জীবনের কিছু গল্প

জীবনের কিছু গল্প All kind of Original Authentic beauty products

গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় ( crazy_for_you )লেখনিতে :মিমি_মুসকানপর্ব_২২ ও ২৩ আরিয়ান নিশি'কে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় বা...
16/08/2023

গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় ( crazy_for_you )
লেখনিতে :মিমি_মুসকান
পর্ব_২২ ও ২৩

আরিয়ান নিশি'কে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় বাড়ির বাইরের অংশে। নিশি ছাড়ানো'র চেষ্টা করলেও আরিয়ান ছাড়ছে না।
"নিশি : ভাইয়া কি করছেন আমি কিন্তু চিৎকার করবো

"আরিয়ান : নিশি তোমার সাথে আমার কথা আছে প্লিজ দু'মিনিট দাঁড়াও।

"নিশি : কার ব্যাপারে আরিফা'র। দেখুন আমি কিন্তু আরিফা'র ব্যাপারে একটাও খারাপ কথা শুনবো না।

"আরিয়ান : না জিসান আর নিশি'র ব্যাপারে..

"নিশি : মানে...
এদিকে লাইট জ্বলে ওঠার পর জিসান তড়িঘড়ি করে খুঁজে যাচ্ছে নিশি'কে। কিন্তু নিশি'কে খুঁজেই পাচ্ছে না। জিসান অস্থির হয়ে পড়ে তখন আরিফা জিসানের ঘাড়ে হাত রেখে বলে..

"আরিফা : আরে এখানেই আছে। হয়তো কোথাও গেছে তুই শান্ত হো একটু!

"জিসান : আরে এখানেই তো ছিলো এতো তাড়াতাড়ি কোথায় গেলো

"নিশান : হাইপার হচ্ছিস কেন। হয়তো এখানেই আছে। আচ্ছা কল কর ফোন তো আছে ওর কাছে!

"জিসান : ওহ্ হ্যাঁ..
( ফোন'টা‌‌ বের করে কল করতে থাকে নিশি'কে। কিন্তু নিশি'র ফোন ওখানেই বেজে ওঠে )

"মেহেদী : ফোন তো এখানেই!

"রৌদ্দুর : এই মেয়ে টাও না পাগল করে ছাড়বে আমাদের!

"জিসান : ভালো লাগে না ধুর!

"আরিফা : তুই বেশি টেনশন করছিস এসে পরবে এখনই।

"জিসান : হুম।
নিশানের ফোন হঠাৎ বেজে ওঠে। নিশান ফোন নিয়ে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে আসে।
এদিকে নিশি অধীর আগ্রহে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে কি বলবে আরিয়ান তাকে। আরিয়ান'কে অনেকটা অস্থির দেখাচ্ছে।

"নিশি : কি হলো বলুন..

"আরিয়ান : নিশি আমি জানি না তুমি কিভাবে কথা'টা নিবে কিন্তু এটাই সত্যি যে...

"নিশি : যে...

"নিশান : যে আমি জিসানের সৎ ভাই! তাই ও তোমাকে ভালোবাসে জানা'র পরও আমি তোমাকে ভালবাসি!
হুট করেই নিশানের এমন কথায় নিশি আর আরিয়ান দু'জনেই অবাক। বেশি অবাক আরিয়ান কারন ও একথা বলতে নিশি'কে এখানে আনে নি। নিশান সেটা জানে তাই হুট করেই নিশান এমন কিছু বলে। কারন সে চায় না আরিয়ান নিশি'কে কিছু বলুক।
নিশি নিশানের কথা শুনে চরম অবাক। কি বলছে নিশান এইসব। আরিয়ান অবাক চোখে নিশানের দিকে তাকালে নিশান চোখ রাঙিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়। আরিয়ান মাথা নিচু করে বলে..

"আরিয়ান : হ্যাঁ এটাই বলার ছিলো!

"নিশি : ( পেছনে ফিরে আরিয়ান'র দিকে তাকায়। )

"আরিয়ান : আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি!
( আরিয়ান দ্রুত গতিতে চলে যায় সেখান থেকে)

"নিশি : আরে ভাইয়া শুনুন তো! ( আরিয়ান পিছু পিছু যেতে নিলে নিশান সামনে এসে দাঁড়ায় ) আপনি..

"নিশান : ( নিশি'র কোমর ধরে ) জান পাখি..

"নিশি : ( রাগে নিশানকে ধাক্কা দিয়ে ওর গালে চড় মেরে )
কি শুরু করেছেন কি আপনি! আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না আমি আপনাকে ভালোবাসি না। আমি জিসান'কে ভালোবাসি শুধু জিসান'কে। আপনি কেন আমাদের মাঝে এভাবে আসছেন বলুন তো কেন? জিসান ভাই তো আপনার। আপন বা পর যাই হোক সে আপনার ভাই। আপনার ছোট ভাই'কে ভালোবাসি আমি। আপনাকে না। আর কোন অধিকারে আপনি আমার কাছে আসেন কোন অধিকারে। কে আপনি?কিসের এতো অধিকার দেখান আপনি। কিসের বলুন? দেখুন লাস্ট টাইম বলছি ভালোভাবে আমার জীবন থেকে সরে যান প্লিজ!
নিশান কিছু বলে না প্রতিউওরে। সে চুপচাপ শুনে। সত্যিই কি কিছু বলার উচিত ছিলো তার। কিন্তু সে বললেই কি তার জান পাখি তা মেনে নেবে।
নিশি কথা শেষ করে রেগে সেখান থেকে চলে আসে। খারাপ তার ও লাগছে এভাবে এইসব বলায় কিন্তু তার কোনো উপায় ছিল না। নিশান বুঝতে রাজি না। সে কি বা করতে পারে!

নিশি ফিরে আসায় জিসান দৌড়ে নিশি'র কাছে যায়। নিশি'কে গিয়ে জরিয়ে ধরে।

"জিসান : কোথায় ছিলি তুই? জানিস পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। আর ফোন কোথায় তোর। ফোন ব্যবহার করিস কেন হুম একটা ফোন ঠিকঠাক ভাবে রাখতে পারিস না।

"নিশি : আমি এখানেই ছিলাম। একটু বাইরে গেছি তুই ঠান্ডা হো একটু!

"জিসান : রাখ তোর ঠান্ডা। ( নিশি'র হাত ধরে ) এইবার হাত ছাড়লে খবর আছে তোর!

"নিশি : কি করছিস সবাই দেখছে!

"জিসান : দেখুক।
জিসানের কান্ড দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে। নিশি লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে কারন। জিসানের মা বাবা ও এইসব দেখছে। পেছন থেকে নিশান বলে ওঠে...

"নিশান : পার্মানেন্ট ভাবে রেখে দিলেই তো পারিস!

"আরিফা : ভাইয়া বললো দশ কথার এক কথা আসলেই তো!

"মেহেদী : কিন্তু তার আগে তো ভাইয়ের'টা দেখা উচিত কারন তিনি তো বড়!

"নিশান : ( মুচকি হেসে নিশি'র দিকে তাকিয়ে ) তা দেখা যাবে কিন্তু জিসানের ভয় বেশি নিশি'কে হারাবার তাই বললাম।

"রৌদ্দুর : তা কিন্তু ঠিক কথা।
পার্টি শেষে জিসান নিশি'কে নিয়ে বের হয় ওর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। গাড়িতে বসে আছে নিশি বাইরের দিকে তাকিয়ে। ভাবছে আজকের সব কথা, এতো ঘটনা এতো কিছু! নিশান আসলেই পাগলামি করছে এটা হয় না। নিশানের সাথে আর দেখা হয় না নিশি'র ।
নিশি গালে হাত দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে। জিসান নিশি'কে এমন চুপ থাকা দেখে জিজ্ঞেস করে..

"জিসান : কিরে কি ভাবছিস এতো

"নিশি : ( জিসানের দিকে ফিরে ) বিয়ে করবি আমাকে!

"জিসান : ( চট করে গাড়ি ব্রেক করে নিশি'র দিকে তাকিয়ে ) কি বললি!

"নিশি : বিয়ে করবি আমাকে। বিয়ে..

"জিসান : হ্যাঁ মানে না মানে..

"নিশি : কি হ্যাঁ মানে করছিস। ভালোবাসি'স না

"জিসান : হ্যাঁ বাসি তো অনেক বাসি

"নিশি : তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়?

"জিসান : মানে এতো তাড়াতাড়ি...

"নিশি : রাখ তোর তাড়াতাড়ি ( গাড়ি থেকে নেমে ) আমি একাই যেতে পারবো!

"জিসান : আরে নিশি কি করছিস দাঁড়া..
নিশি দাঁড়ায় না হাঁটতে থাকে। জিসান গাড়ি থেকে নেমে নিশি'র সামনে দাঁড়িয়ে।

"জিসান : কি করছিস? এতো রাতে একা একা কোথায় যাচ্ছিস?

"নিশি : সর সামনে থেকে.. ( জিসানের পাশ দিয়ে যেতে চাইলে)
জিসান পেছন থেকে নিশি'র হাত ধরে নিশি'কে ঘুরিয়ে ওর‌ সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। তারপর নিজের হাত থেকে একটা রিং বের করে নিশি'র সামনে ধরে বলে..

"জিসান : এখন এটা দিয়ে প্রোপজ করি পরে ওকে। তো মিস নিশিতা আহমেদ নিশি! আপনি কি আমার শেহজাদি হবেন, হবেন আমার অর্ধাঙ্গিনী,হবেন আমার সারা জীবনের সাথি!‌ মিস নিশিতা আহমেদ থেকে হবেন কি নিশিতা জিসান চৌধুরী! ( ভ্রু নাচিয়ে )

"নিশি : ( মুচকি হেসে ) হুম হবো!

জিসান নিশি'র উওর শুনে হেসে ওর অনামিকা আঙ্গুলে রিং'টা পরিয়ে দেয়। তারপর ওর হাতের উপরে কিস করে।
নিশি খুশিতে একটা লাফ দিয়ে জিসান'কে জরিয়ে ধরে বলে..

"নিশি : আই লাভ ইউ জিসান..

"জিসান : আই লাভ ইউ টু। তাহলে এবার চলুন

"নিশি : হুম।
দু'জনেই গাড়িতে গিয়ে বসে। এভাবেই খোলা আকাশের নিচে নিশি জিসানের বিয়ের প্রস্তাব মেনে নেয়। কিন্তু এই আকাশের নিচেই আরেকজন ‌বসে বসে সব দেখে। এইসব দেখার পর তার কলিজা'টা ফেটে যাচ্ছে রাগে কিন্তু তাও সে চুপ। রাগে তার চোখ লাল হয়ে গেছে। চুপচাপ গাড়ি'র হ্যান্ডেল'টা ধরে মাথা'টা সিটের সাথে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় নিশান। নিশি'র প্রতিটা কথা বাজে ওর কানে।

নিশান : কিসের অধিকার? হ্যাঁ নিশি বলেছিল কিসের অধিকার ওর ওপর আমার। আমি কেন অধিকার ফলাই ওর ওপর। আর আমি জেনো আর অধিকার ফলাতে না পারি তাই আজকে এইসব করল নিশি। বিয়ে করবে না জিসান'কে।‌ অর্ধাঙ্গিনী হবে ওর, সারাজীবন একসাথে থাকবে...( একটা দীর্ঘশ্বাস )।
বাসায় এসে আজ অনেক খুশি নিশি। কখন থেকেই অনামিকা আঙ্গুলে'র রিং'টা দেখছে। কি সুন্দর মূহুর্ত ছিল তখন যখন জিসান তাকে বিয়ে প্রোপজাল দিয়েছে। খোলা আকাশের নিচে, প্রতিটা গাছপালা, বাতাস, চাঁদ এমন'কা তারাও সাক্ষী ছিল তাদের এই ভালোবাসা'র । ভাবতেই ভালো লাগছে তার। সব কিছু এভাবে ঠিক হয়ে যাবে ভাবতে পারে নি।

মুচকি মুচকি হাসছে আর রিং'টাকে দেখছে। খুশিতে হেলেদুলে বেড়াচ্ছে পুরো রুমে। মেয়ের এমন হাবভাব ধরা পরে রায়হান আহমেদ এর কাছে। উনি এসব দেখে নিশি'কে কিছু জিজ্ঞেস করে না। কিন্তু ঘরে আসে ফারহানা বেগম এর সাথে আলোচনা করেন এই বিষয় নিয়ে।
এদিকে দেখতে দেখতে ৩ বোতল ড্রিক করে ফেলেছে নিশান। আরিয়ান চেয়েও থামাতে পারছে না তাকে। নিশানের কানে শুধু নিশি'র কথা বাজছে।

নিশান চোখ বন্ধ করে এক চুমুক দিতেই মনে পরে নিশি'র কথা..
"কোন অধিকারে আপনি আমার কাছে আসেন কোন অধিকারে। কে আপনি?কিসের এতো অধিকার দেখান আপনি। কিসের বলুন?"

নিশান চোখ খুলে হেসে বলে..

"অধিকার! জান পাখি অধিকার.. তুমি অধিকার দেখাচ্ছো আমাকে। তোমার প্রতি আমার কোনো অধিকার নেই তাই তুমি জিসান'কে সে অধিকার দিলে না। তোমাকে আমি এখন দেখাবো কিসের অধিকার! অধিকার এর মর্ম এবার বুঝবে তুমি!

"আরিয়ান : তুই আমাকে তখন না করলি কেন? তখন আমি সব বলে দিলে এতো কিছু হতোই না

"নিশান : ও বিশ্বাস করতো তোর কথা! বলতো আমি তোকে দিয়ে এইসব মিথ্যে বলাচ্ছি!

"আরিয়ান : ভিডিও দেখাতাম। সেগুলো তো ছিলো

"নিশান : মন ভেঙে যেতো ওর। এতো বড়ো শক ও মেনে নিতে পারতো না।

"আরিয়ান : কেন তোর মন ভাঙেনি..

"নিশান : এটা তো অনেক বার ভেঙেছে তাই এখন আর ভাঙে না..

"আরিয়ান : তা এখন কি করবি! বিয়ের কথা তো হয়ে গেলো

"নিশান : তো বিয়ে তো হয় নি..

"আরিয়ান : মানে...

"নিশান : সেটা কাল'ই দেখবি কিসের অধিকার...
সকালে নিশি অফিসে যাবার জন্য রেডি হয়ে বের হতে নিলে রায়হান আহমেদ নিশি'কে ডেকে বলেন..

"রায়হান : মামনি..

"নিশি : হ্যাঁ বাপি..

"রায়হান : আজ অফিসে যাওয়া লাগবে না!

"নিশি : কেন বাপি..

"ফারহানা : তোকে আজ দেখতে আসবে..

"নিশি : মানে বাপি... ( অবাক হয়ে )

"রায়হান : হ্যাঁ মামনি। আমার খুব কাছের একজন আর সম্বন্ধ'টা খুব ভালো।

"নিশি : কিন্তু বাপি...

"রায়হান : একদিন অফিসে না গেলে কিছু হবে না। তারা দুপুরে আসছেন। তুমি আরিফা কে ফোন করে আসতে বলো ( ফারহানা'কে উদ্দেশ্য করে ) ‌। আর নিশি আশা করি তুমি আমাকে হতাশ‌ করবে না।

"নিশি : ( বাবার মুখে নিশি ডাক শুনে নিশি আর কিছু বলে না। কারন ওর বাবা সিরিয়েস কিছু হলে নাম ধরে ডাকে। তাই নিশিও মাথা নিচু নাড়িয়ে রুমে চলে যায় )

"ফারহানা : হঠাৎ করে এইসব! তাড়াহুড়ো হচ্ছে না..

"রায়হান : নিশি'কে কিছুদিন ধরে নাকি কোনো ছেলের সাথে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমার মেয়ে'কে আমি অনেক বিশ্বাস করি আর যা করছি ওর ভালো'র জন্য করছি তুমি চিন্তা করো না।

"ফারহানা : হুম আমি জানি।
নিশি রুমে এসে দরজা লক করে বিছানায় ধপাশ‌ করে বসে পরে। রাগে শরীর জ্বলছে। নিশানের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য এতো কিছু করলো, কালকে বিয়ে ঠিক করল তাও এখন এই সমস্যা।‌ মাথায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে নিশি'র।

"নিশি : উফফ জীবন'টা পুরো তেজপাতা হয়ে যাচ্ছে। কাল এতো কিছু করলাম , রাতে সব ঠি করলাম আর আজ এটা! বাপি এমন কেন করছে কেন কিছু বুঝতে চাইছে না। একবার জিজ্ঞেস ও করল না আমার পছন্দের কথা। হুট করেই এইসব!
নিশি রুমে পাইচারি করছে এখান থেকে ওখানে। তখন আরিফা আসে। নিশি আরিফা'কে দেখে তাড়াতাড়ি নিশানের থেকে শুরু করে কাল রাতে জিসানের প্রোপজ করা অবদি সমস্ত কথা বলে তার সাথে সকালের দেখতে আসার ব্যাপার'টাও‌।আরিফা হা করে সব শুনে।

"আরিফা : এতো কিছু হয়ে গেলো আর তুই আমাকে কিছু বললি না।

"নিশি : আরে সময় পেলাম কোথায় বলার!

"আরিফা : নিশান ভাইয়া.. আর সাথে আরিয়ান ও আমি কিছুই ভাবতে পারছি না।

"নিশি : এখন আর তোর ভাবা লাগবে না। এখান থেকে বের হবার উপায় বল!

"আরিফা : আরে চিল ছেলেকে না বলে দিবি ব্যস এটাই!

"নিশি : যদি না মানে..

"আরিফা : প্রেগন্যান্ট বলে দিবি সিমপাল ( হেসে )

"নিশি : তোর এখানে মজা মনে হচ্ছে ( দাঁতে দাঁত চেপে )

"আরিফা : আরে মজা করবো না এখনকার দিনে এটা নরমাল ব্যাপার। যাই হোক ছেলে মেয়েরা আলাদাভাবে কথা বলতে পাঠানো হয়। তখন তুইও বলে দিবি যে তোর বফ আছে ব্যস আর তখন কাজ না হলে বললাম তো...

"নিশি : চুপ কর শাকচুন্নী। চিন্তায় আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে!

"আরিফা : আরে আমি কি স্বাদে বলছি নাকি! তুই যেভাবে আচারের বোয়াম'টা নিয়ে বসে আছিস ওই'টা ছাড়া অন্য কোনো প্ল্যান আসলো না আমার।

"নিশি : শোন আমার খুব টেনশন হচ্ছিল তাই আমি আচার খাচ্ছি!

"আরিফা : তোকেই দেখলাম যে কি না টেনশনে পরলে আচার খায়। তবে একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার কি জানিস!

"নিশি : কোনটা?

"আরিফা : দুই ভাই তোর প্রেমে পাগল। বাহ সেই না

"নিশি : আবার মজা করছিস!‌( রেগে )

"আরিফা : আচ্ছা আচ্ছা রাগিস না কিন্তু এটা বল আজ অফিসে যাস নি ফোন করে নি?

"নিশি : না

"আরিফা : কেন?

"নিশি : কালকে অনেক কথা বলেছি তাই হয়তো... যাই হোক ওই টেনশন এখন নিতে পারবো না আগে এই ছেলে'র পক্ষে'র টেনশন শেষ করি...

"ফারহানা : কিসের এতো টেনশন.. ( হুট করে )

"নিশি : টেনশন মানে ( ঘাবড়ে গিয়ে )

"আরিফা : আসলে ওই যে দেখতে আসবে সেটা। তা আন্টি আপনার কিছু চাই এখানে..

"ফারহানা : হ্যাঁ ওদের আসার সময় হয়ে গেছে তাই এই শাড়ি'টা আনলাম। ওকে পরিয়ে দে আমার অনেক কাছ আছে ওখানে...

"নিশি : এতো আয়োজন করছো মনে হচ্ছে যেন বিয়ে করতে আসছে..

"ফারহানা : ভাগ্যে কি আছে কে বলতে পারে বল!

"নিশি : মা...

"ফারহানা : আরে এমন কিছু না আরিফা ধর এগুলো।

"আরিফা : হুম আন্টি।
ছেলেরা এসে পরেছে। আরিফা নিশি'কে এখনও সাজাচ্ছে। নীল রঙের একটা শাড়ি, তার সাথে নীল রঙের রেশমী চুড়ি, কানের দুল। চুল গুলো খোঁপা বেঁধে বেলী ফুল দিয়ে দিয়েছে। নিশি'কে আজ চমৎকার লাগছে। নিশি আয়নাতে নিজেকে দেখে মুখ ফুলিয়ে আরিফা'কে বলে...

"নিশি : এতো সুন্দর করে সাজিয়েছিস কেন? তুই কি চাস বিয়েটা হোক!

"আরিফা : আরে আরে তা না। যতই হোক তোর একটা সম্মান আছে। তাই...

"নিশি : না লাগবে না কিছু। এতো সাজাগোজের দরকার নেই। জিবন'টা তেনা তেনা হয়ে যাচ্ছে।

"আরিফা : কার কারনে জিসান না নিশান!

"নিশি : আরু...

"ফারহানা : কিরে তোদের হলো চল এখন..

"আরিফা : হ্যাঁ আন্টি আসছি..
আরিফা নিশি'কে নিয়ে নিচে নামছে। নিশি'র তো বেহাল অবস্থা। কেন জানি ওর শরীর আবারও শিউরে উঠছে। হার্টবিট আবারও বেড়ে যাচ্ছে। কারন কি নিশান আসে নি তো!
হাত পা কাঁপতে থাকে নিশি'র। কোনোমতে ছেলেপক্ষ'র সামনে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু মাথা তুলে দেখার সাহস পায় না। নিশি আরিফা'কে খোঁচা দিচ্ছে। আরিফা তো ছেলেপক্ষ দেখে অবাক। সে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
"নিশি : কিরে বল কিছু!

"আরিফা : ....

"নিশি : আরু..

"আরিফা : ( মুচকি হেসে ) সামনে দেখ কে এসেছে..

"নিশি : হাসছিস কেন?

"আরিফা : দেখ তো!
নিশি এবার সামনে তাকায়। সামনে তাকিয়ে দেখে নিশি তো খুব অবাক। কারন চিকন ফেমের গোল চশমা, পরনে একটা কাতান শাড়ি পরে তার সামনে আরশিয়া চৌধুরী বসে আছেন। নিশি তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। কারন উনি তো আরশিয়া চৌধুরী তার মানে জিসান'র জন্য এসেছে। তাহলে তার এরকম অনুভূতি'র কারন কি। আচ্ছা আরশিয়া চৌধুরী কার জন্য দেখতে এসেছেন নিশি'কে।

চলবে....

সেই_তুমি🍁পর্ব_০৫Tabassum_Kothaফটো ফ্রেমটা বুকে জরিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পরে তুর্য।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তুর্য এখনও ...
16/08/2023

সেই_তুমি🍁
পর্ব_০৫
Tabassum_Kotha

ফটো ফ্রেমটা বুকে জরিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পরে তুর্য।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তুর্য এখনও ফিরে আসে নি। কেনো জানি না আমার বুকে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে তুর্য কেনো ফিরে এলো না? আমি তাড়িয়ে দিয়েছি বলে কি ফিরে আসা যেতো না? কিন্তু আমি এসব কেনো ভাবছি? আমি তো তাকে ঘৃণা করি। আর কিছু ভাবতে পারছি না, মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। বেরিয়ে এসে দেখি এখনও তুর্য ফিরে নি, এখন আমার রাগ হচ্ছে। এতো কি অভিমান তার, একটু কিছু বলেছি তো কি হয়েছে? এতোটুকু তো আমি বলতেই পারি, সে আমার সাথে যা করেছে তার সামনে এই কথাগুলো কিছুই না। কিন্তু তুর্য তো আমাকে কিছুই বলে নি। আমার কেনো এতো অস্থিরতা হচ্ছে? আপন মনেই কথা গুলো ভাবছিলাম আর চুল আচরাচ্ছিলাম। তখন দরজায় নক পরলো। জানি না কেনো আমার ঠোঁট দুটো একাই একটু হেসে উঠলো, নিজের অজান্তেই আমার মন বলে উঠলো তুর্য এসেছে। একছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই আমার মুখটা আবারো মলিন হয়ে গেলো।

দরজার সামনে তাসফি দাড়িয়ে আছে। নাশতার জন্য ডাকতে এসেছে আমাকে। কেনো জানি না তুর্যর কথা জানতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সংকোচ বোধ হচ্ছে অনেক। অবশেষে লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে তাসফিকে বলেই ফেললাম।

-- তোমার ভাইয়া কোথায় তাসফি?

-- ভাইয়া তো তার রুমে।

-- তার রুম মানে? এটা তাহলে কার রুম?

-- না মানে আসলে এটাও এখন ভাইয়ার রুম, আগে ভাইয়া অন্য রুমে থাকতো আর কি।

-- ওহ! তোমার ভাইয়া বের হবে না?

-- কি জানি ভাবি, বলতে পারলাম না। তুমি নিচে আসো আম্মু ডাকছে।

-- হুম চলো।

তুর্য তার আগের ঘরে কার সাথে কথা বলছিল রাতে? কেনো যেনো মনে হচ্ছে এ বাড়ির সবাই আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছে। তুর্যর বড় কোনো রহস্য আছে। কিন্তু কি?

রান্নাঘরে দাড়িয়ে আছে তুর্য, হাতে ছোট একটা প্যাকেট। যার ভিতর পাউডার জাতীয় কোনো একটা দ্রব্য আছে। সবার জন্য পায়েস বাটিতে তুলে রাখা ছিল, সেখানের একটা বাটিতে প্যাকেটে রাখা পাউডার টা মিশিয়ে দিলো তুর্য। চোখমুখ চিকচিক করছে তুর্যর, মুখে লেগে আছে ভিলেন হাসি। তুর্যর ইশারায় বাড়ির সার্ভেন্ট ঔষধ মিশানো পায়েসের বাটিটা হীরকে দিয়ে দিলো। তুর্য ডাইনিং এর পাশে দাড়িয়ে সবটা দেখছে।

খাওয়া শেষে একজন সার্ভেন্ট পায়েস দিয়ে চলে গেলো। পায়েসটা খাওয়ার একদম ইচ্ছে আমার ছিল না। কিন্তু আম্মু বারবার বলায় খেয়ে নিলাম। নাশতা করার সময়ও তুর্যর দেখা পাই নি। রুমে এসে রুমের প্রতিটা জিনিস খুটে খুটে দেখছি, উদ্দেশ্য সময় পাস করা। কিন্তু সময় যতো যাচ্ছে আমার অস্থিরতা আরো বারছে। তুর্যকে দেখতে ইচ্ছা করছে ভীষণ। হঠাত আমার গা গুলিয়ে উঠে বমি হলো। একবার না বেশ কয়েকবার হলো। এখন অবস্থা এমন যে আমি আর নরতেও পারছি না, বিছানায় পরে আছি,, অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পরেছি। তখনই তুর্য ঘরে এলেন। তাকে দেখে এবার আমার ভীষণ রাগ হলো, সকাল থেকে তাকে খুঁজছি আর সে কি না একবারও আমার সামনে আসে নি। তুর্য আমার এই অবস্থা দেখে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে কোথায় যেনো যেতে লাগলো। শরীরে শক্তি নেই তার সাথে ঝগরা করার তাই কিছু বললাম না।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি, ডাক্তার দেখছেন, তুর্য আমার পাশেই দাড়িয়ে আছেন। ডাক্তার নার্সকে বলছেন ব্লাড নেওয়ার জন্য।

-- কিন্তু আমার তো ফুড পয়েজনিং হয়েছে মাত্র তাহলে ব্লাড নিতে হবে কেনো?

-- ডাক্তার সাহেব কিছুটা হলেও তোমার থেকে ভালো বুঝেন তাই নিবে।

-- কিন্তু ব্লাড নিতে হলে তো ইনজেকশন দিতে হবে।

-- কেনো? ভয় পাও বুঝি?

তুর্যর কথাটা আমার ইগোতে লেগেছে।

-- আমি কি বাচ্চা নাকি যে ভয় পাবো? ডাক্তার আপনার যতোবার ইচ্ছা ব্লাড নেন। আমি ভয় পাই না।

টেষ্ট করতে দিয়ে কিছু মেডিসিন নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। সারাটা বিকেল ঘুমিয়ে থেকে সন্ধ্যায় চোখ মেলতেই দেখি তুর্য আমার মাথার কাছে বসে আছে। নেশা ধরানো চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে সে। তার চোখ দুটো আমাকে কিছু বলতে চাইছে মনে হচ্ছে কিন্তু এই ভাষাটা আমি পড়তে পারছি না। তবুও তাকিয়ে আছি তার দিকে। জানি না কতোক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম এভাবে, হঠাত তুর্য উঠে সেখান থেকে চলে গেলেন। কোথায় গেলো দেখার জন্য আমিও তার পিছনে গেলাম। কাল রাতের সেই ঘর টাতে গিয়ে নিজেকে বন্দী করে নিলেন সে। আমি বেশকিছুক্ষণ সেই ঘরটার বাইরে দাড়িয়ে রইলাম। কালকের মতো কথার শব্দ আসছে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না। আমার জানার অনেক আগ্রহ হচ্ছে ঐ ঘরে কে আছে যার সাথে তুর্য ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে।

আবারো সেই একই ফটো ফ্রেমটা বুকে জরিয়ে ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে আছে তুর্য। তবে আজ আর চোখে পানি নেই। আজ দুচোখ খুশিতে চকচক করছে, মনে হচ্ছে কোনো ছোট বাচ্চা তার হারিয়ে যাওয়া খেলনার সন্ধান পেয়েছে।

