12/01/2024
" আমি শব্দের অসহ্যনীয় ভার থেকে মুক্তি চাই "
আমি এই শহরের এক আগন্তুক বলছি, আমার জন্ম হয়েছিলো বর্ষারত কোনো এক ভোর রাতে। ভোর টি ছিলো খুবই মনোমুগ্ধকর। গাছের পাতার ধুলোগুলো মুছে পরিষ্কার করে সজীবতার প্রাণবন্ত ছোয়া দিয়েছলো বর্ষার জলে। বর্ষা শেষ হবার পর মুহুর্তে গাছের সজীব প্রাণবন্ত পাতাদের কোনো এক ফাকা থেকে সূর্যের লাল আভা ঘরের ভেতর আলোকিত করলো। তখন নানান পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে সুন্দর একটি মুহুর্তের সূচনা হলো। তার সাথে হলো আমার সুন্দর শিশু জীবনের সূচনা। সবাই তখন ভেবে নিয়ে নিয়েছিলো, আমি বোধ হয় সব অন্ধকারকে মুছে আলোকিত করতে আর সকল ধুলোকে মুছে সজীবতা নিয়ে এসেছি এই অন্ধকারময়,ধূলোময় ভূবনের মাঝে।
জীবনের সূচনা সুন্দর এক নিদারুণ মুহুর্ত দিয়েই শুরু হলো, ভালোই গেলো শিশুজীবন। মা-বাবা, পরিবারের স্নেহ, ভালোবাসার মধ্যে, মাঠে-ঘাটে খেলে, লাটিম ঘুরিয়ে, গুলি খেলে শেষ হলো শিশুজীবন।
শিশুজীবন ত্যাগ করলো আমাকে, আঠারো বছর বয়স আমাকে সাদরে আলিজ্ঞন করলো। ভেবেছিলাম হয়তো, শিশুজীবন এর মতই এই জীবন। কিন্তু, দেখতে পেলাম এখানে বাস্তবতা, কর্তব্য, দায়িত্ববোধ নামক কিছু কঠিন শব্দরা বসবাস করে। আমি তখন বুঝতে পারলাম না,
এই শব্দগুলো কি আসলে?
এই শব্দগুলোর ভার আসলে কত?
আমি আস্তে আস্তে বুঝার চেষ্টা করলাম কিন্তু, দেখি যে প্রতি পদক্ষেপেই আমার শুধু ভুল।
আমি কি করবো? এই শব্দগুলোকে আমি কিভাবে গ্রহন করবো বুঝতেই পারছি না আমি। কেউ আমাকে বুঝাতেও অক্ষম হচ্ছে। পরে আমি আমার ভুল পদক্ষেপগুলোর ব্যাখা জানতে শুরু করলাম কোথায়, কিভাবে, কেন, কি কারনে আমার প্রতিটি পদক্ষেপ ভুল হচ্ছে। তারপর যখন এর উত্তর পেলাম, তখন এইসব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পথ চলতে লাগলাম।
জীবনে আমি হাজার, লক্ষ্যবার ভুল করেছি। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তবতা, কর্তব্য, দায়িত্ববোধ সম্পর্কে কিছুটা জেনেছি। যখন আমি কিছুটা এই শব্দগুলোকে উপলব্ধি করেছি, তখন মতো নে হয়েছে এই শব্দগুলোর ভার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পাহাড় থেকেও লক্ষ্যগুণ ভারী। আমি এই এক ক্ষুদ্র মানব কিভাবে বইবো এত ভার??
বেকারত্ব আর মা-বাবার কঠোর কথা শেখালো আমাকে, আসলে বাস্তবতা কতটা ভয়ংকর। টাকার ভার শেখালো, বাস্তবতা কতটা যন্ত্রণাময়। প্রিয়তমা শেখালো, আবেগ দিয়ে জীবন চলে না বাস্তবতায় আসতে হয়।
মা- বাবার শরীর প্রচন্ড খারাপ, অনেক টাকার প্রয়োজন। তখন বুঝলাম কর্তব্য আসলে কি? একজন ছেলের কর্তব্য কতটা ভারী হয় আসলে বুঝতে পারলাম সেদিন।
বোনের ফর্ম ফিলাপের জন্য অনেক টাকা লাগবে, আজই লাস্ট ডেট জমা দেবার। আর এপাশে আমি সকালে টাকার অভাবে না খেয়ে ফোন টা অফ করে রেখে অজানায় বসে আছি, তখন বুঝতে পারলাম দায়িত্ববোধ কাকে বলে?বোনের বিয়ে কথা পাকা হয়েছিলো দুদিন আগে, কিন্তু বোন আজ ফ্যানের সিলিং এর সাথে নিথর হয়ে আছে। তখন বুঝতে পারলাম, দায়িত্ববোধ কতটা বিষের মতো ভয়ংকর।
যখন আমি এই শব্দগুলোর সাথে অতি পরিচিত হয়ে গেলাম তখন বুঝলাম, শিশুজীবন আর এই আঠারো বয়সের পর জীবন বালুকণা আর অসীম সাগরের মিয়ন এক বিশাল তফাৎ।
এসব শব্দের সাথে পরিচিত হতে যেয়ে আমার জীবনের অর্ধ সময় কেটে গেলো। আমি আর এই ভার সহ্য করতে পারছি না। এই ভার বইতে বইতে আমি খুবই আজ ক্লান্ত হয়ে পরেছি। এসব কঠিন শব্দগুলো আমার স্বপ্ন, আশা দব ছিনিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে।
আমাকে এসব শব্দের কঠিন অসহ্যনীয় ভার জীবন্ত থেকে মৃত করে দিয়েছে। সবাই ভেবেছিলো, আমি বোধহয় অন্ধকার দূর করে আলো এনে দিবো সব জায়গাতে। কিন্তু, এসব শব্দ আমাকেই অন্ধকারের মধ্যে বিমোহিত করে নিলো। আমি আলোর বদলে অন্ধকার এ আচ্ছন্ন করলাম সবকিছু। আমি এই ভার থেকে এখন মুক্তির আশাতে প্রতিদিন প্রার্থনা করি। কিন্তু, এই ভার এর বয়সসীমা বোধ হয় অশেষ।
আমাকে মুক্ত করো এই শব্দগুলোর অসহ্যনীয় ভার থেকে,
আমি মুক্তি চাই,
আমি শিশুজীবন ছাড়া আর কোনো জীবন চাই না।।।।
---- Tonmoy Paul ( জরাজীর্ণতার ক্ষুদ্র লেখক)