Oishe Rahman - ঐশী রহমান

Oishe Rahman - ঐশী রহমান কল্পনার এক অদৃশ্য উদ্দেশ্যহীন গন্তব্য আমার 🍁

১. সখী তোমারে বাঁধিবো যতনে!
২. দু''টি হৃদয়ের সন্ধিতে!
[ আমার লেখা এই গল্প দুটি পেয়ে যাবেন বইটই এ্যাপে]
(1)

ই-বুক মেলার সময় বেড়েছে আরো দশদিন। চলবে সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত। আরো একটিবার সুযোগ আপনাদের। প্রমোকোড: ebookmela25 ব...
03/09/2025

ই-বুক মেলার সময় বেড়েছে আরো দশদিন। চলবে সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত। আরো একটিবার সুযোগ আপনাদের। প্রমোকোড: ebookmela25 ব্যবহার করে কিনে ফেলুন আমার ইবুক দুইটি ২৫ পারসেন্ট ছাড়ে!!!

১.পড়ুন, ই-বুক "দু’টি হৃদয়ের সন্ধিতে"
https://link.boitoi.com.bd/Qkfn

২.1.পড়ুন ই-বুক "সখী তোমারে বাঁধিবো যতনে"
https://link.boitoi.com.bd/i1JZ

2.যেভাবে বইটই থেকে ই-বুক ক্রয় করবেন:
https://youtube.com/shorts/6NjaAveyh6A?feature=share

3.অন্য দেশ থেকে কিভাবে বইটই অ্যাপে ই-বুক ক্রয় করবেন:
https://youtube.com/shorts/Jteh6XU50tw?feature=share

4.যেভাবে বইটই থেকে প্রিয়জনকে বই গিফট করবেন:
https://youtube.com/shorts/b0Se9TiCy0U?feature=share1.পড়ুন ই-বুক "সখী তোমারে বাঁধিবো যতনে"
https://link.boitoi.com.bd/i1JZ

2.যেভাবে বইটই থেকে ই-বুক ক্রয় করবেন:
https://youtube.com/shorts/6NjaAveyh6A?feature=share

3.অন্য দেশ থেকে কিভাবে বইটই অ্যাপে ই-বুক ক্রয় করবেন:
https://youtube.com/shorts/Jteh6XU50tw?feature=share

4.যেভাবে বইটই থেকে প্রিয়জনকে বই গিফট করবেন:
https://youtube.com/shorts/b0Se9TiCy0U?feature=share

30/08/2025

আরেকটি বার মনে করিয়ে দিচ্ছি!!
ই-বুক মেলা ২০২৫ এর সময়সীমা শেষ হতে চলেছে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি আছে।
যারা এখনো প্রমোকোড: ebookmela25 ব্যবহার করে ২৫ পারসেন্ট ছাড়ে আমার ই-বুক দুটি কিনেন নি তারা একটু জলদি কিনে ফেলুন। ই-বুকের লিংক কমেন্ট বক্স এ দেওয়া হলো!

23/08/2025

তারপর?
______আমি ভালো আছি (আলহামদুলিল্লাহ) 💗

 #দুটি_হৃদয়ের_সন্ধিতে (০১) #লেখনীতে_ঐশী_রহমান ' আমির আরাফ খানে'র বৌ হওয়া এতো সহজ না? দুটো হাত, দুটো পা আর গায়ে সাদা চাম...
22/08/2025

#দুটি_হৃদয়ের_সন্ধিতে (০১)
#লেখনীতে_ঐশী_রহমান

' আমির আরাফ খানে'র বৌ হওয়া এতো সহজ না? দুটো হাত, দুটো পা আর গায়ে সাদা চামড়া থাকলেই আমির আরাফ খানের বৌয়ের ট্যাগ গায়ে লাগিয়ে সমাজে ঘোরা সহজ কিন্তু এই আমির আরাফ খানের কাছে বৌ স্বীকৃতি আপনি এই এক জীবনে কখনো ই পাবেন না। আই রিপিট! কখনোই না '

বিবাহিত জীবনের প্রথম রাতে স্বামীর থেকে স্পষ্ট কথাটি কানে যেতেই একবার বারবার বহুবার কানে ঝংকার তুলে শানায়া'র। কয়েক মুহূর্ত থ হয়ে বসে রইলো। কথাটি ঠিক মস্তিষ্ক জুড়ে বিচরণ করছে বারে’বার।

কয়েক মুহূর্তে'র ব্যবধানে শক্ত পুরুষালি হাতের মালিক তার বাহুখানা টেনে নিজের সম্মুখ বরাবর দাঁড় করিয়ে দিয়ে বাম হাতের মুঠোতে গুঁজে দেয় পাঁচ লক্ষ টাকার একটা চেক।

' আপনার কাবিনের টাকা পরিশোধ! ঠিক এখন থেকে যে কোনো সময় আপনি এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারেন'।

শানায়া অবাক চোখে একপলক তাকিয়ে দেখলো নিজের হাতে গুঁজে দেওয়া চেকটা, পরপর চোখ তুলে তাকায় ঐ দাম্ভিকতায় ভরপুর লোকটার মুখের দিকে।যে পুরো ঘটনাটি পরিচালনা করছে খুবই শান্ত মস্তিষ্কে। দাঁতে দাঁত চেপে শানায়া দৃঢ় কন্ঠে শুধালো ' ঠিক যেভাবে আয়োজন করে আপনি সহ আপনার পরিবার এবাড়িতে এনেছেন আমাকে, ঠিক সেভাবে আপনি নিজে গিয়ে ফেরত দিয়ে আসবেন আমাকে, আমিতো স- ইচ্ছেই আপনার বাড়ি'র দুয়ারে আসিনি'।

আরাফ দেখছে মেয়েটা'র চোখ মুখে ফেটে পড়া রাগের চটা। আরাফ মনে মনে বাঁকা হাসে, আসলে এই দুনিয়ায় মেয়েগুলো একেকটা গিরগিটি টাইপ, কোপ বসাতেই আসল রুপে ফিরে আসে। একটু আগে কেঁদে কুটে একাকার দশা হয়েছিলো আর এখন দেখো! যুদ্ধে যেতেও তিনি তৈরি!
আরাফ মেয়েটি'র পাশ কাটিয়ে ঘুরে গিয়ে দাঁড়ায় ঘরের লম্বা লওড়া আয়নার সম্মুখে, গলার কাছের শেরওয়ানি'র বোতাম খুলতে খুলতে জবাব দেয় ' আমার ঠ্যাকা পড়েনি, দরজা খোলা আছে, আসতে পারেন'।

শানায়া পেছন ঘুরে চাইলো আয়নায়, যেখানে লোকটার দাম্ভিক চেহারার অবয়ব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
' বুঝতে পারছি আপনি অহংকার এ মাটিতে ঠিকঠাক মতো পা ফেলতে পারেন না, কিন্তু বিশ্বাস করুন! আপনার ঐ অহংকারের দু'পয়সা দাম ও আমার কাছে নেই, সো প্লিজ! আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি অবলা, অসহায় নারী তবে আপনি আমির আরাফ খান সম্পূর্ণ রুপে ভুল! ভুল! এবং ভুল'।

আরাফ তাকায় মেয়েটির দিকে, শানায়া সরাসরি চেয়ে আছে তার দিকে। শানায়া হাতের চেকটা খানিকটা উঁচু করে ধরে বলে ' এটা তো আমার বাড়ি ছাড়ার টিকিট না, এটা আমার মোহরানা, আমার অধিকার। আমাকে যদি সত্যি ই বাড়ি ছাড়তে হয় তবে আজকের হওয়া এই বিয়ে ভাঙুন। যেদিন ডিভোর্স পেপার হাজির করবেন, আমি সই করে দিয়ে এই বাড়ির চৌকাঠ মাড়িয়েই চলে যাবো, পেছন ঘুরে আপনার ঐ অহংকার ভর্তি মুখটাও আমি ফিরে দেখবোনা আর'।

কয়েক মুহূর্ত পুরো ঘর জুড়ে নিরবতা বিরাজ করতেই, তাচ্ছিল্য হাসে আরাফ, বলে ' কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা মেয়েদের একটা বিশেষ গুণ, ঐ সামান্য পাঁচ লক্ষ তে হচ্ছেনা তাই তো? বলুন কত ডিমান্ড আপনার? বাড়িয়ে দিবো'।

