20/08/2025
✅ এশিয়ার বাজারে পতন, প্রযুক্তি খাতে অনিশ্চয়তা ও জ্যাকসন হোল সম্মেলনের অপেক্ষা:
২০২৫ সালের ২০ আগস্ট বুধবার এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলো একযোগে চাপের মুখে পড়ে। দিনের শুরু থেকেই বিনিয়োগকারীরা সতর্ক ভঙ্গিতে লেনদেন করেন, ফলে সূচকগুলোতে উল্লেখযোগ্য পতন লক্ষ্য করা যায়। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক প্রায় ১.২ শতাংশ কমে যায়, চীনের সিএসআই ৩০০ সূচক প্রায় অর্ধ শতাংশ হারায় এবং পুরো এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী MSCI Asia-Pacific ex-Japan সূচক ০.৪৭ শতাংশ কমে বন্ধ হয়। এই পতনের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক বিক্রির চাপ। যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েকদিনে প্রযুক্তি শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব এশিয়ার বাজারেও এসে পড়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি বড় চিপ নির্মাতা কোম্পানি এনভিডিয়া (NVIDIA) এবং এএমডি (AMD) সম্পর্কিত সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত বাজারে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
মার্কিন সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, NVIDIA ও AMD তাদের চীনে বিক্রিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চিপ থেকে অর্জিত আয়ের ১৫ শতাংশ সরাসরি মার্কিন সরকারের কাছে জমা দেবে। অর্থাৎ, এই কোম্পানিগুলোকে চীনা বাজারে টিকে থাকতে হলে তাদের রাজস্বের একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকারি কোষাগারে দিতে হবে। এটি মূলত নতুন ধরনের একটি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নীতি, যা প্রযুক্তি খাতে অভূতপূর্ব। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি “slippery slope”— অর্থাৎ, ভবিষ্যতে অন্য কোম্পানির ক্ষেত্রেও এ ধরনের শর্ত আরোপ করা হতে পারে। আবার আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন সংবিধানে রপ্তানি কর নিষিদ্ধ থাকলেও এই চুক্তি কার্যত এক ধরনের রপ্তানি কর হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে। NVIDIA ও AMD-র মত কোম্পানির জন্য চীন একটি বিশাল বাজার। সেই আয়ের ১৫ শতাংশ মার্কিন সরকারকে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তাদের ব্যবসায়িক কৌশলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে বিনিয়োগকারীরা এই খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন, যা সরাসরি বাজারে বিক্রির চাপ সৃষ্টি করেছে।
শুধু প্রযুক্তি শেয়ারের অনিশ্চয়তা নয়, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা এখন তাকিয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিতব্য বিখ্যাত জ্যাকসন হোল সিম্পোজিয়াম-এ। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা এই সম্মেলনে একত্রিত হন এবং বৈশ্বিক আর্থিক নীতির ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশ করেন। এই বছরের সম্মেলন ২১ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হবে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল- এর বক্তব্য, যা শুক্রবার প্রদত্ত হওয়ার কথা। পাওয়েল কী ধরনের বার্তা দেন—সেটিই এখন বাজারের মূল ফোকাস।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, ফেড আসন্ন মাসগুলোতে সুদের হারে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ইঙ্গিত মিলবে। বর্তমানে বাজারে ধারণা করা হচ্ছে, সেপ্টেম্বরে ফেড ২৫ বেসিস পয়েন্ট বা ০.২৫ শতাংশ সুদ কমাতে পারে। এর সম্ভাবনা বর্তমানে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বৈশ্বিক শেয়ারবাজার এখন এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। একদিকে NVIDIA ও AMD-র উপর নতুন সরকারি শর্ত প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চিত করে তুলেছে, অন্যদিকে ফেডারেল রিজার্ভের আসন্ন বার্তা নিয়ে সবার মধ্যে অপেক্ষার প্রহর চলছে। এশিয়ার শেয়ারবাজারে পতন তাই কেবল একটি দিনের ঘটনা নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি, প্রযুক্তি শিল্পের নীতি-সংক্রান্ত নতুন মোড় এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের প্রতীক্ষা। আগামী সপ্তাহে জ্যাকসন হোল সম্মেলন থেকে পাওয়া বার্তা কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, পুরো বিশ্বের বাজার প্রবণতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে।