকে টেনে নিয়ে যায়।”

এই কথাটা শোনার পর আমাদের মনে হলো যেন পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। আমরা তো শুধু দেখিনি, ছাদে দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে ছিলাম! আমাদের কি তাহলে কোনো বিপদ হতে পারে?

সেই দিন থেকে আমাদের ভয়টা সহস্রগুণ বেড়ে গেল। আমরা ঠিক করলাম, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বাসা ছেড়ে দেব। কিন্তু হাতে টাকা-পয়সারও টানাটানি ছিল। নতুন বাসা খুঁজতে আর অগ্রিম টাকা জোগাড় করতে অন্তত মাসখানেক সময় লাগবে। এই একটা মাস আমাদের এখানেই কাটাতে হবে। প্রতিটা রাত আমাদের জন্য যেন এক একটা বিভীষিকা হয়ে উঠল।

আমরা ঘরের সব জানালা-দরজা সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করে দিতাম। বারান্দার দিকের দরজাটা তো প্রায় স্থায়ীভাবেই বন্ধ রাখা শুরু করলাম। রাতে বাথরুম যেতে হলেও আমরা একা যেতাম না, একজনকে সাথে করে নিয়ে যেতাম। চারজন মিলে এক ঘরে, আলো জ্বালিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতাম। কিন্তু ঘুম আসত না। একটু শব্দ হলেই চমকে উঠতাম। মনে হতো, এই বুঝি কেউ দরজায় টোকা দিল। বাথরুমের কল থেকে টপটপ করে পানি পড়ার শব্দও বুকের ভেতর কাঁপন ধরিয়ে দিত। মনে হতো, ওই ছায়ারা কি আমাদের কথা জেনে গেছে? ওরা কি এখন বাড়ির ভেতরে আসার চেষ্টা করছে?

একদিন রাতে ঘটল সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনাটা। তখন রাত প্রায় তিনটে বাজে। বাইরে প্রচণ্ড ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা। আমরা চারজনই জেগে ছিলাম, কিন্তু ভয়ে কেউ কোনো কথা বলছিলাম না। হঠাৎ আমাদের ফ্ল্যাটের কলিংবেলটা বেজে উঠল। তীক্ষ্ণ, একটানা শব্দে।

আমরা চারজনেই পাথরের মতো জমে গেলাম। এই মাঝরাতে কে আসবে? আমাদের তো কোনো বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনেরও আসার কথা নয়। সুমন সাহস করে দরজার ‘আই-হোল’ বা ‘চোখ’ দিয়ে বাইরেটা দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু কুয়াশা আর অন্ধকারের কারণে সিঁড়ির আলোটা আবছা হয়ে আছে, কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। শুধু একটা লম্বা, অস্পষ্ট ছায়ার মতো আকৃতি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হলো।

কলিংবেলটা আবার বেজে উঠল। এবার আরও জোরে, আরও একটানা। যেন কেউ মরিয়া হয়ে বেলটা চেপে ধরে আছে। রাশেদ ফিসফিস করে বলল, “কে হতে পারে? দারোয়ান চাচা?”

আমি বললাম, “দারোয়ান চাচা তো এত রাতে বেল বাজাবে না। তার কাছে তো চাবি আছে। আর তার তো আমাদের কাছে আসার কোনো কারণও নেই।”

আমাদের হৃৎপিণ্ড এমনভাবে ধুকপুক করছিল যে, মনে হচ্ছিল বুকের পাঁজর ভেঙে বেরিয়ে আসবে। আমরা ভয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। বেলটা বেজেই চলেছে। একটানা, কর্কশ শব্দটা যেন আমাদের মাথায় হাতুড়ি পেটা করছে।

হঠাৎ বেল বাজা থেমে গেল। আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার আগেই দরজায় ধুম ধুম করে আঘাত করার শব্দ শুরু হলো। কেউ যেন দরজার ওপর তার সর্বশক্তি দিয়ে কিল-ঘুষি মারছে। সেই সাথে একটা চাপা, গোঙানির মতো আওয়াজ ভেসে আসতে লাগল। ওটা মানুষের গলার স্বর, নাকি অন্য কিছু, তা বোঝার উপায় ছিল না। শুধু মনে হচ্ছিল, কেউ প্রচণ্ড কষ্টে কাতরাচ্ছে আর দরজাটা ভাঙার চেষ্টা করছে।

আমরা ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম। আমাদের মনে হচ্ছিল, দরজা ভেঙে ওটা ভেতরে ঢুকে পড়বে। ওই ছায়ামূর্তিটা, যার কথা আনোয়ার সাহেব বলেছিলেন, সেই হয়তো আমাদের ডাকতে এসেছে। আমাদেরকেও ওর সঙ্গী বানাতে চায়। আমরা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরের কোণায় গিয়ে জড়ো হলাম। আমাদের মনে হচ্ছিল, এটাই হয়তো আমাদের জীবনের শেষ রাত। দরজার ওপর আঘাতের শব্দটা ক্রমশ বেড়েই চলছিল, আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল আমাদের আর্তনাদ।

দরজায় সেই ভয়াল, ритমহীন আঘাত আর চাপা গোঙানির শব্দে আমাদের চারজনের তখন প্রায় আধমরা অবস্থা। আমরা ঘরের এক কোণে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁপছিলাম। আমাদের সম্মিলিত ভয়ার্ত চিৎকার আর দরজার ওপর চলতে থাকা ধুমধাম শব্দ মিলেমিশে এক নারকীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। প্রতিটি মুহূর্ত মনে হচ্ছিল অনন্তকাল। আমাদের মগজ তখন পুরোপুরি অসাড়, শুধু একটাই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল—দরজাটা ভেঙে গেলেই সব শেষ। ওই ছায়ামূর্তিটা ভেতরে ঢুকে আমাদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাবে ওই অভিশপ্ত মাঠে।

কতক্ষণ এভাবে চলেছিল জানি না। হয়তো কয়েক মিনিট, কিন্তু আমাদের কাছে মনে হচ্ছিল কয়েক ঘণ্টা। হঠাৎ করেই দরজার ওপর আঘাতটা থেমে গেল। ঠিক যেমন আকস্মিকভাবে শুরু হয়েছিল, তেমনই আকস্মিকভাবেই শেষ হলো। কিন্তু গোঙানির মতো চাপা আওয়াজটা তখনও শোনা যাচ্ছিল, তবে সেটা যেন ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে, সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে বলে মনে হলো। কিছুক্ষণ পর সেটাও পুরোপুরি থেমে গেল। ফ্ল্যাটের ভেতর নেমে এলো কবরের নিস্তব্ধতা। এতটাই নিস্তব্ধ যে, আমরা আমাদের নিজেদের হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক শব্দ আর ভারী নিঃশ্বাসের আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম।

আমরা আরও কিছুক্ষণ ওভাবেই জড়সড় হয়ে বসে রইলাম। নড়াচড়া করার সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলাম। ভোরের আলো ফোটার আগে পর্যন্ত আমরা ওই কোণা থেকে এক পা-ও নড়িনি। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আবছা আলোটা যখন ঘরের ভেতর প্রবেশ করল, তখন আমাদের শরীরে যেন কিছুটা প্রাণ ফিরে এলো।

সকাল হতেই আমরা আর এক মুহূর্তও দেরি করিনি। রাতেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আজ সকালেই এই বাসা ছাড়ব। জিনিসপত্র গোছানোর মতো মানসিক অবস্থা আমাদের ছিল না। আমরা শুধু আমাদের সার্টিফিকেট, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর মানিব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। যাওয়ার আগে আনোয়ার সাহেবকে একবার ঘটনাটা জানানো দরকার মনে করলাম।

আমরা চারজন কাঁপতে কাঁপতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলাম। আনোয়ার সাহেবের ফ্ল্যাটের দরজায় টোকা দিতেই তিনি বেরিয়ে এলেন। আমাদের ফ্যাকাশে, বিধ্বস্ত চেহারা দেখে তিনি হয়তো রাতেই কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছিলেন। আমাদের কিছু বলার আগেই তিনি বললেন, “তোমরা ঠিক আছো তো? রাতে খুব চিৎকার চেঁচামেচি শুনলাম।”