কথাটা কানের ছিদ্র ভেদ করে ঢুকতেই রাগে সমস্ত শরীর ছেয়ে যায় শানায়া'র। এই লোকটার সঙ্গে আর একটা কথা খরচ করতেও সে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু কথার জবাব দিতে না পারলে হয়তো ভাববে আসলেই সে লোভী। তাড়িয়ে দেওয়ার পরও বিয়ের জোর দেখিয়ে তার ঘাড়ে চেপে বসতে চাইছে। তবুও কিছু বলতে চেয়েও চুপ হয়ে রইলো। আত্মসম্মান মাঝে মধ্যে মানুষের জবান বন্ধ করে দেয়। শানুর ও ঠিক তাই হলো। তার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই এই লোকের সঙ্গে কথা বাড়ানো'র। শানুকে চুপচাপ থাকতে দেখে আরাফ মনে মনে শুধায় ' চেনা আছে এদেরকে! যত্তসব ভন্ডামি'

শানায়া মিনিট খানেক সময় নিয়ে নিজেকে সামলায়, পরপর বলে ' বেশ! আপনার ভাষ্যমতে আমি লোভী? ওকে ফাইন! আমার কোনো দায় পড়েনি আমি কি সেটা প্রমাণ করার'। শানায়া হাতের চেকটা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ছুড়ে ফেলে ফ্লোরে। আরাফ তাকিয়ে দেখে মেয়েটার কর্মকান্ড। শানায়া বলে ' আপনাকে আমি দয়া করে গেলাম, মাফ করে গেলাম কাবিনের টাকা। কিছুটা চেচিয়ে ওঠার মতো করে বলে ' মিস্টার আমির আরাফ খান! শুনছেন! আমি লোভী নই। দুনিয়ার সব মেয়েকে এক পাল্লায় মাপবেন না। ঢাক ঢোল পিঠিয়ে সমাজের সামনে থেকে একটা মেয়ে কে বৌ করে ঘরে তুলেছেন এটা আপনার ভালো মানুষী আর গভীর রাতে সেই মেয়েকে লোভী তকমা লাগিয়ে বের করে দিচ্ছেন এটা আপনার কাপুরুষের অবয়ব। নিজের অহংকার যেনো কখনো মাটিতে মিশে যায়না সেদিকটা একটু খেয়াল রাখবেন।'

শানায়া একে একে গায়ের সবগুলো গহনা খুলে খাটে রাখে, ' কষ্ট করে মিলিয়ে নিবেন, আমি কোনো কিছু চুরি করে নিচ্ছি কি না'?

আরাফে'র মুখে কোনো কথা নেই, সে চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে শীতল চোখে মেয়েটির হম্বিতম্বি দেখছে। এসব করতে করতে কখন যে অতি শক্ত মেয়েটা'র চোখের কোণায় পানি জমেছে সেদিকে হয়তো মেয়েটি'র খেয়ালও নেই।

শানায়া সবকিছু বুঝে দিয়ে আরাফে'র সম্মুখ বরাবর দাঁড়ায় ' যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবেন আমি সই করে দিবো। চলি'।

আরাফ ঠায় দাঁড়িয়ে বুকে আড়াআড়ি ভাবে হাত বেঁধে সরু চোখে দেখে মেয়েটির পদার্পণ। ' লোভী' শব্দটা মেয়েটা কে হয়তো নিজের অধিকার থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে নয়তো একটা মেয়ে কখনো এভাবে নিজের অধিকার ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারে না। আসলেই কি তাই?

_____________________

রাত তখন পৌনে একটা! বাড়িটির সদর দরজা পেরিয়ে বেরিয়ে এসেছে শানায়া। নিরব জনমানবশূন্য এরিয়া। বাইরে পা রাখতেই শানুর টনক নড়লো। এতো চেচামেচি, আর এতো কথা হলো এবাড়ির বাকি সদস্যরা কি কানে তুলো গুঁজে রেখেছে? একটা প্রাণী'ও কোনো সাড়াশব্দ দিলোনা কেনো?
তখনই পেছন থেকে বয়স্ক ভদ্র মহিলার ডাকে পেছন ঘুরে চাইলো শানু। ভদ্রমহিলা এক প্রকার ছুটতে ছুটতে এসে দাঁড়ালো তার সামনে। হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ' ও নতুন বৌমা! রাগ কইরা বাড়ি ছাইড়োনা লক্ষী'।

শানু চিনলোনা ঠিক, বললো ' কে আপনি '?

মহিলাটি আলতো হাসে, বলে ' একদিন আইয়া কি আর মোরে চিইনবা তুমি? আইচ্ছা! মুই হইলাম এ বাড়ি দেখাশোনার কাম করি, রাত-দিন ই এক কইরা এইহানে পইড়া থাহি। আরাফ স্যারে'র সালেয়া আপা'।

শানু বলে ' আপনি কি আমাকে চিনেন'?

' চিনবো না ক্যান, তুমি তো এ বাড়ির লক্ষী, এ বাড়ির নতুন বৌ'

শানায়া অন্য মনস্ক হয়ে বলে ফেলে ' আর বৌ, বৌ না ছাই'

সালেহা বলে ' এতো তাড়াতাড়ি হাল ছাইড়া দিবা লক্ষী'?

শানায়া বুঝলোনা। ' হাল ছাড়বো মানে'?

' তুমি না এই বাড়ির বৌ? তোমারে তোমার স্বামী বাইর হইয়া যাইতে কইলো আর তুমি ও বাইর হইয়া গেলা? কেমন মাইয়া মানুষ তুমি '?
শানায়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই সালেহা ওর হাত ধরে খপ করে ' লও ভেতরে চলো '

শানায়া বাঁধ সাধে ' না, ভেতরে যাবোনা আমি'

' শোনো বৌ, বিয়া মাইয়া মানষের একবারই হয়, তোমার ও হইয়া গেছে, ছুইটা লাভ নাই, ভেতরে আহো'

কথা শেষ করেই সালেহা টেনে নেওয়ার মতো করে শানায়া কে ফের বাড়িতে ঢোকালো। শানায়া তোরজোর করে গায়ের বল দেখিয়ে ও পারলোনা কিছুই। শানায়া কে ভেতরে ঢুকিয়ে সদর দরজায় বিশাল বড় এক তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সালেহা তাকায় শানুর দিকে। শানায়া হতবাক চোখে ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে আছে। সালেহা আলতো হেঁসে হাতের কব্জি ধরে টেনে নিজের ঘরে যেতে যেতে বলে ' সোয়ামির লগে ঝামেলা হইছে ভালো কথা যাইয়োনা এক রাইত তার ঘরে। মোর ঘরে থাহো, সারারাত দুইজন মিলা গল্প গুজব করমু এনে '।

____________

রাত তখন বেশ হলো! সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পালাক্রমে যেনো রাতের নিস্তব্ধতা বিরাজমান এই রজনীতে। পুরো ঘর জুড়ে তাজা ফুলের সুবাসে সুভাষিত। আকাশে'র বুকে উজ্জ্বল পূর্ণিমার চাঁদটাও আজ বড্ড মলিন। মেঘের আড়ালে আবডালে কয়েক মুহূর্ত পর পর একেকবার উঁকি দিচ্ছে। ব্যালকনির ইজি চেয়ারটাতে গা এলিয়ে রেখেছে আরাফ। ডানহাতের দুই আঙ্গুলে আধা খাওয়া সিগারেটটা পুড়ছে তার গতিতে, অন্ধকারে তার ধোঁয়া অদৃশ্যমান। বামহাতটা ঠেকেছে কপালে। প্রকৃতির মৃদু শীতল বাতাস ক্ষণে ক্ষণে ছুঁয়ে দিচ্ছে ঐ পুরুষালী শক্ত পেটানো শরীরটা।

হঠাৎ দরজায় নক পড়তেই চোখ মেলে আরাফ। সে বোধহয় আগে থেকেই জানে এসময়, কে এসেছে তার ঘরের দরজায়। তাই আগে থেকেই জবাব দিলো।

' আমি রাতে খাবোনা সালেহা আপা! ডেকোনা আমাকে'।

ওপাশ থেকে উত্তর এলো_
' আমার শশুরে'র টাকা কি হাওয়া থেকে উড়ে উড়ে আসে? আপনার নামের খাবার প্রতিরাতে এভাবে নষ্ট করা যাবে না, প্লিজ! নিজ দায়িত্বে এসে ক'টা গিলে যাবেন'

মেয়েলি কাঠখোট্টা জবাবে আরাফের ভ্রু কুঁচকে আসে। হাতের দু- আঙ্গুলে ধরে রাখা আধা খাওয়া সিগারেটটা দ্রুত এ্যাশ ট্রে'তে ফেলে ধুম করে দরজা খুলতেই চোখের সামনে স্পষ্ট ফুটে ওঠে পানপাতার ছোটখাটো শ্যাম রঙের গোল মুখখানা। যেকিনা স্থির চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আরাফ অবাক ভঙ্গিতে শুধায় ' আপনি? আপনি যাননি এখনো'?