"আমি পেরেছি হীর, দেখো আমি পেরেছি। আমি আমার লক্ষ্য পূরণের পথে অনেক দূর এগিয়ে এসেছি হীর। আর বেশি অপেক্ষা অবশেষ নেই, আর কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। সব অপরাধী তার অপরাধের শাস্তি পাবে। সব হিসাব কড়ায়-গন্ডায় উসুল করা হবে। আমি শুধু সেই দিনটার অপেক্ষায় আছি হীর, যেদিন তুমি আমাকে নিজের করে নিবে। সেদিন আমার ভালোবাসার চরম প্রাপ্তি হবে কলিজা।
যারা তোমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে, আমাকে তোমার জীবন থেকে সরিয়েছে তাদের তো কৈফিয়ত দিতেই হবে। এতো সহজে তাদের কিভাবে ছেড়ে দেবো? এতোদিন শুধু অপেক্ষা ছিল তোমাকে নিজের কাছে আনার। যেটা হয়ে গেছে। এখন শুরু হবে আসল খেলা। তুর্য আহমেদ চৌধুরী এতো সহজে সব ভুলে যাবে সেটা তো হবে না।"
কথাগুলো বলেই তুর্য একটা ভিলেন হাসি দিলো।

তুর্য এখনও ফিরে আসে নি। জানি না কার সাথে কথা বলে লুকিয়ে। এতোই যখন ভালোবাসা ছিল তাহলে আমার সাথে ওসব করলো কেনো? আর বিয়েই বা কেনো করলো? ভীষণ কান্না পাচ্ছে। তুর্যর এই অবহেলা আমি মেনে নিতে পারছি না। তুর্য কাছে এলেও আমার সহ্য হয় না আবার দূরে গেলেও কষ্ট হয়। আমি নিজেই নিজেকে বুঝতে পারছি না।

ফোনটা সেই কখন থেকে বেজেই চলছে, এতোক্ষণ তুর্যর কথা ভাবছিলাম তাই ধরি নি কিন্তু এখন সহ্য সীমার বাইরে চলে গেছে। স্ক্রিনে নাম না দেখেই রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে রায়ানের কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।

-- হীর কোথায় তুই? দুদিন যাবত ফোন করছি কোনো খোঁজ নেই তোর? তুই ঠিক আছিস তো? রাহি বললো ঠিক আছিস কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় নি। এতোবার ফোন করার পরেও রিসিভ করিস নি কেনো?

রায়ান ভাইকে ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছি না। মাথা পুরোই হ্যাং হয়ে গেছে। আমার উপস্থিত বুদ্ধি আগে থেকেই কিছুটা কম, এখনও তাই হয়েছে। মুখে তালা লাগিয়ে বসে আছি। রায়ান ভাইয়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই আমার কাছে। কি বলবো তাকে যে তুমি ঢাকার বাইরে গেছো আর আমি বিয়ে করে নিয়েছি। কেনো করেছি সেটা তাকে বোঝাতে পারবো না। তার পরিবারের জন্যই করেছি এটা, কারণ ঐমানুষগুলো আমার আপনজন। তাদের জন্য সব করা যেতে পারে। কিন্তু রায়ান কি সেটা বুঝতে পারবে?
রায়ানকে কিছু বলার আগেই কেউ আমার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিলো। পিছন ফিরে দেখি তুর্য অগ্নিমূর্তি হয়ে দাড়িয়ে আছে। তুর্যকে দেখে রীতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে আমার।

-- আআসসললে ররায়ান ভাই ফোন দিয়েছিল দদুদিন ধরে আমার খুঁজ নেই বলে। (তুতলিয়ে কথাগুলো বললাম)

তুর্য আমার কোনো কথা কানে না নিয়ে আমার দিকে আগাচ্ছে, আর আমি পিছাচ্ছি। পিছাতে পিছাতে আলমারি ঠেকে গেছে পিঠে। এবার আর রক্ষা নেই আমার, এবার আমাকে মরতেই হবে। তুর্য যেভাবে আগাচ্ছে আমার দিকে আমি নিশ্চিত গলা চেপে মেরে দেবে।
আমার আর তুর্যর মধ্যে হয়তো এক সেন্টিমিটার দূরত্বও নেই। তুর্যর নিশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পরছে। তুর্যর হাত দুটো আমার দিকেই আসছে এখনই হয়তো গলায় পরবে। আমি চোখমুখ খিচে ধরে আছি। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তুর্য আমার গলা চেপে না ধরে ঠোঁট দুটো চেপে ধরলো তার ঠোঁট দিয়ে। আমি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। তুর্য আমার কোমড় জরিয়ে ধরে রেখেছেন, আমি যেনো ফ্রিজ হয়ে গেছি। কিছুক্ষণ পর তুর্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে গেলেন। আমি এখনও আগের পজিশনেই দাড়িয়ে আছি। শুধু ভাবছি কিভাবে কি হলো। রাতে তুর্য আর ঘরে ফিরে নি। হয়তো সেই রুমটাতেই ছিল। পরদিন সারা দিন তুর্যকে একবারের জন্যও দেখা গেল না। না জানি কোথায় গিয়েছে। বিকেলে তুর্য বাড়ি ফিরে আসার সময় তার হাতে একটা প্যাকেট ছিল আর মুখটাও কেমন চিন্তিত, বিষন্ন ছিল। তুর্য বাড়ি ফিরে আমাদের রুমে না এসে সেই ঘরটায় ঢুকে গেলো। এখন আমি নিশ্চিত হয়তো এই লোকটার মানসিক সমস্যা আছে আর নাহয় ওই ঘরে কেউ থাকে যার সাথে সে কথা বলে লুকিয়ে লুকিয়ে। না এভাবে হাতে হাত ধরে বসে থাকলে চলবে না। আমাকে জানতেই হবে ঐ ঘরে কে থাকে যার সাথে তুর্য সারা টা রাত কাটায়।

সন্ধ্যায় তুর্য আমার ঘরে এসে একটা প্যাকেট আমার হাতে দিলেন।

-- এটা পরে রেডি হয়ে নাও আমরা ডিনার করতে বাইরে যাচ্ছি।

তুর্যকে মানা করতে গিয়েও কেনো যেনো মানা করতে পারলাম না। প্যাকেটটা খুলে দেখি একটা ব্ল্যাক থ্রিপিছ, সাথে ম্যাচিং কানের দুল। জামাটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। বেরিয়ে দেখি তুর্য চুল আচড়াচ্ছে। তুর্য কালো শার্ট পরেছে। ফর্সা শরীরে কালো শার্টটা বেশ মানিয়েছে। আমাকে বের হতে দেখে তুর্য নিচে চলে গেলেন। চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা রঙের একটা লিপষ্টিক পরে নিলাম, চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছি। থ্রিপিছ টা অনেক সুন্দর, আমাকে ভালোই মানিয়েছে। তুর্যর পছন্দ এতোটাও খারাপ না। হ্যান্ড ব্যাগটা নিয়ে নিচে নেমে গেলাম। তুর্য নিচেই দাড়িয়ে ছিল, আমার দিকে বেশকিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। এভাবে তাকিয়ে থাকায় আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। হালকা করে একটু গলা ঝারা দেওয়াতে তুর্য যেনো হুশ ফিরে পেলো। রেষ্টুরেন্টে আমাদের সাথে তুর্যর বডিগার্ড জনও গেলো। রেষ্টুরেন্টের ভিতর ঢুকতেই উপস্থিত সবাই তুর্যর উপর হুড়মুড়িয়ে পরলো। রকস্টার তুর্যকে এভাবে দেখতে পাবে হয়তো আশা করে নি। দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি ৩/৪ মিনিট হয়ে যায় তবুও ঢুকতে পারছি না। মেয়ে ফ্যানগুলো মনে হচ্ছে তুর্যকে খেয়ে ফেলবে। সেলফি নিচ্ছে তো নিচ্ছেই। অবশেষে তাদের সেলফি প্রোগ্রাম শেষ হলে তুর্য আমার হাত ধরে একটা টেবিলে নিয়ে বসিয়ে দিলো। এই টেবিলটা হয়তো স্পেশিয়াল ভাবে সাজানো হয়েছে। সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো আমি একটা এলিয়েন। রকস্টার তুর্যর সাথে আমাকে দেখে সবার চোখ বড়বড় হয়ে আছে। তুর্য টেবিলে বসতেই কিছু মেয়ে ফ্যান এসে তুর্যকে একটা গান শুনানোর জন্য রিকুয়েষ্ট করতে লাগলো। তুর্য তাদের হ্যাঁ সম্মতি দিলে ম্যানেজার গিটারের ব্যবস্থা করে দিলেন। এই মেয়েগুলোর আদিক্ষ্যেতা দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। একটা মানুষ বউর সাথে ডিনার করতে এসেছে তাতেও শান্তি নেই। তুর্য গিটার হাতে নিয়ে সেন্টারে গিয়ে বললো,

-- এখন আমি যেই গান টা গাইবো সেটা আমি ডেডিকেট করতে চাই আমার লাভলি ওয়াইফকে।

তুর্যর কথা শুনে ওর ফ্যান রা মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পরলো। সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "বউ মানে? তুর্য আপনি বিয়ে করেছেন?"