সুমন কাঁপা কাঁপা গলায় রাতের পুরো ঘটনাটা তাকে খুলে বলল। দরজায় আঘাত করা, সেই গোঙানির শব্দ—সবকিছু। সব শুনে আনোয়ার সাহেবের মুখটা থমথমে হয়ে গেল। তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “আমি ধারণা করেছিলাম এমন কিছুই হবে। তোমরা ওই ছায়াদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলেছ। ওরা এখন তোমাদের চিনে গেছে। এই বাসা তোমাদের জন্য আর নিরাপদ নয়। তোমরা আজই চলে যাও। তোমাদের অগ্রিমের টাকা আমি ফেরত দিয়ে দেব। শুধু প্রাণ নিয়ে এখান থেকে যাও, বাবা।”

তার কথায় আমাদের ভয়টা আরও জাঁকিয়ে বসল। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রায় ছুটে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলাম। নিচতলায় নামার সময় সিঁড়ির কোণে একটা জিনিস দেখে আমার পা দুটো মাটিতে আটকে গেল। আমি বাকিদের থামালাম।

সিঁড়ির এক পাশে, দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে রাখা একটা পুরনো, মরচে পড়া হারিকেন। যেটা আমরা মাঠের মধ্যে জ্বলতে দেখেছিলাম, ঠিক সেরকম। আর তার পাশেই পড়ে আছে একটা নোংরা, ছেঁড়া চাদর। চাদরটার কয়েক জায়গায় পোড়া দাগ স্পষ্ট।

আমাদের চারজনেরই বুকের ভেতরটা হিম হয়ে গেল। তার মানে, রাতে যে এসেছিল, সে নিচতলাতেই থাকে? নাকি... সে এখনও এই বাড়িতেই আছে? আমরা আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালাম না। প্রায় দৌড়ে বাড়িটা থেকে বেরিয়ে এলাম। পেছনের দিকে একবারও তাকানোর সাহস হলো না।

আমরা সেদিনই এক বন্ধুর মেসে গিয়ে উঠলাম। কয়েকদিন পর নতুন বাসা খুঁজে সেখানে চলে যাই। কিন্তু সেই রাতের বিভীষিকা আমাদের পিছু ছাড়েনি। প্রথম কয়েক মাস আমরা কেউই একা ঘুমাতে পারতাম না। রাতের বেলা সামান্য শব্দ হলেই চমকে উঠতাম। দরজায় কেউ টোকা দিলে বুকের ভেতরটা ধড়াস করে উঠত।

সময়ের সাথে সাথে সেই ভয়টা হয়তো কিছুটা কমে এসেছে, কিন্তু পুরোপুরি মুছে যায়নি। আমরা চার বন্ধু এখনও একসাথে আছি, কিন্তু আমাদের সেই আগের উচ্ছ্বাসটা আর নেই। আমাদের সবার মধ্যেই একটা স্থায়ী পরিবর্তন এসে গেছে। আমরা যেন এক রাতেই অনেকগুলো বছর বড় হয়ে গিয়েছিলাম।

কিন্তু গল্পের শেষটা এখানে নয়। আসল ভয়ংকর সত্যটা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল আরও কয়েক বছর পর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে আমরা সবাই তখন কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি। একদিন পুরনো বন্ধুদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আমাদের চারজনের আবার দেখা হলো। অনেকদিন পর একসাথে বসে পুরনো দিনের কথা উঠতেই অবধারিতভাবে সেই অভিশপ্ত বাড়ির প্রসঙ্গ চলে এলো। আমরা তখন অনেকটাই পরিণত। ভয়টা কমে গিয়ে এখন কৌতুহলটা বেশি কাজ করে।

রাশেদ, যে বরাবরই যুক্তিবাদী, সে বলল, “আচ্ছা, আনোয়ার সাহেব যে গল্পটা বলেছিলেন, সেটা কি পুরোটাই সত্যি ছিল? মানে, বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনাটা?”

এই প্রশ্নটা আমাদের কাউকেই আগে ভাবায়নি। আমরা তখন এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে, তার কথাগুলো যাচাই করার কথা মাথাতেই আসেনি। নয়ন ওর স্মার্টফোনটা বের করে গুগলে সার্চ করতে শুরু করল। “সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে বস্তিতে আগুন” – এই ধরনের বিভিন্ন কীওয়ার্ড দিয়ে অনেকক্ষণ খোঁজার পর ও যা পেল, তা আমাদের পায়ের তলার মাটি কাঁপিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।

হ্যাঁ, সেরকম একটা ঘটনা সত্যিই ঘটেছিল। প্রায় বছর পনেরো-বিশেক আগে, শীতের এক রাতে সাভারের ওই এলাকার এক বস্তিতে ভয়াবহ আগুন লেগেছিল। কিন্তু... সেই আগুনে কেউ মারা যায়নি। বস্তির বাসিন্দারা সময়মতো বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছিল মাত্র, কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।

তাহলে? তাহলে আনোয়ার সাহেব আমাদের ওই গল্পটা কেন শুনিয়েছিলেন? কেন তিনি পঞ্চাশজন মানুষের পুড়ে মরার এক কাল্পনিক, বীভৎস কাহিনী তৈরি করেছিলেন?

আমাদের মাথায় তখন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আমরা ঠিক করলাম, একবার ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেব। আনোয়ার সাহেবের সাথে দেখা করব।

পরের সপ্তাহেই আমরা চারজন আবার গেলাম সেই পুরনো এলাকায়। বাড়িটা এখনও আগের মতোই আছে। কিন্তু এখন আর আগের মতো ভয় লাগছে না। আমরা সোজা আনোয়ার সাহেবের ফ্ল্যাটের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম। কলিংবেল চাপার পর যে দরজা খুলল, সে আনোয়ার সাহেব নন। বছর তিরিশের এক যুবক।

আমরা আনোয়ার সাহেবের কথা জিজ্ঞেস করতেই যুবকটি অবাক হয়ে বললেন, “আনোয়ার সাহেব তো বছর তিনেক আগেই বাড়িটা আমার কাছে বিক্রি করে দিয়ে পরিবার নিয়ে কানাডা চলে গেছেন। আপনারা কারা?”

আমরা পরিচয় দেওয়ার পর যুবকটি আমাদের ভেতরে আসতে বললেন। আমরা তাকে আমাদের পুরনো অভিজ্ঞতার কথা, মাঠের ছায়ামূর্তির কথা, আর আনোয়ার সাহেবের বলা সেই আগুনের গল্পের কথা—সব খুলে বললাম।

সব শুনে যুবকটি হাসলেন। এক অদ্ভুত, রহস্যময় হাসি। তিনি বললেন, “আনোয়ার সাহেব আপনাদের সাথে একটু মজা করেছেন। আসলে এই মাঠে ওসব ভৌতিক কিছু নেই।”

আমরা অবাক হয়ে বললাম, “তাহলে আমরা যা দেখেছি, সেগুলো কী ছিল?”

যুবকটি শান্ত গলায় উত্তর দিলেন, “আপনারা যা দেখেছেন, তা বাস্তব। কিন্তু ভৌতিক নয়। এই মাঠটা রাতে মাদকসেবীদের আড্ডাখানা হয়ে ওঠে। ওরা এখানে হেরোইন, ইয়াবা এসব সেবন করে। ওরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার জন্য অদ্ভুত সব আলখাল্লা পরে থাকে আর যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক আলো ব্যবহার করে। হারিকেনের আলোটা তারই অংশ। ওরা এতটাই নেশাগ্রস্ত থাকে যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মূর্তির মতো স্থির হয়ে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। আপনারা আসলে একদল মাদকাসক্তকে দেখেই ভয় পেয়েছিলেন।”

কথাটা শুনে আমরা যেন আকাশ থেকে পড়লাম। তাহলে এতদিনের বয়ে বেড়ানো ভয়, আতঙ্ক, বিনিদ্র রাত—সবকিছুর উৎস একদল নেশাখোর? আমাদের নিজেদের বোকামিতে হাসি পেল।

কিন্তু একটা প্রশ্ন তখনও আমার মাথায় ঘুরছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কিন্তু সেই রাতে আমাদের দরজায় যে এসেছিল? যে ওভাবে দরজা পেটাচ্ছিল?”