শানায়া ঘনঘন কয়েকবার চোখে পলক ফেলে নমনীয় কন্ঠে জবাব দেয় ' বিয়ে করে ঘরে বৌ এনেছেন কাজের মহিলা নয় যে তার কাজ পছন্দ না হলেই হাতের আঙ্গুলে তুড়ি বাজিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলবেন। আর শুনুন! আমি ওমন মেয়েও নই! বিয়ে যখন একবার হয়েই গেছে এই সংসার ও আমি করবো। পারলে আপনি ঠেকিয়ে দেখান'।

কথা শেষ করে শানায়া আর দাঁড়ায় না, লম্বা কদমে সিড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে ডাইনিং এ একে একে প্লেট এ খাবার তুলে। আরাফ বিস্ময়কর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার চোখ আর মস্তিষ্ক হ্যাং হয়ে যাচ্ছে এই পাঁচ ফুট উচ্চতার মেয়েটির কর্মকান্ডে।

প্লেট গুছিয়ে শানায়া তাকায় ঘরের দিকে, তখনও আরাফ ঈগল চোখের দৃষ্টি ফেলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
' ওভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই, চলে আসুন, কটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন'।

শানায়া'র কথা শেষ হতেই ধুড়ুম ধাম শব্দ করে আরাফ দরজা আটকে দেয় ভেতর থেকে। বিকট শব্দে শানায়া তাকায় পুনরায়। ফোঁস করে দম ফেলে বসে চেয়ারে। পরপর চেয়ার ছেড়ে উঠে ঝড়ের গতিতে ভদ্রমহিলার ঘরে ঢোকে, বলে ' আমার পক্ষে সম্ভব না সালেহা আপা এই উট মার্কা লোকটাকে সামলানো। আপনি প্লিজ আমার শাশুড়ী কে বলবেন তার ছেলেকে আবার নতুন করে বিয়ে দিতে'।

সালেহা তাহাজ্জুদের নামাজ শেষ করে জায়নামাজ গুছিয়ে রাখতে রাখতে একগাল হেঁসে বলে ' লক্ষী! ধৈর্য্য রাখতে হইবো। সোয়ামি আঁচলে বাইধতে হইলে ধৈর্য্য রাখতেই হইবো'

শানায়া কয়েক মুহূর্ত চুপ রইলো, পরপর নিজের মেজাজ সামলে জিজ্ঞেস করল ' আচ্ছা আপা! কিছু যদি মনে না করেন একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম'।

সালেহা বিছানায় ওর পাশ ঘেঁষে বসলো, মাথায় আদর সুলভ হাত রেখে বলে ' আমি জানি তুমি কি জিগাইবা। সব কমু, তয় আগে চলো কয়ডা খাইবা'।

শানায়া দু'পাশে মাথা নাড়িয়ে বলে ' আমি খাবোনা সালেহা আপা'।

' এতো বড় রাইত, না খাইয়া থাকোন যাইবোনা। লও মোর লগে'

শানায়া'র ইচ্ছে না থাকলেও সালেহা ওকে এক প্রকার টানতে টানতে ডাইনিং এর কাছে নিয়ে দাঁড় করালো। সমগ্র টেবিল জুড়ে হরেক রকম খাবার। একটা চেয়ার টেনে সালেহা, শানায়াকে বসালো। প্লেট এ একে একে খাবার তুলে দিয়ে নিজেও বসলো পাশের চেয়ারে।

' খাও লক্ষী! সেই কোন বেলায় কয়ডা কি না কি খাইছো, খাইয়া লও'

শানায়া সবে খাবারে'র প্লেটে আঙ্গুল চালিয়েছে, ওমন সময় দোতলার দক্ষিণের ঘর থেকে ভাংচুরের আওয়াজে তড়িঘড়ি করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। সঙ্গে সালেহাও। শানায়া ঘটনা পুরোপুরি বুঝতে না পেরে গোলগোল চোখ করে তাকায় সালেহার দিকে। সালেহা ওর হাত শক্ত করে ধরে পুনরায় বসায় চেয়ারে। ফের উপর থেকে আর কোনো শব্দ এলোনা। সালেহা বাটিতে চিকেন ফ্রাই উঠাতে উঠাতে বলে ' মেজাজ বহুত, হয়তো হইছে কিছু লইয়া মেজাজ সাইত্রিশ! ওমনি ধইরা কাঁচের জিনিস ছুঁইড়া মারছে। ডরাইও না। ধীরে ধীরে তোমার ও এইসব সইয়া যাইবো'

শানায়া মনে মনে হতাশার দম ফেলে। নিজেই নিজের মনে শুধায় ' এটা শশুরবাড়ি? নাকি মেজাজে'র যাত্রাপালা'?


[পুরো গল্পটি পড়তে, আপনাকে বইটই এ্যাপ থেকে সংগ্রহ করতে হবে মূল্য থাকবে ৫০ টাকা। কিন্তু আপনি প্রমোকোড (ebookmela25) ব্যবহার করে ২৫ পারসেন্ট ছাড়ে মাত্র ৩৮ টাকায় কিনতে পারবেন। ই-বুক ক্রয় লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া হলো]

 #দুটি_হৃদয়ের_সন্ধিতে (ই-বুক)  #লেখনীতে_ঐশী_রহমান পর্ব :০১https://www.facebook.com/share/p/1XUwfBkDQw/পর্ব :০২https://w...
20/08/2025

#দুটি_হৃদয়ের_সন্ধিতে (ই-বুক)
#লেখনীতে_ঐশী_রহমান

পর্ব :০১
https://www.facebook.com/share/p/1XUwfBkDQw/
পর্ব :০২
https://www.facebook.com/share/p/1FFJzjcwS5/
পর্ব :০৩
https://www.facebook.com/share/p/1ZLYzrW7eW/

#দুটি_হৃদয়ের_সন্ধিতে (০১)
#লেখনীতে_ঐশী_রহমান

' আমির আরাফ খানে'র বৌ হওয়া এতো সহজ না? দুটো হাত, দুটো পা আর গায়ে সাদা চামড়া থাকলেই আমির আরাফ খানের বৌয়ের ট্যাগ গায়ে লাগিয়ে সমাজে ঘোরা সহজ কিন্তু এই আমির আরাফ খানের কাছে বৌ স্বীকৃতি আপনি এই এক জীবনে কখনো ই পাবেন না। আই রিপিট! কখনোই না '

বিবাহিত জীবনের প্রথম রাতে স্বামীর থেকে স্পষ্ট কথাটি কানে যেতেই একবার বারবার বহুবার কানে ঝংকার তুলে শানায়া'র। কয়েক মুহূর্ত থ হয়ে বসে রইলো। কথাটি ঠিক মস্তিষ্ক জুড়ে বিচরণ করছে বারে’বার।

কয়েক মুহূর্তে'র ব্যবধানে শক্ত পুরুষালি হাতের মালিক তার বাহুখানা টেনে নিজের সম্মুখ বরাবর দাঁড় করিয়ে দিয়ে বাম হাতের মুঠোতে গুঁজে দেয় পাঁচ লক্ষ টাকার একটা চেক।