-- Yeah. Meet my lovely wife Heer.
(আমার দিকে ইশারা করে)

সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

-- হীর শুধু আমার বউ নয়, আমার বেষ্টফ্রেন্ড, আমার ছোটবেলার সরি ছোটবেলার না টিন এজের ভালোবাসা। আমার জীবন, আমার কলিজা, আমার হীর।

এই লোকটা পারেও বটে। কতো সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা বলছে। বিয়ে করলো জোর করে আবার আমি নাকি তার ছোটবেলার সরি টিন এজের ভা
লোবাসা। একটা মেয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে তুর্যর বিয়ের কথা শুনে। আমার কেনো জানি না খুব হিংসা হচ্ছে মেয়েগুলোর প্রতি। কেমন চিপকে দাড়িয়ে আছে তুর্যর সাথে। তুর্য গিটারে সুর তুললো, আমিও তাকিয়ে আছি তুর্যর দিকে।

🎼🎼
সেই তুমি, কেন এত অচেনা হলে?
সেই আমি, কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম?
কেমন করে এত অচেনা হলে তুমি?
কিভাবে এত বদলে গেছি এই আমি?
ও বুকেরই সব কষ্ট দু'হাতে সরিয়ে
চলো বদলে যাই

তুমি কেন বোঝনা?
তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়
আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমায় ঘিরে
আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে
তুমি ক্ষমা করে দিও আমায়

কত রাত আমি কেঁদেছি
বুকের গভীরে কষ্ট নিয়ে
শূণ্যতায় ডুবে গেছি আমি
আমাকে তুমি ফিরিয়ে নাও

তুমি কেন বোঝনা?
তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়
আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমায় ঘিরে
আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে
তুমি ক্ষমা করে দিও আমায়…
🎼🎼

করোতালির শব্দে আমার ধ্যান ভাঙলো, গালে হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম গাল ভিজে গেছে চোখের পানিতে। তার মানে কি আমি কাঁদছিলাম? কিন্তু আমি কেনো কাঁদবো? তুর্যর দিকে ভালোমতো তাকিয়ে দেখলাম তুর্যর চোখও ভেজা। তবে কি তুর্যও কাঁদছিল? এসব কি হচ্ছে?

তুর্য সবাইকে বিদায় জানিয়ে টেবিলে এসে বসে পরলো। মুখে হাসি লেগে থাকলেও তুর্যর চোখ দুটো টলমল করছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুর্য কাঁন্না চেপে রেখেছে। কিন্তু কেনো?

ডিনার শেষে বাড়ি ফিরে তুর্য আমার রুমেই এসেছে। বারবার জানতে ইচ্ছা করছে তুর্য তখন কেনো কাঁদছিল কিন্তু সাহস কুলাতে পারছি না। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসতেই তুর্য বললো,

-- হীর!

-- হুম?

-- তুমি কি রেগুলার কোনো মেডিসিন নাও?

হঠাত তুর্যর এই প্রশ্নে আমি কপাল কুচকে তার দিকে তাকিয়ে আছি। প্রশ্নটার কোনো যুক্তি খুঁজে পেলাম না।

-- কেনো বলুনতো?

-- না আসলে ডাক্তার তোমার মেডিকেল হিষ্ট্রি জানতে চায়। তোমার এমন হঠাত এতো বমি হওয়া ডাক্তারের কাছে একটু উদ্ভট মনে হয়েছে তাই সে জানতে চায় আর কি।

-- ওহ! হ্যাঁ প্রতিদিন রাতে আমি একটা ঔষধ খাই।

-- কোন রোগের ঔষধ?

-- এটা তো,,,, আসলে আমার না মনে নেই কোন রোগের কিন্তু ঔষধটা খেলে খুব ভালো ঘুম হয়।

-- তাই বুঝি?

-- হুম।

-- কালকে সকালে একটু দিও তো ঔষধটা ডাক্তার দেখবে।

-- আচ্ছা। দিয়ে দেবো। তার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর চাই।

-- হুম বলো।

-- পূর্ব দিকে ঘরটা কার যেটাতে আপনি প্রতিদিন থাকেন?

আমার প্রশ্নে যেনো তুর্য অনেকটা বিচলিত হলেন। কেমন যেনো অস্থির অস্থির লাগছে তুর্যকে। তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে বললেন,

-- ওটা আমারই ঘর। তোমার সামনে থাকলে তোমার প্রব্লেম হয় তাই ওই ঘরে থাকি।

তুর্যর প্রশ্নের উত্তরে আমি সন্তুষ্ট না, আমি নিজে তাকে কথা বলতে শুনেছি। আমি নিশ্চিত তুর্য কিছু একটা লুকাচ্ছে আমার কাছে।

চলবে..

ভালোবাসো কি আমায়🍁Part-03Writer :-Saima Islam Mariam❤🍁- মায়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে,তখনি মায়ের ডাক পর...
16/08/2023

ভালোবাসো কি আমায়🍁
Part-03
Writer :-Saima Islam Mariam❤
🍁
- মায়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে,তখনি মায়ের ডাক পরে....
-
মায়ার মাঃ মামনি লাঞ্চ রেডি হয়ে গেছে খাবার টেবিলে আসো।(আদুরে শুরে)
-
মায়াঃ আসছি মাম্মি।(ফিক হেসে)
-
মায়া মোবাইল হাতে নিয়ে আনিতাকে টেক্সট করে।
আনু প্লিজ বইনা আমার বিকালে কেনো যাবো তোর বাসায়?প্লিজ প্লিজ বল আমার ভয় লাগতেছে!
-
৫মিনিট পর!

আনিতাঃ মায়ার টেক্সট দেখে সাথে সাথে রিপ্লাই করে। বেব সেটা এখন বলা যাবে না,কজ এখন যদি বলে দি তাহলে তো সেটা আর সারপ্রাইজ হলো না। সো সেটার ব্যাপারে এখন বলতে পারবো না...বিকালে আসলে স্বচক্ষে দেখতে পাবে,,,মেরি সুইট বেহেনা।....এখন আর টেক্সট দিয়ে ডিস্টার্ব করো না।বাই বাই
-
মায়াঃ শাঁকচুন্নি, কালা বান্দর, উগান্ডার হনুমান,আস্ত ভদজাতের হাড্ডি,তোরে এখন আমি সামনে পাইলে কাঁচ্চা চিবাইয়া খাইতাম,আমারে টেনশন এ রাখি বলে কি না সারপ্রাইজ.....তোর সারপ্রাইজের গুল্লি মারি(প্রচণ্ড রেগে)......দূর বাবা আমি এতো বক বক করতেছি কেনো,যারে এতো কথা বলতেছি সে তো শুনতেছে না,এই আনু বাচ্চারে নিয়ে আমি পাগল হয়ে যাবো।(বিরক্তি ভাব নিয়ে)
-
মায়ার মাঃ তাড়াতাড়ি আসো খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।( চেঁচিয়ে)
-
মায়াঃ আসছি তো মাম্মি। এতো চেঁচামেচি করতেছো কেনো,আজীব!(বিরক্ত হয়ে)
-
মায়ার মাঃ আসছি আসছি করে তো দিন পার করে ফেললে। তোমাদের বাবা মেয়েকে নিয়ে আমি আর পারি না, তোমার নিজেরা নিজেদের মনমর্জী মতো চলো,আর আমি যে তোমাদের জন্য হেসেল সামলাতে সামলাতে হিমশিম খাই তা তো তোমাদের বাবা মেয়ের চোখে পড়ে না।( গুমড়া মুখ করে)
-
(মায়া জিহ্বায় কামড় দিয়ে) এইরে সেরেছে কার উপর রাগ করে কাকে রাগ দেখায় ফেলছি।মাম্মি তো হ্যাব্বী রেগে গেছে।তাড়াতাড়ি গিয়ে রাগ কমাতে হবে!
-
মায়া তড়িঘড়ি বেধে রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে মায়ের কাছে যাচ্ছে দেখে।
-
মায়ার মাঃ আরে আরে মায়া কি করছো কি পড়ে হাতে পায়ে ছুট পাবে তো। ধীরেধীরে সিঁড়ি বেয়ে নামো
-
মায়াঃ মাম্মি কিচ্ছু হবে না এইতো আমি সিঁড়ি পাড় করে ফেলেছি।(বাকা হেসে)
-
মায়া তার মা কে জড়িয়ে ধরে বলে।
-
মায়াঃ একচুয়ালি মাম্মি, হয়েছি কি....(বায়না শুরে)
-
মায়ার মাঃ হ্যাঁ বলো কি হয়েছে?(জিজ্ঞাসু হয়ে)
-
মায়াঃ (মা কে জড়িয়ে ধরে) আসলে আনিতা একটু আগে কল করে বলছে আজকে বিকালে ওদের বাসায় জেতে! কি যেনো একটা সারপ্রাইজ আছে।বাট কি সারপ্রাইজ সেটা না বলে কল কেটে দিয়েছে তাই একটু রাগ হয়ে ছিলো, তাই মানে তখন ওইভাবে রিয়েক্ট করে ফেলেছি........সরি মাম্মি (দুঃখিত কন্ঠে)
-
মায়ার মাঃ ওলে ওলে আমার পাগলি মামনি টা...সরি বলতে হবে, ইট'স ওকে.... মাম্মি তো জানে যে তার মামনি রেগে গেলে এইরকম একটু বিহেভ করে।(দু হাতে মায়ার গাল টেনে)
-
মায়াঃ লাভ ইউ মাম্মি।উম্মাহ... আমার সোনা মা।( দাঁত কেলিয়ে)
-
মায়ার মাঃ লাভ ইউ টু মামনি (মায়ার দুগালে দুহাত রেখে)
-
মায়া আশা চৌধুরী আর সায়ন চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে হওয়ার সুবাদে তারা মায়াকে অনেক স্নেহ করে.....সব সময় মায়ার সব আবদার পূরণ করতে সর্বদা চেষ্টা করে।ছোট বেলা থেকে মায়াকে চোখে হারায় তার বাবা মা,সব কিছুর আগে তারা দুইজন মায়াকে প্রাধান্য দেয়।
🍁
মায়া একটু ভদমেজাজি আর জেদি বাট সবার সামন না শুধু নিজের বাবা মায়ের সামনে নিজের রাগ, মেজাজ দেখায়,সাথে বাবা মাকেও যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা করে!!
-
মায়া তার মাকে এখনও জড়িয়ে ধরে সোফায় বসে আছে।হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠায় মায়া বসা থেকে উঠে দৌড়ে দরজা খুলে দেয়।
-
মায়ার বাবাঃ আরে আজকে আমার মায়া মামনি বুঝি আমার জন্য ওয়েট করে ছিলো।(মুখে একরাশ হাসি নিয়ে)
-
মায়াঃ মোটেও আমি তোমার জন্য ওয়েট করতেছিলাম না হুহ!( মুখ বাকা করে)
-
মায়ার বাবাঃ আরে আমি জানি তো আমার মায়া মামনি আমার জন্য ওয়েট করতেছিলো যে তার পাপ্পা কখন বাসায় আসবে(ফিক করে হেসে)
-
মায়াঃ হুহ! জানো যখন তখন লেট করে বাসায় ফিরলে কেনো।(অভিমানী শুরে)
-
মায়ার বাবাঃ আজকে একট কেস এর জামেলা ছিলো তাই লেট হয়ে গেছি মামনি! এই দেখো মামনি পাপ্পা কানে ধরছি আর লেট করে বাসায় ফিরবো না!(অপরাধীর মতো)
-
মায়াঃ হয়ছে হয়ছে আর কানে ধরতে হবে না এইবারের মতো ক্ষমা করলার নেক্সট টাইম এমন করলে পানিশমেন্ট পেতে হবে।(ফিক হেসে)
-
মায়ার বাবাঃ ওকে আর এমন লেট করবো না।বাই দ্যা ওয়ে আজকে দেখি আমার মায়া মামনি একটু সেজেগুজে আছে ব্যাপার কি। (ভ্রু কুঁচকে)
-
মায়াঃ পাপ্পা একদম নজর দিবে না,ছুঁয়ে দাও আমাকে(একটু চোখ রাঙ্গিয়ে)
-
মায়ার বাবাঃ ওকে ওকে নজর দিবো না,আমার দিক থেকে চোখটা একটু সড়িয়ে নাও মামনি আমার ভয় লাগছে।(ভয়ে কাঁচুমুচু হয়ে)

-
তোমাদের বাবা মেয়ের প্রেম আলাপ শেষ হয়ে থাকলে এইবার একটু খাবার টেবিলে এসে লাঞ্চটা করে আমাকে উদ্ধার করো প্লিজ, আমার তো ক্ষুধা লাগছে তো!!(গুমড়া মুখ করে)
-
মায়াঃ মাম্মি দিলে তো আমার আর পাপ্পার প্রেমের ১২টা বাজিয়ে কত্ত সুন্দর প্রেম আলাপ করতেছিলাম।(গুমড়া মুখ করে)
-
মায়ার মাঃ হয়ছে হয়ছে! পাপ্পার সাথে আর এতো প্রেম আলাপ করতে হবে না,অনেক বেলা হয়েছে।(বিরক্তি ভাব নিয়ে)🍁
তারপর ৩জনে লাঞ্চ শেষ করে নিজের রুমে চলে যায়।

মায়া রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে ঘুমিয়ে পরে
বিকাল ৫টায় মায়ার মোবাইলে কল বেজে উঠে, মায়া ঘুম ঘুম চোখে মোবাইল স্ক্রিনে নাম্বার টা দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় নিমিষে ঘুম পরী উদাও হয়ে যায় মায়ার..
-
আনিতা আবা কল করতেই মায়া কল ব্যাক করে।
-
আনিতাঃ মায়া কই তুই..? ৫টা বেজে গেলো আর তুই এখনও এলিনা।(ধমকের শুরে)
-
মায়াঃ সরি ইয়ার! ঘুমিয়ে পরে ছিলাম। তুই মাকে জাস্ট ২০টা মিনিট সময় দে, আমি একক্ষুণি আসতেছি।
-
আনিতাঃ ওকে,জাস্ট ২০মিনিট কিন্তু এর থেকে বেশি না!
-
মায়াঃ থ্যাংক্স ইয়ার! আমি আসতেছি।বাই বাই বেব
-
মায়া কল কেটে দিয়ে,,, ফ্রেশ হয়ে তড়িঘড়ি বেধে ড্রইং রুমে যায়।

মাম্মি পাপ্পা কোথায় তোমারা। আমি আনিতার বাসায় যাচ্ছি।(চেঁচিয়ে)

চলবে....
( অনেকে পর্ব ছোট বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন পর্ব বড় করে দিতে,,আসল কথা হলো আমি প্রথম পর্ব ছোট করে দিয়েছি এখন যদি পর্ব গুলো এর থেকে বড় দি তাহলে একটু বিশ্রী দেখায়।তাই এর থেকে বেশি বড় দিতে পারলাম না!! আর মোবাইলটাও একটু হ্যাংক করতেছে যার জন্য একটা ছোট পর্ব লিখতেও ৩-৪ ঘন্টা লেগে যায়। দয়া করে কেউ এটার থেকে বড় পর্ব দিতে বলে লজ্জা দিবেন না প্লিজ 🙏। ধন্যবাদ ❤)

পরবর্তী পর্বের অঅপেক্ষায় থাকুন...

অলৌকিক_লাশ             পর্ব---৹৩সিয়াম আরফান সাহেব আর তার স্ত্রী আকাঙ্খার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।এদিকে ডাক্তার ভয়ে আধ...
16/08/2023

অলৌকিক_লাশ
পর্ব---৹৩
সিয়াম

আরফান সাহেব আর তার স্ত্রী আকাঙ্খার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
এদিকে ডাক্তার ভয়ে আধমরা!

----নয় বছর আগের লাশ,স্যার,ম্যাম এটা কি বলছেন আপনারা?আমার পক্ষে আর এখানে কাজ করা সম্ভব নয়।

---দেখুন আপনি এতোটা ভয় পাবেন না,আমাদের কাজটা শেষ করতেই হবে।পোস্টমর্টেম করার পরে ডেডবডির পার্টস ল্যাবে পাঠাতে হবে।তারপর সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে।এখন কাজ বন্ধ করে দিলে কিভাবে হবে?

মুখে যাই বলুক না কেন,এদিকে ডাক্তারদম্পতি যে খুব আনন্দে আছে এমন নয়,মনে মনে ভীষণ ঘাবড়ে আছে দুজনে।কিন্তু ডাক্তারের সামনে সেটা প্রকাশ করতে পারছে না তারা।
এমনিতেই তারা দুজন বেশ পপুলার ডাক্তার,, ভালো নামডাক তাদের।এখন যদি রাতে ডেডবডির ভয়ে মর্গ থেকে পালিয়ে যায় ব্যপারটা মোটেও সম্মান জনক হবে না তাদের জন্য।
জীবনের থেকে সম্মান টা কখনো কখনো বেশি দামী হয়ে ওঠে।এক্ষেত্রে তাই ঘটছে।
তাছাড়া হাসপাতালের একটা রেপুটেশন আছে।। তারা কিছুতেই হাসপাতালের বদনামের কারন হতে চায় না।

ডাক্তারকে অনেক কষ্টে রাজি করানো হলো।সে নিজের কাজ শুরু করে।

একটু পরে ডোম আবারো চিৎকার দিয়ে উঠলো।আকাঙ্খা জামান আর আরফান সাহেব এবার আর অবাক হলেন না।কারণ তারা জানতেন আবার নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা হবে। এক প্রকার এটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন দুজন।

---কি হলো?আবার কি হয়েছে?
(বেশ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন)

---স্যার!

---জাস্ট শাট আপ।লাশটা গিলে খাবে না আপনাকে,বলছি তো আমরা আছি এখানে।
যা হয়ে যাক আপনি নিজের কাজ শেষ করুন।

---ডেড বডি,ডেডবডির নার্ভ চলছে স্যার!

আরফান সাহেব,আকাঙ্খা ছুটে গেলন ডেডবডির কাছে।সত্যি তো।
নার্ভ রেসপন্স করছে।
কিন্তু নার্ভের গতি কোনো সাধারণ মানুষের মতো মনে হচ্ছে না।কোনো সাধারন মানুষের নার্ভ এতো দ্রুত রেসপন্স করে না।

কিন্তু ডেডবডির নার্ভ কিকরে চলতে পারে,ধরে নেয়া যাক এটা যদি কোনো জীবিত মানুষ ও হয়ে তাকে,তাকে পোস্টমর্টেম করার পরে,শরীরে সব কিছু প্রায় কাটাকুটি করে বের করে আনা আনার পরেও এভাবে নার্ভ রেসপন্স করা শুধু অস্বাভাবিক নয়,অকল্পনীয় বটে।ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো সবার!

ডাক্তার ইতিমধ্যে তার জ্ঞান হারিয়েছেন।
আকাঙ্খা লক্ষ্য করছে তার স্বামী অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে দিয়েছে।

----না এটা হতে পারে না,হতে পারে না এটা।। এটা কোনো লাশ না,আমি খুব ভালো করেই জানি।

---আরে কি হলো তোমার?মাথা ঠান্ডা রাখো প্লিজ।

---কি বললে তুমি।মাথা ঠান্ডা রাখবো,এটা দেখেও মাথা ঠাণ্ডা রাখবো আমি।আমি আগেই বলেছিলাম তোমার দরকার নেই ফালতু ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার,শুনলে না আমার কথা।

---আহ,কি হচ্ছে আরফান।চুপ করো।

আকাঙ্খা বুঝতে পারছে ভয়ে তার হাসবেন্ডের মাথা ঠিক নেই,সত্যি বেচারা বড্ড ভীতু আর একগুঁয়ে।ওকে জোর করে নিয়ে আসা একদম ঠিক হয় নি।
এখন কি করে সামলাবে একে।

---আমাদের সাথে লুকোচুরি হচ্ছে,আজকে দেখে নেবো আমি।এই ডেডবডির সাহস হয় কিকরে আমাকে ভয় দেখায়।জ্বালিয়ে দেবো,পুড়িয়ে দেবো,শেষ করে দেবো সব।

----ওহ,নো কাম অন আরফান।কী ভুলভাল বকবক করছো তখন থেকে,আচ্ছা চলো এখান থেকে।

---নাহ।আমি কোথাও যাবো না।আজ ওর একদিন কি আমার একদিন,আমায় ভয় দেখানো!

আকাঙ্খা বুঝতে পারলো আরফান পুরো উন্মাদ হয়ে গেছে।এমন ঘটনা প্রথম নয়,আগেও বহুবার ঘটেছে।একটু কঠিন সিচুয়েশনে পড়ে গেলে নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারে না সে। এটাকে এক প্রকার অসুস্থতা বলা যায়।
তাকে এখন কিছুতেই সামলানো যাবে না।পুরো সাইকোদের মতো আচরণ করছে সে।

---লাইটার টা কোথায়?কোথায় লাইটার?

---লাইটার দিয়ে কি করতে চাইছো তুমি?

---আছ আমি জ্বালিয়ে দেবো ওকে,পুড়িয়ে দেবো।দেখি তারপরেও কিভাবে বেঁচে থাকে ও।

--নাহ! তুমি এরকম কিছু করবে না।আমি জানি তুমি এখন অসুস্থ। মেডিসিন নিতে হবে তোমার। তোমার ট্রিটমেন্ট, চলো আমার সাথে।

আরফান তার পকেট থেকে একটা লাইটার খুঁজে বের করে।

আকাঙ্খা বাধা দিতেই ওকে ধাক্কা মেরে বাইরে ফেলে দেয়।

তারপর মর্গের দরজাটা বন্ধ করে দিলো।

বাইর থেকে আকাঙ্খা দেখছে তার স্বামী পারমিতার ডেডবডিতে আগুন ধরিয়ে দিলো।

দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। পারমিতার পুরো শরীর আগুনে ঘিরে ফেলেছে।।

দরজার বাইর থেকে এই দৃশ্য দেখে পারমিতা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না, সে দেখতে পাচ্ছে তার স্বামী একটা বড়ো ধরনের অঘটন ঘটাতে চলেছে।

---আরফান কি করছো না,ওপেন দ্যা ডোর, প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর।প্লিজ।

আরফান তার কথায় কর্ণপাত করে না,এদিকে আকাঙ্খা আপ্রাণ চেষ্টা করছে ভেতরে যাবার।

সে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।
এক পর্যায়ে দরজাটা খুলে গেলো।

হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়লো।

ধীরে ধীরে স্বামীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো সে।

আরফান এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।অবাক দৃষ্টিতে দুজনে তাকিয়ে আছে পারমিতার লাশের দিকে।
এতো দীর্ঘ সময় ধরে আগুনে পোড়ার পরেও পারমিতার লাশ এখনো অক্ষতো অবস্থায় পড়ে আছে!
আগুনে ওর শরীর এতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি।

একটু পরে আগুন থেমে গেলো।
ধীরে ধীরে চারপাশের পরিবেশ স্বাভাবিক হতে থাকে।
পারমিতার লাশ আবারো স্বাভাবিক হয়ে গেছে।একটু আগে তাকে পোস্টমর্টেম করা হয়েছে বোঝার কোনো উপায় নেই।

নেই শরীরের কোথাও কাটা ছিড়ার দাগ,
নেই কোনো রক্ত।

পারমিতার পরিপূর্ণ অক্ষত দেহ পড়ে আছে টেবিলের ওপরে।।

আরফান আর আকাঙ্খা শুধু একে অপরের দিকে তাকাতে থাকে।তাদের মুখে কোনো কথা নেই।
দুজনেই নির্বাক।
তারা বুঝতে পারলো,এই লাশ নিজেই নিজের নিয়ন্ত্রণ করছে।এর ইচ্ছার বিরুদ্ধে এর সাথে কিছুই করা সম্ভব না।

কিন্তু এই লাশের রহস্য কি,কেন তার কোনো ক্ষতিসাধন করা সম্ভব হচ্ছে না,প্রশ্নটা এখনো সবার কাছে অজানাই রয়ে গেলো।

ডাক্তার এদিকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন।
অতঃপর প্রোটোকল অনুযায়ী মর্গের ভেতর থেকে পারমিতার লাশ বের করে ফ্রিজিং করে রাখা হলো।

আরফান সাহেব,আকাঙ্খা জামান মর্গ থেকে বেরিয়ে আসলেন।

আগামীকাল সকালে তাদের আবার হটপিটালে ফিরতে হবে সকাল সকাল।
-
-
-
পরের দিন সকালে নিজের চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন ডাক্তার আকাঙ্খা জামান।

একের পর এক রোগী আসছে যাচ্ছে।

হঠাৎ গার্ডের আগমন।

গার্ড : ম্যাম,দেখুন বাইরে ঝামেলা হচ্ছে।

----কি হয়েছে?

---একজন মহিলা ভেতরে ঢোকার জন্য রীতিমত পাগলামি শুরু করে দিয়েছেন?

---আচ্ছা ওনার সিরিয়াল নম্বর কত?

---সিরিয়াল নম্বর 106!

---সে তো এখনো অনেকটা দূরে,সবে 65 চলছে।

---এখন কি করবো ম্যাম।দেখে মনে হচ্ছে এমারজেন্সি কোনো কেইস।

---হ্যাঁ।সেরকম কিছু হতে পারে। আপনি বরং ভেতরে পাঠিয়ে দিন তাকে।

---ওকে ম্যাম।

একটু পরেই একজন মহিলা রোগী চেম্বারের ডুকে পড়ে।
তার মুখটা একটা বড়ো ওড়না দিয়ে ঢাকা।

ডাক্তার আকাঙ্খার বড্ড অদ্ভুত লাগলো ব্যপারটা।তিনি তার রোগীকে বসতে বললেন। মহিলাটা তার কথা শুনে বসলো।

---কি ব্যাপার,আপনি মুখ ঢেকে আছেন কেন? আর প্রবেলেম কি আপনার?

কোনো উত্তর আসছে না।

---আজব তো,আচ্ছা আপনি কথা না বললে আমি ট্রিটমেন্ট করবো কিভাবে।কিছু বলুন প্লিজ ।

মহিলাটা কোনো কথা বলছে না।

--মুখটা সড়ান, একটু দেখি আপনাকে। আপনাকে না দেখে চিকিৎসা করতে পারবো না আমি।এমনিতেই তো রুলস ব্রেক করে এসেছেন। এখন আবার টাইম ওয়েস্ট করছেন।
কি হলো আমি কিছু বলছি আপনাকে।

---সরি,সরি ম্যাডাম।।রুলস ভাঙার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। (বেশ ক্ষীণ স্বরে)।

---ঠিক আছে,এবার বলুন, প্রবেলেম কি আপনার?

---পিরিয়ড,,বিগত কয়েকমাস ধরে বেশ অনিয়মিত পিরিয়ড হচ্ছে আমার।এমনকি মাসে(......................................)আরো অনেক কিছু ইত্যাদি ইত্যাদি।

পিরিয়ডের কথা শুনেই চমকে উঠলেন ডাক্তার আকাঙ্খা।গতকালের সেই অদ্ভুত আর অসম্ভব পিরিয়ডের কথা মনে পড়তেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।

---আচ্ছা,আপনার সাথে ফেইস টু ফেইস কথা বলতে হবে,দেখুন এভাবে ট্রিটমেন্ট করা যায় না।ঘোমটাটা সরান দয়া করে।

মহিলাটা তার মাথার ওপর থেকে ওড়নাটা ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেললো।

ওড়নাটা নিজের কাধের ওপরে ফেলে দিলো সে।

আকাঙ্খা জামান চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে দেখছেন তাকে।
ভয় ,আতঙ্ক আর বিষ্ময়ে গলা শুকিয়ে আসছে তার।

---এতো পারমিতা।পারমিতার লাশ যখন ফ্রিজিং করে রাখা হয়েছিলো সেই চেহারা এখনো স্পষ্ট মনে আছে আকাঙ্খা জামানের।হুবহু সেই মেয়েটার মতো দেখতে।সেই চোখ,সেই নাক,সেই গাল, সেই ঠোঁট!সেই অবয়ব।সাথে দুজনের সেম পিরিয়ড কেস।কিন্তু এমনটা কি করে পসিবল?

----হায় আল্লাহ!এটা আমি কি দেখছি নিজের চোখে দেখেছি,স্বপ্ন দেখছি না তো?

(নিজের মনকে অজান্তেই প্রশ্ন করে আকাঙ্খা জামান)

---আআ!আপনি এখানে?

---জ্বী ম্যাডাম,আমি এখানে মানে?বুঝলাম না আপনার কথা।আপনি কি আমায় চেনেন, আগে দেখেছেন কোথাও?

---আপনার নাম কি,নাম কি আপনার?

---আমার নাম আর্শি!আর্শি চৌধুরী।

---ও আচ্ছা।।

----কিন্তু আপনি,আচ্ছা আগে কি কখনো দেখা হয়েছে আমাদের?

---না না।আমি এমনি জিজ্ঞাসা করলাম, প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।

---আর ইউ ওকে ম্যাডাম?আপনাকে কিন্তু ঠিক লাগছে না আমার।

---না আমি ঠিক আছি,আই'ম অলরাইট।

আকাঙ্খা জামান মেয়েটার মুখের কথা যতোই শুনছে অবাক হয়ে যাচ্ছে।এটা কিকরে হয়?একটা মৃত মানুষ, যাকে গতরাতে পোস্টমর্টেম করতে দেখেছে।সে এখন জলজ্যান্ত সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

দুজন মানুষের চেহারায় এতোটা অদ্ভুত মিল থাকে কিকরে?আর কিছু ভাবতে পারছে না আকাঙ্খা জামান।মনে হচ্ছিল কেউ যেন শত টন মন ওজনের একটা পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে তার মাথায়।এই নিয়ে কিছু ভাবতেই গেলেই মাথাটা ক্রমাগত ভারী হয়ে আসছে তার।

মেয়েটাকে কোনমতে চোখ বুঝে কাঁপা হাতে একটা প্রেসক্রিপশন লিখে দিথলো।।
কি লিখলো না লিখলো সে নিজেও জানে না।

মেয়েটাকে বিদায় করতে পারলেই বেঁচে যায় আকাঙ্খা,কারণ তাকে এখন মর্গে যেতে হবে।

সে মর্গে গিয়ে পারমিতার লাশ নিজের চোখে দেখতে চায়,পারমিতার লাশ না দেখা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই।

মেয়েটা যদি পারমিতা হয়ে থাকে তবে মর্গে তার লাশ নিশ্চয়ই থাকার কথা নয়।

আর কিছু না চিন্তা করে মর্গের দিকে ছুটে চললেন ডাক্তার আকাঙ্খা জামান।
তার চেম্বার থেকে মর্গ বেশ দূরে,যেতে একটু বেশী সময় লাগে।
নিজের সর্বশক্তি দিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব হেঁটে চলছে সে।

আতংক আর উত্তেজনায় প্রতিটা মুহূর্তকে ঘন্টার মতো দীর্ঘ মনে হচ্ছে তার।

এভাবে হাঁটতে হাঁটতে একপর্যায়ে মর্গের সামনে পৌঁছে গেলো,,তারপর ডেডবডি স্টোর রুমে।

বুকটা এখনো দুরুদুরু করছে।

ভয়ে ফ্রিজ বক্সটা খুলতে পারছে না সে।।
না জানি ফ্রিজ খুলে আবার কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়!
লাশটা ভেতরে থাকলে তো ভালো,আর না থাকলে তখন,তখন কি করবে আকাঙ্খা।
কিকরে সামলাবে নিজেকে?

নাহহ।এতো ভাবাভাবি করার টাইম নেই।কাঁপা কাঁপা হাতে পারমিতার লাশের ফ্রিজ বক্সটা ডোরটা খুলতে লাগলো।

তারপর নিজের চোখ মেলে আস্তে আস্তে ভেতরে তাকাতে লাগলো।

যে ভয়টা পেয়েছিলো তাই হলো। বক্সের ভেতরে পারমিতার লাশ নেই।
মাথা ঘুরে পড়ে যাবার উপক্রম হলো আকাঙ্খা জামানের ।একটা লাশ বক্সের ভেতর থেকে গায়ের কিকরে হয়ে যেতে পারে।

আচ্ছা লাশটা কেউ সরিয়ে ফেলে নি তো?হয়তো হসপিটালের কেউ লাশটা নিয়ে গেছে এখান থেকে।

কিন্তু গতকাল রাত থেকে আজ সকাল এতোটুকু সময়ের ভেতরে কে করলো কাজটা,আর করলেও তার নিশ্চয়ই জানার কথা।

কি করা উচিত এখন। আচ্ছা আরফানকে একটা কল করলে কেমন হয়,কিন্তু সেই বেচারা তো এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয় নি,অসুস্থতার কারনে হাসপাতালে পর্যন্ত আসতে পারলো না, এখন তাকে এরকম একটা নিউজ কিকরে দেয় সে।
আচ্ছা তার থেকে বরং হাসপাতালের কাউকে বিষয়টা জানানো যাক।আর দেরী করলে চলবে না,এক্ষুনি বেরিয়ে পড়তে হবে।

এটা ভেবে সামনের দিকে পা বাড়ায় আকাঙ্খা জামান।

হঠাৎ মনে হলো বাইরে কিছু একটা যেন নড়েচড়ে উঠলো।
দরজার বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে মনে হয়।

----কে,কে বাইরে?কেউ কি আছো? কি ব্যাপার কথা বলছো না কেনো?

আকাঙ্খার চোখজোড়া ভুলক্রমে দরজার নিচের দিকে যায়।
দরজার নিচের অংশ ফ্লর থেকে দুই ইঞ্চির মতো ফাঁকা।কেউ একটা দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে এটা নিশ্চিত।

ভয়ে ভয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো সে।দিনের বেলা হলেও লাশঘরের চারপাশটা সম্পূর্ণ অন্ধকার,আসলে জায়গাটাই এরকম,এখানে দিন রাত সব সমান।সবসময় জায়গাটা অন্ধকার হয়ে থাকে।

ভেতর থেকে কিছুই বুঝতে পারছে না আকাঙ্খা জামান,হাঁটু গেড়ে নুয়ে সেই দুই ইঞ্চি ফাঁক দিয়ে বাইরের দৃশ্য প্রতক্ষ্য করার চেষ্টা করেছে সে।

মূহুর্তে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বস্তুটা দেখেই একটা প্রচন্ড চিৎকার দিয়ে দূরে সরে গেলো।

---আল্লাহ।এটা কি দেখছি আমি,না আমি নিশ্চয়ই ভুল দেখেছি।এটা কিছুতেই সম্ভব নয়।

ভেতর থেকে দরজার বাইরে একটা পা দেখতে পায় আকাঙ্খা,যে কিনা দাঁড়িয়ে আছে। আর তার পায়ের আঙ্গুলে একটা সিরায়াল নম্বর প্লেট লাগানো।মৃত মানুষের সিরিয়াল নম্বর,ডেডবডির পায়ের আঙ্গুলের সাথে এমন একটা নম্বর প্লেট লাগিয়ে দেয়া হয়,যাতে তাকে সহজে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

তার মানে বাইরে কোনো মানুষ নয়,একটা লাশ দাঁড়িয়ে আছে?
লাশের সিরিয়াল নম্বর 204।
এক দৌড়ে ফ্রিজ বক্সের দিকে ছুটে যায় আকাঙ্খা জামান।

204 নম্বর ডেডবডি! 204 নম্বর।

হন্নে হয়ে খুঁজতে থাকে সে!

এতো পারোমিতার সিরায়াল নম্বর।ওর সিরিয়াল নম্বর 204।

তাহলে বাইরে আর কেউ নয়,পারমিতা দাঁড়িয়ে আছে!

কিন্ত পারমিতা তো একটা লাশ,সে আর বেঁচে নেই,মারা গেছে,আজ নয়,দীর্ঘ নয় বছর আগে মারা গেছে পারমিতা।
কিন্তু ওর লাশ হাটাচলা করছে কিভাবে?
নাহ!এবার আর নিজেকে স্থির রাখা সম্ভব হলো না,মাথাটা ভন ভন করে ঘুরতে লাগলো তার।

পা জোড়া দরজার বাহির থেকে সরে গেলো, তারপর হেঁটে হেঁটে মর্গের পেছনের দিকটায় এগিয়ে যেতে লাগলো।

পারমিতা তার পেছন পেছন।

---কে,কে আপনি?দাঁড়িয়ে যান,দাঁড়িয়ে যান বলছি।

মেয়েটা কোনোদিকে না তাকিয়ে আপন মনে হেঁটেই চলছে,আকাঙ্ক্ষার ডাকের কোনো ভ্রুক্ষেপ করছে না।

---কি হলো,দাঁড়াতে বলছি না আমি,এই যে, প্লিজ থেমে যান।দেখুন আপনি কিন্তু এভাবে ভয় দেখাতে পারবেন না।

মেয়েটা এবার সত্যি নিজের হাঁটা বন্ধ করে থেমে যায়।

ধীরে ধীরে ঘুরে তাকাতে লাগলো সে আকাঙ্খার দিকে!

তাকে এক পলক দেখেই মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে যায় আকাঙ্খা জামান!

তারপর আর কিছুই মনে নেই তার।
জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে।একজন গার্ড তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়ে নিয়ে আসে, তারপর নার্সরা সুস্থ করে তোলেন তাকে।

তখন বিকেল হয়ে গেছে।

জ্ঞান ফিরে আকাঙ্খার সবার আগে তার হাসবেন্ড আরফানের কথা মনে পড়ে।

বেচারা বাসায় একা অসুস্থ হয়েপড়ে আছে,গতরাতের ধাক্কা এখনো সামলাতে পারে নি সে।
পারমিতার লাশের কথা এখন মাথায় আনলে চলবে না।আগে বাসায় যেতে হবে। না জানি আরফানের কি কনডিশন এখন।

হসপিটালের সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়।
বাকিদের ফেইস করলেই সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই হয়তো রাত হয়ে যাবে!

সে কেন মর্গে গিয়েছিলো,কিভাবে অজ্ঞান হলো, কেন হলো? ইত্যাদি ইত্যাদি আরো না না প্রশ্ন। এখন আর এসবের ভেতরে জরালে চলবে না।

বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে আসে আকাঙ্খা।অদ্ভুত ব্যাপার আরফান নেই বাসায়। সন্ধ্যা বেলা এমনিতেও বাসায় থাকে না সে, আজো তার ব্যতিক্রম হলো না।

বেডরুমে ঢুকে নিজের জন্য নিয়ে আসা ওষুধগুলো ড্রয়ারে রাখতে গেলো।

একটা পুরনো ওয়ালেট পড়ে আছে ভেতরে। দেখে অনেক পুরনো মনে হচ্ছে। এতো পুরনো জিনিস এখন এখানে কিকরে আসলো।
নিশ্চয়ই আরফান খুঁজে খুঁজে বের করেছে,পরে আবার জায়গামতো রাখতে ভুলে গেছে হয়তো।
কিন্তু এতো পুরনো ওয়ালেটের কি দরকার পড়লো তার।
-কি করবো খুলে দেখবো কি?খুলে দেখা ঠিক আছে (নিজেকে প্রশ্ন আকাঙ্খার)

---আচ্ছা,দেখেই নেই বরং।হয়তো ওর পার্সোনাল কিছু আছে ভেতরে!

ওয়ালেট হাতে নিয়ে নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখতে থাকে।ভেতরে তেমন কিছু নেই,তবে একটা পার্টের ভেতরে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।

---এতো কোনো একটা ছবি।বহু পুরনো একটা ছবি।

আকাঙ্খা ওয়ালেট থেকে ছবিটা বের করে আনলো।

ছবিটা নিজের চোখ জোড়ার সামনে ধরতেই একটা প্রচন্ড শক খেলো সে!আঁতকে উঠে দুপা পেছনে সরে যায়।

----এতো পারমিতার ছবি।ছবিটা কম হলেও আট দশ বছর আগের।
পারমিতাকে চিনতে বিন্দুমাত্র ভুল হয় নি আকাঙ্খার!

তার মানে আরফান আগে থেকেই পারমিতাকে চিনতো?তবে ও পারমিতাকে দেখেও না চেনার ভান করলো কেন?পারমিতার সাথে কি সম্পর্ক আরফানের?

চলবে.......

Address

Dhaka
Mohanpur

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when জীবনের কিছু গল্প posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share