যুবকটির মুখের হাসিটা এবার মিলিয়ে গেল। তার চোখে এক শীতল, অন্ধকার দৃষ্টি ফুটে উঠল। তিনি নিচু, প্রায় ফিসফিসে গলায় বললেন, “ওহ্, ওই রাতের কথা বলছেন? সেদিন আসলে আমিই এসেছিলাম।”

আমরা চারজনেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। “আপনি? কিন্তু কেন?”

যুবকটি তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন। ঘরের আবছা আলোয় তার লম্বা ছায়াটা দেয়ালে পড়ল, ঠিক যেন মাঠের সেই ছায়ামূর্তির মতো। তিনি আমাদের দিকে এক পা এগিয়ে এসে এক হাড়হীম করা হাসি দিয়ে বললেন,

“কারণ, মাঝে মাঝে নতুন প্রতিবেশীদের সাথে একটু পরিচিত হতে ভালো লাগে। বিশেষ করে যখন দেখি, তারা আমার রাতের কার্যকলাপ খুব মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। ভয়টা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, তাই না? আপনারা ভয় পেয়েছিলেন বলেই তো এতদিন চুপ করে ছিলেন, এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আর আমিও নির্বিঘ্নে আমার কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছি।”

তার শেষ কথাটা আমাদের মগজে বজ্রপাতের মতো আঘাত করল। আমরা বুঝতে পারলাম, আমরা কোনো ভূতের পাল্লায় পড়িনি, পড়েছিলাম তার চেয়েও ভয়ংকর কিছুর পাল্লায়। এক ঠান্ডা মাথার অপরাধীর পাল্লায়, যে নিজের মাদক ব্যবসা বা অন্য কোনো ভয়ংকর কার্যকলাপ আড়াল করার জন্য একটা ভৌতিক গল্পের বর্ম তৈরি করেছিল। আনোয়ার সাহেব হয়তো ভয়েই বাড়ি বিক্রি করে পালিয়েছিলেন। আর ওই রাতের আগমনটা ছিল আমাদের জন্য এক শীতল সতর্কবার্তা।

আমরা যখন বেরিয়ে আসছিলাম, তখন তিনি দরজায় দাঁড়িয়ে সেই একই অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললেন, “আবার আসবেন। রাতের বেলা ছাদে বা বারান্দায় দাঁড়ালে হয়তো আমার সাথে আবার দেখা হয়ে যেতে পারে।”

আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাইনি। দ্রুত পায়ে এলাকাটা পার হয়ে এসেছিলাম। কিন্তু সেই যুবকের শীতল চাহনি আর তার বলা শেষ কথাগুলো আজও আমার কানে বাজে। মাঝে মাঝে নির্জন রাতে একা থাকলে এখনও মনে হয়, অন্ধকারের ওপার থেকে একজোড়া শীতল চোখ আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে। ভূতের ভয় হয়তো একসময় কেটে যায়, কিন্তু মানুষের তৈরি ভয়টা বোধহয় কোনোদিনও পুরোপুরি মন থেকে মোছে না। ওটা রক্তের সাথে মিশে থাকে, সারাজীবনের জন্য।

[END]
Noted: This story is protected under copyright law and copyrighted by Bhoutik Kotha. Unauthorized copying, posting, or sharing may result in DMCA takedown, legal action, and Facebook account penalties. Content is tracked digitally—violators will be reported and penalized.
#ভূতেরগল্প #ভৌতিক #ভুত

 #তাবিজলেখক: মেহেদী হাসানগ্রামের নাম রূপনগর। নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজে ঘেরা এক শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশের ছবি...
12/08/2025