' আপনার কাবিনের টাকা পরিশোধ! ঠিক এখন থেকে যে কোনো সময় আপনি এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারেন'।

শানায়া অবাক চোখে একপলক তাকিয়ে দেখলো নিজের হাতে গুঁজে দেওয়া চেকটা, পরপর চোখ তুলে তাকায় ঐ দাম্ভিকতায় ভরপুর লোকটার মুখের দিকে।যে পুরো ঘটনাটি পরিচালনা করছে খুবই শান্ত মস্তিষ্কে। দাঁতে দাঁত চেপে শানায়া দৃঢ় কন্ঠে শুধালো ' ঠিক যেভাবে আয়োজন করে আপনি সহ আপনার পরিবার এবাড়িতে এনেছেন আমাকে, ঠিক সেভাবে আপনি নিজে গিয়ে ফেরত দিয়ে আসবেন আমাকে, আমিতো স- ইচ্ছেই আপনার বাড়ি'র দুয়ারে আসিনি'।

আরাফ দেখছে মেয়েটা'র চোখ মুখে ফেটে পড়া রাগের চটা। আরাফ মনে মনে বাঁকা হাসে, আসলে এই দুনিয়ায় মেয়েগুলো একেকটা গিরগিটি টাইপ, কোপ বসাতেই আসল রুপে ফিরে আসে। একটু আগে কেঁদে কুটে একাকার দশা হয়েছিলো আর এখন দেখো! যুদ্ধে যেতেও তিনি তৈরি!
আরাফ মেয়েটি'র পাশ কাটিয়ে ঘুরে গিয়ে দাঁড়ায় ঘরের লম্বা লওড়া আয়নার সম্মুখে, গলার কাছের শেরওয়ানি'র বোতাম খুলতে খুলতে জবাব দেয় ' আমার ঠ্যাকা পড়েনি, দরজা খোলা আছে, আসতে পারেন'।

শানায়া পেছন ঘুরে চাইলো আয়নায়, যেখানে লোকটার দাম্ভিক চেহারার অবয়ব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
' বুঝতে পারছি আপনি অহংকার এ মাটিতে ঠিকঠাক মতো পা ফেলতে পারেন না, কিন্তু বিশ্বাস করুন! আপনার ঐ অহংকারের দু'পয়সা দাম ও আমার কাছে নেই, সো প্লিজ! আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি অবলা, অসহায় নারী তবে আপনি আমির আরাফ খান সম্পূর্ণ রুপে ভুল! ভুল! এবং ভুল'।

আরাফ তাকায় মেয়েটির দিকে, শানায়া সরাসরি চেয়ে আছে তার দিকে। শানায়া হাতের চেকটা খানিকটা উঁচু করে ধরে বলে ' এটা তো আমার বাড়ি ছাড়ার টিকিট না, এটা আমার মোহরানা, আমার অধিকার। আমাকে যদি সত্যি ই বাড়ি ছাড়তে হয় তবে আজকের হওয়া এই বিয়ে ভাঙুন। যেদিন ডিভোর্স পেপার হাজির করবেন, আমি সই করে দিয়ে এই বাড়ির চৌকাঠ মাড়িয়েই চলে যাবো, পেছন ঘুরে আপনার ঐ অহংকার ভর্তি মুখটাও আমি ফিরে দেখবোনা আর'।

কয়েক মুহূর্ত পুরো ঘর জুড়ে নিরবতা বিরাজ করতেই, তাচ্ছিল্য হাসে আরাফ, বলে ' কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা মেয়েদের একটা বিশেষ গুণ, ঐ সামান্য পাঁচ লক্ষ তে হচ্ছেনা তাই তো? বলুন কত ডিমান্ড আপনার? বাড়িয়ে দিবো'।

কথাটা কানের ছিদ্র ভেদ করে ঢুকতেই রাগে সমস্ত শরীর ছেয়ে যায় শানায়া'র। এই লোকটার সঙ্গে আর একটা কথা খরচ করতেও সে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু কথার জবাব দিতে না পারলে হয়তো ভাববে আসলেই সে লোভী। তাড়িয়ে দেওয়ার পরও বিয়ের জোর দেখিয়ে তার ঘাড়ে চেপে বসতে চাইছে। তবুও কিছু বলতে চেয়েও চুপ হয়ে রইলো। আত্মসম্মান মাঝে মধ্যে মানুষের জবান বন্ধ করে দেয়। শানুর ও ঠিক তাই হলো। তার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই এই লোকের সঙ্গে কথা বাড়ানো'র। শানুকে চুপচাপ থাকতে দেখে আরাফ মনে মনে শুধায় ' চেনা আছে এদেরকে! যত্তসব ভন্ডামি'

শানায়া মিনিট খানেক সময় নিয়ে নিজেকে সামলায়, পরপর বলে ' বেশ! আপনার ভাষ্যমতে আমি লোভী? ওকে ফাইন! আমার কোনো দায় পড়েনি আমি কি সেটা প্রমাণ করার'। শানায়া হাতের চেকটা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ছুড়ে ফেলে ফ্লোরে। আরাফ তাকিয়ে দেখে মেয়েটার কর্মকান্ড। শানায়া বলে ' আপনাকে আমি দয়া করে গেলাম, মাফ করে গেলাম কাবিনের টাকা। কিছুটা চেচিয়ে ওঠার মতো করে বলে ' মিস্টার আমির আরাফ খান! শুনছেন! আমি লোভী নই। দুনিয়ার সব মেয়েকে এক পাল্লায় মাপবেন না। ঢাক ঢোল পিঠিয়ে সমাজের সামনে থেকে একটা মেয়ে কে বৌ করে ঘরে তুলেছেন এটা আপনার ভালো মানুষী আর গভীর রাতে সেই মেয়েকে লোভী তকমা লাগিয়ে বের করে দিচ্ছেন এটা আপনার কাপুরুষের অবয়ব। নিজের অহংকার যেনো কখনো মাটিতে মিশে যায়না সেদিকটা একটু খেয়াল রাখবেন।'

শানায়া একে একে গায়ের সবগুলো গহনা খুলে খাটে রাখে, ' কষ্ট করে মিলিয়ে নিবেন, আমি কোনো কিছু চুরি করে নিচ্ছি কি না'?

আরাফে'র মুখে কোনো কথা নেই, সে চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে শীতল চোখে মেয়েটির হম্বিতম্বি দেখছে। এসব করতে করতে কখন যে অতি শক্ত মেয়েটা'র চোখের কোণায় পানি জমেছে সেদিকে হয়তো মেয়েটি'র খেয়ালও নেই।

শানায়া সবকিছু বুঝে দিয়ে আরাফে'র সম্মুখ বরাবর দাঁড়ায় ' যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবেন আমি সই করে দিবো। চলি'।

আরাফ ঠায় দাঁড়িয়ে বুকে আড়াআড়ি ভাবে হাত বেঁধে সরু চোখে দেখে মেয়েটির পদার্পণ। ' লোভী' শব্দটা মেয়েটা কে হয়তো নিজের অধিকার থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে নয়তো একটা মেয়ে কখনো এভাবে নিজের অধিকার ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারে না। আসলেই কি তাই?

_____________________

রাত তখন পৌনে একটা! বাড়িটির সদর দরজা পেরিয়ে বেরিয়ে এসেছে শানায়া। নিরব জনমানবশূন্য এরিয়া। বাইরে পা রাখতেই শানুর টনক নড়লো। এতো চেচামেচি, আর এতো কথা হলো এবাড়ির বাকি সদস্যরা কি কানে তুলো গুঁজে রেখেছে? একটা প্রাণী'ও কোনো সাড়াশব্দ দিলোনা কেনো?
তখনই পেছন থেকে বয়স্ক ভদ্র মহিলার ডাকে পেছন ঘুরে চাইলো শানু। ভদ্রমহিলা এক প্রকার ছুটতে ছুটতে এসে দাঁড়ালো তার সামনে। হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ' ও নতুন বৌমা! রাগ কইরা বাড়ি ছাইড়োনা লক্ষী'।

শানু চিনলোনা ঠিক, বললো ' কে আপনি '?

মহিলাটি আলতো হাসে, বলে ' একদিন আইয়া কি আর মোরে চিইনবা তুমি? আইচ্ছা! মুই হইলাম এ বাড়ি দেখাশোনার কাম করি, রাত-দিন ই এক কইরা এইহানে পইড়া থাহি। আরাফ স্যারে'র সালেয়া আপা'।

শানু বলে ' আপনি কি আমাকে চিনেন'?

' চিনবো না ক্যান, তুমি তো এ বাড়ির লক্ষী, এ বাড়ির নতুন বৌ'

শানায়া অন্য মনস্ক হয়ে বলে ফেলে ' আর বৌ, বৌ না ছাই'

সালেহা বলে ' এতো তাড়াতাড়ি হাল ছাইড়া দিবা লক্ষী'?

শানায়া বুঝলোনা। ' হাল ছাড়বো মানে'?

' তুমি না এই বাড়ির বৌ? তোমারে তোমার স্বামী বাইর হইয়া যাইতে কইলো আর তুমি ও বাইর হইয়া গেলা? কেমন মাইয়া মানুষ তুমি '?
শানায়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই সালেহা ওর হাত ধরে খপ করে ' লও ভেতরে চলো '

শানায়া বাঁধ সাধে ' না, ভেতরে যাবোনা আমি'

' শোনো বৌ, বিয়া মাইয়া মানষের একবারই হয়, তোমার ও হইয়া গেছে, ছুইটা লাভ নাই, ভেতরে আহো'

কথা শেষ করেই সালেহা টেনে নেওয়ার মতো করে শানায়া কে ফের বাড়িতে ঢোকালো। শানায়া তোরজোর করে গায়ের বল দেখিয়ে ও পারলোনা কিছুই। শানায়া কে ভেতরে ঢুকিয়ে সদর দরজায় বিশাল বড় এক তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সালেহা তাকায় শানুর দিকে। শানায়া হতবাক চোখে ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে আছে। সালেহা আলতো হেঁসে হাতের কব্জি ধরে টেনে নিজের ঘরে যেতে যেতে বলে ' সোয়ামির লগে ঝামেলা হইছে ভালো কথা যাইয়োনা এক রাইত তার ঘরে। মোর ঘরে থাহো, সারারাত দুইজন মিলা গল্প গুজব করমু এনে '।

____________

রাত তখন বেশ হলো! সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পালাক্রমে যেনো রাতের নিস্তব্ধতা বিরাজমান এই রজনীতে। পুরো ঘর জুড়ে তাজা ফুলের সুবাসে সুভাষিত। আকাশে'র বুকে উজ্জ্বল পূর্ণিমার চাঁদটাও আজ বড্ড মলিন। মেঘের আড়ালে আবডালে কয়েক মুহূর্ত পর পর একেকবার উঁকি দিচ্ছে। ব্যালকনির ইজি চেয়ারটাতে গা এলিয়ে রেখেছে আরাফ। ডানহাতের দুই আঙ্গুলে আধা খাওয়া সিগারেটটা পুড়ছে তার গতিতে, অন্ধকারে তার ধোঁয়া অদৃশ্যমান। বামহাতটা ঠেকেছে কপালে। প্রকৃতির মৃদু শীতল বাতাস ক্ষণে ক্ষণে ছুঁয়ে দিচ্ছে ঐ পুরুষালী শক্ত পেটানো শরীরটা।

হঠাৎ দরজায় নক পড়তেই চোখ মেলে আরাফ। সে বোধহয় আগে থেকেই জানে এসময়, কে এসেছে তার ঘরের দরজায়। তাই আগে থেকেই জবাব দিলো।

' আমি রাতে খাবোনা সালেহা আপা! ডেকোনা আমাকে'।

ওপাশ থেকে উত্তর এলো_
' আমার শশুরে'র টাকা কি হাওয়া থেকে উড়ে উড়ে আসে? আপনার নামের খাবার প্রতিরাতে এভাবে নষ্ট করা যাবে না, প্লিজ! নিজ দায়িত্বে এসে ক'টা গিলে যাবেন'

মেয়েলি কাঠখোট্টা জবাবে আরাফের ভ্রু কুঁচকে আসে। হাতের দু- আঙ্গুলে ধরে রাখা আধা খাওয়া সিগারেটটা দ্রুত এ্যাশ ট্রে'তে ফেলে ধুম করে দরজা খুলতেই চোখের সামনে স্পষ্ট ফুটে ওঠে পানপাতার ছোটখাটো শ্যাম রঙের গোল মুখখানা। যেকিনা স্থির চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আরাফ অবাক ভঙ্গিতে শুধায় ' আপনি? আপনি যাননি এখনো'?

শানায়া ঘনঘন কয়েকবার চোখে পলক ফেলে নমনীয় কন্ঠে জবাব দেয় ' বিয়ে করে ঘরে বৌ এনেছেন কাজের মহিলা নয় যে তার কাজ পছন্দ না হলেই হাতের আঙ্গুলে তুড়ি বাজিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলবেন। আর শুনুন! আমি ওমন মেয়েও নই! বিয়ে যখন একবার হয়েই গেছে এই সংসার ও আমি করবো। পারলে আপনি ঠেকিয়ে দেখান'।

কথা শেষ করে শানায়া আর দাঁড়ায় না, লম্বা কদমে সিড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে ডাইনিং এ একে একে প্লেট এ খাবার তুলে। আরাফ বিস্ময়কর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার চোখ আর মস্তিষ্ক হ্যাং হয়ে যাচ্ছে এই পাঁচ ফুট উচ্চতার মেয়েটির কর্মকান্ডে।

প্লেট গুছিয়ে শানায়া তাকায় ঘরের দিকে, তখনও আরাফ ঈগল চোখের দৃষ্টি ফেলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
' ওভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই, চলে আসুন, কটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন'।

শানায়া'র কথা শেষ হতেই ধুড়ুম ধাম শব্দ করে আরাফ দরজা আটকে দেয় ভেতর থেকে। বিকট শব্দে শানায়া তাকায় পুনরায়। ফোঁস করে দম ফেলে বসে চেয়ারে। পরপর চেয়ার ছেড়ে উঠে ঝড়ের গতিতে ভদ্রমহিলার ঘরে ঢোকে, বলে ' আমার পক্ষে সম্ভব না সালেহা আপা এই উট মার্কা লোকটাকে সামলানো। আপনি প্লিজ আমার শাশুড়ী কে বলবেন তার ছেলেকে আবার নতুন করে বিয়ে দিতে'।

সালেহা তাহাজ্জুদের নামাজ শেষ করে জায়নামাজ গুছিয়ে রাখতে রাখতে একগাল হেঁসে বলে ' লক্ষী! ধৈর্য্য রাখতে হইবো। সোয়ামি আঁচলে বাইধতে হইলে ধৈর্য্য রাখতেই হইবো'

শানায়া কয়েক মুহূর্ত চুপ রইলো, পরপর নিজের মেজাজ সামলে জিজ্ঞেস করল ' আচ্ছা আপা! কিছু যদি মনে না করেন একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম'।

সালেহা বিছানায় ওর পাশ ঘেঁষে বসলো, মাথায় আদর সুলভ হাত রেখে বলে ' আমি জানি তুমি কি জিগাইবা। সব কমু, তয় আগে চলো কয়ডা খাইবা'।

শানায়া দু'পাশে মাথা নাড়িয়ে বলে ' আমি খাবোনা সালেহা আপা'।

' এতো বড় রাইত, না খাইয়া থাকোন যাইবোনা। লও মোর লগে'

শানায়া'র ইচ্ছে না থাকলেও সালেহা ওকে এক প্রকার টানতে টানতে ডাইনিং এর কাছে নিয়ে দাঁড় করালো। সমগ্র টেবিল জুড়ে হরেক রকম খাবার। একটা চেয়ার টেনে সালেহা, শানায়াকে বসালো। প্লেট এ একে একে খাবার তুলে দিয়ে নিজেও বসলো পাশের চেয়ারে।

' খাও লক্ষী! সেই কোন বেলায় কয়ডা কি না কি খাইছো, খাইয়া লও'

শানায়া সবে খাবারে'র প্লেটে আঙ্গুল চালিয়েছে, ওমন সময় দোতলার দক্ষিণের ঘর থেকে ভাংচুরের আওয়াজে তড়িঘড়ি করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। সঙ্গে সালেহাও। শানায়া ঘটনা পুরোপুরি বুঝতে না পেরে গোলগোল চোখ করে তাকায় সালেহার দিকে। সালেহা ওর হাত শক্ত করে ধরে পুনরায় বসায় চেয়ারে। ফের উপর থেকে আর কোনো শব্দ এলোনা। সালেহা বাটিতে চিকেন ফ্রাই উঠাতে উঠাতে বলে ' মেজাজ বহুত, হয়তো হইছে কিছু লইয়া মেজাজ সাইত্রিশ! ওমনি ধইরা কাঁচের জিনিস ছুঁইড়া মারছে। ডরাইও না। ধীরে ধীরে তোমার ও এইসব সইয়া যাইবো'

শানায়া মনে মনে হতাশার দম ফেলে। নিজেই নিজের মনে শুধায় ' এটা শশুরবাড়ি? নাকি মেজাজে'র যাত্রাপালা'?


