16/06/2025
আমি বাকরুদ্ধ!!! চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো আহহহ 💔
ইনফা*র্টি*লিটি ডক্টর দেখাতে আসছি ঢাকা বার্ডেম ২। সিরিয়ালে বসে আছি। পাশেই বসা এক ভদ্র মহিলার সাথে কথা বলে সময় পার করছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম বিয়ের কত বছর ? বললেন ২৫ বছর।
একটিও বেবী নেই? না।
উত্তর শুনে কিছুক্ষন বাকরুদ্ধ হয়ে ছিলাম।বললাম আপনার হাজব্যান্ড কোথায়?
বলল,নীচে রিসিপশনে গিয়েছে।
একটুপর একজন মধ্যবয়স্ক লোকের দিকে উনি ইশারা করে বলল উনিই আমার হাজব্যান্ড।
মুখ ভর্তি সাদা খোচা খোচা দাড়ি। মাথার চুলেও সিংহ ভাগ বার্ধক্যের ছাপ।
আমি তখন অনেক্ষন কেমন যেনো আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম। ২৫ বছর ধরে এই মানুষ দুটি একটি সন্তানের আশায় প্রহর গুনছে। কিভাবে পার করেছে দু যুগেরও অধিক সময়। ভেবেই যাচ্ছিলাম।
কারন আমরাও যে এক নিঃসন্তান দম্পতী। আমি তো ৫/৬ বছরেই ব্যাকুল হয়ে পরেছি।
পি*রি*য়ড হলে কান্নাকাটি করে বুক ভাসাই। কিভাবে সম্ভব এতো বছর এভাবে পার করা।
ভাবতে ভাবতেই আমার সিরিয়াল আসলো।
ড*ক্টর সব রি*পোর্ট দেখে বলল:অনেক দিন ধরেই তো ট্রিটমেন্ট নিচ্ছেন। বরের রি*পোর্ট তো ভালো আসছে না।এই রি*পোর্টে বাবা হওয়া পসিবল নয়।একটা কথা বলি আপনারা একটা বেবী দত্তক নিয়ে নিন।
কথাটা শুনে ভিতরে যেনো দু*মড়ে মু*চরে যাচ্ছিলো।
কিন্তু বরকে কিছুই বুঝতে দিচ্ছিলাম না। বাসায় আসলাম। দত্তক নেওয়ার বিষয়টি ভাবলাম।
আমি পর্দা করি। ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী চলার চেষ্টা করি।
আর ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী পালক সন্তান ঔরসজাত সন্তানের মত নয়। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তার সাথে পর্দার বিধান প্রযোজ্য হবে। তাই এই চিন্তে মাথা থেকে বাদ দিলাম।
আমার কোন বোন নেই। ছোট একটি ভাই আমার। একদিন মাকে কল করে কথায় কথায় ছোট ভাইয়ের কথা বললাম,মা ধরো আমার যদি বাচ্চা নাই হয়।
পালকও তো আনতে পারবো না। কারন বড় হলে দেখা দিতে পারবো না।
কিন্তু যদি ওর (ছোট ভাই) বিয়ের পর আল্লাহ দিলে ওর সন্তান থেকে আমাকে একটা ছেলে দেয় তাহলে তো আমি ওর ফুপু হবো।দেখাও করা জায়েজ। এভাবে আমি ওকে নিজের সন্তানের মত লালন করে তুলবো। আর মেয়ে নিলে তো আমার বরের সাথে বড় হলে দেখা করতে পারবে না।
আমার মা আমার বাচ্চা সূলভ অদূর ভবিষ্যতের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ ছিলো।কান্না জরানো কন্ঠে বলল,আল্লাহ তোমাকেই সন্তান দিবে মা।
তুমি দোয়া করতে থাকো।
ঘটনাটি ২০১৫ সালের।
আজ ২০২৩ সালের জুন মাস।
আমার ১৪ তম বিবাহ বার্ষিকী ১০ই জুন।
বৈবাহিক জীবনের ১৩ টি বসন্ত পার করলাম।১৪ তে পদার্পণ।
আজও আমরা ২ থেকে ৩ হতে পারিনি। এখনও প্রতিটি মাসে আশায় থাকি।মাস শেষে সুসংবাদ পাবো। কিন্তু না।আমার আশা আজও অপূরনীয়।
মাস শেষে যখন পিরিয়ড হয়ে যায়। পাথরের মত হয়ে যাই। এখন আর হাউমাউ করে কাঁদি না। চোখ ২টি ঝাপসা হয়ে আসে শুধু।মুখ ফুটে কোন আওয়াজ বের হয়ে আসে না।
এই ১৪ বছরে কত ডাক্তার কত গাছন্ত ঔষধ, কত কি কি করেছি কত টাকা ভেংগেছি তার কোন হিসেব নেই।
জীবনের এই সময় এসে আমার মনে পরে সেই মহিলার কথা যে ২৫ পরেও মা হতে পারিনি।
সেদিন কি আমি ভেবেছিলাম আমিও ১৪ বছরে সন্তানের মুখ দেখবো না। এই ১৪ সংখ্যা টি ভবিষ্যতে কত সংখ্যায় রুপ নেয় সেটাও জানিনা
জানিনা কতদিন বাঁচবো? কিভাবে কাটবে আমার এই নিঃসন্তান জীবন?
একাকিত্ব ,বিষন্নতা আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়।
স্বামীর প্রতি আমার বিন্দুমাত্র কোন অভিযোগ নেই। বড্ড ভালোবাসি এই মানুষটাকে।
একবার এক ড*ক্টর আগের জনের মতই রি*পোর্ট দেখে বলে দিল, নরমালি পসিবল না।আইভিএফ করেন হলে হতেও পারে। আরো কিছু হতাশাজনক কথাবার্তা। সেদিন আমার স্বামী আমাকে বলেছিলো,তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? ..
তোমাকে ছাড়া কিভাবে বাচঁবো আমি?
তবুও তোমার অধিকার আছে মা ডাক শুনার।যদি তুমি মনে করো আমায় ছেড়ে অন্যত্র কারো বাহুডোরে আবদ্ধ হলে তুমি মা হতে পারবে।তাহলে তোমায় আমি আটকাবো না।
তোমাকে আমি কষ্ট দিতে চাই না।
কথা গুলি উনার মুখ থেকে বের হয়ে আমার কলিজাটাকে যেনো ছিদ্র করে ফেলছে। চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে এলো।উনার মুখের দিকে তাকিয়ে উনার হাত দুটিকে আমার হাতে মুষ্ঠিবদ্ধ করে নিয়ে বললাম।
এই চিনলেন আমাকে?
এক যুগেরও বেশী সময় পার করলাম একসাথে।
এটা সত্য যে আমি সন্তানের মা হতে চাই।কিন্তু যার বাবা হবেন আপনি।আমি আপনারই সন্তান গর্ভে ধারন করতে চাই। আপনাকে ছাড়া আমার পৃথিবীটা অন্ধকারাচ্ছন্ন।
আপনি আমার জন্য প্রভুর দেয়া এক বিশেষ নেয়ামত।
সন্তানের জন্য এই নেয়ামত আমি হারাতে চাই না।
আমার মা আর ছোট ভাই ছাড়া আমার আত্নীয় কেউ জানে না আমার বরের প্র*ব্লেম এর কথা।
জানাতেও চাই না। থাক না কিছু কথা গোপনীয়।
যেই মানুষটিকে উন্মাদের মত ভালোবেসে হৃদয়ের মনি কোঠায় জায়গা দিয়েছি, চাই না তাকে অন্যের সামনে ছোট করতে।
আসলেই মানুষটার প্রতি আমি মুগ্ধ। এই মুগ্ধতায় বিভোর থাকতে চাই আমি আজীবন।
এমন নয় যে,উনার প্র*ব্লেম বলে উনি আমার প্রতি অমায়িক।
প্রব্লেম তো জানতে পারছি ৫/৬ বছর পর।কিন্তু ৫/৬ বছর তো আমি মানুষটাকে দেখেছি।কতটা ভালোবাসে ,কেয়ার করে আমায়।
উনি মাসজিদের ইমাম। মহল্লার থেকে খানা দেয় উনাকে। আমি মাদ্রাসায় জব করতাম।বোর্ডিং এর খানা আমার জন্য কষ্ট হবে ভেবে নিজের খানা থেকে বাঁচিয়ে আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতো।নিষেধ করেলে বলতো,খাওয়ার সময় তোমার কথা মনে হয়।কি করবো বলো?
একদিন এক ছেলেকে দিয়ে টিফিন পাঠিয়ে দিয়ে কল করে বলতেছে,টিফিন খুলে খানা দেখলে বুঝতে পারবা।তোমাকে রেখে খাওয়ার সময় আমার কেমন লাগে?
আমি টিফিন খুলে দেখলাম কই মাছ ভাজা,আর কি তরকারী যেনো মনে নেই। উনার কথার মর্ম তেমন কিছুই বুঝলাম না।কিন্তু যখন মাছ প্লেটে নেওয়ার জন্য হাত দিলাম তখন বুঝলাম।
কারন মাছের এক পিঠ খাওয়া ছিলো।আরেক পিঠ উনি আমার জন্য রেখে দিছে।
অনেক সময় তরকারী, ভাজি এই গুলির মাঝে ভাত ভরানো দেখতে পেতাম।মানে খাওয়ার জন্য প্লেটে নিয়েও আমার জন্য উঠিয়ে রেখে নিয়ে আসতো।
অনেকের কাছে এই বিষয় গুলি খুব তুচ্ছ।
কিন্তু আমি সেই ভাজা মাছেও আমার স্বামীর ভালোবাসার খুজে পেয়েছি।
এই ১৪ টি বছরে আজও কোন কারনে উনি আমাকে "তুই" বলে সম্ভোধন করেনি।কখনো গায়ে হাত তুলে নি। কোন বিষয় নিয়ে আমার রাগ থাকলে আমি কিছু বললেও উনি চুপ করে থেকে আমাকে বুঝায়। নিজেকে উনি দূর্বল ভেবে এমন।বিষয়টা এমন নয়।উনি মানুষটাই এমন।সবাই বলে অনেক ভাগ্য করে নাকি এমন স্বামী পাইছি।
এই মানুষটার সাথে একই বিছানায় আমি বৃদ্ধা হতে চাই।
সেই বিছানায় আমরা বুড়ো বুড়ি আমাদের নাতী নাতনীদের নিয়ে খেলা করতে চাই।
আদৌ আসবে কি সেই দিন?
হতে পারবো তো এক রত্নগর্ভা জননী ?
নির্ঘুম রাত।ফুপিয়ে ফুপিয়ে নিঃশব্দে কান্না করার দিন শেষ হবে কবে?
একজন নিঃসন্তান নারীর মনের ভিতরে বয়ে যাওয়া যন্ত্রনা বুঝার ক্ষমতা কাহারো নেই।
আমি কল্পনায় আমার সন্তান,আমার মাতৃত্বকে ভেবে যাই প্রতিনিয়ত।
কিন্তু বাস্তবতায় যখন ফিরে আসি তার কোন অস্তিত্ব আমি খুজে পাই না। আমার চারপাশটা ভিষন রকম একা।
বিছানায় নিজের পাশে হাত বুলিয়ে এখানে ছোট এক অবুঝ শিশুর হাত পা নাড়িয়ে খেলা করার দৃশ্য আমি দেখতে পাই।
কিন্তু সেটা কল্পনা।
"আমার মাতৃত্ব কল্পনাতেই সুন্দর"
কা"বার মালিক চাইলে এই কল্পনা একদিন বাস্তবে রুপ নিবে। এই আশা বুকে নিয়েই দিন গুলি পার করছি।
আমি দেখছি আমার বরের রিপোর্ট থেকেও অনেক খারাপ রিপোর্ট নিয়ে অনেক মেয়েদের মা হতে।
আমি আমার প্রভুর কাছে আশাবাদী তিনি আমাকেও নৈরাশ করবেন না।
তুমি তো ঐ প্রভু আমার । মারিয়াম আঃকে কুমারী অবস্থায় পিতা ছাড়া পুত্রের জননী করেছিলে তুমি।
তুমি সর্বক্ষমতার অধিকারী।
তুমি আমাকেও সন্তান দিতে সক্ষম।
আমাকে এমন ভাগ্য দান করো যে,আমার মৃত্যুর পর যেনো আমার সন্তান আমার জন্য তোমার দরবারে মাগফেরাত প্রার্থনা করে।
সেদিনটির জন্য হলেও আমি মা হতে চাই।
Collected from 20 Minute Medical Daily
( কপি পোস্ট এক বড় আপুর আত্মজীবনী থেকে নেওয়া জীবনে থেকে নেওয়া)
সকল নারীকে মাতৃত্বের সুখ দান করুক আল্লাহ💚💚💚💚