#তাবিজ
লেখক: মেহেদী হাসান

গ্রামের নাম রূপনগর। নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজে ঘেরা এক শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশের ছবি। গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে ছোট এক নদী, যার জল গ্রামের মাটিকে করেছে উর্বর আর প্রাণবন্ত। এই গ্রামেরই এক প্রান্তে রহিম শেখের বাস। বাপ-দাদার আমল থেকে পাওয়া বিঘে তিনেক জমিই তার সম্বল। এই জমি শুধু তার জীবিকার উৎস নয়, তার অস্তিত্বের অংশ। জমির প্রতিটা কণার সাথে তার আত্মার সম্পর্ক। সকালের নরম আলোয় যখন সে লাঙল কাঁধে নিয়ে জমির দিকে রওনা দেয়, তখন তার পায়ের নিচের মাটি যেন তাকে স্বাগত জানায়। এই মাটির গন্ধ, এই ফসলের ঘ্রাণ তার রক্তে মিশে আছে।
রহিমের সংসার ছোট। স্ত্রী ফাতেমা আর তাদের ছোট মাটির ঘর। ফাতেমা বড় ভালো মনের একজন মানুষ। স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসা আর সংসারের প্রতি যত্ন দেখে গ্রামের সবাই প্রশংসা করে। রহিম যখন মাঠে হাড়ভাঙা খাটুনি করে, ফাতেমা তখন ঘর সামলায়, স্বামীর জন্য খাবার নিয়ে মাঠে যায়। তাদের জীবনে চাহিদা কম, তাই সুখটাও ছিল সহজ আর অকৃত্রিম।
প্রতি বছরের মতো এবারও রহিম আশায় বুক বেঁধেছে। আউশ ধানের চাষ করবে। বর্ষার শুরুতে আকাশ কালো করে মেঘ জমেছে, দু-এক পশলা বৃষ্টিও হয়ে গেছে। মাটি এখন নরম, লাঙলের জন্য প্রস্তুত। রহিম সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে। ফাতেমার হাতের বানানো গরম রুটি আর গুড় দিয়ে নাস্তা সেরে কাঁধে লাঙল আর জোয়াল তুলে নেয়। তার верные দুই বলদ যেন মনিবের মনের কথা বুঝতে পারে। রহিম বের হতেই তারাও হাম্বা রবে সাড়া দেয়।
মাঠে পৌঁছে রহিম বুক ভরে শ্বাস নেয়। ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধটা তাকে প্রতিবারই নতুন করে উজ্জীবিত করে। সে কোমরের গামছাটা মাথায় বেঁধে নেয়, তারপর বলদ দুটোকে লাঙলের সাথে জুড়ে দিয়ে কাজে লেগে যায়। ‘হেই হেই, চল বাপধন,’ বলদ দুটোকে তাড়া দেয় সে। লাঙলের ফলা মাটির বুক চিরে এগিয়ে চলে, উল্টে দেয় কালো উর্বর মাটি। রহিম গুনগুন করে গান গায়, তার মন আনন্দে ভরা। এই তো জীবন! মাটির সাথে, প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে থাকা।
ঘণ্টা দুয়েক ধরে একটানা লাঙল চালানোর পর সে একটু জিরিয়ে নিতে বসে জমির আইলে। ফাতেমা কাঁসার বাটিতে করে পান্তা ভাত আর কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ নিয়ে এসেছে। রহিম পরম তৃপ্তিতে খেতে শুরু করে। ফাতেমা পাশে বসে আঁচল দিয়ে তাকে বাতাস করে।
“মাটি তো এইবার খুব নরম হইছে। আল্লাহ দিলে ফলন ভালোই হইবো,” পান্তা খেতে খেতে বলে রহিম।
ফাতেমা স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে। “আপনার খাটুনি কি আর আল্লাহ বিফল করবো? ঠিকই ফলন ভালো হইবো। আপনি খালি নিজের শরীরের দিকে একটু খেয়াল রাইখেন।”
রহিম হাসে। এই ছোট্ট কথাগুলোই তার সব ক্লান্তি দূর করে দেয়।
খাওয়া শেষে আবার কাজে লাগে রহিম। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার উপক্রম। জমির প্রায় অর্ধেকটা চাষ করা হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই লাঙলের ফলাটা বেশ শক্ত কিছুর সাথে আটকে গেল। ‘ক্যাঁচ্’ করে একটা কর্কশ শব্দ হলো। বলদ দুটো আচমকা থেমে গেল। রহিম প্রথমে ভাবলো, হয়তো বড় কোনো পাথর হবে। মাঝে মাঝে জমির ভেতর থেকে পুরনো দিনের ইট বা পাথরের টুকরো পাওয়া যায়। সে বলদ দুটোকে সরিয়ে লাঙলের ফলাটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু জিনিসটা বেশ শক্তভাবে আটকে আছে।
রহিম কিছুটা বিরক্ত হয়েই কোদাল দিয়ে জায়গাটা খুঁড়তে শুরু করলো। কয়েক কোপ মারতেই মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে এলো একটা ছোট, চৌকো আকৃতির ধাতব বাক্স। বাক্সটা বেশ পুরনো, জায়গায় জায়গায় মরচে ধরে সবুজ হয়ে গেছে। রহিম কিছুটা অবাক হলো। তার বাপ-দাদার আমলে তো বটেই, সে নিজেও এই জমিতে কতবার লাঙল দিয়েছে, কিন্তু এমন কিছু তো আগে কখনো দেখেনি।
কৌতূহল নিয়ে সে বাক্সটা হাতে তুলে নিলো। খুব বেশি ভারী নয়, তবে বেশ মজবুত। বাক্সের ওপরে জটিল নকশা করা, যা সময়ের সাথে সাথে প্রায় মুছে গেছে। কোনো তালা নেই, তবে ডালাটা এমনভাবে বন্ধ যে খোলা বেশ কঠিন। রহিম অনেক চেষ্টার পর হাতের কাস্তেটা দিয়ে খোঁচা মেরে ডালাটা খুলতে সক্ষম হলো।
ভেতরটা খুলতেই এক ঝলক পুরোনো, স্যাঁতসেঁতে গন্ধ বেরিয়ে এলো। ভেতরে একটা জিনিসই ছিল। কালো কাপড়ে মোড়ানো, লাল সুতো দিয়ে প্যাঁচানো ছোট্ট একটা তাবিজ। তাবিজটা হাতে নিতেই রহিমের শরীরটা কেমন যেন শিরশির করে উঠলো। জিনিসটা অস্বাভাবিক রকমের ঠান্ডা, যেন বরফ ছুঁয়েছে। এর আগে সে অনেক তাবিজ দেখেছে, গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব অসুস্থ হলে অনেককে তাবিজ দেন, কিন্তু এমন বিদঘুটে চেহারার তাবিজ সে আগে কখনো দেখেনি। কালো কাপড়ের ভেতর থেকে কী যেন একটা উঁকি দিচ্ছে, মনে হচ্ছে কোনো প্রাণীর শুকনো চামড়া বা হাড়ের অংশ।
রহিম দ্বিধায় পড়ে গেল। এটা কী হতে পারে? কোনো পুরনো গুপ্তধন? নাকি অশুভ কিছু? সে কিছুক্ষণ জিনিসটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর কী ভেবে তাবিজটা আবার বাক্সে ভরে সেটি হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। আজ আর কাজ করতে ইচ্ছা করছে না। মনটা কেমন যেন খচখচ করছে।
বাড়িতে ফিরে রহিম ফাতেমাকে বাক্সটা দেখালো। ফাতেমা বাক্স খুলে তাবিজটা দেখেই আঁতকে উঠলো। তার মুখটা ভয়ে সাদা হয়ে গেল।
“এইডা কী আনছেন? কই পাইলেন এই আজব জিনিস?” ফাতেমার গলায় স্পষ্ট আতঙ্ক।
রহিম পুরো ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে ফাতেমার ভয় আরও বেড়ে গেল। সে প্রায় চিৎকার করে বললো, “এইডা কোনো ভালো জিনিস না। আপনে য্যানমন কইরা পারেন, এইডারে ফালায়া দিয়া আসেন। আমার বড় ডর করতাছে। মুরুব্বিদের কাছে শুনছি, এই সব জিনিস সংসারে অমঙ্গল নিয়া আসে।”
রহিম স্ত্রীর ভয় দেখে হাসার চেষ্টা করলো। “আরে ধুর! কী যে কও না তুমি। এইটা হয়তো পুরনো দিনের কোনো জিনিস। হয়তো কারো রাখা আমানত। অমঙ্গল আসবো ক্যান?”
“না, আমার মন সাই দিতাছে না। আপনে এইডারে घरात রাইখেন না। যেইখান থাইকা আনছেন, ওইখানে রাইখা আসেন,” ফাতেমা প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো।
কিন্তু রহিম ফাতেমার কথায় কান দিলো না। তার যুক্তিবাদী মন কিছুতেই মানতে চাইছিল না যে একটা ছোট জড়বস্তু তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে। সে ভাবলো, হয়তো এটা কোনো মূল্যবান ধাতুর তৈরি, শহরে নিয়ে গেলে ভালো দাম পাওয়া যেতে পারে। সে ফাতেমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলো, “ভয় পাইয়ো না তো। কিচ্ছু হইবো না। আমি এইটারে সিন্দুকে তুইলা রাখতাছি। সময় সুযোগ মতো দেখবোনে কী করা যায়।”
ফাতেমা আর কিছু বললো না, কিন্তু তার মুখটা কালো হয়ে রইলো। রহিম বাক্সটা তাদের পুরনো কাঠের সিন্দুকের এক কোণায় রেখে দিলো। কিন্তু ফাতেমার মনের ভেতর একটা অশুভ আশঙ্কা কাঁটার মতো বিঁধে রইলো।
এর পরের কয়েকটা দিন স্বাভাবিকভাবেই কাটলো। রহিম বাকি জমিটার চাষ শেষ করলো। বীজ বোনার দিন সে বেশ উৎসবের আমেজেই কাজে নামলো। গ্রামের রীতি অনুযায়ী, নতুন ফসলের বীজ বোনার আগে মসজিদে মিলাদ দেওয়া হয়, আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয় যেন ভালো ফলন হয়। রহিমও সব নিয়ম মানলো। তারপর নিজের হাতে যত্ন করে পুরো জমিতে ধানের বীজ ছড়িয়ে দিলো। তার মনটা আশায় ভরা। এবার ফসল উঠলে মেয়ের বিয়ের জন্য কিছু টাকা জমাতে পারবে, ঘরটাও মেরামত করতে হবে।