[ এই গল্পটি ই-বুক ভার্সন, শুধু মাত্র প্রচারণার জন্য ফেসবুকে এই গল্পটির কয়েকটি পর্ব আপলোড করা হবে। পরবর্তী তে এই গল্পটি কখনোই সম্পূর্ণ ফেসবুক পেজে আপলোড করা হবেনা। গল্পটি ভালো লাগলে (১৩ ই আগস্ট বেলা ১১ টার পর) আপনাকে বইটই এ্যাপ থেকে সংগ্রহ করতে হবে মূল্য থাকবে ৫০ টাকা। কিন্তু আপনি প্রমোকোড ব্যবহার করে ২৫ পারসেন্ট ছাড়ে মাত্র ৩৮ টাকায় কিনতে পারবেন। বিস্তারিত পরবর্তী তে আসছে। চোখ রাখুন পেজে]

19/08/2025

#ফের_বসন্ত আপডেট!!

এইযে ২০২৫ সাল!
এই বছরটিতে আমি কোনোভাবেই নিয়মিত হতে পারছিনা। অথচ আমি এতো অনিয়মিত বিগত বছরগুলিতে ছিলাম না। আপনারা আমার গতবছরের গল্প গুলো পড়ুন বুঝতে পারবেন। গল্প পোস্ট করার তারিখ পরপর আছে। তবে একটা কথা সত্য কি আমি গতবছর ছিলাম পুরোপুরি ঘরকুনো এবছরটা তা নই। একাডেমিক পড়াশোনা, ঘর দুয়োর ছেড়ে ব্যাচেলর থাকা, নিজের রান্না থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকাজ একা করা, টিউশন। দিনশেষ অল্প বিরতি!
সত্যি বলতে তখন আর মন চায়না মেধা খাটিয়ে ১৫০০+ শব্দের পর্ব লিখতে। জিরতে মন চায় তখন। আসছে মাসে প্রথম বর্ষের ইয়ার ফাইনাল তাই আপাতত আমি মাসখানেকের বিরতিতে যাচ্ছি। পরীক্ষা শেষ করে লম্বা একটা ছুটি পাবো সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস শুরু না হওয়া পর্যন্ত। সেই ছুটিতে আপনাদের পছন্দের #ফের_বসন্ত নিয়মিত দিয়ে শেষ করবো। আর এখন গল্পটা কন্টিনিউ করলে আমি রেগুলার কখনোই দিতে পারবোনা, আজ দিলাম আবার নয়দিন পর, ওভাবে পড়ে গল্পটা ইনজয় করতে পারবেন না। আর আমিও লেখার তাল হারাবো বারবার। তাই আপনাদের কাছ থেকে একমাসের ছুটি চেয়ে নিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ আপনাদের গল্প নিয়ে ফিরবো আগামী মাসের ঠিক এই তারিখে!
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আল্লাহ হাফেজ

১.বাইরে কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডব, বাতাসের গতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে বাড়ছে। খোলা কাঠের জানালার কপাট ধুড়ুমধাড়ুম শব্দ করে বাড়ি খাচ...
16/08/2025

১.
বাইরে কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডব, বাতাসের গতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে বাড়ছে। খোলা কাঠের জানালার কপাট ধুড়ুমধাড়ুম শব্দ করে বাড়ি খাচ্ছে। হঠাৎ লোডশেডিং এ পুরো ঘর অন্ধকার ভর করতেই তড়াগ করে স্টাডি টেবিল ছেড়ে উঠলো মেহের। অন্ধকার হাতড়ে ফোনটা খোঁজার বৃথা চেষ্টা। কোথায় রেখেছে সঠিক মনে করতে পারছেনা। পুরো ঘর জুড়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন, বিন্দু পরিমাণ আলোর ছটা নেই। আকস্মিক পা বাড়িয়ে সামনে ফেলতেই হকচকিয়ে উঠলো। ভীতসন্ত্রস্ত ডাগর চোখের দৃষ্টি ফেলে চেচিয়ে উঠলো "কে'? ' কে ঐখানে "?

আগন্তুকের কোনো সাড়াশব্দ নেই। তবে মেহের নিশ্চিত, এ ঘরে কেউ এসেছে, তার সম্মুখ বরাবর কেউ একজন দাড়িয়ে আছে। কিন্তু কে সে? মেহের দু'কদম পিছিয়ে গিয়ে ধাক্কা খেলো টেবিলে। ভয়ে গলা শুকিয়ে বারবার কন্ঠ আঁটকে আসছে। আগন্তুকের কোনো সাড়াশব্দ না পেতেই পুনরায় বললো "কথা বলছেন না কেনো? কে আপনি "?

পুরো ঘর জুড়ে অন্ধকার। মেহের কিছু ঠাহর করতে পারছেনা। এঁটে সেটে টেবিলের কোণায় ঠেসে আছে। আচমকা তার খুব নিকট থেকে চেয়ার টেনে নেওয়ার শব্দ কানে যেতেই চেচিয়ে উঠলো " কে আপনি? কথা বলুন প্লিজ "।

আগন্তুক চেয়ার টেনে আয়েশ করে বসলো বোধহয়, হয়তো মেহেরে'র খুব নিকটে। কিন্তু লোকটা কথা বলছেনা কেনো? ভয়ে ভীত মেয়েটা আর নিজেকে সামলে উঠতে পারলোনা। ডুকরে কেঁদে উঠতেই এক জোড়া শক্ত মসৃণ হাত তার মুখ আলগোছ চেপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল " ভয় পাবেনা, আমি উচ্ছ্বাস "। মুখ থেকে হাতটা ধীরে ধীরে সরে যেতেই মেহের অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো" আপনি? কিন্তু এখানে...? "

" হুঁশশ, চুপ। একটা কথাও না"

মেহের এক প্রকার হাফ ছেড়ে বাঁচলো । এটা তাহলে উনি। অর্ক ভাইয়ার বন্ধু লোকটা। পর মুহূর্তে মেহেরে'র মনে প্রশ্ন জাগে। এতো রাতে এই লোকটা তাদের বাড়িতে কেনো? তাও আবার তারই ঘরে? মনের মাঝে জেগে ওঠা প্রশ্নগুলো মনেই রইলো। জিজ্ঞেস করার জন্য টু, টা শব্দ অব্ধি মুখ থেকে বের করলোনা।

ব্যথায় দাঁত, মুখ শক্ত করে সটান হয়ে চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে উচ্ছ্বাস। এক্সিডেন্ট টা গুরুতর ভাবেই হয়েছে তার। ব্যথায় পুরো শরীর টনটন করছে। খানিক সময় পর ফোনের ফ্লাশ ধরতেই চোখ মুখ বুঝে নিলো মেহের। উচ্ছ্বাস সেদিকে তাকিয়ে শুধালো " এই মেহু, তুমি না ডাক্তারি পড়ছো?"

"হ্যা, তো? প্লিজ ঐ আলো আমার চোখের উপর থেকে সরান"

উচ্ছ্বাসে'র দৃষ্টি স্থির। আজ! আজ বহুদিন পর কাঙ্খিত রমনীর মুখটা দেখতে পেল সে। তীব্র আলোর ঝলকানিতে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। ওর দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বাস শক্ত গলায় বললো " তাকাও আমার দিকে"!

মেহের প্রথমবার, ফের দ্বিতীয় বার চোখ মেলে তাকাতেই হকচকিয়ে উঠলো। গোল গোল চোখ করে দেখছে লোকটাকে। পরপর আঁতকে উঠল " এ্যাই, আপনার কপালে রক্ত কেনো? হায় আল্লাহ! কি হয়েছে আপনার? এক্সিডেন্ট? "

উচ্ছ্বাস ফিসলে হাসলো। নিভু কন্ঠস্বরের নিরুত্তাপ আওয়াজে বললো " তুমি কি ভেবেছিলে, মীর উচ্ছ্বাস ফাউ ফাউ টাইম ওয়েস্ট করে তোমাদের বাড়িতে এসেছে"?

উচ্ছ্বাসের কথায় মেহেরের হুশ নেই। সে এগিয়ে এসে মৃদু আলোয় লোকটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। কপালের দিকটা কেটেছে বেশ। মেহের সর্ব শরীরে চোখ বুলিয়ে বার্তালো "আর কোথায় কোথায় লেগেছে"?

উচ্ছ্বাস, মেহেরে'র একটা হাত শক্ত করে টেনে নিয়ে বুকে রাখলো, মেহের কিছু বুঝে ওঠার আগেই বললো "এখানে, ঠিক এখানে, ঠিক বুকের মধ্যেখানে লেগেছে, দেখতে চাও তুমি "?

মেহের পারলোনা নিজেকে সামলে উঠতে, গলা আটকে কান্না আসছে। এই যে এই লোকটা! এটা ঠিক মেহেরে'র কি তা মেহের জানেনা। শুধু জানে এই লোকটা পুরোটাই একটা মায়া। এটা সেই মায়া, যে মায়াতে সে আটকেছে অষ্টাদশীর চৌকাঠে। মেহের নিজেকে ধাতস্থ করে বললো " সত্যি করে বলুন, কোথায় কোথায় লেগেছে? দেখতে দিন আমাকে"?

উচ্ছ্বাস ওর হাতটা সরিয়ে দিলো, " দেখতে হবেনা তোমাকে, এক গ্লাস পানি আনো, খেয়েই চলে যাবো"।

" আম্মু কে ডাকি, বলি আপনি এসেছেন। আপনি অসুস্থ, একটু দাঁড়ান "। মেহের পা বাড়াতেই খপ করে ওর হাতটা ধরে ফেললো উচ্ছ্বাস। " এতো পাকনামি করতে কে বলেছে ? চুপচাপ পানি চেয়েছি পানি নিয়ে এসো"

মেহের স্থির দৃষ্টি ফেলে দেখছে লোকটাকে। শরীর আহত তবে মেজাজ নয়। কপাল থেকে বিন্দু বিন্দু রক্ত গড়িয়ে গাল বেয়ে পড়ছে। অথচ মেজাজ দেখো? আকাশ ছোঁয়া। মেহের থেমে গেলো। বললো " তাহলে পানিটাও বাড়িতে গিয়ে খান, এখানে যখন সামান্য চিকিৎসা নিতে পারবেন না, তখন এখানের পানিও আপনার খেতে হবেনা"। বলেই মুখটা বা পাশে ঘুরিয়ে দাড়িয়ে রইলো মেহের। সবসময় কেনো এই লোকটা তাকে রাগ দেখাবে? লোকটারও বুঝতে হবে, রাগ শুধু একার তার নয়, মেহেরে'র ও রাগ আছে, খুব রাগ আছে।

উচ্ছ্বাস একহাতে মেয়েটাকে হ্যাচকা টানে বুকের উপর এনে ফেললো। আকস্মিক ঘটনায় হকচকিয়ে উঠলো মেহের। বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে উচ্ছ্বাসে'র মুখের দিকে। উচ্ছ্বাস একহাতে ওকে সামলে, অন্যহাতে মেহেরে'র কাঁধ থেকে ওড়না টেনে নিলো। মেহের হতবাক চোখে লোকটার কর্ম কান্ড দেখছে। একটানে কাঁধ থেকে ওড়না খসিয়ে নিয়ে নিজের কপালের রক্তটুকু মুছে ফেলে। মেহেরে'র মুখে টু টা কোনো শব্দ নেই। আলো বলতে সারা ঘরে ফোনের ফ্লাশ অন রয়েছে টেবিলের উপর। লোকটার পাগলামি দেখে অস্ফুটস্বরে একবার বললো মেহের "ওড়নাটা হয়তো নোংরা, জীবাণু রয়েছে, এভাবে ক্ষত জায়গায় লাগাবেন না, আমি ড্রেসিং করে দিতে পারি? দেব কি"?

উচ্ছ্বাসে'র কঠিন জবাব " তুমি কি আমার ঘরের বৌ? আমি কেনো তোমার থেকে ফ্রীতে সেবা যত্ন নিতে যাবো"?

মেহের বিড়বিড় করে বললো " বৌ নই তাই পরমেয়ের ওড়না টানাটানি করছেন, বৌ হলে কি করতেন কে জানে "?

উচ্ছ্বাস ও মেহেরে'র ন্যায় বিড়বিড় করে বললো"চব্বিশ ঘণ্টা বৌয়ের আঁচল ধরে ঝুলে থাকতাম"

মেহের ফিচলে হাসলো, বললো" পাইলট মীর উচ্ছ্বাস বৌয়ের এতো ন্যাওটা হতো বুঝি? একথা দিবাস্বপ্নতেও দেখিনা আমি"

হাতের বাঁধন আরেকটু শক্ত করে নিজের সঙ্গে একদম মিশিয়ে নিলো মেহের কে। লোকটার উত্তপ্ত শ্বাস আঁচড়ে পড়ছে মেহের চোখ মুখে। মেহের ডাগর চোখের দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে ঐ গোল মুখপানে। কন্ঠে খাদ নামিয়ে শুধালো " পাইলট মীর উচ্ছ্বাস কে নিয়ে যতোটানা ভাবো,আমি ঠিক ততটাই বৌ পাগল হবো। মিলিয়ে নিও"

"একথা আমি মরে গেলেও বিশ্বাস করি না "

উচ্ছ্বাস হাত ছেড়ে দূরত্ব বাড়িয়ে দাঁড়ালো " তোমার ওতো ভেবে কাজ নেই, পানি খেতে চেয়েছি দিবে কি না? নাকি চলে যাবো"?

মেহের শান্ত চোখে শুধু দেখছে লোকটার রাগ, জেদ। যার সামনে মেহেরে'র রাগ, অভিমান অতি নগন্য। মেহের ছোট করে জবাব দিলো " আনছি, অপেক্ষা করুন"।

সময়ের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন ঝড়ের গতি শীতল। তবে লোডশেডিং হয়েছে তো হয়েছে, ফেরার নাম নেই। মেহের ঘর ছেড়ে পানি আনতে বেরিয়ে যেতেই উচ্ছ্বাস গিয়ে দাঁড়ালো খোলা জানালার নিকট। একে তো মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, তারউপর তীব্র মাথা ধরেছে। জঘন্য পরিস্থিতি। উচ্ছ্বাস সটান হয়ে দাড়িয়ে দৃষ্টি ফেলেছে দূর, দূর বহুদূর ঐ অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশের বুকে। বিশালতার ঐ আকাশের বুকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অজস্র তারাদের। " তোরা কি বলে দিতে পারিস তাকে? আমার না বলা অপ্রকাশিত অনুভূতি গুলো, আমি আর পারছিনা, নিজের মধ্যে পুষে রাখতে, ইচ্ছে করে ঐ মেয়েটাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে বুঝিয়ে দিতে, এই মীর উচ্ছ্বাস কারো পরোয়া করে না। কিন্তু আফসোস! ভালোবাসা জোর জবরদস্তি করে হয়না। নিজের বুকে থাবা বসিয়ে আওড়ালো ❝ভালোবাসার সবটুকু এখান থেকে হয়, ঠিক এখান থেকে ❞।