কিন্তু রহিমের আশা ধীরে ধীরে হতাশায় পরিণত হতে শুরু করলো।
বীজ বোনার পর সাধারণত সপ্তাহখানেকের মধ্যেই চারা গজাতে শুরু করে। গ্রামের অন্য সবার জমিতে সবুজ ধানের কচি চারা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। বাতাসে দুলছে সেই সবুজ পাতা, যা দেখে কৃষকের মন আনন্দে নেচে ওঠে। কিন্তু রহিমের জমির দিকে তাকালে বুকটা হাহাকার করে ওঠে। তার জমি প্রায় ফাঁকা। কোথাও দু-একটা চারা দুর্বলভাবে মাথা তুলেছে, কিন্তু বেশিরভাগটাই ন্যাড়া। যেন কেউ বীজই বোনেনি।
রহিম প্রথমে ভাবলো, হয়তো বীজের সমস্যা। সে যে দোকান থেকে বীজ কিনেছিল, সেখানে গিয়ে খোঁজ নিলো। কিন্তু দোকানদার জানালো, ওই একই বীজ গ্রামের আরও দশজন কৃষক নিয়েছে, তাদের জমিতে তো ফসল ভালোই হয়েছে।
রহিম এবার আরও চিন্তায় পড়লো। সে জমিতে দ্বিগুণ পরিমাণে সার দিলো, সেচের ব্যবস্থা করলো। দিনরাত এক করে পরিশ্রম করতে লাগলো। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো লাভ হলো না। যে দু-একটা চারা গজিয়েছিল, সেগুলোও কেমন যেন হলদে হয়ে মরে যেতে শুরু করলো। মাটিটা শুকিয়ে খটখটে হয়ে থাকে, পানি দিলেও যেন শুষে নিতে চায় না। বিশেষ করে, যে জায়গাটা থেকে সে ওই বাক্সটা পেয়েছিল, সেই জায়গার মাটি যেন একেবারে পাথর হয়ে গেছে। সেখানে একটা ঘাস পর্যন্ত গজায়নি।
প্রতিদিন সকালে রহিম মাঠে যায় আর হতাশ হয়ে ফিরে আসে। তার সবুজ, প্রাণবন্ত জমিটা এখন একটা বিবর্ণ, মৃত কঙ্কালের মতো পড়ে আছে। চারপাশের জমিতে সবুজ ধানের চারাগুলো তরতর করে বেড়ে উঠছে, আর মাঝখানে তার জমিটা যেন একটা অভিশপ্ত দ্বীপ।
গ্রামের লোকেরাও ব্যাপারটা লক্ষ্য করতে শুরু করেছে। রহিম যখন মাঠের পাশ দিয়ে যায়, অনেকেই কানাঘুষা করে। কেউ বলে, রহিমের ওপর আল্লাহর গজব পড়েছে। কেউ বলে, সে নিশ্চয়ই কোনো পাপ করেছে, তাই তার জমি এমন নিষ্ফলা হয়ে গেছে।
একদিন বিকেলে গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ কৃষক কালাম চাচা রহিমের জমির আইলে এসে দাঁড়ালেন। তার চোখেমুখেও বিস্ময় আর चिंता।
“কী হইছে রে রহিম? তোর জমির এই দশা ক্যান?” কালাম চাচা জিজ্ঞেস করলেন। তার গলার স্বরে genuine উদ্বেগ।
রহিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “কী কমু চাচা, নিজেই তো কিছু বুঝতাছি না। বীজ, সার, পানি - কোনো কিছুতেই কমতি করি নাই। কিন্তু জমিতে ফসল হইতাছে না। মাটিটা জানি কেমন মরা মরা হইয়া গেছে।”
কালাম চাচা নিচু হয়ে এক মুঠো মাটি হাতে তুলে নিলেন। হাতের তালুতে নিয়ে মাটিটা পরীক্ষা করতে করতে বললেন, “হুম, মাটিটা আসলেই কেমন জানি হইয়া গেছে। উর্বর ভাবটা নাই। আচ্ছা, এই বছর নতুন কিছু করছিলি নাকি জমিতে?”
রহিমের বুকের ভেতরটা ধক্ করে উঠলো। তার মনে পড়ে গেল সেই তাবিজের কথা। কিন্তু সে ভয়ে কিছু বলতে পারলো না। যদি সবাই তাকে পাগল ভাবে? যদি তাবিজের কথা শুনে তাকে আরও বেশি করে দোষারোপ করে? সে মাথা নেড়ে বললো, “না চাচা, নতুন আর কী করমু? আগের মতোই তো সব করতাছি।”
কালাম চাচা আর কিছু বললেন না। শুধু রহিমের কাঁধে হাত রেখে বললেন, “হিম্মত হারাইস না। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ। দেখবি, সব ঠিক হইয়া যাইবো।”
কিন্তু কিছুই ঠিক হলো না। দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে লাগলো। রহিমের আর্থিক অবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করলো। ঘরে জমানো যা টাকা ছিল, সব শেষ। ফাতেমার মুখটাও সারাক্ষণ মলিন থাকে। তাদের ছোট্ট ঘরে এখন আর আগের মতো হাসির শব্দ শোনা যায় না, শুধু弥漫 করে থাকে একটা ভারী, গুমোট নীরবতা।
ফাতেমা এখন প্রায় প্রতিদিনই তাবিজটার কথা তোলে। তার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে যে, ওই অশুভ জিনিসটাই তাদের এই সর্বনাশের কারণ।
“আমি আপনারে আগেই কইছিলাম, ওই জিনিস घरात রাইখেন না। ওইডা একখান ডাইনি জিনিস। ওইটা আমাগো জমির জানটা খাইয়া ফেলছে,” এক রাতে বিছানায় শুয়ে ফাতেমা কান্নাজড়িত গলায় বললো।
রহিম এবার আর আগের মতো উড়িয়ে দিতে পারলো না। তার নিজের মনের ভেতরও সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। সে সারাদিন মাঠে পড়ে থাকে, মৃতপ্রায় মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে, সত্যিই কি একটা ছোট তাবিজের এত ক্ষমতা থাকতে পারে? তার এতদিনের বিশ্বাস, তার যুক্তি - সবকিছু কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। সে এক অভূতপূর্ব অসহায়ত্ব বোধ করতে শুরু করলো। এমন এক শত্রু তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, যাকে সে দেখতে পায় না, যার সাথে সে লড়াই করতে পারে না।
একদিন সন্ধ্যায় রহিম হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো। ফাতেমা তার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে আর চুপ করে থাকতে পারলো না।
“আর কতদিন এইরম চলবো? আপনে ওই অলক্ষুণে জিনিসটা ফালায়া দিয়া আসেন। নইলে আমরা পথে বইসা যামু,” ফাতেমা প্রায় চিৎকার করে উঠলো।
রহিম কোনো উত্তর দিলো না। সে চুপচাপ হাত-মুখ ধুয়ে দাওয়ায় এসে বসলো। বাইরে তখন সন্ধ্যা নামছে। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। পাশের বাড়ি থেকে কোরআন তিলাওয়াতের শব্দ ভেসে আসছে। কিন্তু রহিমের মনে কোনো শান্তি নেই। তার বুকের ভেতরটা এক অজানা ভয়ে, এক গভীর হতাশায় দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে।
সে উঠে দাঁড়ালো। ধীর পায়ে ঘরের ভেতর গেলো। কাঠের সিন্দুকটা খুললো। এক কোণায় পড়ে আছে সেই ধাতব বাক্সটা। সে কাঁপা কাঁপা হাতে বাক্সটা বের করলো। ডালাটা খুলতেই সেই পুরোনো, স্যাঁতসেঁতে গন্ধটা আবার নাকে এসে লাগলো। কালো কাপড়ে মোড়ানো তাবিজটা বাক্সের ভেতর স্থির হয়ে আছে, যেন কোনো শিকারি প্রাণী শিকারের অপেক্ষায় ওত পেতে বসে আছে।
রহিম তাবিজটা হাতে নিলো। সেই একই রকম হাড়-হিম করা ঠান্ডা অনুভূতি। তার মনে হলো, এই জিনিসটা জীবন্ত। এর ভেতরে অশুভ কোনো শক্তি ঘুমিয়ে আছে, যা তার জীবনটাকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
ঠিক সেই মুহূর্তে, সে সিদ্ধান্ত নিলো, ফাতেমা ঠিকই বলেছে। এই জিনিসটাকে আর এক মুহূর্তও বাড়িতে রাখা যাবে না। এটাকে দূর করে দিতে হবে।
কিন্তু কোথায় ফেলবে? যেখান থেকে পেয়েছে, সেখানে রেখে আসবে? নাকি নদীতে ভাসিয়ে দেবে? একটা তীব্র ভয় আর দ্বিধা তাকে আঁকড়ে ধরলো। সে বাক্সটা হাতে নিয়ে ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ালো। তার দৃষ্টি চলে গেল দূরে, তার নিষ্ফলা, অন্ধকার জমিটার দিকে। জমিটা যেন এক বিশাল দৈত্যের মতো অন্ধকারে হাঁ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে, তাকে ব্যঙ্গ করছে।
রহিমের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। সে বুঝতে পারলো, তার এতদিনের চেনা পৃথিবীটা আর আগের মতো নেই। এক অвидиত, ভয়ংকর শক্তি তার জীবনে প্রবেশ করেছে এবং সেই শক্তির উৎস তার হাতে ধরা ওই ছোট্ট, কালো কাপড়ের পুঁটলিটা। তাকে এর থেকে মুক্তি পেতেই হবে, যে কোনো মূল্যে। ভয় আর চরম অনিশ্চয়তায় তার শরীর কাঁপতে শুরু করলো। সে এখন কী করবে, কোথায় যাবে, কিছুই ভেবে পেলো না। শুধু বুঝতে পারলো, তার লড়াইটা সবে শুরু হয়েছে।
হাতে ধরা বাক্সটার দিকে তাকিয়ে রহিমের সমস্ত শরীর ভয়ে ঠান্ডা হয়ে আসছিল। সন্ধ্যার অন্ধকার তখন ঘন হয়ে গ্রামের ওপর চেপে বসেছে। ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা ডাক পরিবেশটাকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। রহিমের মনে হচ্ছিল, ওই ডাকের ভেতরেও যেন কোনো বিপদ সংকেত লুকিয়ে আছে। তার এতদিনের চেনা, ভালোবাসার গ্রামটাকেই এখন অচেনা আর ভয়ংকর লাগছিল। সে আর এক মুহূর্তও এই অশুভ জিনিসটাকে নিজের কাছে রাখতে চাইল না। যেখান থেকে এসেছে, সেখানেই একে ফিরিয়ে দেবে বলে মনস্থির করল।
রহিম ধীর পায়ে তার নিষ্ফলা, মৃতপ্রায় জমিটার দিকে এগিয়ে চলল। প্রতিটা পদক্ষেপ তার কাছে মনে হচ্ছিল অসম্ভব ভারী। বাতাসের একটা শীতল ঝাপটা এসে তার গায়ে লাগলো, কিন্তু এই ঠান্ডা যেন স্বাভাবিক নয়। এর মধ্যে একটা কাঁপুনি ধরানো ব্যাপার আছে। সে অনুভব করতে পারল, তার চারপাশে কেউ যেন নিঃশব্দে তাকে অনুসরণ করছে। সে বারবার পেছনে তাকাচ্ছিল, কিন্তু ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেল না। তার নিজের জমির কাছে এসে সে থমকে দাঁড়াল। চাঁদের আলো না থাকায় জমিটাকে একটা কালো চাদরে ঢাকা কবরের মতো দেখাচ্ছিল। দিনের বেলায় যে হতাশা তাকে গ্রাস করে, রাতের বেলায় সেই হতাশা শতগুণ বেড়ে গিয়ে ভয়ংকর আতঙ্কে রূপ নিল।
ঠিক যেখানটায় লাঙলের ফলা আটকে গিয়েছিল, রহিম সেই জায়গাটা লক্ষ্য করে দাঁড়াল। তার বুক ধড়ফড় করছে, গলা শুকিয়ে কাঠ। সে কাঁপা কাঁপা হাতে বাক্সটা খুলল। কালো কাপড়ে মোড়ানো তাবিজটা যেন অন্ধকারের মধ্যেও একটা শীতল আভা ছড়াচ্ছে। সে মনে সাহস এনে তাবিজটা তুলে নিল এবং ছুড়ে ফেলার জন্য হাতটা পেছনে নিল।
ঠিক তখনই ঘটল অদ্ভুত ঘটনাটা। কোথা থেকে যেন একটা দমকা, অস্বাভাবিক ঠান্ডা বাতাস এসে তাকে ধাক্কা মারল। চারপাশের গাছপালা স্থির, অথচ বাতাসটা শুধু তাকেই কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর সেই বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দের ভেতর থেকে রহিম একটা ফিসফিসানি শুনতে পেল। কোনো স্পষ্ট শব্দ নয়, যেন শুকনো পাতা বা সাপের খোলসের ওপর দিয়ে কিছু একটা টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো খসখসে, শিরশিরে একটা আওয়াজ। আওয়াজটা যেন সরাসরি তার মগজের ভেতরে আঘাত করল।
ভয়ে রহিমের আত্মা কেঁপে উঠল। তার হাত থেকে তাবিজটা পড়ে গেল মাটিতে। সে এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়াল না। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বাড়ির দিকে দৌড় দিল। তার মনে হচ্ছিল, সে যদি একবার পেছনে তাকায়, তাহলে ভয়ংকর কিছু একটা দেখতে পাবে, যা দেখার পর সে আর বেঁচে থাকবে না। সে পাগলের মতো দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে এক ঝটকায় দরজা বন্ধ করে দিল। হাঁপাতে হাঁপাতে সে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ল। তার সারা শরীর ঘামে ভিজে জবজব করছে, চোখ দুটো ভয়ে বিস্ফারিত।
ফাতেমা স্বামীর এই অবস্থা দেখে ছুটে এল। “কী হইছে আপনার? এমন করতাছেন ক্যান? ফালায়া দিয়া আসছেন ওই জিনিস?”
রহিম কোনো উত্তর দিতে পারল না। সে শুধু ফ্যালফ্যাল করে ফাতেমার দিকে তাকিয়ে রইল। তার কথা বলার শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে গেছে। সে বুঝতে পারছিল, ওই জিনিসটা এত সহজে যাওয়ার নয়। ওটা যেন চায় না যে ওকে ফেলে দেওয়া হোক। ওটা যেন রহিমের সাথেই থাকতে চায়।
সেই রাতের পর থেকে রহিম পুরোপুরি বদলে গেল। সে আরও চুপচাপ আর মনমরা হয়ে গেল। তার চোখেমুখে সব সময় একটা তীব্র আতঙ্ক লেগে থাকত। রাতের বেলায় সে আর ঘুমাতে পারত না। সামান্যতম শব্দেই চমকে উঠত। তার মনে হতো, ঘরের ভেতরে সে একা নয়, আরও কেউ আছে। এক অদৃশ্য, অশুভ উপস্থিতি সে প্রতিনিয়ত অনুভব করত। মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙে যেত; সে শুনতে পেত, তাদের সেই পুরনো কাঠের সিন্দুকের ভেতর থেকে কেউ যেন নখ দিয়ে আঁচড়াচ্ছে। খসখস, খসখস—শব্দটা তীক্ষ্ণ এবং একটানা। সে ফাতেমাকে জাগানোর সাহস পেত না, শুধু ভয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে কাঁপতে থাকত আর অপেক্ষা করত, কখন সকাল হবে।
তাদের ছোট্ট সুখের সংসারটা একটা ভয়ের কারাগারে পরিণত হলো। রহিম খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিল। তার একসময়ের স্বাস্থ্যবান শরীরটা ভেঙে যেতে শুরু করল। চোখের নিচে কালি জমে গেল, মুখটা সব সময় শুকিয়ে থাকত। সে দিনের বেলাতেও ঘরের দাওয়ায় একা একা বসে থাকত আর শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত।
ফাতেমা স্বামীর এই পরিবর্তন দেখে ভয়ে আর চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠল। সে নানাভাবে চেষ্টা করত রহিমের সাথে কথা বলার, তার মনের ভেতর কী চলছে তা জানার।
একদিন দুপুরে ফাতেমা রহিমের পাশে বসে নরম গলায় বলল, “কী হইছে আপনার? কিছুই তো খান না, রাইতে ঘুমান না। শরীরটা তো এক্কেরে ভাঙি গেছে। আমার লগে কথাও কন না ঠিকমতো। কীসের এত চিন্তা আপনার?”
রহিম বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। তার মেজাজ অসম্ভব খিটখিটে হয়ে গিয়েছিল। “কিছু হয় নাই আমার! কাম নাই, কাজ নাই, চিন্তা তো হইবোই। তুমি এত ঘ্যানঘ্যান কইরো না তো! আমারে একটু একলা থাকতে দেও।”
রহিমের এই ব্যবহারে ফাতেমার বুকটা ভেঙে গেল। সে বুঝতে পারছিল, তার স্বামী এক গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সে কীভাবে সাহায্য করবে, তা ভেবে পাচ্ছিল না। অনেক ভেবেচিন্তে সে একটা উপায় বের করল। গ্রামের মসজিদের ইমাম, ইদ্রিস আলী সাহেব খুব জ্ঞানী আর পরহেজগার মানুষ। গ্রামের সবাই তাকে খুব শ্রদ্ধা করে। ফাতেমা সিদ্ধান্ত নিল, সে রহিমকে ইমাম সাহেবের কাছে নিয়ে যাবে।
প্রথমে রহিম কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। নিজের এই লজ্জাজনক অবস্থার কথা, একটা তাবিজের কাছে তার অসহায়ত্বের কথা অন্য কাউকে বলতে তার আত্মসম্মানে লাগছিল। কিন্তু ফাতেমার কান্না আর নিজের সীমাহীন desesperation-এর কাছে সে হার মানল।
পরদিন সকালে তারা দুজনে ইমাম সাহেবের বাড়ির দিকে রওনা দিল। ইমাম সাহেবের বাড়িটা খুব সাদামাটা, কিন্তু কেমন যেন একটা শান্ত, পবিত্র ভাব আছে। বাড়ির উঠানে পা রাখতেই রহিমের অশান্ত মনটা একটু স্থির হলো। ইদ্রিস আলী সাহেব তাদের দেখে হাসিমুখে এগিয়ে এলেন।
“আরে রহিম, ফাতেমা মা, আসো। সব ভালো তো?”
তাদের দুজনকে বসতে দিয়ে ইদ্রিস আলী তাদের মুখের দিকে তাকালেন। রহিমের বিধ্বস্ত চেহারা আর ফাতেমার ছলছল চোখ দেখে তিনি বুঝতে পারলেন, কোনো বড় সমস্যা হয়েছে।
তার優しい জিজ্ঞাসার সামনে রহিম আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। সে প্রথমে তার জমির কথা বলল, কীভাবে তার সোনার ফসল ফলে না, মাটি মরে গেছে। তারপর অনেক দ্বিধা করে, কাঁপা কাঁপা গলায় সে তাবিজটার কথা বলল। বাড়ি থেকে আসার সময় সে ওটাকে সাথে করে নিয়ে এসেছিল। সে পকেট থেকে বাক্সটা বের করে ইমাম সাহেবের সামনে রাখল।
ইদ্রিস আলী বাক্সটা খুললেন। তাবিজটা হাতে নিতেই তার হাসিখুশি মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল। তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ, কুসংস্কারে বিশ্বাসী নন, কিন্তু তাবিজটা হাতে নিয়ে তার নিজেরই কেমন যেন অস্বস্তি হতে লাগল। তিনি অনুভব করলেন, জিনিসটা থেকে একটা শীতল, নেতিবাচক শক্তি বের হচ্ছে।
তিনি সাবধানে তাবিজের কালো কাপড়টা খুললেন। ভেতরে একটা পাতলা তামার পাতের ওপর হিজিবিজি অক্ষরে কী সব লেখা, তার সাথে জড়ানো রয়েছে কয়েকটা শুকনো শেকড় আর একটা পাখির শুকনো পা। লেখাগুলো আরবি বা ফার্সি নয়, অন্য কোনো দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা।
ইদ্রিস আলী অনেকক্ষণ ধরে জিনিসটা পরীক্ষা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি রহিমের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন, “রহিম, এই জিনিসটা ভালো না। এর মধ্যে আমি কোনো পবিত্র কালাম বা আয়াত পাইতেছি না। এর থাইকা এক ধরনের নাপাক, অশুভ শক্তি বাইর হইতাছে। আমার যা মনে হয়, এইটা কোনো সাধারণ তাবিজ না, এইটা কালা জাদুর কাজে ব্যবহার করা হয়। এইটা শয়তানি কাজের জিনিস। তুমি এইটারে যত তাড়াতাড়ি পারো, বাড়ি থাইকা দূর করো।”
রহিম ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু কীভাবে, হুজুর? আমি চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু পারি নাই।” সে রাতের সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা খুলে বলল।
ইদ্রিস আলী সব শুনে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইলেন। তারপর বললেন, “শয়তানের শক্তিকে ভয় পেলে চলবে না, ঈমানের শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। আমি তোমাকে কিছু দোয়া-কালাম শিখিয়ে দিচ্ছি। তুমি আজ রাতেই এই জিনিসটাকে নিয়ে নদীর সবচেয়ে গভীর জায়গায় যাবে। যাওয়ার পথে আর ফেলার সময় অনবরত এই দোয়াগুলো পড়তে থাকবে। পানিতে ফেলার পর আর পেছনে ফিরে তাকাবে না। সোজা বাড়ি চলে আসবে। মনে সাহস রাখো, আল্লাহ ভরসা।”
ইমাম সাহেবের কথায় রহিম একটু ভরসা পেল। তার মনে হলো, এবার হয়তো সে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।
সেই রাতটা ছিল অমাবস্যার রাত। আকাশে চাঁদ বা তারা কিছুই ছিল না। চারদিকটা এমন মিশমিশে কালো যে নিজের হাতও দেখা যায় না। রহিম হারিকেন হাতে বাড়ি থেকে বের হলো। ফাতেমা দরজায় দাঁড়িয়ে দোয়া পড়তে লাগল।
নদীর ধারের পথটা ছিল নির্জন আর ভয়ংকর। ঝোপঝাড় থেকে অদ্ভুত সব শব্দ আসছিল। রহিমের বারবার মনে হচ্ছিল, অন্ধকারের ভেতর থেকে দুটো জ্বলজ্বলে চোখ তাকে দেখছে। সে ইমাম সাহেবের শিখিয়ে দেওয়া দোয়াগুলো জোরে জোরে পড়তে লাগল। তার গলা ভয়ে কাঁপছিল, কিন্তু সে থামল না।
নদীর ঘাটে পৌঁছে সে দেখল, পানিটা একেবারে কালো, নিস্তরঙ্গ। যেন বিশাল একটা কালো গহ্বর। বাতাসের কোনো শব্দ নেই, চারদিক কবরের মতো নিঃশব্দ। এই নিস্তব্ধতাটাই সবচেয়ে ভয়ংকর। সে পকেট থেকে তাবিজটা বের করল। জিনিসটা আগের চেয়েও বেশি ঠান্ডা আর ভারী মনে হচ্ছে।
সে দোয়া পড়তে পড়তে তাবিজটা ছুড়ে মারার জন্য হাত তুলল।
আর ঠিক তখনই, তার পেছনে, খুব কাছ থেকে কেউ একজন যেন হিংস্রভাবে হেসে উঠল। একটা পাশবিক, কর্কশ হাসি, যা কোনো মানুষের কণ্ঠ থেকে আসা সম্ভব নয়। হাসির শব্দে রহিমের রক্ত হিম হয়ে গেল। সে অনুভব করল, তার ঘাড়ে কেউ যেন বরফ-ঠান্ডা নিঃশ্বাস ফেলল। একটা অবর্ণনীয় আতঙ্কে তার শরীর অসাড় হয়ে গেল। সে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে, নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাবিজটা নদীর মাঝ বরাবর ছুড়ে মারল।
‘ছপ’ করে একটা শব্দ হলো। তাবিজটা কালো পানিতে অদৃশ্য হয়ে গেল।
তাবিজটা পানিতে পড়ার সাথে সাথেই চারপাশের সেই দম বন্ধ করা ভারী ভাবটা যেন কিছুটা কেটে গেল। যে অশুভ হাসিটা সে শুনেছিল, সেটাও থেমে গেল। রহিম আর পেছনে তাকানোর সাহস করল না। সে প্রায় দৌড়ে বাড়ির পথ ধরল। তার বুক беше জোরে ধুকপুক করছে, কিন্তু মনের ভেতর একটা ক্ষীণ আশার আলোও জ্বলছে। হয়তো, এবার সত্যিই সব শেষ হলো।
বাড়িতে ফিরে সে ফাতেমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল। ফাতেমাও কাঁদছিল, তবে এ ছিল মুক্তির কান্না। দুজনে মিলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল। সেই রাতে, বহু দিন পর, রহিম এক গভীর, দুঃস্বপ্নহীন ঘুমে তলিয়ে গেল।
পরদিন সকালে যখন তার ঘুম ভাঙল, তখন তার নিজেকে অনেক হালকা লাগছিল। ঘরের জানালা দিয়ে ভোরের মিষ্টি রোদ এসে পড়েছে। পাখি ডাকছে। তার মনে হলো, কতদিন পর সে এমন সুন্দর একটা সকাল দেখছে! দুঃস্বপ্নটা তাহলে শেষ হয়েছে।
সে বিছানা থেকে নেমে ঘরের কোণায় রাখা মাটির কলসির দিকে গেল পানি খাওয়ার জন্য। ফাতেমা তখন উঠান ঝাঁট দিচ্ছিল। রহিম কাঁসার গ্লাসটা কলসির মুখে লাগিয়ে কলসিটা কাত করল। পানি পড়ার ঝিরঝির শব্দটা তার কানে অমৃতের মতো শোনাল।
কলসির পানি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সে গ্লাসটা সরিয়ে নিতে যাবে, এমন সময় কলসির ভেতর থেকে পানির সাথে ‘ঠুন’ করে একটা শব্দ হলো। একটা ছোট, ধাতব জিনিস গড়িয়ে তার গ্লাসের ভেতর এসে পড়ল।
রহিমের বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। তার সমস্ত শরীর যেন অবশ হয়ে গেল। সে অবিশ্বাস্য চোখে গ্লাসের দিকে তাকাল।
তার হাত কাঁপছে। সে দেখল, গ্লাসের নিচে, স্বচ্ছ পানির মধ্যে পড়ে আছে সেই জিনিসটা।
কালো কাপড়ের পুঁটলিটা আর নেই, কিন্তু তামার পাত, শুকনো শেকড় আর পাখির পা-টা রয়ে গেছে। নদীর পানির শেওলা আর কাদা মাখানো, কিন্তু নিঃসন্দেহে এটা সেই তাবিজটাই। যেটা সে গত রাতে নিজের হাতে নদীর গভীর পানিতে ছুড়ে ফেলেছিল।
রহিমের চোখের সামনে পৃথিবীটা দুলতে শুরু করল। ভোরের আলো, পাখির ডাক, ফাতেমার ঝাঁট দেওয়ার শব্দ - সবকিছু অর্থহীন হয়ে গেল। তার কানের ভেতর গত রাতের সেই পৈশাচিক হাসিটা ফিরে এলো। সে এখন বুঝতে পারল, ওটা কোনো সতর্কবার্তা ছিল না, ওটা ছিল একটা ঘোষণা। একটা অলঙ্ঘনীয় ঘোষণা।
সে মুক্তি পায়নি। সে আটকা পড়েছে। এই জিনিসটা ফেলে দেওয়ার নয়। এটা তার সাথেই থাকবে, যতক্ষণ না সে নিজে শেষ হয়ে যায়। এক চরম, ভয়াবহ সত্য তার সামনে উন্মোচিত হলো, যা ভয়ের সব সীমা অতিক্রম করে গেছে। সে বুঝতে পারল, তার নিয়তি এখন এই ছোট, অশুভ বস্তুটার হাতে বাঁধা পড়ে গেছে এবং এই দুঃস্বপ্ন থেকে তার কোনো মুক্তি নেই।
গ্লাসের ভেতরে ভেজা, শেওলা-মাখা তাবিজটার দিকে তাকিয়ে রহিমের পৃথিবীটা এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো, হৃদপিণ্ডটা যেন বরফের টুকরোর মতো জমে গেছে। এতদিনের জমানো ভয়, শঙ্কা, আর ক্ষীণ আশার আলো—সবকিছু মিলেমিশে একটা তীব্র, অসহনীয় যন্ত্রণায় পরিণত হলো, যা তার মস্তিষ্ক আর সহ্য করতে পারল না। তার হাত থেকে কাঁসার গ্লাসটা সশব্দে মেঝেতে পড়ে গেল। কাঁচ ভাঙার ঝনঝন শব্দে ফাতেমা ছুটে এলো রান্নাঘর থেকে।
“কী হইলো? গ্লাস ভাঙল কেমনে?” বলতে বলতে ঘরে ঢুকেই সে দৃশ্যটা দেখল। রহিম পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে, তার দৃষ্টি মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা কাঁচের টুকরোর দিকে নিবদ্ধ। আর সেই কাঁচ আর পানির মধ্যে, অশুভ এক ফুলের মতো ফুটে আছে সেই ভয়ংকর তাবিজটা।
ফাতেমার মুখ থেকে একটা চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো। তার শরীর ভয়ে কাঁপতে শুরু করল। যে অভিশাপকে তারা নদীর অতল গভীরে বিসর্জন দিয়ে এসেছিল, তা আজ তাদের ঘরের ভেতরে, তাদের পানির কলসির ভেতর থেকে ফিরে এসেছে। এই সত্যটা মেনে নেওয়ার মতো মানসিক শক্তি তাদের আর অবশিষ্ট ছিল না। এই ঘর, যা ছিল তাদের শেষ আশ্রয়, সেটাও এখন এক ভয়ংকর ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই নয়।
সেই দিনটার পর থেকে রহিম আর স্বাভাবিক মানুষ রইল না। তার মনের শেষ বাঁধটাও যেন ভেঙে গেল। সে নিজেকে ঘরের একটা কোণায় গুটিয়ে নিল। খাওয়া, কথা বলা, ঘুম—সবকিছু বন্ধ। ফাতেমা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার সামনে খাবার নিয়ে বসে থাকত, কেঁদে কেঁটে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করত, কিন্তু রহিমের কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না। সে শুধু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত, আর তার হাতে থাকত সেই তাবিজটা। সে ওটাকে আর ফেলার চেষ্টা করত না, বরং নিজের শরীরের একটা অংশের মতোই সব সময় সাথে রাখত। মাঝে মাঝে সে বিড়বিড় করে কীসব বলত, যা ফাতেমা বুঝতে পারত না।

[END]
Noted: This story is protected under copyright law and copyrighted by Bhoutik Kotha. Unauthorized copying, posting, or sharing may result in DMCA takedown, legal action, and Facebook account penalties. Content is tracked digitally—violators will be reported and penalized.
#ভূতেরগল্প #ভৌতিক #ভুত

Address

Mohammadpur

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Bhoutik Kotha posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Bhoutik Kotha:

Share

ভৌতিক কথার জানা অজানা ইতিহাস ।

ভুত এফ এম বন্ধ হয়ে যায় ১৩ই ডিসেম্বর ২০১৯ সালে। এর পর থেকেই আমাদের ইচ্ছাছিল একটা ভৌতিক ঘটনা নিয়ে ভুত এফ এম এর মতই একটা ভৌতিক সিরিজ করবো। ঠিক এমনটা ভাবতে ভাবতেই অনেক গুলো ভৌতিক ঘটনা শেয়ার করার মত একজন মানুশ মনির ভাইকে আমরা পেয়ে যাই আর সাথে সাথে প্ল্যানিংটা কে বাস্তবায়ন করে ফেলি। ঠিক এভাবেই গড়ে উঠেছে ভৌতিক কথা। আমাদের প্রথম এপিসড এ আল্লাহর রহমতে বেশ সারা পেয়েছি । তাই আমাদের ইচ্ছা এই প্রোগ্রামটাকে সাম্নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আপনাদের ভালোবাসা এবং অনুপ্রেরণবা আমাদের কাম্য। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সপ্তাহে দুইদিন এপইসড করা । এবং আপনাদের ভালোবাসা আছে বলেই হয়ত আমাদের পক্ষে প্রতি সপ্তাহে দুদিন করে টেলিকাস্ট করতে পারছি । আমাদের ইউটিউব চ্যানেল লিঙ্ক - https://www.youtube.com/channel/UCrZ2O60RhGy9tDk3iC6Xi9w

সাবক্স্রাইব করে সাথে থাকবেন এবং ৬ টা এপিসড দেখে আসুন আপনাদের মতামত জানাবেন ।

প্রতি শুক্র এবং শনিবার রাত ১১-১৫ মিনিটে চোখ রাখুন ভৌতিক কথা এর ইউটিউব চ্যানেল এ । BHOUTIK KOTHA is a Bengali weekly horror storytelling show which is brought to you by it's own Youtube channel, hosted by Jeffrey Khan horror storyteller of Bangladesh. In this show, Jeffrey Khan and many other guests share thier supernatural experiences & stories for their listeners. If u want to share your own story with us then email us here - [email protected]