নিজের ঘরের বাইরে পা বাড়িয়ে উঁকি দিলো বসার ঘরে। বাবা বাড়িতে নেই, গ্রামে গিয়েছেন আজ। মায়ের শরীর টা খুব একটা ভালোনা। প্রেশারের ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে সেই রাত নটার পরপর। ভাইয়া ফিল্ডে। ভাবি বাপের বাড়ি। আপাতত বাড়িতে শুধু দু'জন মেয়ে মানুষ। তারউপর এই ভারি রাতে লোকটার আগমন। মেহের চাইছে নিজেকে শক্ত রাখতে। তবুও দূর্বল পয়েন্ট ধারেকাছে থাকলে নিজের উপর জড়োতা ভর করে। মোমবাতি জ্বালিয়ে, রাতের ভাতগুলো গ্যাসের চুলায় হালকা গরম করলো, সাথে দুটো ডিম পোছ। ফ্রীজে রাখা ঠান্ডা তরকারি আর বের করেনা। লোকটা ওসব খাবেওনা। মেহের জানে, লোকটা ডিম খেলে একসঙ্গে দুটো করে খায়, এর কম হলে ডিমই সে খাবেনা। আচমকা কথাটা মনে পড়তেই আনমনে হাসলো মেহের। যতোসব বাচ্চামো। ভাত গরম হতেই মেহের প্লেট গুছিয়ে, এক গ্লাস পানি হাতে তুলে পা বাড়ালো ঘরের দিকে।

ততক্ষণে উচ্ছ্বাস ফোনের ফ্লাশ ধরে মেহেরে'র ঘরে খুঁজে খুঁজে ঔষুধের বক্স থেকে সেভলন, তুলা, মলম, এগুলো দিয়ে কপালের কাটা জায়গা পরিষ্কার করছে। দরজার কাছে আসতেই মেহের পা থামিয়ে লোকটার কর্ম কান্ড দেখছে। স্যাভলনে তুলা ভিজিয়ে কপালে ধরতেই চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিচ্ছে। পুনরায় আবার নিজের ক্ষত ঠিক করছে। সর্বশেষ, মলম লাগিয়ে পেছন ফিরতেই দেখলো মেহের তার দিকে তাকিয়ে আছে। মলমের খোলা মুকটা আটকে রাখতে রাখতে বললো " এক গ্লাস পানি আনতে রাত পার হয়ে গেলো যে"?

মেহের সে কথার কোনো জবাব দিলো না। হেঁটে গিয়ে খাবারের প্লেটটা টেবিলে রাখলো সামান্য শব্দ করে। উচ্ছ্বাস তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। " নিন, খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন, তারপর বাড়ি যান"।

" তোমার কাছে আমি ভাত খেতে চেয়েছি"?

" না"

" তবে, আনলে কেনো"?

মেহের কোনোরকম ভণিতা ছাড়াই উত্তর দিলো " আপনি আমাদের বাড়ির কুটুম, ভাবির ভাই হন, আপনাকে এতটুকু খাতির না করলে বিষয়টা দৃষ্টিকটূ লাগবে"

উচ্ছ্বাস এগিয়ে গিয়ে পানির গ্লাসটা তুলে, পানিটুকু খেলো, পরপর বলল "তোমার ভাত তুমি খেয়ো, আমার খিদে নেই "।

" এমন বললে তো হবেনা উচ্ছ্বাস ভাই, আমি কষ্ট করে গুছিয়ে এনেছি, আপনাকে খেতে হবে, বসুন"

" না খেলে কি করবে তুমি? জোর করে বেঁধে খাওয়াবে"?

মেহের ঘরে আরেকটা মোমবাতিতে আগুন ধরিয়ে দিতে দিতে বললো " আপনাকে জোর করার ওতোটা সাহস আমার নেই, খেলে খান, আপনার বিবেক যা বিচার করে তাই করুন"

উচ্ছ্বাস শীতল দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে মেয়েটার মুখপানে, বললো "আমার ওতোশত বিবেক নেই, আমি বিবেকের ধার ধারিনা, যদি ধারতাম তবে রাত বেরাত পাঁচিল টপকে পরনারীর ঘরে ঢুকতাম না"

"কেনো ঢুকেছেন তবে"?

" ঐযে, তোমার ভাষ্যমতে বিবেক, ঐ জিনিসটা আমার মধ্যে একটু কম"

মেহের চোখ নামিয়ে নিলো উচ্ছ্বাসের থেকে। " আপনি প্লিজ চলে যান এখান থেকে, আমার বদনাম করবেন না এভাবে, প্লিজ চলে যান, আর কখনো আসবেন না, যান বলছি"

" চলে যাচ্ছি, তবে আমি আবার আসবো, ভেবোনা এতো সহজে তো..."
উচ্ছ্বাস থেমে গেলো। পুরো বাক্য শেষ করলোনা। ঠিক যে পথে এসেছিলো, ওভাবেই বারান্দার ওয়াল টপকে চোখের আড়াল হলো। মেহের শুধু ভেজা চোখে তাকিয়ে দেখলো লোকটার চলে যাওয়া। চোখের আড়াল হতেই মেহের ছুটে বারান্দায় এলো। কিন্তু অন্ধকারে লোকটার ছায়াও মেহেরে'র দৃষ্টিতে আর ধরা দিলোনা। মানুষটা চোখের আড়াল হতেই মেহের আর নিজেকে সামলে উঠতে পারে না। ডুকরে কেঁদে উঠলো। ধীরে ধীরে পিঠ ঘেঁষে বসলো বারান্দার রেলিঙের কাছে। হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদছে মেয়েটা, ভীষণ কাঁদছে।

আজ থেকে ঠিক বছর দুই আগে.......
অষ্টাদশীর চোকাঠে পা রাখতেই মনের গোপন কুঠুরিতে আবেগে মোড়ানো একটি নামের জন্ম হয়, মীর উচ্ছ্বাস। অথচ এই নামের মালকিনকে একটু সহসা ছুঁয়ে দেখার অধিকার তার নেই। এ কেমন আবেগ? এমন আবেগ তো মেহের চায়নি কখনো। তবে কি ঐ শক্ত পোক্ত মনের অধিকারী পুরুষের কখনো বোধগম্য হবেনা, এই ছোট্ট মনে বাসা বেঁধে ছিলো অতীতের গল্প। তবে কি অতীত কখনো বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে গড়াবে?

আমার ই-বুক #সখী_তোমারে_বাধিবো_যতনে আগের মূল্য ছিলো ৩৫ টাকা সেটি ২৫ পারসেন্ট ছাড়ে পাবেন মাত্র ২৭ টাকায়। শুধু মাত্র প্রমোকোড ব্যবহার করে জলদি জলদি এই সুযোগ লুপে নিন।
প্রোমোকোড : ebookmela25

1.পড়ুন ই-বুক "সখী তোমারে বাঁধিবো যতনে"
https://link.boitoi.com.bd/i1JZ

2.যেভাবে বইটই থেকে ই-বুক ক্রয় করবেন:
https://youtube.com/shorts/6NjaAveyh6A?feature=share

3.অন্য দেশ থেকে কিভাবে বইটই অ্যাপে ই-বুক ক্রয় করবেন:
https://youtube.com/shorts/Jteh6XU50tw?feature=share

4.যেভাবে বইটই থেকে প্রিয়জনকে বই গিফট করবেন:
https://youtube.com/shorts/b0Se9TiCy0U?feature=share1.পড়ুন ই-বুক "সখী তোমারে বাঁধিবো যতনে"
https://link.boitoi.com.bd/i1JZ

2.যেভাবে বইটই থেকে ই-বুক ক্রয় করবেন:
https://youtube.com/shorts/6NjaAveyh6A?feature=share

3.অন্য দেশ থেকে কিভাবে বইটই অ্যাপে ই-বুক ক্রয় করবেন:
https://youtube.com/shorts/Jteh6XU50tw?feature=share

4.যেভাবে বইটই থেকে প্রিয়জনকে বই গিফট করবেন:
https://youtube.com/shorts/b0Se9TiCy0U?feature=share

Address

Mongla

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Oishe Rahman - ঐশী রহমান posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share